দিল্লি, 27 মার্চ : কোরোনার থাবায় ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি । ধস নেমেছে শেয়ার বাজারেও । এই পরিস্থিতিতে আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের সাংবাদিক বৈঠকের পর খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলেছে আমানতকারীদের মধ্যে। আমানতাকারীদের আশ্বস্ত করে গভর্নর জানান, আপাতত ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা সুরক্ষিত । আমানতকারীদের জমা টাকাও নিরাপদে রয়েছে । তাই অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই । পাশাপাশি ঋণের ক্ষেত্রেও এইমুহূর্তে কোনও EMI দিতে হবে না ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক আজকের ঘোষণাগুলি।
ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ
আপাতত, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের জন্য স্বস্তি । আগামী তিনমাসের জন্য সমস্ত ঋণ পরিশোধে স্থগিতাদেশ দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক । এই নিয়ম সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, NBF, HFC সহ সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । এই পরিস্থিতিতে যখন মানুষজনের আয় পুরোপুরি বন্ধ । এই ঋণ শোধে স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত খানিকটা হলেও চাপ কমাবে তাদের । এই স্থগিতাদেশ চলাকালীন ঋণের উপর সুদ প্রযোজ্য হবে । তবে EMI না দেওয়ার জন্য কোনও জরিমানা প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু তার মানেই এটা নয় যে, EMI গুলি বাতিল করে দেওয়া হল । এটি এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র একটি বিকল্প । এক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি সবিস্তারে জানতে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে । তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি গ্রাহক EMI দেওয়ার পরিস্থিতিতে থাকেন তাহলে নিজের ঋণের বোঝা কমাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন ।
ক্রেডিট স্কোরের উপর প্রভাব
আজ গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানান, স্থগিতাদেশ চলাকালীন কারও ক্রেডিট স্কোরের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না । তবে প্রতিমাসে নিজেদেরই নিজেদের ক্রেডিট স্কোরের উপর নজর রাখতে হবে ।
গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া অর্থ প্রদান করে যেতে হবে । স্থগিতাদেশ শুধুমাত্র মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া অর্থ না দিলে তা উলটে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে । যা ক্রেডিট স্কোরও হ্রাস করতে পারে । পাশাপাশি রেপোরেটে আজ 5.15 শতাংশ থেকে কমিয়ে 4.4 শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এটি খুচরো গ্রাহকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে ।
আজকের উল্লেখযোগ্য ঘোষণা :
- 75 বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে 4.40 শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে রেপো রেট । যা একদশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
- এক্ষেত্রে রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্যিক ঋণের সুদের হারের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে পারে ।
- উদাহরণস্বরূপ, স্টেট ব্যাঙ্কের রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত একটি এক্সটার্নাল বেঞ্চমার্ক রেট (EBR) হোম লোন রয়েছে । বর্তমানে সেই EBR-র হার 7.80 শতাংশ । পরে এই হার হ্রাস পাবে 7.05 শতাংশ ।
- এতে ঋণগ্রহীতাদের সুদের বোঝা কমবে । উপকৃত হবেন তাঁরা। কম টাকার সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা লাভবান হবেন না গ্রাহকরা । রেপো রেট কমানোর ফলে ফিক্সড, সেভিংস ও রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদের হার কমবে । সুদের হার কতটা কমবে তা জানার জন্য গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে । একই সঙ্গে সরকার PF-র রেট কমানোর ক্ষেত্রেও কিছু স্কিম আনতে পারে । তবে তা সময় এলেই বোঝা যাবে ।
- তবে রেপো রেট কমানোর এই সিদ্ধান্ত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তহবিলগুলি লাভবান হবে । তবে ছোটো বিনিয়োগকারীদের SIP বিকল্পটি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রেপো রেটে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট ছাড়াও রিভার্স রেপো রেটে 90 বেসিস পয়ন্ট কমানো হয়েছে ।
- সমস্ত ব্যাঙ্কের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও(CRR) 100 বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩ শতাংশে নামানো হয়েছে । পাশাপাশি ন্যূনতম দৈনিক CRR-কে 90-80 শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে । .এই পদক্ষেপগুলি সামগ্রিকভাবে একটি ঋণদাতা সংস্থাকে কম দামে ঋণ দিতে সাহায্য় করবে ।
সবমিলিয়ে বলা যায়, সরকার এবং RBI কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি প্রশংসার দাবি রাখে। আজকে গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের ঘোষণা খানিকটা হলেও মধ্যবিত্তের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাকে কম করল ।