দিল্লি, 23 সেপ্টেম্বর : সংসদ চত্বরে চলছে কৃষি বিলের প্রতিবাদ । একই সময়েই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় তিনটি শ্রম বিল । যদিও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন বিরোধীরা । জানিয়েছিলেন, একপাক্ষিকভাবে যেন বিল পাশ না করা হয় । তা গণতন্ত্রের উপর দাগ ফেলবে । এইদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্থগিত হয়ে যায় বাদল অধিবেশন ।
1 অক্টোবর পর্যন্ত বাদল অধিবেশনের সূচি নির্ধারিত ছিল । কিন্তু 25 জন সাংসদ এখনও পর্যন্ত কোরোনা সংক্রমিত হয়েছেন । তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই স্থগিত হয় অধিবেশন ।
গতকাল লোকসভায় তিনটি শ্রম কোড বিল পাশ হয় । আজ রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় বিল তিনটি । এখন শুধু রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সই প্রয়োজন । আজ রাজ্যসভায় তিনটি বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার । তিনি দাবি করেন, এই বিল পাশ হলে 'সুরক্ষিত পরিবেশে' কাজ করতে পারবেন শ্রমিকরা । সামাজিক সুরক্ষাও পাবেন ।
যে তিনটি বিল আজ পেশ করা হয় -
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড 2020
- অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড 2020
- কোড অন সোশাল সিকিউরিটি 2020 বিল
কেন্দ্রের দাবি, নতুন আইন কার্যকরী হলে শ্রম নীতিতে সংস্কার আসবে । বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে । পরিযায়ী শ্রমিকরাও সুবিধা পাবেন ।
তবে কেন্দ্রের এই দাবি সহজেই মেনে নিচ্ছে না বিরোধীদল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি । তাদের অভিযোগ, এই বিল প্রয়োগের ফলে খুব সহজেই কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে সংস্থাগুলি । এবং প্রতিবাদের অধিকারেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হবে ।
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড বিল অনুযায়ী, যে কম্পানিগুলিতে 300-র কম কর্মী কাজ করেন । রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই তারা কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে । যে কম্পানিগুলিতে 100 জনের কম কর্মী কাজ করেন । এমন কোনও সংস্থায় ছাঁটাই বা ক্লোজ়ারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল না । সেই নিয়মেই পরিবর্তন আনা হল ।
- এই বিলের আওতায়, কোনও শিল্প-কর্মী 60 দিনের নোটিস ছাড়া ধর্মঘট করতে পারবেন না । ধর্মঘট করলে তাঁদের উপর জরিমানা, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে । জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের উপর শুধু এই নিয়ম আরোপিত ছিল । জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কোনও ধর্মঘটের আগে ছয় সপ্তাহের নোটিস দিতে হয় ।
- অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড বিলে কারখানা, খনির শ্রমিকরা সাহায্য পাবেন । কিন্তু প্রয়োজন আরও বেশি বলে দাবি শ্রমিক সংগঠনগুলির । সেক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলিও কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবাদ-আন্দোলনে যোগ দিয়েছে । এমনকী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘও শ্রম বিলগুলির তীব্র বিরোধিতা করেছে ।
এইদিকে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত । 20 সেপ্টেম্বর ধ্বনিভোটে রাজ্যসভায় জোড়া কৃষিবিল পাশ হওয়ার পরেই উত্তপ্ত হয় রাজ্যসভা । তৃণমূল, কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলও তীব্র প্রতিবাদ করে । তার জেরে সাসপেন্ড হন তৃণমূলের ডেরেক ও'ব্রায়েন সহ আটজন সাংসদ । বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল কৃষক বিরোধী । ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) কৃষকরা পাবেন না বলে আশঙ্কা করছে বিরোধীরা । কৃষিজমিতে বাজারের আধিপত্য বাড়বে । বড় ঠিকাদারদের দ্বারা কৃষক শোষণ বাড়বে, এমনকী কৃষকদের জমির অধিকার হারানোর ঝুঁকিও বাড়বে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের । বিরোধীশূন্য সংসদে পাশ হয়ে যায় তৃতীয় কৃষি বিলটিও । পিঁয়াজ, আলু, ভোজ্য তেল অত্যাবশকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ে ।
প্রতিবাদে আজ সকাল থেকেই সংসদ চত্বরে 'কৃষক বাঁচাও' প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সাংসদরা । বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিরোধীদের । তার মধ্যেই পাশ হল শ্রম বিল । এরপর বিরোধিতা আরও কি জোরদার হবে ?
কৃষি বিলের বিরুদ্ধে সংসদ চত্বরে প্রতিবাদ বিরোধীদের, বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ