দিল্লি, 6 সেপ্টেম্বর : কিছুক্ষণ আগেই শুনেছেন তাঁকে তিহার জেলে যেতে হবে । মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । সন্ধ্যার দিকে আদালতের বাইরে এলেন । সাংবাদিকরা একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ল । ধেয়ে এল প্রশ্ন । কিছুটা হাসলেন । নির্লিপ্ত হাসি নিয়েই বললেন, "দেশের অর্থনীতি নিয়েই বেশি চিন্তিত ।"
INX দুর্নীতি মামলায় এতদিন ছিলেন CBI হেপাজতে । গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ঠাঁই হল তিহার জেল । আইনজীবীরা চেষ্টা করেছিলেন । বয়সের 'দোহাই'ও দেওয়া হয়েছিল । কিছুতেই কিছু হয়নি । আপাতত আগামী দু'সপ্তাহ তিহার জেলেই কাটবে চিদম্বরমের ।
74-এর চিদম্বরম থাকবেন 7 নম্বর জেলের নয় নম্বর ওয়ার্ডে । 7 নম্বর জেলে বন্দী আছে 600-700 । বেশিরভাগই মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত । যদিও এই ব্লক আর্থিক তছরুপে অভিযুক্তদেরই জায়গা । একসময় এই তিহার জেলেই রাত কেটেছে পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরমের ।
গতকাল CBI-এর বিশেষ আদালতে চিদম্বরমের 'তিহার-যাত্রা' রুখতে অনেক চেষ্টা করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল । শেষপর্যন্ত কিছু বিশেষ সুবিধা আদায় করে নেন । এর মধ্যে রয়েছে চিদম্বরমের জন্য আলাদা সেল, একটি খাট (তিনি মাটিতে শুতে পারেন না আবার তিহার জেলে অন্য বন্দীদের খাটে শোওয়ার অনুমতি নেই), ওয়েস্টার্ন-স্টাইল বাথরুম, নিরাপত্তা ও ওষুধ ।
আদালতের নির্দেশের পরই দিল্লি পুলিশের কনভয় রওনা দেয় তিহারের উদ্দেশে । ভ্যানে একাই ছিলেন চিদম্বরম । মাঝে মাঝে চেনা-পরিচিত সাংবাদিকদের দেখে হেসেছেন ।
এত বড় একজন রাজনীতিবিদ জেলে আসছেন । স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত সকলে । যদিও তিহার জেলের ডিরেক্টর জেনেরাল সন্দীপ গোয়েল বলেন, "জেল জেলই । আমরা শুধু আদালতের নির্দেশ মানব । কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হবে না ।" তিনি জানান, অন্য বন্দীদের মতোই চিদম্বরমকে দেখা হবে ।
আগামী 14 দিন (19 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেপাজত দেওয়া হয়েছে) জেলের ডাল-রুটিই খেতে হবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে । জেল ক্যান্টিন থেকেও খেতে পারেন । সকালে উঠে অন্য বন্দীদের মতো প্রার্থনায় অংশ নিতে হবে ।
এর আগে মোট 15 দিন CBI হেপাজতে ছিলেন চিদম্বরম । সূত্রের খবর, 90 ঘণ্টায় তাঁকে 400-র বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে । বেশিরভাগই INX দুর্নীতি সংক্রান্ত । শেষ দু'দিন শুধু তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি ।
পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন 2007 সালে বিদেশ থেকে 305 কোটি টাকার তহবিল পাওয়ার জন্য INX মিডিয়াকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি । এর বিনিময়ে তাঁর ছেলে কার্তি চিদম্বরমের সংস্থাকে বিরাট অঙ্কের ঘুষ দেয় INX মিডিয়া । যদিও চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন । তাঁদের দাবি ধোপে টেকেনি । 21 অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয় চিদম্বরম । আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কার্তি ।
INX দুর্নীতি কাণ্ডে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ দায়ের করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) । এই মামলার শুনানিও চলছে জোরকদমে ।