দিল্লি : অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (OFB) কে কর্পোরেট করতে সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক KPMG অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডকে খৈতান অ্যান্ড কম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে কনসাল্টেন্সি এজেন্সি হিসেবে নিযুক্ত করেছে । ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস (DIB) এ সরকারি ও বেসরকারি ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ইদানীং বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে । একটি মাত্র বিষয়, যা নিয়ে অনেক মতামত জ্ঞাপন করা হচ্ছে, তা হল OFB কে কর্পোরেট করে তোলার বিষয় । তাৎক্ষণিক ফল পাওয়ার জন্য কিছু সময়ের জন্য এটা কার্যকরী করা হচ্ছে বলে অনেকেই তা মনে করছেন । জাতীয় নিরাপত্তার দিকটি সরকারি ও বেসরকারি ভূমিকা অধিকাংশ দেশেই স্পর্শকাতর বিষয় । ঠান্ডা যুদ্ধের পরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উন্নত অর্থনীতিগুলিতে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির অংশীদারিত্ব দেখা গিয়েছে । তার কারণ সেনাবাহিনী সংকুচিত হওয়া এবং অস্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়া । LAC তে যে ভাবে সম্মুখসমরের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে, তাতে বলা যায় যে ভারতে নিরাপত্তার চিত্রটি একেবারে বিপরীত । খরচ সংক্রান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে DIB কে কমিয়ে দেওয়া খুবই জরুরি । কিন্তু এই কাজ যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে করতে হবে । যাতে সাংগঠনিক অনিশ্চিয়তা ও বাধাগুলিকে হ্রাস করা যায় ।
কিছু সময় আগে MOD কনসালট্যন্ট হিসেবে প্রাইজ ওয়াটার হাউজ কুপার্স (PwC) কে নিযুক্ত করেছিল । এর উদ্দেশ্য ছিল আর্মি বেস ওয়ার্কশপ (ABW) এ কৌশলগত নির্দেশের ব্যবস্থা করা এবং GOCO উদ্যোগের পরিকল্পনাকে প্রয়োগ করা । যার সেনা বাহিনীর অস্ত্র ও সরঞ্জামের সম্ভারে MRO সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল । একটা বিষয় যা সামনে এসেছে, তা হল কোর কন্ট্রোল অভিযানের পুননির্মাণের বিষয়টি বেসরকারি অপরাটেরদের হস্তান্তর করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর বদ্ধমূল ধারণা । এটা শেষপর্যন্ত সমঝোতাহীন শর্তে বদলে গিয়েছিল । নেতারা শৃঙ্খলাবদ্ধ সহযোগিতায় অভ্যস্ত নন । তাই দুরদৃষ্টিহীন ভাবে যে কোনও উপায়ে GOCO প্রয়োগ করতে চেষ্টা করছেন । দাম দেওয়ার জন্য একেবারে সেরা অপেশাদার উপায়ে বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে । ABW হল ইঞ্জিনিয়ারিং দুর্গের বাস্তবাদী সংকলন । তারা জানে কীভাবে একটি অপ্রচলিত তালিকাকে প্রয়োজনীয় মিশনের জন্য তৈরি করতে হয় । এর জন্য ব্যবহার করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা নানা প্রযুক্তিকে । এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে । সেই কারণেই তিন দশকের পুরনো বফর্স এখনও LC/LAC তে মুখ্য কামান হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এর কারণ এর জ্ঞানের গুপ্ত ভান্ডার । অনেক উচ্চতায় পথ তৈরি করা এবং বন্দুক ব্যবহার করা ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক কাজ হয় । বিশ্বের পরিস্থিতিকে আরও ভালো করে বুঝতে হবে । দেশে দীর্ঘ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে । উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় USA ও UK যে শিক্ষা নিয়েছিল, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে । কারণ, ভারসাম্যযুক্ত সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব (সংকরায়ন) এর মাধ্যমে কোনও মিশনকে উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত করা, উৎসাহের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং অভিযানের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে GOCO এর প্রবক্তা ওই দেশগুলিই । LAC তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর প্রথাগত প্রস্তুতির বিষয়টির গুরুত্ব আবার সামনে এসেছে এবং MRO সংক্রান্ত চুক্তি করার আগে সেনা বাহিনী এই বিষয়টি আরও একবার ভেবে দেখবে ABW এর উপরে সরাসরি কতৃত্ব দেওয়ার আগে । একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ককে অভিযান সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে ধাক্কা দিতে পারে ।
অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলি (OF) কয়েক বছর ধরে সশস্ত্র বাহিনীকে এমন অস্ত্র এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা হয় DRDO দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল অথবা TOT বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল । OF গুলিতে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের গুণমান, খরচ এবং সময়সূচি সম্পর্কে সশস্ত্র বাহিনী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । ঠিক সময়ে কাজ শেষ করা, স্টাফিংয়ের ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হওয়ার মতো শিল্পের সবচেয়ে ভালো অনুশীলনগুলি চালু করে তাদের আধুনিক করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । তবে OF গুলি যে সুবিধা দেয়, সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে । এর মধ্যে রয়েছে – সংকটের সময় কাজের গতি বৃদ্ধি করে আরও বেশি অস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রস্তুত করা, যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা সিস্টেমগুলির তাৎপর্য বৃদ্ধি করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সাব সিস্টেম সহ রক্ষণাবেক্ষণকারীদের সরবরাহের ব্যবস্থা করা । ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এই অভ্যাসই বজায় রেখেছিল সমস্ত উন্নত দেশগুলি । দুইটি যুদ্ধ এক সঙ্গে লড়াই করা যাবে বলে CDS যে কথাটি বলেছেন, তার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে এই কনসালটেন্সির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা উচিত । যেমন, সেনা জওয়ানদের উচ্চ ক্ষমতাযোগ্য অ্যাসল্ট রাইফেল, ট্যাঙ্ক, বন্দুক দিতে হবে । যা শেষ পর্যন্ত কাজ করবে । তুষারে ঢাকা পর্বত চূড়াতেও যার কার্যকারিতা থাকবে । এই কনসালটেন্সিকে মুক্ত পরিমণ্ডলে OFB এর সঙ্গেই কাজ করতে হবে । তাদের বিরুদ্ধে নয়। যদিও PwC ‘আমরা বনাম তোমরা’ নীতি গ্রহণ করেছে GOCO এর জন্য । এটি মনে রাখা দরকার যে যখন স্পটলাইট মানুষের উপরে থাকে তখন সংস্থাগুলিতে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন হয় । ফলাফল এবং জবাবদিহির উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের সুস্থতা, কাজ এবং জীবন ভারসাম্যের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে । প্রযুক্তি কোনও চ্যালেঞ্জ নয় । তবে সংস্কৃতি অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ । সংস্কৃতি সবসময় সহযোগী, উদ্ভাবনী, উচ্চ সম্পাদনকারী, বিশ্বাসী বা স্বচ্ছ হতে পারে । অন্যথায়, এই প্রচেষ্টা সেভাবে কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । যার ফলে কাজ অর্ধেক সম্পূর্ণ ও ব্যহত হবে । MOD এর অধীনে বেশ কিছু DPSU রয়েছে । যাদের আগেই কর্পোরেট করে দেওয়া হয়েছে । তারা এখনও গুণমান, খরচ ও সময় বেশি ব্যায় করার সমস্যার সম্মুখীন হয়নি । উদ্ভাবন সংক্রান্তও কোনও সমস্যা হয়নি । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানিকে হারানোর জন্য মিত্র শক্তিকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল প্রতিরক্ষার উদ্ভাবন । দুইটি লড়াই এক সঙ্গে লড়তে গেলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকেও এটা অনেকটা সাহায্য করবে ।
প্রধানমন্ত্রী যদি আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটাকে বাস্তবে পরিণত করতে হবে । DIB কে এই বিষয়ে নিজেদের প্রসারিত করতে হবে । OF ও DPSU গুলি হল স্থানীয় DIB এর ভিত্তি । কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে অস্ত্রের মান উন্নত করতে হবে । তারা নিম্ন স্তরের সমাবেশের জন্য জায়গা, মুদ্রণ এবং উপাদান উৎপাদনের জায়গা হতে পারে না । তাদের আরও উচ্চস্তরের গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করতে হবে । এটা শুধু ভারত মাতাকে শিল্পের ভিত্তিতে নিরাপত্তা দেবে তাই নয় । অসামরিক ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে । এটি বেসরকারি খাতের সঙ্গে সাব সিস্টেম স্তরের সহযোগিতার সঙ্গে OF গুলিতে মূলগত দক্ষতা এবং উৎপাদনের সংকরায়নের আরও উপর জোর তৈরি করতে পারবে । সেনার কার্যকারিতা তৈরি করতে হলে অস্ত্রের প্রযুক্তির সম্ভারকে এক জায়গায় আনতে হবে । অস্ত্রের প্রস্তুতকারক ও রফতানি কারক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে ভারতকে এই ধরনের প্রযুক্তির উন্নতি করার দিকে নজর দিতে হবে । প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাপূরণ করতে হলে খরচের থেকে কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে OFB কে কর্পোরেট করতে হবে ।
(লেখক : লেফটেন্যান্ট জেনারেল (ড.) এ বি সিং, PVSM, AVSM, VSM, ADC । তিনি প্রাক্তন DGEME ও DGIS এবং সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাইব্যুনালের সদস্য ।)