দিল্লি, 12 মে : ঘরে-বন্দী ভারত । COVID-19 মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । দেশের একাংশ ঘরে থেকে সুস্থ থাকার কথা ভেবেছে, অন্য এক অংশের ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে । লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরেই প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক মাইলের পর মাইল হেঁটে ভিন রাজ্য থেকে নিজ রাজ্যে ফিরেছেন-ফিরছেন ।
মাঝ পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের । অনেক প্রাণ কেড়েছে দুর্ঘটনাও । যেমন, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে মালগাড়ি পিষে দিয়েছে 16 জন ঘুমন্ত শ্রমিককে । তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত লকডাউনের কারণে মৃত্যু 383 জনের (10মে পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)। এবং এই মৃত্যুর কারণ কোরোনা সংক্রমণ নয় ।
হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দুই শ্রমিকের । বিহারের দুই পরিযায়ী শ্রমিক ফেরার সময় আজ সকালে তাঁদের গাড়ি চাপা দেয় । একজনের ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় । অন্যজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয় । গাড়িটি গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরেই ধাক্কা দিয়েছে বলে অভিযোগ । গাড়িচালক পলাতক । অন্যদিকে রায়বারেলিতে সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার সময় 25 বছরের শিবকুমার দাসকে গাড়িতে ধাক্কা দেয় । ঘটনাস্থানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।
মধ্যপ্রদেশের 20 জন পরিযায়ী শ্রমিক রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন । ক্লান্ত হয়ে রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়েন । 8 মে একটি মালগাড়ির ধাক্কায় 16 জনের মৃত্যু হয় । পরিবার ছেড়ে মহারাষ্ট্র গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে । লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ , প্রায় অনাহারে দিন কাটছিল । ওই দলের এক শ্রমিক জানিয়েছিলেন, বাড়ি ফেরার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি । তাই বাধ্য হয়েই হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত ।
কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতে মৃত্যু 2,293 জনের । তেজেশ জি.এন, কণিকা শর্মা এবং আমনের সমীক্ষা অনুযায়ী একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয় । সেই রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যা এবং কারণ উল্লেখ করা হয় । 10 মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে এই রিপোর্টটি বানানো হয়েছে । (আজ সকালে দুই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু নথিভুক্ত নয় ।)
অনাহার এবং আর্থিক দুরবস্থা - 47
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে এবং লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে – 26
পুলিশ নির্মমতা এবং অন্যান্য হিংসাত্মক ঘটনায় – 12
বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় গাফিলতি – 40
সংক্রমণের ভয়ে, একাকিত্ব এবং ঘর-বন্দী থাকার অবসাদে আত্মহত্যার সংখ্যা – 83
মদ বিক্রি বন্ধে মৃত্যু এবং আত্মহত্যা – 46
পরিযায়ী শ্রমিকরা হেঁটে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনা এবং ট্রেন দুর্ঘটনায় – 74
লকডাউনের সময় অপরাধমূলক ঘটনায় মৃত্যু (সাম্প্রদায়িক নয়) – 14
যেসব মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায়নি বা আরও তথ্য আসা বাকি – 41
(তথ্যঋণ - NON VIRUS DEATHS )
তেজেশ জি.এন, কণিকা শর্মা এবং আমন একাধিক তথ্য জোগাড় করেন । তাঁরা নিজেদের “ফ্রিলান্স স্কলারস অ্যান্ড স্টুডেন্ট ভলানটিয়ারস যাঁরা অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড গবেষণা এবং আর্থ-সামাজিক অধিকারে আগ্রহী” বলে পরিচয় দেন । তাঁরা প্রতিদিন একটি ওয়েবসাইটে এই তথ্য আপডেট করেন । লকডাউনের সময় মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেন, যাঁদের কোরোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়নি । সেই নথিতে তাঁরা মৃত্যু কারণ হিসেবে আত্মহত্যা , চিকিৎসার গাফিলতি, পুলিশ নির্মমতা, পথ দুর্ঘটনার মত কারণকে উল্লেখ করেছেন ।
কণিকা শর্মা অ্যামেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে একটি বিশেষ ক্ষেত্রের উপর গবেষণামূলক কাজ করছেন । তিনি এই বিষয়ে বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা তথ্য জোগাড় করা শুরু করি । দেখা যায় অনেক মৃত্যুর খবর আসছে । হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় বা চিকিৎসার গাফিলতিতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ।”
কোরোনা সংক্রমণের ফলে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর হার আগের থেকে কম । 24 ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে 83 জনের । সুস্থ হয়েছেন এখনও পর্যন্ত 22,455 জন । এইদিকে লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক । দেশের অর্থনীতিও ধুঁকছে বলে বারবার ইঙ্গিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা । পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতির জন্য বিরোধীরা কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন । চালু হয়েছে বিশেষ ট্রেন পরিষেবা ।
লড়াই চলছে-চলবেও । লকডাউন উঠে গেলেও বিপদ আছে । আবার চললেও তার ফল ভালো হবে না, তাও স্পষ্ট । সব মিলিয়ে এক নতুন লড়াই । অস্তিত্ব বজায় রাখার লড়াই । প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই । আগামী বাসযোগ্য করার লড়াই ।