দিল্লি, 27 জুলাই: কেবল সীমান্ত দ্বন্দ্ব কিংবা রাজনৈতিক কৌশল নয়, উত্তর লাদাখে ভারত-চিন সামরিক দ্বন্দ্বের পিছনে রয়েছে অন্য কারণও। লাদাখের এই অঞ্চলে উপস্থিত থাকতে পারে গ্যাস ও তেল সহ হাইড্রোকার্বন রিজ়ার্ভ এবং ভূ শক্তিও।
পূর্ব লাদাখের আকসাই চিন অঞ্চল নিয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা হয়তো ভুল প্রমাণ হতে চলেছে, কারণ বিভিন্ন গবেষণায় এই শীতল মরুভূমি অঞ্চলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য উঠে আসছে।
ভারত ও চিন, উভয়ই পেট্রল ও ডিজ়েল অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে । ভারত তেলের চাহিদার 82 শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি করে। তবে 2022 সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণ শক্তির ব্যবহার, ইথানল ফুয়েলের ব্যবহার করে এই চাহিদা 67 শতাংশে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে চিন তাদের মোট তেল চাহিদার 77 শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করে। সে ক্ষেত্রে নতুন খনিজ শক্তির অবস্থানের খোঁজ ভবিষ্যতে শক্তির সুরক্ষা এনে দিতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ONGC-র এক আধিকারিক ETV ভারতকে জানান, " দীর্ঘদিন ধরেই লাদাখ অঞ্চলে হাইড্রোকার্বন মজুত থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে অনুমান করা হচ্ছিল । কারণ এই অঞ্চলের একটি বড় অংশ টেথিস সাগরের সমুদ্রতল ছিল যা কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে পশ্চিম ও মধ্য হিমালয় হিসেবে গড়ে ওঠে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীন সমুদ্রতলের নিচে হাইড্রোকার্বন মজুত থাকতে পারে ।
টেথিয়ান হিমালয় জ়োনটি লাদাখের জ়ানসকার পর্বতের 70 কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে খনিজ গ্যাস বা তেল সন্ধানের অন্যতম এলাকা হয়ে উঠতে পারে। পূর্বে তিব্বতের মালভূমির দক্ষিণ অঞ্চল থেকে জ়ানসকার পর্বত পর্যন্ত বিস্তারিত । কাশ্মীর, চাম্বা এবং স্পিতি অবধি এই এলাকা বিস্তৃত।
2018 সালের সেপ্টেম্বরে ONGC-র গবেষক, জিওলোজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়, ইট্যালির Eni আপস্ট্রিম অ্যান্ড টেকনিক্যাল সার্ভিস, পাকিস্তান পেট্রলিয়াম লিমিটেড এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একটি যুগ্ম গবেষণার রিপোর্টে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতির প্রবল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। 77 পাতার ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে সম্ভাব্য হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান করা যেতে পারে কারণ এই অঞ্চলে বিভিন্ন স্ট্যাটিগ্রাফিক স্তরে পেট্রলিয়াম, গ্যাস ও তেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ের ভারতীয় অংশে টেকটোনো- পল পরিবেশের কারণে উপরের ভাগে গ্যাসের উপস্থিতি থাকায়( উদাহরণস্বরূপ, জ্বালামুখী মন্দির) হাইড্রোকার্বন উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে একইভাবে তেল ও গ্যাসের উপস্থিতিও থাকতে পারে।
ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা, উচ্চতা, প্রবল ঠান্ডা সহ নানা কারণে এই অঞ্চলের অধ্যায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ONGC অধিকর্তা জানান, যথাযথ অনুসন্ধানের জন্য নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ সহ নানা পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন, যা হিমালয়ের এই উচ্চ উচ্চতায়, ভূমিকম্প ও তুষারপাতের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে করা সম্ভব নয়।