হায়দরাবাদ, 2 অক্টোবর : গত 10 মাস ধরে গোটা বিশ্ব একজোট হয়ে কোরোনা ভাইরাসের এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পৃথিবীতে কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে মৃতের সংখ্যা 10 লক্ষ পেরিয়েছে । শীর্ষ স্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবা যুক্ত দেশ থেকে শুরু করে ভারতের মতো দেশ, যেখানে নামমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে, সর্বত্র প্যানডেমিকের জেরে এতদিন ধরে চালু থাকা সমস্ত ব্যবস্থার ফাঁকফোকর বেড়িয়ে পড়েছে । সংক্রমণ যত প্রগাঢ় হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলি অ কোভিড স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সংগ্রামে নেমে পড়েছে। এমনকী, সাম্প্রতিক ল্যানসেট সমীক্ষায় 15টি এমন রোগকে চিহ্নিত
করা হয়েছে, যা করোনার থেকেও বিপজ্জনক। এর প্রতে্যকটিতে বছরে 10 লক্ষ মৃতু্য হয়। এই সমীক্ষায় আমাদের প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনার সংস্কারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
কার্ডিয়াক রোগব্যধি (1.78 কোটি), ক্যানসার (96 লাখ), মূত্রাশয়ের রোগ (12 লাখ) থেকে শুরু করে যক্ষ্মা (11 লাখ), এই সব রোগে প্রতি বছর 4.43 কোটি মানুষের মৃতু্য হয়। এই সব রোগের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল বেশিরভাগ জায়গায় নিম্ন মানের। কোভিড১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম তিন মাসে বিশ্বজুড়ে 2.84 কোটি অস্ত্রোপচার (যার মধে্য ভারতেই 5.8 লাখ) অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুযায়ী, চলতি বছরে চিকিৎসাগত সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার ফলে 16.6 লাখ মানুষের যক্ষ্মায় মৃতু্য হতে পারে। এই পরিস্থিতি কি আদৌ বদলাবে!
ন্যাশনাল হেলথ মিশনের সুমারি অনুযায়ী, শুধুমাত্র 2020 সালের মার্চ মাসেই এদেশে লাখ লাখ শিশু, সমস্ত টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে । অ কোরোনা রোগব্যধি নির্ধারণ করার কোনও চিকিৎসক নেই । হায়দরাবাদের এক অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা এবং তাঁর ভ্রুণের মৃতু্য হয়েছিল কারণ হাসপাতালগুলি তাঁকে ভরতি করতে অস্বীকার করেছিল। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলি লকডাউন চলাকালীন ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এবং শিশু জন্মের মতো জরুরি পরিষেবা বাতিল করে দিয়েছিল। কেন্দ্রের তরফে যদিও হাসপাতালগুলির উদ্দেশে্য কঠোর নিয়ম-নীতি জারি করা হয়েছিল, যাতে তারা তা অনুসরণ করে কাজ করে। কিন্তু সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, কনটেনমেন্ট জ়োনগুলিতে চোখের রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা হবে। সরকারি এবং অসরকারি তরফে জারি করা নিষেধাজ্ঞার জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এখন অনেকেরই মরীচিকা বলে মনে হচ্ছে। বর্ষার মরশুমে মশবাহিত রোগজ্বালার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর জোর দিতে PMO-র তরফে সরকারি নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবের ছবিটা খুবই করুণ। আনুমানিক 9 কোটি ভারতীয় বর্তমানে বিরল গোত্রের রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া এবং মাসকুলার ডিসট্রফির মতো রোগে আক্রান্ত । লাখ লাখ আরও মানুষ অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছেন। হাসপাতালগুলিতে বর্তমানে যেভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে, সেখানেই দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থে্যর অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে । সরকারের উচিত এনিয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া এবং অ কোভিড স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানের জন্যও সমান হারে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা।