ইট্যালিতে কোরোনা ভাইরাস আক্রান্তর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । ইতিমধ্যেই সেখানে কোরোনা আক্রান্তর সংখ্যা অন্তত 10,000 ৷ এবং 600-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে । তবু যে যে এলাকায় দ্রুত রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই সেই এলাকায় কোরোনার সংক্রমণ কমে আসছে । ভারতে নিযুক্ত ইট্যালির রাষ্ট্রদূত অন্তত সেটাই দাবি করছেন । কোরোনার আঁতুড়ঘর চিনের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় যে দেশে কোরোনা আক্রান্ত এবং কোরোনায় মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি , তা হল ইট্যালি।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মাকে দেওয়া এক ইমেলভিত্তিক সাক্ষাৎকারে ইট্যালির রাষ্টদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা কোরোনাকে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ হিসাবে অভিহিত করেছেন । তিনি জানিয়েছেন, এর মোকাবিলা করতে ইট্যালি যথাসাধ্য চেষ্টা করছে । রাষ্ট্রদূত যদিও একটি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ভারত কোরোনার সংক্রমণ রুখতে কার্যত যে নিজেকে অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কতদূর সফল হবে? না কি উলটে আতঙ্ক ছড়াবে? যদিও তিনি আশ্বস্ত করেছেন, 62 মিলিয়ন মানুষের দেশ ইট্যালি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্বাস্থ্যরক্ষার পরিকাঠামোসম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে অন্যতম এবং কোরোনার সঙ্গে লড়াই করার জন্য এই দেশের গবেষণাগার এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলি বর্তমানে দিন রাত এক করে কাজ করে চলেছে । ইট্যালি, চিন, কোরিয়া, ফ্রান্স, ইরান ও স্পেন মোট 15টি দেশের নাগরিকদের 15 এপ্রিল পর্যন্ত ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে ভারত । ব্যতিক্রম শুধুমাত্র কূটনীতিবিদ, সরকারি আধিকারিক, রাষ্ট্রসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংগঠন, প্রকল্প এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ‘জরুরি ভ্রমণ’। বুধবার এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, 15 থেকে 23 মার্চ পর্যন্ত রোম এবং মিলানে তাদের কোনও বিমান চলাচল করবে না । জাতীয় এই উড়ান পরিবহন সংস্থার যে বিমানটি বুধবার ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল, সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে একটি আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভাইরাস প্রতিরোধক পদক্ষেপের অঙ্গ হিসাবে বিমানের প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয় । রাষ্ট্রদূত লুকা জোর দিয়ে বলেছেন যে কোভিড-19 সংক্রমণের জেরে জনস্বাস্থ্যে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা গোটা বিশ্বকে বাধ্য করেছে একজোট হয়ে এর মোকাবিলা করতে ।
প্রশ্ন : ইট্যালির বর্তমান পরিস্থিতি এখন ঠিক কীরকম? রিপোর্ট তো বলছে ভাইরাসের সংক্রমণে দেশ একেবারে কাবু । ইট্যালি এবং জাপানের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে চলেছে ।
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
স্বচ্ছতার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে ইট্যালি সরকার কোরোনা সংক্রমণ নিয়ে দেশের প্রতি মূহূর্তের হাল-হকিকত আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আনছে । নিয়মিত স্তরে দেশের পরিস্থিতি জানাচ্ছে ইট্যালির সিভিল প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্ট । এখনও পর্যন্ত বলতে গেলে, আক্রান্তর সংখ্যা আরও বেড়েছে । আর এই সংখ্যাকে কোনওভাবেই নজর আন্দাজ করা যায় না । কিন্তু এর পাশাপাশি এমন কিছু শহরও রয়েছে, যেখানে রোগ প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় আক্রান্তর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে, যেমন সিটি অফ কোদোগনো । পরে প্রতিরোধমূলক এইসব ব্যবস্থা গোটা দেশেও কার্যকর করা হয়েছে । ইট্যালির সরকার এই বিষয়ে যে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে, ইতিমধ্যেই তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে WHO এবং EU। আমরা আত্মবিশ্বাসী, যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত সক্রিয় হয়ে ফল আনবে । গোটা বিশ্বে ইট্যালিই করোনা আক্রান্ত একমাত্র দেশ নয় । বিষয়টি বিশ্বজনীন এবং ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যা যা করণীয়, ইট্যালি তার সবই করছে ।
প্রশ্ন : এই মূহুর্তে কি ইট্যালিতে পর্যাপ্ত টেস্টিং সেন্টার এবং চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে?
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
ইট্যালির স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত পরিষেবার মধ্যে অন্যতম । আমাদের গবেষণাগার এবং চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য দিন রাত এক করে কাজ করছে । একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন । গত বছর ব্লুমবার্গ গ্লোবাল হেলথ ইনডেক্স-এ ইট্যালি দ্বিতীয় স্থানে ছিল । এমনকী, ইট্যালি বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ, যেখানকার নাগরিকদের সর্বোচ্চ আয়ু 83.4 বছর । আর এই দেশ গর্বিত তার জনসংখ্যাকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করতে পেরে । ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মহিলাদের আয়ু 64.2 বছর এবং পুরুষদের আয়ু 63.5 বছর । ইট্যালিতে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক 67.2 বছর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে 67.6 বছর । তবে এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য আমাদের দেশের স্বাস্থ্যকর পথ্য এবং উন্নত মানসম্পন্ন, নিরাপদ খাবার দাবারেরও৷
প্রশ্ন : সম্প্রতি এখানে বিদেশমন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন । সেখানে আলোচনায় কোন কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল?
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
ইট্যালির দূতাবাস নিরন্তর ভারতীয় কতৃর্পক্ষের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করে চলেছে । যার মধ্যে নির্দিষ্ট করে নাম করতে হয় বিদেশমন্ত্রক, স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণমন্ত্রক এবং পর্যটনমন্ত্রকের । তাদের দক্ষ এবং দ্রুত সহযোগিতার জন্যই ইট্যালি সময়ের মধ্যে এই ইশুতে সক্রিয় পদক্ষেপ করতে পেরেছে । এজন্য তাদের ধন্যবাদ ।
প্রশ্ন : ইট্যালির প্রধানমন্ত্রী গিওসেপ্পে কন্তে বলেছেন যে ইট্যালিতে পানশালা, স্যালোঁ, অ-জরুরি সংস্থা, দপ্তরগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হবে । কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে এই সব পদক্ষেপের দরুন ইট্যালির অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা কি বলতে পারবেন?
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
ইট্যালির অর্থনীতিতে কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব কতটা, কী পড়বে, তা এত তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব নয় । তবে এর জেরে উদ্ভূত জরুরি অবস্থার ফলে যে আর্থিক বাধা এসেছে, সে সম্পর্কে সরকার সচেতন । আর এই অভূতপূর্ব সংকটের জন্য ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে আক্রান্তের পরিবার এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক সংস্থাগুলির ত্রাণের জন্য 25 বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ।
প্রশ্ন : এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশকে একজোট ও ঐক্যবদ্ধ হতে কি আপনি দেখছেন? বিশ্বের অর্থনীতির সামনে বর্তমানে কী কী চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে আছে?
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
কোভিড-19-এর অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে যে স্বাস্থ্যরক্ষাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাপী জনহিতকর কাজ । সর্বজনীন স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি বর্তমানে একটি সুদূরপ্রসারী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্বব্যপী কোনও ইশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আন্তর্জাতিক ঐক্যমত এবং সহযোগিতা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই । ইট্যালির পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, ততটুকু সে করছে ।
প্রশ্ন : কোরোনা প্যানডেমিক ঘোষিত হওয়ার পর দিল্লির ইট্যালীয় দূতাবাসে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে?
রাষ্ট্রদূত ভিনসেনজ়ো ডি লুকা :
দূতাবাসের তরফেও ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে প্রতিরোধমূলক কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে । যেমন সব ধরনের গণকর্মসূচিমূলক অনুষ্ঠান বা জমায়েত বাতিল করা হয়েছে । এই তালিকায় 17 মার্চ ইট্যালির জাতীয় দিবস উদযাপন করা থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের উদ্যোগ ছিল । ভিসার জন্য সমস্ত ইন্টারভিউ বাতিল করা হয়েছে । পরিবেশ যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখা যায়, আমরা তার জন্য সুনির্দিষ্ট একাধিক পদক্ষেপ করেছি ।