নয়াদিল্লি, 19 ফেব্রুয়ারি : বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়া নজর রাখতে ভারতীয় সেনা খুব শীঘ্রই তাদের অন্যতম সেরা অস্ত্রটি পেতে চলেছে। উৎক্ষেপণ হতে চলেছে একটি কৃত্রিম উপগ্রহের, যা শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর জন্যই কাজ করবে । এর ফলে যুদ্ধের সংজ্ঞাই বদলে যাবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা ।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র ETV ভারতকে জানিয়েছেন, “উপগ্রহটি অত্যন্ত উচ্চ রেজ়িলিউশনের ছবি তুলতে সক্ষম । এর ফলে ভারতীয় সেনার প্রভূত পরিমাণ শক্তি বাড়বে । খুব শীঘ্রই এই উপগ্রহের উৎক্ষেপণ হবে । এর প্রধান কাজ হবে সেনাবাহিনীর যোগাযোগ ও নজরদারি ব্যবস্থার উন্নতি করা এবং তথ্য সংগ্রহ করা । এর ফলে ড্রোন পরিচালনা ব্যবস্থারও উন্নতি হবে।”অর্থাৎ দেশের সেনা এমন এক নেটওয়ার্ক পদ্ধতি পেতে চলেছে, যা হবে অত্যন্ত নিরাপদ । গোপনীয়তাই হবে যার প্রধান লক্ষ্য । এটি পরিচালিত হবে সিগনালস ডিরেক্টরেট পদ্ধতিতে । সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে আগে থেকে খবর পেতে, পাকিস্তানের সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখতেও সাহায্য করবে এই উপগ্রহের বিশেষ ক্ষমতা । আক্ষরিক অর্থেই এটি ভারতীয় সেনার জন্য ‘মহাকাশ নজরদার’-এর কাজ করবে ।
সীমান্তে কড়া নজরদারি ছাড়াও বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঞ্চল এবং বিভিন্ন সেনাছাউনির উপরেও নজর রাখবে এই উপগ্রহ । ভারতের 55 টি কৃত্তিম উপগ্রহের মধ্যে 8-10 টি সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করে থাকে । মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে সেনার ব্যবহারের জন্য আরও উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হবে । ISRO এখনও পর্যন্ত 34টি দেশের মোট 327টি কৃত্তিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছিল 15 ফেব্রুয়ারি 2017 সালে, যখন PSLV-C37 মিশনে একসঙ্গে 104টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
2019 সালের নভেম্বরে উৎক্ষেপণ হওয়া কার্টোস্যাট 3 উপগ্রহ এতটাই শক্তিশালী যে, তা পাঁচশো কিলোমিটার উপর থেকে 25 সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট বস্তুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম । ভারতীয় উপগ্রহের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে ভালো রেজোলিউশান । 2019 সালের এপ্রিলে EMISAT উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করে ISRO । এই কৃত্রিম উপগ্রহ ভূপৃষ্ঠের যে কোনও ইলেকট্রনিক সিগন্যাল চিহ্নিত করতে পারে । অর্থাৎ ভারতের নজর এড়িয়ে শত্রুপক্ষ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে না এই প্রযুক্তির কারণে । এই উপগ্রহের নজর এড়িয়ে বিপক্ষের রাডারও কাজ করতে পারবে না । পাশাপাশি অন্য একটি উপগ্রহ, মাইক্রোস্যাট আবার রাতেও ছবি তুলতে সক্ষম ।
ভারতীয় নৌবাহিনীর অবশ্য নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ ‘রুক্মিনী’ রয়েছে, যা 2013 সালের অগস্টে উৎক্ষেপিত হয় । ভারতীয় বায়ুসেনারও রয়েছে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ ‘GSAT-7A’ যার 2018 সালের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ হয় । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক CRPF, BSF-এর মতো আধাসামরিক বাহিনীর জন্য সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ও মাওবাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মহাকাশে আলাদা একটি উপগ্রহ পাঠানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রের দাবি, “এই ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ভবিষ্যতে এই ধরনের বাহিনীর জন্যও নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে ।”
দেশের সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা মথায় রেখে এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলি ভারতের বহু আকাঙ্খিত 24 হাজার ছয়শো কোটির 'নেটওয়ার্ক ফর স্পেকট্রাম' (NFS) প্রকল্পের আওতায় একযোগে কাজ করবে, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হল বাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য ভাণ্ডারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া । স্বর, ভিডিয়ো ও তথ্য আদানপ্রদান ছাড়াও আগামী প্রজন্মের উন্নত নেটওয়ার্ককে এক জায়গায় এনে বৃহত্তরও তথ্য বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মিশেল ঘটাতেও সাহায্য করবে NFS ।