ETV Bharat / bharat

দেশজুড়ে রং দে গেরুয়া - pm

মোদি ঢুকে পড়লেন ইতিহাসে । মোদিই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ।

গেরুয়ায় মাতল দেশ
author img

By

Published : May 23, 2019, 11:33 PM IST

Updated : May 24, 2019, 2:40 AM IST

দিল্লি, 23 মে : মিলে গেল বুথ ফেরত সমীক্ষা । দ্বিতীয়বারের জন্য একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এল BJP । দেশের মানুষ আস্থা রাখলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের উপর । অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই বহু যোজন পিছিয়ে থাকতে হল কংগ্রেসকে । পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় নিজেদের ভিত মজবুত করার কাজ করে ফেললেন মোদি-শাহরা । 2014 সালে NDA 336টি আসন পেয়েছিল । যার মধ্যে BJP-র দখলে ছিল 282টি। এবার এখনও যা ট্রেন্ড তাতে BJP একাই 300-এর বেশি আসন পেতে চলেছে । আর NDA-র দখলে আসছে 350টির মতো আসন । গতবারের থেকে কিছুটা আসন বেশি পেতে চলেছে কংগ্রেস । গতবার কংগ্রেসের 44টি সহ UPA-র দখলে ছিল 60 টি আসন । এবার সংখ্যাটা সম্ভবত 90-এর কাছাকাছি হতে চলেছে । স্বাভাবিকভাবেই আসন কমেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ।

শুধু দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসাই নয়, একই সঙ্গে মোদি ঢুকে পড়লেন ইতিহাসেও । মোদিই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন । অর্থাৎ, কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন । ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধি । এই দু’বারই একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস ।

MODI
দিল্লিতে BJP-র কার্যালয়ে মোদিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস

ইতিহাসের ঘরে ঢুকে যাওয়ার পরই দেশবাসীকে অভিনন্দন জানালেন মোদি । বললেন, "ধর্মনিরপেক্ষতার নাম নিয়ে একটা নাটক চলত । 5 বছর ধরে কেউ এ বিষয়ে আর মুখ খোলেনি । এই নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলও ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পড়ে দেশকে বোকা বানাতে পারেনি । ওদের মুখোশ খুলে গেছে ।" এই জয়কে ভারতবাসীর জয় বলে উল্লেখ করে মোদি দাবি করেন, জাতি, ধর্মের নামে অনেকে খেলেন । দেশে এখন দুটোই জাতি । তার একটা দরিদ্র, অন্যটি ধনী । দারিদ্র থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে ।"

BJP-র এ দিনের জয় রাজনৈতিক ভাবে হাত আরও শক্ত করল মোদির । এতদিন, ভারতের অন্যান্য প্রান্তে ভিত মজবুত করলেও, পূর্বে তেমন ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি BJP। তাই এ বার প্রথম থেকেই বাংলার মাটিকে পাখির চোখ করেছিল তারা । মোদি-শাহরা বার বার ছুটে এসেছেন বাংলার মাঠে । একের পর এক সভা করেছেন তাঁরা । তার ফলও হাতেনাতে পেলেন । রকেট গতিতে বাংলার মাটি ফুঁড়ে উঠে এল BJP । পাঁচ বছর আগে যেখানে আসন সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি, আজ সেখানে 16-17 হওয়ার আভাস । মোদিদের নজর ছিল ওড়িশার দিকেও । গতবার নবীন পট্টনায়েকের রাজ্য থেকে মাত্র একটি আসন দখলে রাখতে পেরেছিল গেরুয়া শিবির । এ বার যা গতিপ্রকৃতি তাতে ওড়িশায় 6-7 টি আসন পেতে চলেছে মোদি-শাহ জুটি ।

modi
জয় লাভের পর মোদি-শাহ

শুধু ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গই নয় । গেরুয়া ঝড়ে বেসামাল হিন্দি বলয়ও । প্রথম আসতে হবে উত্তরপ্রদেশের কথায় । গত বার 70-এর উপর আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল BJP । শুধু লোকসভাই নয়, গত বিধানসভা ভোটেও উত্তরপ্রদেশে দাপট দেখিয়েছিল BJP । যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল হাওয়া ঘুরছে । সুযোগ বুঝে বহুদিন বাদে এক মঞ্চে আসেন মায়বাতী-মুলায়ম । কিন্তু, উত্তরপ্রদেশের মানুষ ভালো ভাবে নিল না SP-BSP জোটকে । বরং তার থেকে বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠলেন মোদিরাই । কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও রামমন্দির তৈরি করতে না পারা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, লভ জিহাদ, কোনও ইশুই হাতছাড়া করতে চায়নি বিরোধীরা । অন্য দিকে নজর ছিল জাতপাতের সমীকরণ দিয়ে ভোটের বাক্সের হিসেব উলটে দেওয়া । সেই লক্ষ্যেই কাজটা করেছিলেন অখিলেশ যাদব । তৈরি হয়েছিল "পিসি-ভাইপো" মহাজোট, যাকে বলা হচ্ছিল ‘বুয়া-বাবুয়া গটবন্ধন’, যেখানে সামিল হয়েছিল অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলও । মহাজোটের লক্ষ্যই ছিল যাদব-দলিত-মুসলিম-জাঠ ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা করা । কিন্তু, দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের থেকে দূরে থেকে অখিলেশ-মায়াবতীরা বোধহয় চিনতে ভুল করেছিলেন নিজেদের গড়কে । বোন প্রিয়াঙ্কাকে ময়দানে নামিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাহুল । কিন্তু, স্বপ্ন থেকে বাস্তব যে অনেকটাই দূরে, সে কথা প্রমাণ করল আজকের নির্বাচনের ফল ।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের সমস্ত প্রান্তে লাগাতার হারের পর যখন সারা দেশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব, ঠিক তখনই মৃতসঞ্জীবনী সুধার মতো কংগ্রেসকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল ছত্তিশগড়, রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশ। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে গো-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে BJP-র কাছ থেকে এই তিন রাজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস, যা আক্ষরিক অর্থেই জমিয়ে দিয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের ময়দান । কিন্তু, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন যে সম্পূর্ণভাবে আলাদা লড়াই, সে কথা আজ আবারও প্রমাণিত । এই তিন রাজ্যে নিজেদের দাবি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিল BJP । রাহুল গান্ধি অনেক আশা করে এই তিন রাজ্যে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিলেন সেখানকার মানুষ । অন্যদিকে, কখনও মমতা-কখনও রাহুল । বার বার পট পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছিল চন্দ্রবাবু নাইডুকে । কিন্তু, এ ভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি যে সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন, তা হয়তো ভাবতেই পারেননি চন্দ্রবাবু । যার ফল ভুগতে হলে তাঁকেও । অন্ধ্রপ্রদেশ মুখ ফেরাল চন্দ্রবাবুর দিক থেকে ।

MODI
দিল্লিতে BJP-র কার্যালয়ে মোদিকে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন অমিত শাহ

BJP তথা NDA-এর এই বিরাট সাফল্যের কারণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণ একাধিক। প্রথমত, গোবলয়ে BJP-র ভোটব্যাঙ্কে ব্যাপক ধসের ইঙ্গিত থাকলেও, তা হয়নি। এর জন্য হয়তো কংগ্রেস-সপা-বসপার মধ্যে মত বিরোধের দিকে আঙুল তোলা যায় । মুখে BJP বিরোধিতার কথা বললেও কখনই নিজেদের মধ্যে একতা তৈরি করতে পারেননি রাহুল-অখিলেশরা । দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে BJP। গোবলয়ের ক্ষতি মেরামত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহারের মতো রাজ্যে। দাক্ষিণাত্যে BPJ কখনই শক্তিশালী ছিল না। তবু, কর্নাটক, তেলাঙ্গানায় ভাল করতে চলেছে NDA জোট । তৃতীয়ত, রাহুলের মতো বিরোধীরা নোটবন্দি-রাফাল ইশুতে মোদিকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করেছেন বার বার। কিন্তু, প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেননি । চতুর্থত, পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে বা মহাকাশে দেশের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে মোদি জনমানসে একটা ভাবাবেগ তৈরি করতে পেরেছিলেন । আর সব শেষে বলা চলে বিরোধীরা কোনও গ্রহণযোগ্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী দিতে পারেননি । রাহুল গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা হলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । কংগ্রেসের অনেক শরিকই রাহুলকে নেতা হিসেবে মানতে নারাজ । অন্যদিকে, মমতা-চন্দ্রবাবু-অখিলেশদের বিরোধী জোট কোনও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি । ভোটের পর নেতা ঠিক হবে বলে দাবি করলেও, সেই দাবি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । একই সঙ্গে, এ দিনের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোনও আঞ্চলিক দলের উপর নির্ভর করতে রাজি নয় ।

দিল্লি, 23 মে : মিলে গেল বুথ ফেরত সমীক্ষা । দ্বিতীয়বারের জন্য একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এল BJP । দেশের মানুষ আস্থা রাখলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের উপর । অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই বহু যোজন পিছিয়ে থাকতে হল কংগ্রেসকে । পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় নিজেদের ভিত মজবুত করার কাজ করে ফেললেন মোদি-শাহরা । 2014 সালে NDA 336টি আসন পেয়েছিল । যার মধ্যে BJP-র দখলে ছিল 282টি। এবার এখনও যা ট্রেন্ড তাতে BJP একাই 300-এর বেশি আসন পেতে চলেছে । আর NDA-র দখলে আসছে 350টির মতো আসন । গতবারের থেকে কিছুটা আসন বেশি পেতে চলেছে কংগ্রেস । গতবার কংগ্রেসের 44টি সহ UPA-র দখলে ছিল 60 টি আসন । এবার সংখ্যাটা সম্ভবত 90-এর কাছাকাছি হতে চলেছে । স্বাভাবিকভাবেই আসন কমেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ।

শুধু দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসাই নয়, একই সঙ্গে মোদি ঢুকে পড়লেন ইতিহাসেও । মোদিই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন । অর্থাৎ, কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন । ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধি । এই দু’বারই একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস ।

MODI
দিল্লিতে BJP-র কার্যালয়ে মোদিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস

ইতিহাসের ঘরে ঢুকে যাওয়ার পরই দেশবাসীকে অভিনন্দন জানালেন মোদি । বললেন, "ধর্মনিরপেক্ষতার নাম নিয়ে একটা নাটক চলত । 5 বছর ধরে কেউ এ বিষয়ে আর মুখ খোলেনি । এই নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলও ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পড়ে দেশকে বোকা বানাতে পারেনি । ওদের মুখোশ খুলে গেছে ।" এই জয়কে ভারতবাসীর জয় বলে উল্লেখ করে মোদি দাবি করেন, জাতি, ধর্মের নামে অনেকে খেলেন । দেশে এখন দুটোই জাতি । তার একটা দরিদ্র, অন্যটি ধনী । দারিদ্র থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে ।"

BJP-র এ দিনের জয় রাজনৈতিক ভাবে হাত আরও শক্ত করল মোদির । এতদিন, ভারতের অন্যান্য প্রান্তে ভিত মজবুত করলেও, পূর্বে তেমন ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি BJP। তাই এ বার প্রথম থেকেই বাংলার মাটিকে পাখির চোখ করেছিল তারা । মোদি-শাহরা বার বার ছুটে এসেছেন বাংলার মাঠে । একের পর এক সভা করেছেন তাঁরা । তার ফলও হাতেনাতে পেলেন । রকেট গতিতে বাংলার মাটি ফুঁড়ে উঠে এল BJP । পাঁচ বছর আগে যেখানে আসন সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি, আজ সেখানে 16-17 হওয়ার আভাস । মোদিদের নজর ছিল ওড়িশার দিকেও । গতবার নবীন পট্টনায়েকের রাজ্য থেকে মাত্র একটি আসন দখলে রাখতে পেরেছিল গেরুয়া শিবির । এ বার যা গতিপ্রকৃতি তাতে ওড়িশায় 6-7 টি আসন পেতে চলেছে মোদি-শাহ জুটি ।

modi
জয় লাভের পর মোদি-শাহ

শুধু ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গই নয় । গেরুয়া ঝড়ে বেসামাল হিন্দি বলয়ও । প্রথম আসতে হবে উত্তরপ্রদেশের কথায় । গত বার 70-এর উপর আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল BJP । শুধু লোকসভাই নয়, গত বিধানসভা ভোটেও উত্তরপ্রদেশে দাপট দেখিয়েছিল BJP । যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল হাওয়া ঘুরছে । সুযোগ বুঝে বহুদিন বাদে এক মঞ্চে আসেন মায়বাতী-মুলায়ম । কিন্তু, উত্তরপ্রদেশের মানুষ ভালো ভাবে নিল না SP-BSP জোটকে । বরং তার থেকে বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠলেন মোদিরাই । কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও রামমন্দির তৈরি করতে না পারা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, লভ জিহাদ, কোনও ইশুই হাতছাড়া করতে চায়নি বিরোধীরা । অন্য দিকে নজর ছিল জাতপাতের সমীকরণ দিয়ে ভোটের বাক্সের হিসেব উলটে দেওয়া । সেই লক্ষ্যেই কাজটা করেছিলেন অখিলেশ যাদব । তৈরি হয়েছিল "পিসি-ভাইপো" মহাজোট, যাকে বলা হচ্ছিল ‘বুয়া-বাবুয়া গটবন্ধন’, যেখানে সামিল হয়েছিল অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলও । মহাজোটের লক্ষ্যই ছিল যাদব-দলিত-মুসলিম-জাঠ ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা করা । কিন্তু, দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের থেকে দূরে থেকে অখিলেশ-মায়াবতীরা বোধহয় চিনতে ভুল করেছিলেন নিজেদের গড়কে । বোন প্রিয়াঙ্কাকে ময়দানে নামিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাহুল । কিন্তু, স্বপ্ন থেকে বাস্তব যে অনেকটাই দূরে, সে কথা প্রমাণ করল আজকের নির্বাচনের ফল ।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের সমস্ত প্রান্তে লাগাতার হারের পর যখন সারা দেশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব, ঠিক তখনই মৃতসঞ্জীবনী সুধার মতো কংগ্রেসকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল ছত্তিশগড়, রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশ। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে গো-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে BJP-র কাছ থেকে এই তিন রাজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস, যা আক্ষরিক অর্থেই জমিয়ে দিয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের ময়দান । কিন্তু, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন যে সম্পূর্ণভাবে আলাদা লড়াই, সে কথা আজ আবারও প্রমাণিত । এই তিন রাজ্যে নিজেদের দাবি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিল BJP । রাহুল গান্ধি অনেক আশা করে এই তিন রাজ্যে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিলেন সেখানকার মানুষ । অন্যদিকে, কখনও মমতা-কখনও রাহুল । বার বার পট পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছিল চন্দ্রবাবু নাইডুকে । কিন্তু, এ ভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি যে সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন, তা হয়তো ভাবতেই পারেননি চন্দ্রবাবু । যার ফল ভুগতে হলে তাঁকেও । অন্ধ্রপ্রদেশ মুখ ফেরাল চন্দ্রবাবুর দিক থেকে ।

MODI
দিল্লিতে BJP-র কার্যালয়ে মোদিকে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন অমিত শাহ

BJP তথা NDA-এর এই বিরাট সাফল্যের কারণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণ একাধিক। প্রথমত, গোবলয়ে BJP-র ভোটব্যাঙ্কে ব্যাপক ধসের ইঙ্গিত থাকলেও, তা হয়নি। এর জন্য হয়তো কংগ্রেস-সপা-বসপার মধ্যে মত বিরোধের দিকে আঙুল তোলা যায় । মুখে BJP বিরোধিতার কথা বললেও কখনই নিজেদের মধ্যে একতা তৈরি করতে পারেননি রাহুল-অখিলেশরা । দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে BJP। গোবলয়ের ক্ষতি মেরামত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহারের মতো রাজ্যে। দাক্ষিণাত্যে BPJ কখনই শক্তিশালী ছিল না। তবু, কর্নাটক, তেলাঙ্গানায় ভাল করতে চলেছে NDA জোট । তৃতীয়ত, রাহুলের মতো বিরোধীরা নোটবন্দি-রাফাল ইশুতে মোদিকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করেছেন বার বার। কিন্তু, প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেননি । চতুর্থত, পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে বা মহাকাশে দেশের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে মোদি জনমানসে একটা ভাবাবেগ তৈরি করতে পেরেছিলেন । আর সব শেষে বলা চলে বিরোধীরা কোনও গ্রহণযোগ্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী দিতে পারেননি । রাহুল গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা হলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । কংগ্রেসের অনেক শরিকই রাহুলকে নেতা হিসেবে মানতে নারাজ । অন্যদিকে, মমতা-চন্দ্রবাবু-অখিলেশদের বিরোধী জোট কোনও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি । ভোটের পর নেতা ঠিক হবে বলে দাবি করলেও, সেই দাবি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । একই সঙ্গে, এ দিনের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোনও আঞ্চলিক দলের উপর নির্ভর করতে রাজি নয় ।

Patna (Bihar), May 19 (ANI): Bihar Deputy Chief Minister Sushil Kumar Modi cast his vote in Bihar's Patna today. Sushil Modi voted at booth number 49 in Patna. He cast his vote along with his family. Voting for the seventh and final phase of 17th Lok Sabha elections is underway in 59 parliamentary constituencies across 7 states and UT (Chandigarh). The counting of votes will take place on May 23.

Last Updated : May 24, 2019, 2:40 AM IST

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.