শ্রীহরিকোটা, 22 জুলাই : ঠিক 2.43 মিনিটে উৎক্ষেপণ হল চন্দ্রযান-2 এর ৷ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-2 ৷ কক্ষে সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে এটি, সাংবাদিক বৈঠকে জানান ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র অধিকর্তা কে এস শিবন ৷ তিনি বলেন, ''আমি মনে করি, এই মিশনের পর মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের পতাকা আরও উঁচুতে উড়বে ৷ আমাদের মিশন এখনও শেষ হয়নি, বরং শুরু হল বলা যায়৷ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সাফল্য কামনা করছেন আমাদের৷ আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই ৷''
1000 কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই প্রকল্প ৷ যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় হলিউড ব্লকব্লাস্টার ছবি অ্যাভেনঞ্জার্স এন্ড গেম নির্মাণের চেয়েও অনেক কম খরচের একটি প্রকল্প ৷ আজ সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের লঞ্চ প্যাড থেকে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি জমাল চন্দ্রযান-2 ৷ নাসা থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রতিটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চোখ এবার ভারতের এই যানটির দিকেই ৷ কারণ মহাকাশ বাণিজ্যেও ভারত যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ৷
এর আগে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ায় উৎক্ষেপণ থামিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এ বার উৎক্ষেপণের আগে থেকেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন প্রস্তুতি পর্বে কোনও সমস্যা বা ত্রুটি ধরা পড়েনি । সব কিছু সঠিক পথে এগিয়েছে ৷ এর আগে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিল আর তিনটি দেশ। রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), অ্যামেরিকা ও চিনের পরেই তালিকায় ভারত থাকবে চার নম্বরে।
এই অভিযানের মূল কান্ডারি দেশের দুই মহিলা বিজ্ঞানী ৷ প্রক্লপ অধিকর্তা মুথাইয়া বনিতা ও উৎক্ষেপণের অভিযান অধিকর্তা (মিশন ডিরেক্টর) ঋতু কারিঢাল ৷ এমন কী চন্দ্রাভিযানের গোটা দলের মধ্যে 30 জনই মহিলা ৷ আজ পৃথিবীর চারপাশে পাক খেতে খেতে ক্রমশ দূরত্ব বাড়াবে চন্দ্রযান ৷ পাঁচবার রকেটটি পাক খাওয়ার পরে 23 দিনের মাথায় অর্থাৎ আগামী 14 অগাস্ট পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের কক্ষপথে পাড়ি জমাবে চন্দ্রযান-2 ৷
আগামী 22 সেপ্টেম্বর চাঁদের কক্ষপথে ঢুকবে 15 তলা বাড়ির সমান রকেটটি । 6 সেপ্টেম্বর চাঁদে অবতরণ করবে বিক্রম নামে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার অংশটি । হিসাব অনুযায়ী, রওনা দেওয়ার 54 দিন পরে চাঁদে পৌঁছানোর কথা চন্দ্রযানটির ।
ISRO সূত্রের খবর, উৎক্ষেপণের প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে (5 গভীর রাত ও 6 ভোর রাতের মধ্যে) চাঁদের পিঠে পা ছোঁয়াবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসবে খুবই ছোট একটি রোভার ‘প্রজ্ঞান’। যার ওজন মাত্র 20 কিলোগ্রাম । আর চন্দ্রযান-2-এর সার্বিক ওজন 3 হাজার 850 কিলোগ্রাম । ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় চন্দ্রযান-2-এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে থাকবে মাত্র 100 কিলোমিটার উপরে ।
দিনের আলোয় উৎক্ষেপণ । তাই দর্শকাসন ‘হাউসফুল’ ছিল ৷ ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে সব আসন ভর্তি হয়ে গেছিল আগেই ৷ উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গেই করতালিতে অভিবাদন জানান দর্শকরা ৷ দেশের নানা প্রান্তেও উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাসে মেতেছেন নাগরিকরা ৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ISRO-র এই চন্দ্রাভিযান পথ দেখাবে আগামী প্রজন্মকে । এই ধরনের অভিযান যত হবে ততই ভারতে মহাকাশবিজ্ঞান (কসমোলজি) ও জ্যোতির্পদার্থর্বিজ্ঞান (অ্যাস্ট্রোফিজিক্স) নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণায় উৎসাহ বাড়বে ছাত্রছাত্রীদের ।
চন্দ্রযান-2 পাঠানোর উদ্দেশ্য, চাঁদের পিঠের বালিকণায় মিশে রয়েছে কোন কোন মৌল ও খনিজ পদার্থ আর তা রয়েছে কী পরিমাণে, তা জানা। সেই মৌল বা খনিজগুলি নিষ্কাশনের যোগ্য কি না, তা যাচাই করা। যে স্বপ্নটা প্রথম দেখেছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ মেরুর দিকেই চাঁদের ভিতরে এখনও বয়ে চলেছে জলের ধারা । উল্কাপাত বা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ায় সেখানে একটি বিশাল গর্ত (ক্রেটার) তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর ফলে চাঁদের অন্দরে মৌল বা খনিজ বা জলের তল্লাশির কাজটা সহজতর হয়ে উঠতে পারে ।