ETV Bharat / bharat

এভাবে কী কৃষকদের আশ্বাস দেওয়া যায় ?

নয়া কৃষি বিল নিয়ে কেন ক্ষুব্ধ কৃষক সংগঠনগুলি ? লিখছেন আমিরনেনি হরিকৃষ্ণ ।

farm bill
farm bill
author img

By

Published : Sep 23, 2020, 9:16 AM IST

সুনিশ্চিত ও ধারাবাহিক রোজগারের অভাবে দেশে প্রচুর সংখ্যক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন এবং বছরের পর বছর ধরে সেই সমস্ত কৃষকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । এই প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত এমন দায়িত্ব নেওয়া যাতে কৃষকরা আশ্বস্ত হন । কিন্তু, সুসংহত কৃষি সংস্কারের বদলে তারা কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে আশা দেখাচ্ছে । এই বিষয়টি বজায় রেখেই লোকসভায় বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । যা কৃষকদের অনেকটাই সাহায্য করবে । বাস্তব পরিস্থিতিকে না বুঝে কর্পোরেট বড় সংস্থাগুলিকে সাহায্য করতে এবং খামারগুলির সমস্যা মেটাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার । সেই কারণেই কৃষক সংগঠনগুলি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ।

ফসল কাটার জায়গা বিক্রি

কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেছে যা কৃষকদের কল্যাণের জন্য নেওয়া হয়েছে । জুন মাসে এই নিয়ে অধ্যাদেশ পাশ করানো হয়েছিল । সেটিই আইন করতে এই বিল তিনটি পেশ করা হয় ।

এর মধ্যে, প্রথমটি হল : দেশের যে কোনও জায়গায় নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার জন্য কৃষকদের স্বাধীনতা ।

দ্বিতীয়টি হল : ব্যবসায়ীর সঙ্গে অগ্রিম যে চুক্তি কৃষকদের হবে তাকে আইনি বৈধতা দেওয়া ।

তৃতীয়টি হল : ডাল, তৈলবীজের মতো অত্যাবশকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমার বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া ।

সরকার বারবার বলছে, দেশের যে কোনও জায়গায় উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে কৃষকদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে । কিন্তু এর সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে যে ছোটো কৃষকরা (৮৬%) যাঁরা ঋণ শোধ করার জন্য ফসল কেটেই জমি থেকে তা বিক্রি করে দেন তাঁরা কি তা অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারবেন ?

সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা সব সময় সঠিক দাম না দিয়ে কৃষকদের লাভের উপর আঘাত করতে চান । যে ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ বাজার থাকা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না, তারা কি বেসরকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ? আমরা এই ধরনের প্রতারণা লক্ষ্য করছি তেলাঙ্গানা সুতোর বাজারে । ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিপণন আধিকারিক না থাকায় তার বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদ করতেও আমরা দেখেছি । আর শেষ পর্যন্ত শাসকের উপর চাপ তৈরি করে সহায়ক মূল্য আদায়ে সমর্থ হয়েছেন তাঁরা । যদি কৃষকরা কোনওরকম মার্কেট ফি না দিয়ে যে কোনও জায়গায় উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সমর্থ হয়, তাহলে খামারগুলি বন্ধ হয়ে যাবে রোজগারের অভাবে । এছাড়া মুক্ত বাণিজ্যের জন্য অনেকে কৃষকের ছদ্মবেশে বিক্রি করা শুরু করবেন ।

সরকারের পদক্ষেপের ফলে এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এর ফলে শেষ পর্যন্ত যিনি লাভবান হবেন, তিনি হলেন ব্যবসায়ী । এই বছর আশা করা হয়েছিল রবিশস্যের দাম কুইন্টাল প্রতি 2 হাজার টাকা করে হবে । কিন্তু, এবছর ওই দাম 1 হাজার 300 টাকাও হচ্ছে না । এই পরিস্থিতিতে যদি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনার জন্য বেশি দাম না দিয়ে তাদের দেশের যে কোনও জায়গায় ফসল বিক্রি করার কথা বলে, তাহলে কি কৃষকদের খুব উপকার হবে ? যদিও বা কৃষকরা আরও বেশি দামের জন্য তাদের ফসলকে যে কোনও জায়গায় বিক্রি করেন, তাহলেও ছোটো কৃষক, যাঁদের এক বা দুই একর জমি রয়েছে, তাঁদের পক্ষে কি অনেকটা দূরে বাজারে যাওয়া সম্ভব হবে ? সরকার নিশ্চয় এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ।

দ্বিতীয় বিল -

দ্বিতীয় বিলটি যদি আমরা যাচাই করে দেখি, তাহলে দেখব যে বীজ কিনতে গিয়ে সরকারের ঠিক কতটা করুণ পরিস্থিতি হয়েছিল । কারণ, বিভিন্ন সংস্থা থেকে কেনা বীজগুলির মান খারাপ প্রমাণিত হয়েছিল । কিন্তু কৃষকরা ক্ষতিপূরণও পাননি ।

কৃষকদের সঙ্গে যে চুক্তি করা হবে, যেখানে চাষের জন্য কৃষকদের বীজ দেওয়া হবে ৷ ফসল কিনে নেওয়ার নিশ্চয়তাও দেওয়া হবে । এই বিষয়টিও বিলে রাখা হয়েছে । অতীতে দেখা গিয়েছে, কিছু সংস্থা কৃষকদের বলেছে, ঔষধী গাছ, যেমন – ম্যানগিয়াম, জাফরা, টিক জাতীয় গাছ, অ্যালোভেরা, ডোলাগন্ডি, রামা রোজা, সফেদ মুসলি ইত্যাদি গাছ বসালে তাদের লাভের পরিমাণ বেশি হবে । বীজ বিক্রি করার পর ওই সংস্থাগুলি উধাও হয়ে যায় । আর এই বিষয়ে সরকারেরও কিছু করার থাকে না । কৃষকরা বারবার অভিযোগ করেছেন, কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তিকে যদি আইনি বৈধতা দেওয়া হয়, তাহলে সহজেই প্রতারণার বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে । কিন্তু, তা পরোক্ষভাবে ‘চুক্তি চাষ’-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁদের ভয় হল যে যদি সারা দেশে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ ব্যবস্থা শুরু হয়ে যায় এবং কৃষিকাজ কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাতে চলে যায়, তাহলে গরিব কৃষকরা শুধুমাত্র মোট বাহকে পরিণত হবেন । আর এই বিলের সবচেয়ে বড় খামতি হল যে কৃষকরা ব্যবসায়ী ও সংস্থাগুলির সঙ্গে যে চুক্তি করবেন, তাতে কৃষি দপ্তরের কোনও দায়বদ্ধতা থাকবে না । এখানে উল্লেখ্য, গুজরাটের আলু চাষিদের বিরুদ্ধে পেপসির দায়ের করা মামলার বিষয়টি ।

তৃতীয় বিল -

এরপর তৃতীয়টি । যেটি অত্যাবশকীয় পণ্যের মজুত সংক্রান্ত সংশোধনী । অত্যাবশকীয় পণ্য আইনের মূল উদ্দেশ্য হল যুদ্ধ বা অন্য কোনও সংকটের সময় ছাড়া তৈলবীজ, সবজি, ডাল শস্য, মাইলসের মতো সামগ্রী মজুত করার ঊর্ধ্বসীমায় কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না । এটা বেশি পরিমাণে মজুত করে রাখতে পারলে, তা কৃষকদের থেকেও বেশি লাভ হবে কৃষি সংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য । কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি এর সুযোগ নেবে গরিব চাষিদের কাছ থেকে, যাঁরা মাঠেই কাটা ফসল বিক্রি করে দেন । এই বিলের ফলে তারা কৃষকের কাছে থেকে ফসল কিনে প্রচুর পরিমাণে মজুত করে রাখার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন । যখন দাম কম থাকবে, তখন তারা ওই ফসল কৃষকদের কাছ থেকে কিনবেন । তারপর তা মজুত করে রাখবেন । আর যখন বাজারে দাম বেশ চড়া হবে, তখন তা তারা বিক্রি করে দেবেন । এই নতুন বিল তাদের অনেকটা লাগামছাড়া স্বাধীনতা দিয়ে দিল । এটা একেবারে স্পষ্ট যে খুচরো বাজারের সংস্থাগুলি এই বিলের এই সমস্ত নিয়মের মাধ্যমে লাভবান হবেন ।

সরকারের উচিত নিজেই কিনে নেওয়া …

কেন্দ্রীয় সরকার চায় কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে । কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে পদক্ষপগুলি কেন্দ্রীয় সরকার করছে, তা একেবারেই কার্যকরী নয় । তারা ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও কর্পোরেট সংস্থাগুলির রোজগার দশ গুণ বাড়িয়ে দিতে চলেছে । এটাই রূঢ় বাস্তব । যদি কেউ সত্যিই কৃষকদের সাহায্য করতে চায়, তাহলে তাদের লাভজনক সহায়ক মূল্য গিয়েই তা হবে যথেষ্ট । যদি তারা সত্যিই চায় কৃষকদের লাভের দিকটি দেখতে, তাহলে তাদের উচিত ড. স্বামীনাথনের প্রস্তাবগুলি কার্যকর করা । যেখানে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন যে উৎপাদনের খরচের সঙ্গে কৃষকদের আরও 50% অতিরিক্ত দেওয়া উচিত । তাদের উচিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার বিষয়টি আরও বৃদ্ধি করা । শুধুমাত্র 22 টি ফসলের ধরনেই তা দেওয়া উচিত নয় । বরং সারা দেশে যত ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়, সবগুলিতেই তা দেওয়া উচিত । যদি কম দাম নথিভুক্ত করা হয়, তাহলে সরকারের এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত । আর এটা সুনিশ্চিত করা উচিত, যাতে কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে না হয় । কৃষিজ ফসল সরকারেরই কেনা উচিত । অথবা এই বিষয়ে মহিলা সমাজকে ভরসা করা যেতে পারে । একাধিক ফসেলর জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের উচিত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত থাকা । খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রকে এমন ভাবে বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে তা কৃষকদের জন্য লাভজনক হয় । আর তা থেকে ধারাবাহিক ভাবে রোজগারের ব্যবস্থা হয় । এই ধরনের পদক্ষেপ করতে পারলে, তা কৃষকদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে সাহায্য করত । কিন্তু সেই পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের সাহায্য করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এর ফলে ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও শিল্পপতিরা কৃষকদের কষ্ট করে ফলানো ফসল তাদের কাছে সমর্পণ করাতে বাধ্য করবে । অন্য দিকে একই সঙ্গে তারা যখন প্রধানমন্ত্রী কিষাণের মতো প্রকল্প নিয়ে আসে, তখন সেটা কৃষকদের ও তাদের প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছু হয় না ।

সুনিশ্চিত ও ধারাবাহিক রোজগারের অভাবে দেশে প্রচুর সংখ্যক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন এবং বছরের পর বছর ধরে সেই সমস্ত কৃষকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । এই প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত এমন দায়িত্ব নেওয়া যাতে কৃষকরা আশ্বস্ত হন । কিন্তু, সুসংহত কৃষি সংস্কারের বদলে তারা কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে আশা দেখাচ্ছে । এই বিষয়টি বজায় রেখেই লোকসভায় বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । যা কৃষকদের অনেকটাই সাহায্য করবে । বাস্তব পরিস্থিতিকে না বুঝে কর্পোরেট বড় সংস্থাগুলিকে সাহায্য করতে এবং খামারগুলির সমস্যা মেটাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার । সেই কারণেই কৃষক সংগঠনগুলি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ।

ফসল কাটার জায়গা বিক্রি

কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেছে যা কৃষকদের কল্যাণের জন্য নেওয়া হয়েছে । জুন মাসে এই নিয়ে অধ্যাদেশ পাশ করানো হয়েছিল । সেটিই আইন করতে এই বিল তিনটি পেশ করা হয় ।

এর মধ্যে, প্রথমটি হল : দেশের যে কোনও জায়গায় নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার জন্য কৃষকদের স্বাধীনতা ।

দ্বিতীয়টি হল : ব্যবসায়ীর সঙ্গে অগ্রিম যে চুক্তি কৃষকদের হবে তাকে আইনি বৈধতা দেওয়া ।

তৃতীয়টি হল : ডাল, তৈলবীজের মতো অত্যাবশকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমার বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া ।

সরকার বারবার বলছে, দেশের যে কোনও জায়গায় উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে কৃষকদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে । কিন্তু এর সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে যে ছোটো কৃষকরা (৮৬%) যাঁরা ঋণ শোধ করার জন্য ফসল কেটেই জমি থেকে তা বিক্রি করে দেন তাঁরা কি তা অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারবেন ?

সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা সব সময় সঠিক দাম না দিয়ে কৃষকদের লাভের উপর আঘাত করতে চান । যে ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ বাজার থাকা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না, তারা কি বেসরকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ? আমরা এই ধরনের প্রতারণা লক্ষ্য করছি তেলাঙ্গানা সুতোর বাজারে । ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিপণন আধিকারিক না থাকায় তার বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদ করতেও আমরা দেখেছি । আর শেষ পর্যন্ত শাসকের উপর চাপ তৈরি করে সহায়ক মূল্য আদায়ে সমর্থ হয়েছেন তাঁরা । যদি কৃষকরা কোনওরকম মার্কেট ফি না দিয়ে যে কোনও জায়গায় উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সমর্থ হয়, তাহলে খামারগুলি বন্ধ হয়ে যাবে রোজগারের অভাবে । এছাড়া মুক্ত বাণিজ্যের জন্য অনেকে কৃষকের ছদ্মবেশে বিক্রি করা শুরু করবেন ।

সরকারের পদক্ষেপের ফলে এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এর ফলে শেষ পর্যন্ত যিনি লাভবান হবেন, তিনি হলেন ব্যবসায়ী । এই বছর আশা করা হয়েছিল রবিশস্যের দাম কুইন্টাল প্রতি 2 হাজার টাকা করে হবে । কিন্তু, এবছর ওই দাম 1 হাজার 300 টাকাও হচ্ছে না । এই পরিস্থিতিতে যদি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনার জন্য বেশি দাম না দিয়ে তাদের দেশের যে কোনও জায়গায় ফসল বিক্রি করার কথা বলে, তাহলে কি কৃষকদের খুব উপকার হবে ? যদিও বা কৃষকরা আরও বেশি দামের জন্য তাদের ফসলকে যে কোনও জায়গায় বিক্রি করেন, তাহলেও ছোটো কৃষক, যাঁদের এক বা দুই একর জমি রয়েছে, তাঁদের পক্ষে কি অনেকটা দূরে বাজারে যাওয়া সম্ভব হবে ? সরকার নিশ্চয় এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ।

দ্বিতীয় বিল -

দ্বিতীয় বিলটি যদি আমরা যাচাই করে দেখি, তাহলে দেখব যে বীজ কিনতে গিয়ে সরকারের ঠিক কতটা করুণ পরিস্থিতি হয়েছিল । কারণ, বিভিন্ন সংস্থা থেকে কেনা বীজগুলির মান খারাপ প্রমাণিত হয়েছিল । কিন্তু কৃষকরা ক্ষতিপূরণও পাননি ।

কৃষকদের সঙ্গে যে চুক্তি করা হবে, যেখানে চাষের জন্য কৃষকদের বীজ দেওয়া হবে ৷ ফসল কিনে নেওয়ার নিশ্চয়তাও দেওয়া হবে । এই বিষয়টিও বিলে রাখা হয়েছে । অতীতে দেখা গিয়েছে, কিছু সংস্থা কৃষকদের বলেছে, ঔষধী গাছ, যেমন – ম্যানগিয়াম, জাফরা, টিক জাতীয় গাছ, অ্যালোভেরা, ডোলাগন্ডি, রামা রোজা, সফেদ মুসলি ইত্যাদি গাছ বসালে তাদের লাভের পরিমাণ বেশি হবে । বীজ বিক্রি করার পর ওই সংস্থাগুলি উধাও হয়ে যায় । আর এই বিষয়ে সরকারেরও কিছু করার থাকে না । কৃষকরা বারবার অভিযোগ করেছেন, কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তিকে যদি আইনি বৈধতা দেওয়া হয়, তাহলে সহজেই প্রতারণার বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে । কিন্তু, তা পরোক্ষভাবে ‘চুক্তি চাষ’-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁদের ভয় হল যে যদি সারা দেশে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ ব্যবস্থা শুরু হয়ে যায় এবং কৃষিকাজ কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাতে চলে যায়, তাহলে গরিব কৃষকরা শুধুমাত্র মোট বাহকে পরিণত হবেন । আর এই বিলের সবচেয়ে বড় খামতি হল যে কৃষকরা ব্যবসায়ী ও সংস্থাগুলির সঙ্গে যে চুক্তি করবেন, তাতে কৃষি দপ্তরের কোনও দায়বদ্ধতা থাকবে না । এখানে উল্লেখ্য, গুজরাটের আলু চাষিদের বিরুদ্ধে পেপসির দায়ের করা মামলার বিষয়টি ।

তৃতীয় বিল -

এরপর তৃতীয়টি । যেটি অত্যাবশকীয় পণ্যের মজুত সংক্রান্ত সংশোধনী । অত্যাবশকীয় পণ্য আইনের মূল উদ্দেশ্য হল যুদ্ধ বা অন্য কোনও সংকটের সময় ছাড়া তৈলবীজ, সবজি, ডাল শস্য, মাইলসের মতো সামগ্রী মজুত করার ঊর্ধ্বসীমায় কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না । এটা বেশি পরিমাণে মজুত করে রাখতে পারলে, তা কৃষকদের থেকেও বেশি লাভ হবে কৃষি সংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য । কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি এর সুযোগ নেবে গরিব চাষিদের কাছ থেকে, যাঁরা মাঠেই কাটা ফসল বিক্রি করে দেন । এই বিলের ফলে তারা কৃষকের কাছে থেকে ফসল কিনে প্রচুর পরিমাণে মজুত করে রাখার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন । যখন দাম কম থাকবে, তখন তারা ওই ফসল কৃষকদের কাছ থেকে কিনবেন । তারপর তা মজুত করে রাখবেন । আর যখন বাজারে দাম বেশ চড়া হবে, তখন তা তারা বিক্রি করে দেবেন । এই নতুন বিল তাদের অনেকটা লাগামছাড়া স্বাধীনতা দিয়ে দিল । এটা একেবারে স্পষ্ট যে খুচরো বাজারের সংস্থাগুলি এই বিলের এই সমস্ত নিয়মের মাধ্যমে লাভবান হবেন ।

সরকারের উচিত নিজেই কিনে নেওয়া …

কেন্দ্রীয় সরকার চায় কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে । কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে পদক্ষপগুলি কেন্দ্রীয় সরকার করছে, তা একেবারেই কার্যকরী নয় । তারা ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও কর্পোরেট সংস্থাগুলির রোজগার দশ গুণ বাড়িয়ে দিতে চলেছে । এটাই রূঢ় বাস্তব । যদি কেউ সত্যিই কৃষকদের সাহায্য করতে চায়, তাহলে তাদের লাভজনক সহায়ক মূল্য গিয়েই তা হবে যথেষ্ট । যদি তারা সত্যিই চায় কৃষকদের লাভের দিকটি দেখতে, তাহলে তাদের উচিত ড. স্বামীনাথনের প্রস্তাবগুলি কার্যকর করা । যেখানে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন যে উৎপাদনের খরচের সঙ্গে কৃষকদের আরও 50% অতিরিক্ত দেওয়া উচিত । তাদের উচিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার বিষয়টি আরও বৃদ্ধি করা । শুধুমাত্র 22 টি ফসলের ধরনেই তা দেওয়া উচিত নয় । বরং সারা দেশে যত ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়, সবগুলিতেই তা দেওয়া উচিত । যদি কম দাম নথিভুক্ত করা হয়, তাহলে সরকারের এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত । আর এটা সুনিশ্চিত করা উচিত, যাতে কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে না হয় । কৃষিজ ফসল সরকারেরই কেনা উচিত । অথবা এই বিষয়ে মহিলা সমাজকে ভরসা করা যেতে পারে । একাধিক ফসেলর জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের উচিত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত থাকা । খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রকে এমন ভাবে বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে তা কৃষকদের জন্য লাভজনক হয় । আর তা থেকে ধারাবাহিক ভাবে রোজগারের ব্যবস্থা হয় । এই ধরনের পদক্ষেপ করতে পারলে, তা কৃষকদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে সাহায্য করত । কিন্তু সেই পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের সাহায্য করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এর ফলে ব্যবসায়িক ব্যক্তি ও শিল্পপতিরা কৃষকদের কষ্ট করে ফলানো ফসল তাদের কাছে সমর্পণ করাতে বাধ্য করবে । অন্য দিকে একই সঙ্গে তারা যখন প্রধানমন্ত্রী কিষাণের মতো প্রকল্প নিয়ে আসে, তখন সেটা কৃষকদের ও তাদের প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছু হয় না ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.