দিল্লি, 6 জুন : লাদাখ সীমান্ত সমস্যার সমাধানে তৎপর দুই দেশ । ভারত ও চিনের বিদেশ মন্ত্রক আগেই জানিয়েছিল সেকথা । সেই সূত্র ধরেই আজ পূর্ব লাদাখের কাছে দুই দেশের সেনা পর্যায়ে আলোচনা হয় । পাঁচ ঘণ্টার এই বৈঠক শেষে আজ ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ভারত-চিন সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সেনা পর্যায়ে আলোচনা জারি থাকবে ।
আজ পূর্ব লাদাখের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত-চিন সীমান্তের চুশুল-মোলদোতে দুই দেশের সেনা প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয় । ভারতের হয়ে বৈঠকে 14 কর্পসের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনেরাল হরিন্দর সিং প্রতিনিধিত্ব করেন ৷ অন্যদিকে, চিনের হয়ে তিব্বত মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের কমান্ডার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৷ সকাল সাড়ে 11 টা নাগাদ শুরু হয় বৈঠক । প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে উভয় দেশের সেনা প্রধানের মধ্যে আলোচনা চলে । বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তার কোনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি । তবে সেনার মুখপাত্র বলেন, "সীমান্ত ইশু সমাধানে দুই দেশই সেনা ও কূটনৈতিক স্তরে পারস্পরিক যোগাযোগ সাধন করেছে । যাতে আলোচনার মাধ্য়মে সমস্যাগুলির সমাধান করা যায় । এখনও আলোচনা চলছে ।" সেনার তরফে আরও জানানো হয়েছে, এবিষয়ে যথোপযুক্ত তথ্য ছাড়া যেন কোনও সংবাদ প্রকাশ না করা হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে ।
সীমান্ত সমস্যার খবর প্রকাশ্যে আসে মে মাসের শুরুর দিকে। চিন নিজেদের LAC (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল)-এর পাশে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য রাস্তার কাজ শুরু করেছিল । এরপর ভারতও বর্ডার রোডস অর্গানাইজ়েশনকে দিয়ে LAC-র পাশের নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজ শুরু করে । কিন্তু তাতে বাধা দেয় চিনের সেনা । রুখে দাঁড়ায় ভারতীয় সেনা । এর জেরে লাদাখের তিন জায়গায় মুখোমুখি হয় দুই দেশের সেনা । ক্রমশ বাড়তে থাকে উত্তেজনা । এরপর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে লাদাখ গেছিলেন সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে । পরে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নর্দার্ন কম্যান্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেন । এর কয়েকদিন পরই সীমান্তের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তিন সেনা প্রধানের সঙ্গে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং । স্থল সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানের কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন তিনি । আলাদা করে তিন সেনার প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী । সেদিনই এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন সেনার প্রধান জেনেরাল বিপিন রাওয়াত ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল । এর মাঝে ট্রাম্পের টুইট ঘিরেও বিস্তর জল্পনা শুরু হয় । ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ।
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে খানিকটা হলেও শান্তির ভাবনা প্রতিফলিত হয় । দিনকয়েক আগে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, "সীমান্ত ইশুতে বেজিং ও দিল্লি তৎপর । আমাদের সেনাবাহিনীর অত্যন্ত দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে । সমস্ত নিয়ম, প্রোটোকল ও উভয় দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিকে যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে ।"
একইরকম সুর শোনা যায় চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের গলায় । তিনি বলেন, "সীমান্তে ভারতের সঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা স্থিতিশীল । তা সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । সীমান্ত ইশুতে চিনের অবস্থান স্পষ্ট । আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে বিষয়গুলির সমাধান করার জন্য উভয় দেশেরই যথাযথ পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে ।"