কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা সংক্ষিপ্ত করতে সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে উদ্বোধন হওয়া একটি সড়ক ঘিরে কূটনৈতিক সংঘাতে জড়াল ভারত ও নেপাল। উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে উদ্বোধন হওয়া রাস্তা নিয়ে নেপালের বিদেশমন্ত্রক সরকারিভাবে আপত্তি জানানোর পর, জবাবে ভারত জানায় যে, কোনও সীমান্ত লঙ্ঘন করা হয়নি। শুক্রবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ধারচুলা থেকে চিন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এই অঞ্চলকে তাদের বলে দাবি করেছে নেপাল ।
শনিবার একটি দীর্ঘ এবং কঠোর বিবৃতিতে বিষয়টিকে ভারতের ‘একতরফা পদক্ষেপ’ আখ্যা দেয় নেপালের বিদেশমন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, 1816 সালের সুগৌলি চুক্তি অনুসারে মহাকালী নদীর পূর্ব দিকের অঞ্চলটি তাদের, যার মধ্যে পড়ে লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি এবং লিপুলেখ, তাই ‘নেপালের সীমা’-র মধ্যে যে কোনও কাজ বন্ধ রাখুক ভারত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটা নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে, এবং সাম্প্রতিক অতীতে নতুন রাজনৈতিক ম্যাপ প্রকাশ করার পর, গত বছরের 20 নভেম্বর ভারতকে লেখা একটি কূটনৈতিক নোটেও এর উল্লেখ করা হয়েছে।”
যদিও কাঠমাণ্ডুর আনা সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া সড়ক পুরোপুরি ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে।” শনিবার সন্ধ্যায় জারি বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এই সড়ক অতীতে পুণ্যার্থীদের ব্যবহত পথ অনুসরণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সেই পথটিকেই তীর্থযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুগম ও সহজ করে তোলা হয়েছে।”
370 ধারা রদ এবং জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পর, ভারত তার নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করার পর থেকেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্ত-বিবাদ তৈরি হয়েছে। নতুন মানচিত্রে কালাপানিকে ভারতীয় অঞ্চল হিসেবে দেখানো হয়েছে যাতে কড়া আপত্তি জানিয়েছে কাঠমান্ডু, এবং নেপালে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। যদিও ভারত বলে এসেছে, যে ম্যাপে সবকিছু আগের মতোই দেখানো হয়েছে।
তাদের সর্বশেষ বিবৃতিতে কাঠমান্ডু মনে করিয়ে দিয়েছে, যে 2015 সালের মে মাসে ভারত ও চিনের কাছে দুটি আলাদা প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছিল, যখন নেপালের সম্মতি ছাড়াই দুটি দেশ লিপুলেখ পাসকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে সম্মত হয়। নেপাল এদিন মনে করিয়ে দিয়েছে, যে “প্রধানমন্ত্রী পর্যায় সহ দু’দেশ যে বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে, তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে এই একতরফা পদক্ষেপ। বলা হয়েছিল, যে কথাবার্তার মাধ্যমেই সীমান্ত সমস্যা মেটানো হবে।”
বিদেশমন্ত্রক তার জবাবী বিবৃতিতে বলেছে, “সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় মেটাতে ভারত ও নেপাল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে সীমান্ত পুনর্চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া চলছে। কূটনৈতিক আলোচনা এবং নেপালের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারত সীমান্ত সমস্যা মেটাতে দায়বদ্ধ।”
ভারত আরও জানিয়েছে, যে ‘কোরোনার বিরুদ্ধে দুদেশের সমাজ ও সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করার পরেই’ বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে দু-দিক থেকেই। ঘটনাক্রমে, নেপালের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, যে কালাপানি বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার পরেই তারা দু’বার বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকের দিন প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।