“বর্তমান প্রস্তুতি ভাইরাসের মোকাবিলায় যথেষ্ট নয় । সামান্য উপসর্গ যাঁদের, তাঁদেরও পরীক্ষা করা উচিত । ব্রিটেন একদিনে এমন এক লক্ষ পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে । কোরোনা মোকাবিলার আদর্শ উদাহরণ হল দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি ।”, ইনাডুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন ব্রিটেনে কর্মরত চিকিৎসক রাজেশ মাড্ডিপতি ।
ডক্টর রাজেশ মাড্ডিপতি, একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হিসেবে ব্রিটেনের লিভারপুল ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস সিস্টেম (NHS)-এর সঙ্গে যুক্ত । তাঁর কথায়, এটা উদ্বেগজনক যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো লকডাউনের মতো বিরাট পদক্ষেপ করলেও, সংক্রমণ চিহ্নিত করতে যথেষ্ট সংখ্যায় পরীক্ষা করা হচ্ছে না ।
তিনি তেলেগু দৈনিক ইনাডুর এক প্রতিনিধির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন । তিনি আরও বলেন, যে ব্রিটেনের মতো দেশ, যাদের জনসংখ্যা প্রায় 6.70কোটি, তারা বর্তমানে কোরোনা নির্ণয় করতে প্রায় 10000পরীক্ষা করছে । এটা উদ্বেগজনক যে 130 কোটির দেশ ভারত খুব কম সংখ্যায় পরীক্ষা করছে, যা এখনও পর্যন্ত প্রতিদিন মাত্র দশ হাজারের কাছাকাছি । তিনি আরও যোগ করেন, ব্রিটেনে চলতি মাসের শেষে প্রতিদিন দস লক্ষ পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তিনি বলেন, ভারতে শুধুমাত্র তাদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাদের গুরুতর উপসর্গ রয়েছে, আর এটা সফলভাবে ভাইরাসের মোকাবিলা করার পক্ষে যথেষ্ট নয় । গুরুতর উপসর্গ দেখা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে, সামান্যতম লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা গেলেই এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা উচিত । যদি এই কাজটা না করা হয়, তাহলে সামান্য উপসর্গ থাকা মানুষগুলো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেরিয়ে তাদের অজ্ঞাতসারেই আরও অনেককে সংক্রমিত করবেন, এবং ভাইরাস একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকবে । এর ফলে দেশের পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে । দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে মৃত্যুর হার কম হওয়ার একমাত্র কারণ হল, উপসর্গের মাত্রা নির্বিশেষে তারা বেশিরভাগ মানুষকেই পরীক্ষা করাতে বলছে । এর ফলে সামান্য উপসর্গ যাদের রয়েছে, তাদেরও চিহ্নিত করে সরকার সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতে পারছে, যার ফলে দেশে গড় মৃত্যুহার কমেছে। 8.37 মিলিয়ন মানুষের দেশ জার্মানিতে পরীক্ষার সংখ্যা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, এবং সেখানকার প্রশাসন জানিয়েছে যে এই মুহূর্তে প্রতিদিন যে ৩০ হাজার মানুষের কোরোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটা খুব তাড়াতাড়িই 50 হাজারে পৌঁছে যাবে । দক্ষিণ কোরিয়া, যাদের জনসংখ্যা প্রায় 5.12 কোটি, তারা জানিয়েছে যে ইতিমধ্যেই সাড়ে চার লক্ষ মানুষের টেস্ট করা হয়েছে । প্রতিদিন গড়ে 11 হাজার মানুষের পরীক্ষা করা হচ্ছে ।
জার্মানির সতর্কতামূলক পদক্ষেপ
যখন প্রথম শোনা গেল যে মধ্য চিন কোরোনা নামের একটা নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তখন থেকেই জার্মানির গবেষকদের এমন মেডিক্যাল কিট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আক্রান্তের দেহে ভাইরাসের হদিস পাওয়া যাবে । জানুয়ারির শেষের দিকেই জার্মান সরকার প্রথম মডেল কিট প্রস্তুত করে ফেলে, এবং তার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলির আরও উন্নত সংস্করণ বণ্টন করা হয় দেশজুড়ে গবেষণাগারগুলোতে । সরকার আরও পদক্ষেপ নেয় এবং কোরোনা রোগকে স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভূক্ত করায় । এটা করা হয়েছে দেশে প্রথম কোরোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার আগেই । যদি সংক্রমণ শুরুর দিকেই ধরা পড়ে, তবে তার সফলভাবে চিকিৎসা করার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি । এটাই ছিল সরকারের লক্ষ্য, যারা সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সমেত যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। এটাই প্রধান কারণ যার জন্য জার্মানিতে 91,159 জন আক্রান্তের মধ্যে মাত্র 1,275 জনের মৃত্যু হয়েছে । অন্যদিকে ফ্রান্স, যারা এই ভাইরাসটির জন্য প্রস্তুত ছিল না, সেখানে 82,165 জন সংক্রমিতের মধ্য 6,507 জনের মৃত্যু হয়েছে ।
অন্যান্য দেশের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া
ডক্টর রাজেশ জানান, পরিকাঠামো, মানবসম্পদ ও অন্যান্য দিক দিয়ে জার্মানির কাছে শক্তিশালী মেডিক্যাল ব্যবস্থা রয়েছে । এর ফলে তাদের পক্ষে সহজেই ফ্রান্স, ইতালি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের রোগীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে । আশঙ্কাজনক কয়েকজন রোগীকে ইতালিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে জার্মান হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য । তিনি আরও জানান, ইতালিতে ICU শয্যার সংখ্যা প্রতি মিলিয়নে 8.6, যেখানে জার্মানিতে সেটা 33.9 । আর জার্মানি আরও ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বর্তমান পরিকাঠামো দ্বিগুণ করার কাজ শুরু করেছে।
ব্রিটেনে সরকারি নিয়ম ভাঙলেই মোটা জরিমানা
দীর্ঘ শীতের পর বসন্তে প্রবেশ করছে ব্রিটেন। দিনের তাপমাত্রা প্রায় 20 ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে । এই সময় মানুষকে ঘরের বাইরে বেরোতে আটকানো কঠিন ।যারা নিষেধাজ্ঞা ভাঙবেন, তাদের ওপর মোটা জরিমানা বসিয়েছে সরকার । বড় হাসপাতালগুলোর ওপর থেকে চাপ কমাতে, সরকার দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় কেন্দ্র তৈরি করেছে । ডক্টর রাজেশ বলেন, ‘‘ব্রিটেন তার বাজেটের 15 শতাংশ জনস্বাস্থ্যে ব্যয় করছে এবং প্রতিটি নাগরিক সমান চিকিৎসা পাবেন, তা তিনি রাজপুত্র হোন বা ভিখারি ।’’ তিনি বলেন, ‘‘কোরোনা প্রভাবিত ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে তেলেগুভাষীরা ভারতীয় পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে একসঙ্গে কাজ করছেন ।’’