দিল্লি, 3 জানুয়ারি : আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে দেশের 30 কোটি নাগরিককে কোরোনার প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র । শুরু হবে প্রথম সারির কোরোনা যোদ্ধাদের দিয়ে । ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে দেশ কতটা প্রস্তুত, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের মধ্যে কোথাও কোনও খামতি রয়েছে কি না... সেই সব খতিয়ে দেখতে গতকালই গোটা দেশে ড্রাই রান চালানো হয় ।
এদিকে আপদকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য গতকালই ছাড়পত্র পেয়েছে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন । ভারতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশনের বিশেষজ্ঞ কমিটি ৷ সরকারি সূত্রে খবর, বিশেষজ্ঞ প্যানেল ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন কোভ্যাকসিন ব্যবহারে অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ৷ সরকার নির্ধারিত প্যানেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এবার দেশজুড়ে এর ব্যবহার তখনই সম্ভব যখন সবুজ সংকেত দেবে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই ।
কীভাবে কোরোনার জন্য টিকাকরণ করা হবে ? কারা আগে টিকা পাবেন ?
ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, টিকাকরণের জন্য প্রথমেই সুযোগ পাবেন সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা । এদের মধ্যে রয়েছেন, প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে আইসিডিএস কর্মী, নার্স, সুপারভাইজ়ার, স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্যারামেডিকেল কর্মী, মেডিকেল পড়ুয়া ও সাপোর্ট স্টাফরা ।
এছাড়া রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী, হোমগার্ড, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ, কারা, পৌর ও রাজস্ব বিভাগের প্রায় দুই কোটি মানুষ, যাঁরা বিভিন্ন কনটেইনমেন্ট, নজরদারি ও অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে । এই তালিকায় রয়েছেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা এবং প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, আবাসন ও নগরোন্নয়নের মন্ত্রকগুলির কর্মীরাও ।
আরও পড়ুন : এবার জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের ছাড়পত্র ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিনকে
যাঁদের বয়স 50 বছরের বেশি তাঁরাও অগ্রাধিকার পাবেন টিকাকরণের সময়ে । এক্ষেত্রে তাঁদের বয়স অনুযায়ী, দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । একটি ভাগ করা হয়েছে, যাঁদের বয়স 60 বছরের বেশি এবং অন্যটি যাঁদের বয়স 50 থেকে 60 বছরের মধ্যে । সর্বশেষ লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকা ব্যবহার করে এই বয়সসীমার মানুষদের বেছে নেওয়া হবে ।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল চাইলে এমন কোনও বিশেষ ভৌগোলিক এলাকায় টিকাকরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে পারে, যেখানে কোরোনার সংক্রমণের পরস্থিতি বেশি খারাপ ।
এই চার ধরনের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর টিকাকরণ প্রক্রিয়া হয়ে যাওয়ার পর দেশের বাকি নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে । টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে ভিড় এড়াতে ধাপে ধাপে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এই পর্যায়ে ।
কোরোনা প্রতিষেধকের জন্য কীভাবে নাম নথিভুক্ত করবেন ?
অগ্রাধিকার অনুযায়ী যে ভাগগুলি করা হয়েছে, তার শেষের ধাপগুলির ক্ষেত্রে, যিনি টিকা নেবেন, তাঁকে নিজের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে ।
- CoWIN ওয়েবসাইট থেকে নিজের নাম নিজেই নথিভুক্ত করতে পারবেন ।
- কোনও সরকারি সচিত্র পরিচয়পত্র বা আধার কার্ড ব্যবহার করে নাম নথিভুক্ত করা যাবে । আধারের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিকের প্রয়োজন হতে পারে ।
- একবার নাম নথিভুক্ত হয়ে গেলে, কবে কোন সময়ে টিকা দেওয়া হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে ।
- টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা থাকবে না । আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করে তবেই টিকা নেওয়া যাবে ।
- CoWIN সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন কাজ করবে ।
টিকাকরণ কেন্দ্র কোথায় হবে ?
- কোনও সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল, যেখানে একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক বা একজন চিকিৎসক রয়েছেন, এমন কোনও জায়গায় হতে পারে টিকাকরণ কেন্দ্র ।
- হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া কোনও স্কুল বা কমিউনিটি হল বা এই জাতীয় কোনও স্থানেও করা হবে টিকাকরণের ব্যবস্থা ।
- এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষ প্রতিনিধি দল গিয়ে টিকাকরণের ব্যবস্থা করবে । এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনামাফিক কাজ হবে ।
টিকাকরণ কেন্দ্র কেমন হবে ?
টিকাকরণ কেন্দ্রের ভিতরে তিনটি পৃথক ঘর থাকবে । প্রথমটি ওয়েটিং রুম । টিকাকরণে আগে এখানে অপেক্ষা করতে হবে । এরপর ভ্যাকসিনেশন রুম । এই কক্ষে টিকা দেওয়া হবে । আর সব শেষে থাকছে একটি অবজ়ারভেশন রুম । যাঁর শরীরে কোরোনার টিকা দেওয়া হবে, তাঁকে এই কক্ষে আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ।
টিকাকরণের সময় কারা কারা থাকবেন ?
টিকাকরণের প্রক্রিয়ায় থাকবে পাঁচ সদস্যের একটি টিকাকরণ দল । টিকাকরণের আগে দু'জন আধিকারিক যাবতীয় তথ্য পরীক্ষা করে দেখবেন । এরপর তৃতীয় জন টিকা দেবেন । আর সবশেষে চতুর্থ ও পঞ্চম আধিকারিক থাকবেন ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও টিকাকরণের পর আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ।