বিশ্বব্যাপী স্তরে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে COVID কী প্রভাব ফেলেছে
সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প H-1 B ভিসার উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন, এর প্রভাব শুধু আমেরিকার উপরই পড়েনি, বিশ্বব্যপী স্তরে অন্য ভিসার উপরও পড়েছে। যদিও নয়া নীতি শুধু তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যারা আমেরিকার বাইরে থেকে আসছেন এবং যাদের বৈধ—অভিবাসী ভিসা ও অন্যান্য সরকারি ভ্রমণ নথি নেই। বিদেশি নাগরিক, যাদের কাছে বৈধ ভ্রমণ নথি আছে এবং যাদের পাসপোর্টে সরকারি ভিসা অনুমোদন রয়েছে, তাদের উপর এই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য নয়। আমেরিকায় যারা পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের উপর এই ধরনের বিধিনিষেধের কী প্রভাব পড়তে পারে, নিচে বর্ণনা করা হল–
H-1 B ভিসা
H-1 B ভিসাধারীরা হলেন তাঁরা, যাঁদের প্রতিভার ভিত্তিতে নিয়োগ করেছে অ—মার্কিনি বিভিন্ন সংস্থা। চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় ২০২১ অর্থবর্ষ শুরু হচ্ছে এবং ভারতের একাধিক সংস্থা কর্মীদের জন্য সংশ্লিষ্ট H-1 B ভিসা ইসু্য করেছে। আমেরিকা সরকারের নেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুব বেশি না হলেও এই কর্মীদের চলতি বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর তার পরই তারা তাদের ভ্রমণ নথিতে অনুমোদন পাবে এবং শেষ পর্যন্ত সফর করতে পারবে।
যে সব পড়ুয়া নিজেদের ভিসায় পরিবর্তন করতে চান
নয়া নীতিতে সেই সব পড়ুয়াদের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না, যারা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ইতিমধে্যই আমেরিকায় রয়েছে। আবার তাদেরও কিছু হবে না, যারা বর্তমানে ‘অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং’ (OPT)—এর আওতায় থাকছে এবং নিজেদের ভিসার ‘স্টেটাস’ বদলে H-1 B ভিসা করতে চাইছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই পড়ুয়াদের আমেরিকা ছেড়ে চলে যাওয়া এখন উচিত নয় কারণ ছাড়ার পর পুনরায় প্রবেশের চেষ্টা করলে নতুন বিধিনিষেধ তাদের উপরও লাগু হবে।
H-2 B ভিসা
এই ভিসা দেওয়া হয় অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীদের। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৬৬,০০০ মানুষকে এই ভিসা দেওয়া হয়। তবে এ বছর যে বিধিনিষেধ জারি হতে চলেছে, তার জেরে মনে হচ্ছে, যারা খাদ্য প্রস্তুতকরণ এবং হোটেল সেক্টরে কাজ করতে চান, তাদের আমেরিকায় প্রবেশের আর কোনও সম্ভাবনা রইল না।
H-4 ভিসা
এই ভিসা ইসু্য করা হয় H-1 B ভিসাধারীর জীবনসঙ্গী কিংবা তঁার উপর নির্ভরশীল অন্যান্যদের জন্য, যেমন সন্তানসন্ততি, যারা আমেরিকায় কাজ করতে চায়। তাছাড়া রয়েছে J-1 এবং J-2 ভিসা, যা ইসু্য করা হয় J-1 ভিসাধারীদের স্ত্রী/স্বামী, সন্তান কিংবা অন্যান্য যারা নির্ভরশীল, তাদের জন্য। আর আছে L-2 ভিসা, যা L-1 ভিসাধারীদের উপর যারা নির্ভরশীল, তাদের উদ্দেশে্য ইসু্য করা হয়। ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্যাম’—এর আওতায় এই সমস্ত ভিসা নয়া বিধিনিষেধের কাঠামোয় অর্ন্তভুক্ত হবে।
L-1
L-1 ভিসা একটি সংস্থার মধে্য কর্মচারীদের আন্তঃস্থানান্তরকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী, যারা বিদেশে বসবাস করছে, ট্রান্সফার হলে একই সংস্থার আমেরিকার অফিসে কাজ করতে তারা আর প্রবেশ করতে পারবে না।
H-1B ভিসা.. ৮৫,০০০
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৫০,০০০ ভিসা ইসু্য করে। এর মধে্য ভারতের অংশ থাকে অন্তত ৩০,০০০। সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের ফলে অন্তত ৩ লক্ষ ভারতীয়র উপর প্রভাব পড়বে । আমেরিকায় H-1 B ভিসা নিয়ে বসবাসকারী ভারতীয়রা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত সেই সব লক্ষ লক্ষ আমেরিকানদের কথা ভেবে নেওয়া, যারা কোরোনার জেরে নিজেদের চাকরি খুইয়েছেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে আমেরিকার নাগরিকরা ৫,২৫,০০০ চাকরি পেতে পারেন। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই—সহ আরও বহু সংস্থার সিইওরা সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইন্দো—মার্কিন লেজিসলেটর রাজা কৃষ্ণমূর্তি পরামর্শ দিয়েছেন যে, ভিসা ইসু্য করা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন ট্রাম্প। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত করোনা পরবর্তী প্রভাবের মুখোমুখি হওয়া আমেরিকার অর্থনীতির একটা বড় অংশকে পুনরূজ্জীবিত করার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে। কয়েক জন শীর্ষ মার্কিন সেনেটররাও জানিয়েছেন যে ভিসা নীতিকে এভাবে কঠোর না করে আপাতত যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সেই রকম কিছু বদল আনা যেতে পারত। তারা মনে করেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তে মার্কিন অর্থনীতিকে পুনরায় সুবিন্যস্ত করার কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। আর বাকিদের অভিমত হল, ভারতীয়দের পরিবর্তে মার্কিন কর্মচারী নিয়োগের ফলে আমেরিকার সংস্থাগুলির উপর আরও বেশি অর্থনৈতিক চাপ এসে পড়বে।
তেলুগু NRI-দের উপর কী প্রভাব পড়বে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিসা ইসু্য না করার সিদ্ধান্ত তেলুগু রাজে্যর তরুণ বাসিন্দাদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী কর্মচারীরা আমেরিকায় যেতে পারছেন না, দেশেই থেকে যেতে হচ্ছে কারণ চাকুরি ভিসার উপর স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। আধিকারিকরাও এটা মানছেন যে, আমেরিকার সফটওয়্যার সংস্থাগুলিতে কাজ করার জন্য সে দেশে যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ এবং উপযুক্ত কর্মচারী নেই। একটি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আমেরিকায় যা কর্মীসম্পদ আছে, তা দিয়ে সংস্থাগুলিতে অন্তত ২৯ শতাংশ কর্মচারীর যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। বাকিদের মধে্য বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। এই সব কর্মচারীদের নিয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের দাবি, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে অন্যান্য নানা প্রকল্পেও প্রভাব পড়বে।
হতাশ লটারি প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ২৫,০০০
প্রতি বছর, একটা লটারি হয়, সেই সমস্ত যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন করার জন্য, যারা আমেরিকায় চাকরি করার জন্য আবেদন করেছেন। ভিসা ইসু্য করার এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা লটারিতে নির্বাচিত হয়েছেন। এই বছরের লটারি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল দেড় মাস আগে। লটারিতে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের আমেরিকায় যাওয়ার কথা সাড়ে চার মাসের জন্য। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাবের জেরে লটারি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কিছু দিনের মধে্যই আমেরিকা সরকার বিশ্বজুড়ে তাদের সমস্ত কনসু্যলেট এবং দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। এর ফলে লটারিতে নির্বাচিতদের পোর্টফোলিওগুলির ভবিষ্যতও ঝুলে যায়। ভিসা উপদেষ্টাদের জানানো হয়েছে যে, এ বছর ভারতের দুই তেলুগু রাজ্য থেকে অন্তত ২৫,০০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু বিধিনিষেধের জেরে আমেরিকার দরজা তাদের কাছে বন্ধ হয়ে গেল। তবে মঙ্গলবার ‘ইনাডু’—কে একজন মার্কিন অ্যাটর্নি যা জানিয়েছেন, তা অনুযায়ী করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ পরের বছর লটারির দ্বিতীয় একটি রাউন্ড হবে এবং তখন এই সব আবেদনকারীদের আবার চেষ্টা করতে হবে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরে, যারা H-1 B ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ভারতে এসেছিলেন, তারা অন্তত ৬ মাসের জন্য আর নিজেদের কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারবেন না। IMFS কনসালটেন্সির প্রতিনিধি অজয়কুমার ভেমুলাপতি অন্তত তাই বলছেন।