ETV Bharat / bharat

বেসরকারিকরণ ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কীভাবে আত্মনির্ভর দেশ তৈরি করতে পারে ?

গত দুই মাসে COVID-19 আমাদের দেখিয়েছে যে জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি কীভাবে একে অপরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পর্কযুক্ত ৷ চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম শিল্পই উদাহরণ হতে পারে যে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য FDI কেন কার্যকরী নয় ৷

how can privatisation and foreign direct investment possibly make us a self-reliant nation?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
author img

By

Published : Jul 3, 2020, 10:59 AM IST

Updated : Jul 3, 2020, 11:23 AM IST

স্বনির্ভরতা সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধির ভাবনা ছিল সাধারণ জীবনযাপন করা এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে থাকা ৷ এই ধারণার মূল ভিত্তি ছিল যে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করা এবং যতটা সম্ভব স্থানীয় প্রয়োজনের জন্য পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় কাজের লোকদের ব্যবহার করা ৷ বাইরের বিশ্বের উপর ন্যূনতম নির্ভর করে এই কাজ করা ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ (স্বনির্ভর ভারত) গড়ার এই ডাক এই ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না ৷ কারণ, এর সঙ্গে সাধারণ জীবনযাপন (বিশেষ করে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য) এবং স্বয়ং সম্পূর্ণতাকে মেলানো যাচ্ছে না ৷ কোরোনা ভাইরাস (COVID-19) প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং কড়া লকডাউনের পর সম্প্রতি যে ছাড় এবং ত্রাণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা পুরোটা অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করার জন্য ৷ কিন্তু এই পদ্ধতি আমাদের গান্ধিজির স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার নীতি থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে ৷

গত দুই মাসে COVID-19 আমাদের দেখিয়েছে যে জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি কীভাবে একে অপরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পর্কযুক্ত ৷ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তুলনায় বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক বেশি ভেন্টিলেটর, চিকিৎসক এবং শয্যা রয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও প্যানডেমিকের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাই সামলে দিল ৷ অথচ সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে ঠিক মতো অর্থ সাহায্য পায় না এবং অবহেলিত হয়ে আসছে ৷ এই রকম একটি মানবিক সংকটের সময় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে হয় তাদের রোগীদের থেকে নিরাপদ ‘দূরত্ব’ তৈরি করতে দেখা গেল অথবা নিজেদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে দেখা গেল ৷

দুই মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন জায়গায় এর মাত্রা ছিল বিভিন্ন রকম ৷ এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আরও ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে সরকারের এই সিদ্ধান্তে কার্যকারিতা সম্পূর্ণ হয়নি সরকারি উদ্যোগের অভাবে ৷ এই ব্যাঘাতের ফলে অর্থনীতি অস্থির পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছে ৷ ব্যবসা এবং শিল্প ব্যর্থ হচ্ছে । বেকারত্ব, খিদের জ্বালা এবং নিঃসঙ্গতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে ৷ এই সমস্যার মোকাবিলায় যেহেতু এখনও স্পষ্ট কোনও সমাধান আসেনি ৷ তাই অনেকেই এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন ৷ এই ঘটনাই বর্ণনা দিল যে দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতির জন্য কতটা শক্তিশালী ও সমান দক্ষ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন ৷

এই সংকটের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বাস্তব সম্মত উপায়ে লড়াই করতে গেলে আমাদের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করা প্রয়োজন ৷ আমাদের এমন একটা আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যেখানে ধন এবং সম্পদ সমানভাবে সকল মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যায় ৷ সব সময় যাতে তাঁরা সুরক্ষিত এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারে ৷ এমনকী, সংকটের সময়ও তা যাতে বজায় থাকে ৷ আমাদের এমন একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সামাজিক এবং আর্থিক ভেদাভেদ সরিয়ে সকলের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায় ৷ এই দুইটির জন্যই প্রয়োজন আপাত সাম্য-নীতি প্রণয়ন করা এবং পুঁজিবাদী মনোভাবকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ৷ কারণ, এগুলি থাকলে মানবতা সংকটেও মানুষের থেকে বেশি লাভের চিন্তা করা হয় ৷

অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সরকার 8100 কোটি টাকার পরিকল্পনা করেছে ৷ এর মধ্যে বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগও আছে ৷ যা হাসপাতাল ও স্কুলের মতো সামাজিক পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে ৷ এটা যথেষ্ট বিদ্রূপজনক ৷ প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ এবং কয়লা ও খননের ক্ষেত্রগুলিতে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও বিস্তৃতভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে । অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকার পরিচালিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা ৷ গত বছর সেখানকার কর্মচারীদের ধর্মঘটের পর ওই সংস্থা বেসরকারি করণের প্রচেষ্টা স্থগিত করেছিল সরকার ৷ কিন্তু সরকার সম্প্রতি অর্থনৈতিক উদ্দীপক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ওই সংস্থাকে কর্পোরেটের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার আরও বিনিয়োগ টানতে এবং লকডাউনের সময় হওয়া লোকসান পুনরুদ্ধার করার আশায় শ্রম অধিকার আইন স্থগিত করার পদক্ষেপ করেছে । স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে NITI আয়োগ রাজ্যগুলিকে PPP মডেলে মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জেলা হাসপাতালগুলির পরিষেবার মান বৃদ্ধি করার কথা বলেছে ৷ এমন একটি পদক্ষেপ যা কয়েক মাস আগে প্রথমবার প্রস্তাব করার পরও সমালোচিত হয়েছিল ।

চারদিকের অযৌক্তিকতা যুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অর্থনৈতিক উদ্দীপক প্যাকেজকে তাঁর "আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের" অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন । আত্মনির্ভরতার দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে কী ধরনের কল্পনা শক্তি তাঁকে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (FDI) সীমা 49 শতাংশ থেকে 74 শতাংশে বৃদ্ধি করার অনুমতি দিল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয় । প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব কে সুজাতা রাও, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুবিধাগুলিকে আরও বেসরকারি করণের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য NITI আয়োগকে উদ্দেশ করে একটি টুইট করেছেন ৷ তাতে তিনি প্রশ্ন করেছেন যে আত্মনির্ভর ভারতের সংজ্ঞা সরকারের কাছে ঠিক কী ? কারণ, "আমাদের দেওয়া করের টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলিকে বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে" ৷ আর তাই তাদের "জেগে ওঠা উচিত" এবং "জানালার বাইরে দেখা উচিত" ৷

সরকার এই সংকট থেকে স্পষ্টভাবে কিছুই শিখেনি এবং যথারীতি আগের মতো সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা আগ্রহী । প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাদী লবির পুরোপুরি সমর্থন এবং উৎসাহকে সঙ্গী করে সাধারণ সময়ে যতটা সম্ভব হতে পারত, তার চেয়ে বেশি আপাত-সাম্য অর্থনৈতিক নীতি কার্যকর করা হচ্ছে এই সংকটের সুযোগ নিয়ে ৷

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা আসলে বেসরকারিকরণ, বিশ্বায়ন ও উদার অর্থনৈতিক নীতির একটি অংশ ৷ সরাসরি ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হলেও এই অব্যবস্থাপনা এবং সংবেদনশীলতাহীন প্রতিক্রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৷ এর একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হল ভারতীয় পরিযায়ী শ্রমিকরা কীভাবে রাস্তা ধরে বা আরও খারাপ অবস্থায় রেলপথের উপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে বেপরোয়াভাবে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন৷ এর কারণ হল, তাঁদের না ছাড়তে সরকারের উপর বেসরকারি শিল্পগুলির তরফ থেকে চাপ ছিল ৷ বিপরীত শক্তি ও প্রভাবের দ্বারা প্রভাবিত এই ধরনের অমানবিক আদর্শ, যা এই বর্তমান সংকটের সময় নির্দয় সত্য হিসেবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক সতর্কতার বার্তা দিচ্ছে ৷

আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে FDI এবং প্রচলিত আপাত-সাম্যের নীতি কীভাবে কার্যকরী হতে পারে, তা বোঝানোর জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পের উদাহরণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত । 2015 সাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পে FDI 100 শতাংশ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ তার পর থেকে দেশে যা FDI এসেছে, তার বেশিরভাগই আমদানি ও বাণিজ্যে অর্থ দিয়েছে, বিতরণ ও মজুত করার পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে ৷ তবে দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কিছু করা হয়নি ৷ এর ফলে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারীরা শুধুই তাদের পণ্য বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা তুলে নিয়েছে ৷ কিন্তু স্থানীয় শিল্পায়নের পরিকাঠামো উন্নয়নে তারা কিছুই করেনি ৷

আজও, আমাদের দেশে ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামের 80 শতাংশ আমদানি করা হয় । এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিও রয়েছে ৷ বৈদ্যুতিন নয় এমন চিকিৎসা সরঞ্জামগুলির উৎপাদন করার কিছুটা ক্ষমতা অন্তত আছে ৷ কিন্তু বৈদ্যুতিন চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে 90 শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করা হয় ৷ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT) স্ক্যান, ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (MRI), আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান, হৃদরোগের চিকিৎসা যেমন- অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, এন্ডোস্কোপি, কোলনস্কোপি, রেডিয়েশন থেরাপির মতো ক্যাথ ল্যাব এবং কেমোথেরাপির ওষুধ থেকে ছুরি এবং অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত কাঁচিও জার্মানি এবং অ্যামেরিকার মতো দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় ।

চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কের হার (0-7.5 শতাংশ) খুবই কম ৷ চিকিৎসার জন্য যে বৈদ্যুতিন সামগ্রীগুলি আমদানি করা হয়, তার 40 শতাংশই আগে থেকে মালিকানাধীন (এর অর্থ ব্যবহৃত, পুনরায় ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা পণ্য ৷ যা বাজার দরের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়) ৷ এটাও জানা গিয়েছিল যে সরকার যে MSME গুলি থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনে, সেগুলিকে ঠিক মতো টাকা দেওয়া হয় না ৷ কয়েক মাস দেরি হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয় ৷ সেখানে আমদানি যারা করে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই নীতি এবং অভ্যাসের জন্যই দেশীয় উৎপাদনকারীদের তুলনায় বিদেশি সংস্থাগুলি, যারা চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম রপ্তানি করে, তারা বেশি সুবিধা পেয়ে যায় ৷

বর্তমানে ভারতে যে সরঞ্জামগুলি তৈরি হয় তা প্রায়ই নিম্নমানের বলে মনে করা হয় । ভারতীয় সরঞ্জাম ও ওষুধের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কারণে, চিকিৎসকরা বিদেশি সংস্থার তৈরির ওষুধ ও সরঞ্জামের উপর বেশি ভরসা করেন ৷ অনেক সময় এই ধরনের সামগ্রী কেনার জন্য দেওয়া টেন্ডারে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে আবেদনের ছাড়পত্রই দেওয়া হয় না ৷ সেক্ষেত্রে আত্ম-নির্ভর হওয়ার এই ধারণা একেবারে মস্করা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷

বহু বছর ধরে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রি দাবি করছে যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হোক, প্রাক মালিকানাধীন পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক, দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলিকে মূল্য নির্ধারণে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক এবং আমদানি করা পণ্যের MRP নির্ধারণ করা হোক, যাতে পরিমাণ ও গুণমানের দিক থেকে দেশী উৎপাদনকারীদের উজ্জীবিত করা যায়৷ কিন্তু কোনও দাবিই মানা হয়নি ৷ জানা গিয়েছে যে নীতিগত পরিবর্তন আটকানোর জন্য আমদানিকারীদের লবির প্রভাব কাজ করেছে ৷

চিন থেকে ত্রুটিযুক্ত অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটগুলি দেখিয়ে দিয়েছে, সমস্ত আমদানিকৃত পণ্য উচ্চ মানের হয় না । তদুপরি, বিদেশে যে পণ্যগুলি উৎপাদিত হচ্ছে তাদের উপর গুণমান মান নির্ধারণ খুবই কঠিন ৷ ভারতে স্থানীয়ভাবে এমন পণ্য কেন তৈরি করা যাবে না যা সর্বোচ্চ মানের ৷

উৎপাদনের গুণগত মান বৃদ্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল দেশীয় গবেষণা এবং নকশাকে প্রচারের আলোয় তুলে ধরা ৷ বিশেষ করে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে ৷ দেশীয় গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, এটা আমাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্থানীয় সমস্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে পারবে ৷ আর তা স্থানীয় মানুষের কাজে লাগবে ৷ বর্তমানে ভারতে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা মারাত্মকভাবে অবহেলিত হয় । 2005 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত ভারতের 579 টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের উপর সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে এর মধ্যে মাত্র 25 টি (4.3 শতাংশ) প্রতিষ্ঠান বছরে 100 টিরও বেশি গবেষণা পত্র তৈরি করেছিল । সেই তুলনায় অ্যামেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ও চিনের অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সর মতো শীর্ষস্তরের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতি বছর হাজার হাজার গবেষণা পত্র প্রকাশ করে ৷ স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলির মান উন্নত করার জন্য সরকারের আরও বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন ।

চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম শিল্পই উদাহরণ হতে পারে যে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য FDI কেন কার্যকরী নয় ৷ সরকারের স্বনির্ভরতার নতুন লক্ষ্যটি আমদানিতে আমাদের অত্যধিক নির্ভরতার সমস্যার বিষয়টিকে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছে ৷ আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে এবং বৈষম্য তৈরি করেছে ৷ তবে প্রস্তাবিত সমাধানগুলি কেবল এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে । স্বনির্ভরতা কেবলমাত্র নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে ৷ যেখানে বহুজাতিক সংস্থাগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত হবে না ৷ শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণ করে তা মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে ৷ যা স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধন করবে ৷ যা চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করবে ৷ আর জনসাধারণের মধ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনের উৎাসহ বৃদ্ধি করবে ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন সন্দীপ পান্ডে

স্বনির্ভরতা সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধির ভাবনা ছিল সাধারণ জীবনযাপন করা এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে থাকা ৷ এই ধারণার মূল ভিত্তি ছিল যে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করা এবং যতটা সম্ভব স্থানীয় প্রয়োজনের জন্য পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় কাজের লোকদের ব্যবহার করা ৷ বাইরের বিশ্বের উপর ন্যূনতম নির্ভর করে এই কাজ করা ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ (স্বনির্ভর ভারত) গড়ার এই ডাক এই ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না ৷ কারণ, এর সঙ্গে সাধারণ জীবনযাপন (বিশেষ করে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য) এবং স্বয়ং সম্পূর্ণতাকে মেলানো যাচ্ছে না ৷ কোরোনা ভাইরাস (COVID-19) প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং কড়া লকডাউনের পর সম্প্রতি যে ছাড় এবং ত্রাণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা পুরোটা অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করার জন্য ৷ কিন্তু এই পদ্ধতি আমাদের গান্ধিজির স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার নীতি থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে ৷

গত দুই মাসে COVID-19 আমাদের দেখিয়েছে যে জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি কীভাবে একে অপরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পর্কযুক্ত ৷ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তুলনায় বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক বেশি ভেন্টিলেটর, চিকিৎসক এবং শয্যা রয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও প্যানডেমিকের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাই সামলে দিল ৷ অথচ সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে ঠিক মতো অর্থ সাহায্য পায় না এবং অবহেলিত হয়ে আসছে ৷ এই রকম একটি মানবিক সংকটের সময় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে হয় তাদের রোগীদের থেকে নিরাপদ ‘দূরত্ব’ তৈরি করতে দেখা গেল অথবা নিজেদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে দেখা গেল ৷

দুই মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন জায়গায় এর মাত্রা ছিল বিভিন্ন রকম ৷ এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আরও ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে সরকারের এই সিদ্ধান্তে কার্যকারিতা সম্পূর্ণ হয়নি সরকারি উদ্যোগের অভাবে ৷ এই ব্যাঘাতের ফলে অর্থনীতি অস্থির পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছে ৷ ব্যবসা এবং শিল্প ব্যর্থ হচ্ছে । বেকারত্ব, খিদের জ্বালা এবং নিঃসঙ্গতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে ৷ এই সমস্যার মোকাবিলায় যেহেতু এখনও স্পষ্ট কোনও সমাধান আসেনি ৷ তাই অনেকেই এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন ৷ এই ঘটনাই বর্ণনা দিল যে দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতির জন্য কতটা শক্তিশালী ও সমান দক্ষ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন ৷

এই সংকটের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বাস্তব সম্মত উপায়ে লড়াই করতে গেলে আমাদের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করা প্রয়োজন ৷ আমাদের এমন একটা আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যেখানে ধন এবং সম্পদ সমানভাবে সকল মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যায় ৷ সব সময় যাতে তাঁরা সুরক্ষিত এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারে ৷ এমনকী, সংকটের সময়ও তা যাতে বজায় থাকে ৷ আমাদের এমন একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সামাজিক এবং আর্থিক ভেদাভেদ সরিয়ে সকলের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায় ৷ এই দুইটির জন্যই প্রয়োজন আপাত সাম্য-নীতি প্রণয়ন করা এবং পুঁজিবাদী মনোভাবকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ৷ কারণ, এগুলি থাকলে মানবতা সংকটেও মানুষের থেকে বেশি লাভের চিন্তা করা হয় ৷

অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সরকার 8100 কোটি টাকার পরিকল্পনা করেছে ৷ এর মধ্যে বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগও আছে ৷ যা হাসপাতাল ও স্কুলের মতো সামাজিক পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে ৷ এটা যথেষ্ট বিদ্রূপজনক ৷ প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ এবং কয়লা ও খননের ক্ষেত্রগুলিতে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও বিস্তৃতভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে । অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকার পরিচালিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা ৷ গত বছর সেখানকার কর্মচারীদের ধর্মঘটের পর ওই সংস্থা বেসরকারি করণের প্রচেষ্টা স্থগিত করেছিল সরকার ৷ কিন্তু সরকার সম্প্রতি অর্থনৈতিক উদ্দীপক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ওই সংস্থাকে কর্পোরেটের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার আরও বিনিয়োগ টানতে এবং লকডাউনের সময় হওয়া লোকসান পুনরুদ্ধার করার আশায় শ্রম অধিকার আইন স্থগিত করার পদক্ষেপ করেছে । স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে NITI আয়োগ রাজ্যগুলিকে PPP মডেলে মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জেলা হাসপাতালগুলির পরিষেবার মান বৃদ্ধি করার কথা বলেছে ৷ এমন একটি পদক্ষেপ যা কয়েক মাস আগে প্রথমবার প্রস্তাব করার পরও সমালোচিত হয়েছিল ।

চারদিকের অযৌক্তিকতা যুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অর্থনৈতিক উদ্দীপক প্যাকেজকে তাঁর "আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের" অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন । আত্মনির্ভরতার দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে কী ধরনের কল্পনা শক্তি তাঁকে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (FDI) সীমা 49 শতাংশ থেকে 74 শতাংশে বৃদ্ধি করার অনুমতি দিল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয় । প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব কে সুজাতা রাও, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুবিধাগুলিকে আরও বেসরকারি করণের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য NITI আয়োগকে উদ্দেশ করে একটি টুইট করেছেন ৷ তাতে তিনি প্রশ্ন করেছেন যে আত্মনির্ভর ভারতের সংজ্ঞা সরকারের কাছে ঠিক কী ? কারণ, "আমাদের দেওয়া করের টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলিকে বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে" ৷ আর তাই তাদের "জেগে ওঠা উচিত" এবং "জানালার বাইরে দেখা উচিত" ৷

সরকার এই সংকট থেকে স্পষ্টভাবে কিছুই শিখেনি এবং যথারীতি আগের মতো সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা আগ্রহী । প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাদী লবির পুরোপুরি সমর্থন এবং উৎসাহকে সঙ্গী করে সাধারণ সময়ে যতটা সম্ভব হতে পারত, তার চেয়ে বেশি আপাত-সাম্য অর্থনৈতিক নীতি কার্যকর করা হচ্ছে এই সংকটের সুযোগ নিয়ে ৷

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা আসলে বেসরকারিকরণ, বিশ্বায়ন ও উদার অর্থনৈতিক নীতির একটি অংশ ৷ সরাসরি ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হলেও এই অব্যবস্থাপনা এবং সংবেদনশীলতাহীন প্রতিক্রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৷ এর একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হল ভারতীয় পরিযায়ী শ্রমিকরা কীভাবে রাস্তা ধরে বা আরও খারাপ অবস্থায় রেলপথের উপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে বেপরোয়াভাবে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন৷ এর কারণ হল, তাঁদের না ছাড়তে সরকারের উপর বেসরকারি শিল্পগুলির তরফ থেকে চাপ ছিল ৷ বিপরীত শক্তি ও প্রভাবের দ্বারা প্রভাবিত এই ধরনের অমানবিক আদর্শ, যা এই বর্তমান সংকটের সময় নির্দয় সত্য হিসেবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক সতর্কতার বার্তা দিচ্ছে ৷

আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে FDI এবং প্রচলিত আপাত-সাম্যের নীতি কীভাবে কার্যকরী হতে পারে, তা বোঝানোর জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পের উদাহরণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত । 2015 সাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পে FDI 100 শতাংশ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ তার পর থেকে দেশে যা FDI এসেছে, তার বেশিরভাগই আমদানি ও বাণিজ্যে অর্থ দিয়েছে, বিতরণ ও মজুত করার পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে ৷ তবে দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কিছু করা হয়নি ৷ এর ফলে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারীরা শুধুই তাদের পণ্য বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা তুলে নিয়েছে ৷ কিন্তু স্থানীয় শিল্পায়নের পরিকাঠামো উন্নয়নে তারা কিছুই করেনি ৷

আজও, আমাদের দেশে ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামের 80 শতাংশ আমদানি করা হয় । এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিও রয়েছে ৷ বৈদ্যুতিন নয় এমন চিকিৎসা সরঞ্জামগুলির উৎপাদন করার কিছুটা ক্ষমতা অন্তত আছে ৷ কিন্তু বৈদ্যুতিন চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে 90 শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করা হয় ৷ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT) স্ক্যান, ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (MRI), আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান, হৃদরোগের চিকিৎসা যেমন- অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, এন্ডোস্কোপি, কোলনস্কোপি, রেডিয়েশন থেরাপির মতো ক্যাথ ল্যাব এবং কেমোথেরাপির ওষুধ থেকে ছুরি এবং অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত কাঁচিও জার্মানি এবং অ্যামেরিকার মতো দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় ।

চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কের হার (0-7.5 শতাংশ) খুবই কম ৷ চিকিৎসার জন্য যে বৈদ্যুতিন সামগ্রীগুলি আমদানি করা হয়, তার 40 শতাংশই আগে থেকে মালিকানাধীন (এর অর্থ ব্যবহৃত, পুনরায় ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা পণ্য ৷ যা বাজার দরের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়) ৷ এটাও জানা গিয়েছিল যে সরকার যে MSME গুলি থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনে, সেগুলিকে ঠিক মতো টাকা দেওয়া হয় না ৷ কয়েক মাস দেরি হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয় ৷ সেখানে আমদানি যারা করে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই নীতি এবং অভ্যাসের জন্যই দেশীয় উৎপাদনকারীদের তুলনায় বিদেশি সংস্থাগুলি, যারা চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম রপ্তানি করে, তারা বেশি সুবিধা পেয়ে যায় ৷

বর্তমানে ভারতে যে সরঞ্জামগুলি তৈরি হয় তা প্রায়ই নিম্নমানের বলে মনে করা হয় । ভারতীয় সরঞ্জাম ও ওষুধের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কারণে, চিকিৎসকরা বিদেশি সংস্থার তৈরির ওষুধ ও সরঞ্জামের উপর বেশি ভরসা করেন ৷ অনেক সময় এই ধরনের সামগ্রী কেনার জন্য দেওয়া টেন্ডারে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে আবেদনের ছাড়পত্রই দেওয়া হয় না ৷ সেক্ষেত্রে আত্ম-নির্ভর হওয়ার এই ধারণা একেবারে মস্করা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷

বহু বছর ধরে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রি দাবি করছে যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হোক, প্রাক মালিকানাধীন পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক, দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলিকে মূল্য নির্ধারণে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক এবং আমদানি করা পণ্যের MRP নির্ধারণ করা হোক, যাতে পরিমাণ ও গুণমানের দিক থেকে দেশী উৎপাদনকারীদের উজ্জীবিত করা যায়৷ কিন্তু কোনও দাবিই মানা হয়নি ৷ জানা গিয়েছে যে নীতিগত পরিবর্তন আটকানোর জন্য আমদানিকারীদের লবির প্রভাব কাজ করেছে ৷

চিন থেকে ত্রুটিযুক্ত অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটগুলি দেখিয়ে দিয়েছে, সমস্ত আমদানিকৃত পণ্য উচ্চ মানের হয় না । তদুপরি, বিদেশে যে পণ্যগুলি উৎপাদিত হচ্ছে তাদের উপর গুণমান মান নির্ধারণ খুবই কঠিন ৷ ভারতে স্থানীয়ভাবে এমন পণ্য কেন তৈরি করা যাবে না যা সর্বোচ্চ মানের ৷

উৎপাদনের গুণগত মান বৃদ্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল দেশীয় গবেষণা এবং নকশাকে প্রচারের আলোয় তুলে ধরা ৷ বিশেষ করে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে ৷ দেশীয় গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, এটা আমাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্থানীয় সমস্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে পারবে ৷ আর তা স্থানীয় মানুষের কাজে লাগবে ৷ বর্তমানে ভারতে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা মারাত্মকভাবে অবহেলিত হয় । 2005 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত ভারতের 579 টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের উপর সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে এর মধ্যে মাত্র 25 টি (4.3 শতাংশ) প্রতিষ্ঠান বছরে 100 টিরও বেশি গবেষণা পত্র তৈরি করেছিল । সেই তুলনায় অ্যামেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ও চিনের অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সর মতো শীর্ষস্তরের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতি বছর হাজার হাজার গবেষণা পত্র প্রকাশ করে ৷ স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলির মান উন্নত করার জন্য সরকারের আরও বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন ।

চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম শিল্পই উদাহরণ হতে পারে যে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য FDI কেন কার্যকরী নয় ৷ সরকারের স্বনির্ভরতার নতুন লক্ষ্যটি আমদানিতে আমাদের অত্যধিক নির্ভরতার সমস্যার বিষয়টিকে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছে ৷ আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে এবং বৈষম্য তৈরি করেছে ৷ তবে প্রস্তাবিত সমাধানগুলি কেবল এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে । স্বনির্ভরতা কেবলমাত্র নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে ৷ যেখানে বহুজাতিক সংস্থাগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত হবে না ৷ শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণ করে তা মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে ৷ যা স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধন করবে ৷ যা চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করবে ৷ আর জনসাধারণের মধ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনের উৎাসহ বৃদ্ধি করবে ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন সন্দীপ পান্ডে

Last Updated : Jul 3, 2020, 11:23 AM IST

For All Latest Updates

TAGGED:

covid 19
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.