হাথরস, 30 সেপ্টেম্বর : শেষবারের জন্য মেয়ের মুখ দেখতে চেয়েচিলেন মা । কিন্তু তা-ও হল না । রাতেই জোর করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শ্মশানে । আড়াইটে নাগাদ হাথরসের নির্যাতিতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । এমনই অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে । টানা 15 দিনের লড়াই শেষে গতকাল দিল্লিতে মৃত্যু হয় হাথরসের 'গণধর্ষিতা'র ।
একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স আটকে পুলিশের সঙ্গে বচসায় নির্যাতিতার পরিবার । আর রাস্তায় বসে অসহায়ভাবে কাঁদছেন নির্যাতিতার মা । মৃতের পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ পুলিশ জোর করে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যায় । একটি কালো স্করপিয়োতে করে নিয়ে যাওয়া হয় নির্যাতিতার বাবা ও ভাইকেও । এরপরই তড়িঘড়ি দেহ সৎকার করে ফেলে পুলিশ ।
শেষকৃত্যে সম্মতি ছিল কি না জানতে চাইলে মৃতের ভাই বলেন, "পুলিশ নিজে থেকেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে । পুলিশ আমাদের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল । আমরা সকালে শেষকৃত্য করার জন্য অনুরোধ করি । কিন্তু, পুলিশ আমাদের কথা মানেনি ।" নির্যাতিতার ভাই আরও বলেন, "আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বিষয়টির তদন্ত করা হোক এবং দোষীদের ফাঁসি দেওয়া হোক । আমরাও সুরক্ষা চাই । প্রশাসন আমাদের অনেক চাপে ফেলেছে । আমরা স্থানীয় পুলিশকে বিশ্বাস করি না ।"
টানা 15 দিনের লড়াই শেষে গতকাল মারা যান নির্যাতিতা । বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আট বছর আগের সেই রাতের কথা । শরীরে একাধিক আঘাত, পক্ষাঘাত, জিহ্বায় গভীর ক্ষত । যেন নির্ভয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি । জীবন-মৃত্যুর টানাপোড়েন । কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি । ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশ । এই ক্ষোভ অচেনা নয় । আট বছর আগে শীতেও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল রাজপথে । এবারও সেই একইরকম বিক্ষোভ । হাথরসের গণধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশ । বিচার চেয়ে দিল্লির হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ভিম সেনা । স্লোগান একটাই, "ফাঁসি দিন !" বিজয় চকে বিক্ষোভ দেখায় মহিলা কংগ্রেস ।
আরও পড়ুন : হাথরসের গণধর্ষণে নির্ভয়ার স্মৃতি, দিল্লিতে বিক্ষোভ ভিমসেনা ও মহিলা কংগ্রেসের
গতকাল সকালে দিল্লির সফদর জং হাসপাতালে মৃত্যু হয় হাথরসের 'গণধর্ষিতা'র । জানা গিয়েছে, 14 সেপ্টেম্বর মা ও দাদার সঙ্গে প্রতিদিনের মতো ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন যুবতি ৷ অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানতে টানতে পাশের একটি জমিতে নিয়ে যায় ও গণধর্ষণ করে চারজন৷ জিভ টেনে ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ৷ তাঁর জিভে গভীর ক্ষত ছিল । JNMC-এ চিকিৎসা চলছিল যুবতির । অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সোমবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভরতি করা হয় । সেখান থেকে পরে AIIMS-এ নিয়ে আসা হয় । চিকিৎসকরা জানান, ওই যুবতির শিরদাঁড়ায় গুরুতর আঘাত ছিল । যার জন্য তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন । শ্বাসও নিতে পারছিলেন না যুবতি ।
ঘটনায় প্রথমে ধর্ষণের মামলা নিতে অস্বীকার করার অভিযোগ উঠেছে উত্তপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে । তারা প্রথমে হত্যার চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে । পরে অবশ্য ধর্ষণের অভিযোগ যুক্ত করে পুলিশ । গতকাল, এক প্রবীণ পুলিশ কর্তা বলেছিলেন, ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং তাঁরা ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন ।
আরও পড়ুন : উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই : প্রিয়াঙ্কা
এদিকে, শ্মশানে মৃতের দেহ সৎকারের সময় পরিবারের অনুপস্থিতির অভিযোগও অস্বীকার করেছে পুলিশ । এক পুলিশ কর্তা বলেন, "আমাদের কাছে পরিবারের সদস্যদের ভিডিয়ো রয়েছে । আমি মিডিয়ার সামনে সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করতে পারলে খুশি হব । পরিবারের সম্মতির পরেই আমরা শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছি ।"
নির্যাতিতার বাবা বলেছেন, "আমরা চেয়েছিলাম হিন্দু ঐতিহ্য মতে শেষকৃত্য করা হোক । আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল । জোর করে দেহ নিয়ে গেল । আমরা শেষবারের জন্য আমাদের মেয়ের মুখ দেখতে পেলাম না ।" গতরাতে মৃতদেহ দিল্লি থেকে প্রায় 200 কিলোমিটার দূরে হাথরসে নির্যাতিতার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় । তার পরিবার এবং গ্রামবাসীদের অভিযোগ তাঁদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে দেহ সৎকার করে দেওয়া হয়েছে ।