বিরোধীশাসিত বহু রাজ্য বৃহস্পতিবারের GST কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের প্রস্তাবিত দুই-বিকল্পের ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করেছে । এই ফর্মুলায় রাজ্যগুলিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তৈরি পদ্ধতির দ্বারা এই বছর তাদের রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর জন্য ঋণ নিতে হবে । অন্তত দু'টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী, কেরালার অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাক এবং পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত বাদল জনসমক্ষেই কেন্দ্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন, এটা তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যদিও ওয়াকবিহাল ব্যক্তিরা বলছেন, বিহার উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম । কারণ তারা শুরু থেকেই ঋণ নিতে ইচ্ছুক ছিল ৷ যেখানে অন্য রাজ্যগুলি তাদের সাংবিধানিকভাবে বকেয়া GST বরাদ্দ মেটাতে কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছিল ।
GST কাউন্সিলের বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক ব্যক্তি ETV ভারতকে জানান, “রাজস্ব ঘাটতি পূরণে বিহার ঋণ নিতে সম্মত হয়, যেখানে অন্য রাজ্যগুলি এর বিরুদ্ধে ছিল।”
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও মেনে নেন COVID-19 লকডাউনের জন্য ভার্চুয়ালি আয়োজিত এই বৈঠকের শুরুতেই রাজ্যগুলি দাবি করে যে, তাদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত GST বকেয়া মেটাতে কেন্দ্রের ঋণ নেওয়া উচিত । তাঁর বক্তব্যে নির্মলা সীতারমন বলেন, “প্রাথমিকভাবে কয়েকটি রাজ্য মন্তব্য করে কেন্দ্রের ঋণ নেওয়া উচিত । তারপর প্রেজেন্টেশনে বলা হয় যে আসলে ঘাটতি কোথায় । তারপর আমি দু'টি বিকল্প দিয়েছি, এবং দু'টিতেই রাজ্যদের ঋণ নেওয়ার বিষয় রয়েছে ।” অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট যে কেন্দ্রের ঋণ নেওয়ার দাবি রাজ্যগুলোর তরফে উঠেছিল, যাতে আইনি ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা অনুযায়ী তাদের GST ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় ৷ তিনি বলেন, “আমরা তাদের বুঝিয়ে বলেছি যে কেন রাজ্যগুলোরই ঋণ নেওয়া উচিত এবং কেন্দ্রের নয় । এছাড়াও আমরা বলেছি যে যদি রাজ্যগুলি ঋণ নেয়, তাহলে বাজারের শোরগোল আর লোকজনের ভিড় বদলে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া চালাব।”
2017 সালের GST আইনের (রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ) আওতায়, পাঁচ বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ডে রাজ্যগুলোর রাজস্ব আদায়ে কোনওরকম ক্ষতি হলে, তা পূরণ করতে কেন্দ্র বাধ্য ।
এছাড়াও GST আইন রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি পূরণের জন্য কেন্দ্রকে ক্ষমতা দেয়, যাতে সিন পণ্য এবং বিলাসবহুল পণ্যে সেস বসিয়ে এই অর্থ তোলা যায় ।
রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে GST বকেয়া 1.5 লাখ কোটি টাকা । কেন্দ্র দু-মাস অন্তর GST ক্ষতিপূরণ দেয় ৷ তাই এই অঙ্কটা এর মধ্যেই বকেয়া রয়েছে । আর সরকারের নিজের অনুমান, এই বছরে GST ক্ষতিপূরণের বকেয়া দাঁড়াবে প্রায় 3 লাখ কোটি টাকা ।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এবছরের GST সেস সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র 65000 কোটি টাকা হবে বলে অনুমান, আর রাজ্যগুলোর রাজস্ব আদায়ে মোট ঘাটতি 3 লাখ কোটি টাকা । কেন্দ্র রাজ্যগুলির সামনে দু'টি বিকল্প রেখেছে । হয় তারা সম্মিলিতভাবে 97000 কোটি টাকা ঋণ নিতে পারে, যেটা শুধুমাত্র GST প্রয়োগের ফলে তাদের রাজস্ব ঘাটতি, নয়ত তারা সম্মিলিতভাবে 2.35 লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারে যা তাদের এই গোটা বছরের রাজস্ব ঘাটতি, যার একটা কারণ হল অর্থনীতিতে কোভিড-19-এর প্রভাব । রাজ্যগুলো কেন্দ্রকে দুটো বিকল্পই বিস্তারিতভাবে জানাতে বলেছে, এবং তা নিয়ে সাতদিন পর্যালোচনা করার পর তারা কেন্দ্রকে তাদের মতামত জানাবে । অর্থমন্ত্রী বলেন, “তখন আমরা একটা ছোট্ট GST কাউন্সিল বৈঠক করতে পারি ।”