ETV Bharat / bharat

মানব জীবনের গতি বাড়াতে নির্ভরতা মানব রোবটে - মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA

চিনে নার্সিংহোম, হাসপাতাল এবং বাড়িতেও রোবটের ব্যবহার বহুল । অ্যামেরিকা, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন এবং সিঙ্গাপুর, সকলেই রোবট তৈরিতে খুব সক্রিয় । সম্প্রতি ভারতে তৈরি হয়েছে ব্যোমমিত্র । ভবিষ্যতে মানবজীবনের একটি বড় অংশ হতে চলেছে মানব রোবট ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Feb 21, 2020, 12:23 PM IST

দিল্লি, 21 ফেব্রুয়ারি : ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) একটি মহিলা মহাকাশচারী হিউম্যানয়েড তথা মানবরূপী রোবট ব্যোমমিত্র তৈরি করেছে । যা বর্তমানে অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । 22 জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে ‘মানব মহাকাশ অভিযান এবং উদ্ভাবনা’ সম্মেলনে এই মানবরূপী রোবট নিজের পরিচয় নিজেই দিয়েছিল । বলেছিল, “নমস্কার! আমি হলাম ব্যোমমিত্র। অর্ধমানবী রোবট ।’’ ব্যোমমিত্রকে ধরে নেওয়া হয়েছে মানবরূপী রোবটের জগতে বিরাট বড় একটি সাফল্য হিসেবে । মহাকাশ গবেষণায় মানবহীন অভিযান গগনযানের অংশ হিসাবে ISRO এই মানবরূপী রোবটকে প্রকাশ্যে এনেছে । মহাকাশে মানব নভশ্চর যেভাবে কাজ করে, এটিও প্রায় একইভাবে কাজ করে । জীবন রক্ষা এবং অক্সিজেনের ব্যবহার নিয়ে এটি মহাকাশচারীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানের কাজ করে । অ্যামেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA একটি 300 পাউন্ড ওজনের মানবরূপী রোবট প্রস্তুত করেছে মঙ্গল গ্রহে গবেষণা চালানোর জন্য এবং শীঘ্রই সেটি কাজ শুরু করবে । এতে একাধিক ক্যামেরা লাগানো আছে, যা সারাক্ষণ চারপাশের পরিবেশের উপর নজরদারি চালায় এর 3D স্টিরিয়ো এবং ভিডিয়ো রেকর্ড করা ক্যামেরার মাধ্যমে । বিশ্বব্যাপী ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীরা দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন মানবরূপী রোবট উৎপাদনের জন্য । এর জেরে পৃথিবীজুড়ে এই মানবরূপী রোবটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে ।

নতুন পৃথিবীর দিকে এক কদম বাড়ানো

হিউম্যানয়েড বা মানবরূপী রোবট তারাই, যাদের ধাঁচ মানুষের মতোই আর এরা সাধারণ মানুষের মতোই কথা বলতে পারে । এই ধরনের কিছু রোবট আবার আগে কী কথোপকথন হয়েছিল, তাও মনে করতে পারে, যার মাধ্যমে তারা দাবি করে যে মানুষের মতো তাদেরও স্মৃতিশক্তি আছে । বিজ্ঞানীরা কঠোর পরিশ্রম করে এই মানবরূপী রোবট তৈরি করেছেন যাতে এরা আবেগের বহিঃপ্রকাশও ঘটাতে পারে । মানবরূপী রোবট ‘সোফিয়া’, যাকে হংকংয়ের একটি সংস্থা তৈরি করেছে । 50টি পৃথক পৃথক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে । এটি মানুষের মুখ এবং দৃশ্য শনাক্ত করতে পারে । এটি মানুষের অঙ্গভঙ্গিও অনুকরণ করতে পারে । এমনকী, সোফিয়ার পক্ষে কোনও মানুষের সঙ্গে সামান্য কত্থোপকখন করাও সম্ভব, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ।

চার বছর আগে চিন প্রথম মানবরূপী রোবট তৈরি করেছিল, একজন সুন্দরী মহিলার মুখাবয়বের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে । তার নাম ‘জিয়া’। এই রোবট বলতে পারে আবহাওয়া কেমন । চোখের সঞ্চালন এবং কথাবার্তার সঙ্গে তাল রেখে ঠোঁটের সঞ্চালনের বিষয়টি বিচার করলে দেখা যাবে, এই রোবটের নকশা করা হয়েছে অত্যন্ত যত্ন সহকারে । ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র জগতে গবেষণা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে । যার ফলে রোবটের নকশায় উৎকৃষ্ট বদল আসতে চলেছে । চিনে রেস্তোরাঁ, নার্সিংহোম, হাসপাতাল এবং বাড়িতেও রোবটের ব্যবহার বহুল । অ্যামেরিকা, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন এবং সিঙ্গাপুর, সকলেই রোবট তৈরিতে খুব সক্রিয় । কিছু কিছু দেশে তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার জন্য বিশেষ বাজেটের ব্যবস্থা রয়েছে ।

2014 সালে জাপানি বিজ্ঞানীরা প্রথম অ্যান্ড্রয়েড রোবটের নকশা তৈরি করেছিলেন, যে খবর পড়তে পারে । এই রোবটটি বিখ্যাত লেখক এবং উদ্যোগপতি মার্টিন রথব্ল্যাটের নির্দেশে তাঁরই স্ত্রীর আদলে তৈরি হয়েছিল এবং এর নাম ছিল ‘বীণা 48’। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলসহ অসংখ্য টিভি অনুষ্ঠানে একে দেখা গিয়েছে । সমীক্ষায় দাবি, 2025 সালের মধ্যে কর্মচারীদের অর্ধেক কাজকর্মই রোবোটিক্সের মাধ্যমে হবে । এর কারণ ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয়ে চড়া ঘাটতি । কম্পিউটার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, গৃহকাজের সরঞ্জাম এবং পরিবহণ সামগ্রীতে রোবোটিক্সের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে । অন্য কিছুর তুলনায় এই প্রবণতা পরিষেবা ক্ষেত্রের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে । মানবরূপী রোবটের উৎপাদন ও ব্যবহার 2016 সালে যেখানে ছিল 2.96 ইউনিট, সেখানে 2026 সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে 26.43 বিলিয়ন ইউনিটে (বার্গ ইনসাইট রিপোর্ট) । গবেষণা সংস্থা BCC-র হিসেবে, 2018 সালে বিশ্বের বাজারে রোবোটিক ইন্ডাস্ট্রির পরিধি ছিল প্রায় 3.801 বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর 2023 সালে তা বেড়ে গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় 6,400 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে । জার্মান ইন্ডাস্ট্রিতে রোবটের ব্যবহার খুবই বেশি । জার্মানিতে প্রত্যেক 10,000 কর্মী পিছু গড়ে ব্যবহার করা হয় 309 টি রোবট । বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় এটা অনেকটাই বেশি ।

মানুষ যেখানে পৌঁছতে পারে না, সেখানে রোবটের পরিষেবা নেওয়া হয় । ‘ওয়্যাক ম্যান’ তৈরি করেছিল ইটালিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি । এই রোবটের নকশা প্রথম তৈরি করা হয় 2015 সালে এবং তারপর থেকে অতিরিক্ত কারিগরি বৈশিষ্ট্য যোগ করে এর মানোন্নয়ন করা হয়ে চলেছে । একে তৈরি করা হয়েছিল 6 ফুট লম্বা আর এরং ওজন ছিল 102 কেজি । একটি কিলোওয়াট ব্যাটারির সাহাযে্য এটি দু’ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম । কোনও দুর্ঘটনা, যেমন বাড়িতে গ্যাস লিক করলে, এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘরের দরজা খুলে দিতে পারে এবং ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে । কোথা থেকে গ্যাস লিক করছে, তারও হদিশ বের করতে পারে এবং সেই ভালভটি বন্ধ করে দিতে পারে । ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজেও রোবটের পরিষেবা লাগে । জয়েন্ট রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি এবং এয়ারবাস গ্রুপ যৌথভাবে চার বছর গবেষণা করেছে । আকাশযান তৈরি এবং এই জাতীয় কাজ, যা মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক, তাতে মানুষের বিকল্প হিসেবে রোবটকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

সব দিকেই রোবট

জয়েন্ট রোবোটিক্স ল্যাবরেটরির তৈরি রোবটের ধরন সত্যিই বিস্ময়কর । কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সারবদ্ধ লিগামেন্ট তৈরি করেছেন, যা দেখতে লাগে অবিকল মানুষের পেশির মতো । এটির সাহায্যে রোবটরা তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মুক্তভাবে নাড়াচাড়া করতে পারে । এই রোবটগুলিতে রয়েছে ‘সিন্থেটিক পেশি’ যা তাদের ওজনের তুলনায় অনেক বেশি ওজন বহন করে । দেহ নাড়াতে এবং সহজেই ভাঁজ করতে সাহায্য করে । এই রোবটগুলি বয়স্ক এবং শিশুদের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদেরও সাহায্য করে । যে সব শিশুদের পড়তে লিখতে অসুবিধা হয়, স্পষ্টভাষায় উচ্চারণ করার মাধ্যমে তাদেরও সাহায্য করে । চিকিৎসা জগতেও এরা সাহায্য করে । নিরাপত্তা ক্ষেত্রে রোবটদের ভূমিকাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অপরাধ নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে । সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি ঠাহর করা সম্ভব হয়েছে । কৃষি এবং খাদ্য প্রস্তুতিতেও একে কাজে লাগানো হয় ।

যেভাবে কুকুর এবং বিড়াল প্রভৃতি পোষ্য পরিবারের অংশ হয়ে ওঠে, তেমনই মানবরূপী রোবটও পরিবারের সদস্য হয়ে উঠবে । বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, রোবটরা শীঘ্রই মানব জীবনের বিকল্প হয়ে উঠবে । সাধারণত রোবটদের আগে প্রোগ্রাম করা হয় । তাদের যে যে দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়, শুধুমাত্র সেটাই তারা সম্পাদন করতে পারে । স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এদের নেই । স্বকার্যক্ষমতার অভাব, নিজেই নিজের বিদ্যুৎ যোগান দেওয়ার ক্ষমতার অভাব এবং ব্যাটারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া তাদের কাজের উপরও প্রভাব ফেলে । উন্নয়নের গতিবাহক হিসাবে এই মানবরূপী রোবটগুলিকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা যেহেতু চলছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, তারা যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যই কার্যকরী অস্ত্র হয়ে উঠবে ।

দিল্লি, 21 ফেব্রুয়ারি : ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) একটি মহিলা মহাকাশচারী হিউম্যানয়েড তথা মানবরূপী রোবট ব্যোমমিত্র তৈরি করেছে । যা বর্তমানে অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । 22 জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে ‘মানব মহাকাশ অভিযান এবং উদ্ভাবনা’ সম্মেলনে এই মানবরূপী রোবট নিজের পরিচয় নিজেই দিয়েছিল । বলেছিল, “নমস্কার! আমি হলাম ব্যোমমিত্র। অর্ধমানবী রোবট ।’’ ব্যোমমিত্রকে ধরে নেওয়া হয়েছে মানবরূপী রোবটের জগতে বিরাট বড় একটি সাফল্য হিসেবে । মহাকাশ গবেষণায় মানবহীন অভিযান গগনযানের অংশ হিসাবে ISRO এই মানবরূপী রোবটকে প্রকাশ্যে এনেছে । মহাকাশে মানব নভশ্চর যেভাবে কাজ করে, এটিও প্রায় একইভাবে কাজ করে । জীবন রক্ষা এবং অক্সিজেনের ব্যবহার নিয়ে এটি মহাকাশচারীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানের কাজ করে । অ্যামেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA একটি 300 পাউন্ড ওজনের মানবরূপী রোবট প্রস্তুত করেছে মঙ্গল গ্রহে গবেষণা চালানোর জন্য এবং শীঘ্রই সেটি কাজ শুরু করবে । এতে একাধিক ক্যামেরা লাগানো আছে, যা সারাক্ষণ চারপাশের পরিবেশের উপর নজরদারি চালায় এর 3D স্টিরিয়ো এবং ভিডিয়ো রেকর্ড করা ক্যামেরার মাধ্যমে । বিশ্বব্যাপী ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীরা দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন মানবরূপী রোবট উৎপাদনের জন্য । এর জেরে পৃথিবীজুড়ে এই মানবরূপী রোবটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে ।

নতুন পৃথিবীর দিকে এক কদম বাড়ানো

হিউম্যানয়েড বা মানবরূপী রোবট তারাই, যাদের ধাঁচ মানুষের মতোই আর এরা সাধারণ মানুষের মতোই কথা বলতে পারে । এই ধরনের কিছু রোবট আবার আগে কী কথোপকথন হয়েছিল, তাও মনে করতে পারে, যার মাধ্যমে তারা দাবি করে যে মানুষের মতো তাদেরও স্মৃতিশক্তি আছে । বিজ্ঞানীরা কঠোর পরিশ্রম করে এই মানবরূপী রোবট তৈরি করেছেন যাতে এরা আবেগের বহিঃপ্রকাশও ঘটাতে পারে । মানবরূপী রোবট ‘সোফিয়া’, যাকে হংকংয়ের একটি সংস্থা তৈরি করেছে । 50টি পৃথক পৃথক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে । এটি মানুষের মুখ এবং দৃশ্য শনাক্ত করতে পারে । এটি মানুষের অঙ্গভঙ্গিও অনুকরণ করতে পারে । এমনকী, সোফিয়ার পক্ষে কোনও মানুষের সঙ্গে সামান্য কত্থোপকখন করাও সম্ভব, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ।

চার বছর আগে চিন প্রথম মানবরূপী রোবট তৈরি করেছিল, একজন সুন্দরী মহিলার মুখাবয়বের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে । তার নাম ‘জিয়া’। এই রোবট বলতে পারে আবহাওয়া কেমন । চোখের সঞ্চালন এবং কথাবার্তার সঙ্গে তাল রেখে ঠোঁটের সঞ্চালনের বিষয়টি বিচার করলে দেখা যাবে, এই রোবটের নকশা করা হয়েছে অত্যন্ত যত্ন সহকারে । ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র জগতে গবেষণা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে । যার ফলে রোবটের নকশায় উৎকৃষ্ট বদল আসতে চলেছে । চিনে রেস্তোরাঁ, নার্সিংহোম, হাসপাতাল এবং বাড়িতেও রোবটের ব্যবহার বহুল । অ্যামেরিকা, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন এবং সিঙ্গাপুর, সকলেই রোবট তৈরিতে খুব সক্রিয় । কিছু কিছু দেশে তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার জন্য বিশেষ বাজেটের ব্যবস্থা রয়েছে ।

2014 সালে জাপানি বিজ্ঞানীরা প্রথম অ্যান্ড্রয়েড রোবটের নকশা তৈরি করেছিলেন, যে খবর পড়তে পারে । এই রোবটটি বিখ্যাত লেখক এবং উদ্যোগপতি মার্টিন রথব্ল্যাটের নির্দেশে তাঁরই স্ত্রীর আদলে তৈরি হয়েছিল এবং এর নাম ছিল ‘বীণা 48’। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলসহ অসংখ্য টিভি অনুষ্ঠানে একে দেখা গিয়েছে । সমীক্ষায় দাবি, 2025 সালের মধ্যে কর্মচারীদের অর্ধেক কাজকর্মই রোবোটিক্সের মাধ্যমে হবে । এর কারণ ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয়ে চড়া ঘাটতি । কম্পিউটার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, গৃহকাজের সরঞ্জাম এবং পরিবহণ সামগ্রীতে রোবোটিক্সের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে । অন্য কিছুর তুলনায় এই প্রবণতা পরিষেবা ক্ষেত্রের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে । মানবরূপী রোবটের উৎপাদন ও ব্যবহার 2016 সালে যেখানে ছিল 2.96 ইউনিট, সেখানে 2026 সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে 26.43 বিলিয়ন ইউনিটে (বার্গ ইনসাইট রিপোর্ট) । গবেষণা সংস্থা BCC-র হিসেবে, 2018 সালে বিশ্বের বাজারে রোবোটিক ইন্ডাস্ট্রির পরিধি ছিল প্রায় 3.801 বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর 2023 সালে তা বেড়ে গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় 6,400 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে । জার্মান ইন্ডাস্ট্রিতে রোবটের ব্যবহার খুবই বেশি । জার্মানিতে প্রত্যেক 10,000 কর্মী পিছু গড়ে ব্যবহার করা হয় 309 টি রোবট । বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় এটা অনেকটাই বেশি ।

মানুষ যেখানে পৌঁছতে পারে না, সেখানে রোবটের পরিষেবা নেওয়া হয় । ‘ওয়্যাক ম্যান’ তৈরি করেছিল ইটালিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি । এই রোবটের নকশা প্রথম তৈরি করা হয় 2015 সালে এবং তারপর থেকে অতিরিক্ত কারিগরি বৈশিষ্ট্য যোগ করে এর মানোন্নয়ন করা হয়ে চলেছে । একে তৈরি করা হয়েছিল 6 ফুট লম্বা আর এরং ওজন ছিল 102 কেজি । একটি কিলোওয়াট ব্যাটারির সাহাযে্য এটি দু’ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম । কোনও দুর্ঘটনা, যেমন বাড়িতে গ্যাস লিক করলে, এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘরের দরজা খুলে দিতে পারে এবং ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে । কোথা থেকে গ্যাস লিক করছে, তারও হদিশ বের করতে পারে এবং সেই ভালভটি বন্ধ করে দিতে পারে । ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজেও রোবটের পরিষেবা লাগে । জয়েন্ট রোবোটিক্স ল্যাবরেটরি এবং এয়ারবাস গ্রুপ যৌথভাবে চার বছর গবেষণা করেছে । আকাশযান তৈরি এবং এই জাতীয় কাজ, যা মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক, তাতে মানুষের বিকল্প হিসেবে রোবটকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

সব দিকেই রোবট

জয়েন্ট রোবোটিক্স ল্যাবরেটরির তৈরি রোবটের ধরন সত্যিই বিস্ময়কর । কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সারবদ্ধ লিগামেন্ট তৈরি করেছেন, যা দেখতে লাগে অবিকল মানুষের পেশির মতো । এটির সাহায্যে রোবটরা তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মুক্তভাবে নাড়াচাড়া করতে পারে । এই রোবটগুলিতে রয়েছে ‘সিন্থেটিক পেশি’ যা তাদের ওজনের তুলনায় অনেক বেশি ওজন বহন করে । দেহ নাড়াতে এবং সহজেই ভাঁজ করতে সাহায্য করে । এই রোবটগুলি বয়স্ক এবং শিশুদের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদেরও সাহায্য করে । যে সব শিশুদের পড়তে লিখতে অসুবিধা হয়, স্পষ্টভাষায় উচ্চারণ করার মাধ্যমে তাদেরও সাহায্য করে । চিকিৎসা জগতেও এরা সাহায্য করে । নিরাপত্তা ক্ষেত্রে রোবটদের ভূমিকাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অপরাধ নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে । সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি ঠাহর করা সম্ভব হয়েছে । কৃষি এবং খাদ্য প্রস্তুতিতেও একে কাজে লাগানো হয় ।

যেভাবে কুকুর এবং বিড়াল প্রভৃতি পোষ্য পরিবারের অংশ হয়ে ওঠে, তেমনই মানবরূপী রোবটও পরিবারের সদস্য হয়ে উঠবে । বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, রোবটরা শীঘ্রই মানব জীবনের বিকল্প হয়ে উঠবে । সাধারণত রোবটদের আগে প্রোগ্রাম করা হয় । তাদের যে যে দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়, শুধুমাত্র সেটাই তারা সম্পাদন করতে পারে । স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এদের নেই । স্বকার্যক্ষমতার অভাব, নিজেই নিজের বিদ্যুৎ যোগান দেওয়ার ক্ষমতার অভাব এবং ব্যাটারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া তাদের কাজের উপরও প্রভাব ফেলে । উন্নয়নের গতিবাহক হিসাবে এই মানবরূপী রোবটগুলিকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা যেহেতু চলছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, তারা যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যই কার্যকরী অস্ত্র হয়ে উঠবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.