আপনি হয়তো দেখে থাকবেন যে কারও কারও ত্বকে একগুচ্ছ ছোট্ট বাদামি ছোপ রয়েছে। এদের ফ্রেকলস বলে । আঁচিলের বিপরীতে এগুলো ত্বকের সঙ্গে সমান এবং ব্যথাও হয় না । কেউ ফ্রেকলস তাঁদের ত্বকে নিয়ে জন্মান না, এমনকী জিনগত হলেও এদের অনেকের মধ্যে এগুলো পরে দেখা যায় । ত্বক বিশেষজ্ঞ, কায়া ক্লিনিকস ইন্ডিয়ার মেডিক্যাল হেড সুশান্ত শেট্টি বলেন, “ ফ্রেকলস জিনগত হতে পারে অথবা সংবেদনশীল ত্বকের কারণেও হতে পারে । ত্বকের ছোট্ট সংবেদনশীল অংশের দৃশ্য বা অদৃশ্য আলোয় পুড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে । এর মধ্যে সূর্যালোক, টিউবলাইট, গ্যাস ফ্লেম, মোবাইল ফোন ও মাইক্রোওয়েভের বিকিরণও থাকতে পারে । এই ধরণের বিকিরণ থেকে রক্ষা পেতে ত্বক রঙ তৈরি করে যা এপিডার্মাল স্তরে জমা হয়ে প্রাচীরের কাজ করে । আর এভাবেই ফ্রেকলস তৈরি হয় ।”
ডক্টর শেট্টি বুঝিয়ে দেন, একবার ফ্রেকলস তৈরি হয়ে গেলেই সূর্যালোক, হরমোনের সমস্যা এবং ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে যে ফ্রেকলস আরও খারাপ হবে, ছড়ানো বন্ধ হবে অথবা খুব কম যেটা হয়, একেবারে মিলিয়ে যাবে ।
ফ্রেকলস কয়েকজনের ক্ষেত্রে কোনও বড় বিষয় নয়, যদিও অনেকে তার থেকে অব্যাহতিও চাইতে পারেন । ডক্টর শেট্টির পরামর্শমতো কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হল, যা বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. সানস্ক্রিন ও আবরণ
কিছু মানুষ সংবেদনশীল ত্বক নিয়েই জন্মায় যা নিয়ে কিছু করার নেই । তাই ফ্রেকলস আটকানোর সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে একটা ভালো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা (আপনি ৩৫-৪০ এসপিএফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন ), স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে রাখা এবং বাইরে বেরোলে ছাতা ব্যবহার করা । এতে আলো ও বিকিরণ আটকাতে সাহায্য করবে । আগে থেকেই থাকা ফ্রেকলস হয়তো এতে যাবে না কিন্তু আরও তৈরি হওয়া আটকাবে । আগে থেকে থাকা ফ্রেকলস এতে হালকা হয়েও আসতে পারে ।
২. মেডিকেটেড ক্রিম
কিছু মেডিকেটেড ক্রিম পাওয়া যায় যা ত্বকের কালো অংশগুলোর রং হালকা করে দেয় । কিন্তু এগুলো খুব বেশি কাজের নয় কারণ আপনি তা পুরো মুখে মাখলে আপনার ত্বকের স্বাভাবিক রংও হালকা হবে । আর ফ্রেকলস এবং স্কিন টোন দুটোই হালকা হলে পার্থক্যটা থেকেই যাবে । এছাড়াও ফ্রেকলস কমলেও ত্বক সংবেদনশীল রয়েই যাবে ।
৩. ইলেকট্রিক বার্নিং
এপিডার্মিসে জমে থাকা রং বেশিরভাগই উপর উপর থাকে । একটি মেডিকেল উপকরণের মাধ্যমে এই স্তর পুড়িয়ে দেওয়া হয় । এই যন্ত্র সাধারণভাবে বৈদ্যুতিন ছিল । এখন তার বদলে এসেছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কারেন্ট । সেই ত্বক মরে যাবে এবং তাকে তুলে ফেললে নতুন ত্বক তৈরি হবে। এটা যতটা মনে হচ্ছে ততটা যন্ত্রণাদায়ক নয় । প্রায় 60 শতাংশ ফ্রেকলস নাও ফিরে আসতে পারে যদি আপনি পরের সাবধানতামূলক পদক্ষেপগুলো মেনে চলেন, যাতে রং বদল না হয় ।
৪. কেমিকেল বার্নিং
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিকিৎসার জন্য ট্রাইক্লোরোঅ্যাসেটিক অ্যাসিড নামে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এটা ইলেকট্রিক বার্নের মতোই কাজ করে এবং নতুন ত্বক তৈরি হয়। 30-50 শতাংশ ফ্রেকলস সেরে যায়।
৫. কিউ-সুইচ লেজ়ার
পিগমেন্টেড অংশে ত্বক পুড়িয়ে দেওয়ার মতোই এটাও কাজ করে কিন্তু এক্ষেত্রে লেজ়ার রশ্মি ব্যবহার করা হয়। এতে 50 শতাংশ উন্নতি হয়।
৬. প্রাকৃতিক উপশম
আপনার এলাকার দোকানে পাওয়া যায় এমন জিনিস, যেমন পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি শুধু স্পটের উপরই লাগাতে হবে। যদিও এগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের অ্যাসিড থাকে যা ত্বক অনুযায়ী ব্যবহার না করা হলে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে ।
সুতরাং, কোনও চিকিৎসা শুরুর আগে এমনকী যদি সেটা ঘরোয়াও হয়, একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন যাতে আপনার ত্বকের আরও বেশি ক্ষতি না হয়ে যায়।
