সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, 90 বছর বয়স, হুরিয়ত কনফারেন্সের আজীবন চেয়ারম্যান ৷ সোমবার তিনি ওই ফোরাম থেকে পদত্যাগ করেছেন ৷ আর এই সিদ্ধান্ত জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে ৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সরে গেলেন ৷ সরে যাওয়ার সময় তাঁর দেওয়া বিবৃতিটি তাঁর রাজনীতি ছেড়ে চলে যাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করছে ৷ ওই বিবৃতির মাধ্যমে তিনি খুবই কম বা তুচ্ছ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সুযোগ রেখে গেলেন ৷
সরকার এবং সেই সমস্ত মানুষ, যাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারি স্তরে কাশ্মীরকে নিয়ে কাজ করছেন , তাঁদের জন্য ব্যাপারটা তিনি খুব সহজ করে দিয়ে গেলেন ৷ সেই কারণেই সম্ভবত BJP-র শীর্ষনেতা রাম মাধব টুইট করতে এক মিনিটও সময় নষ্ট করেননি ৷ একবার নয় , তিনবার একের পর এক বার লিখেছেন , ‘গিলানি হুরিয়ত থেকে পদত্যাগ করলেন’ ৷ সঙ্গে গিলানির সেই চিঠি , যা তিনি প্রথম টুইটের সঙ্গে যোগ করে দিয়েছেন ৷ রাম মাধব জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার অন্যতম কারিগর ৷ মাধব তাঁর তৃতীয় টুইটে লিখেছেন , ‘‘যে মানুষটি কয়েক হাজার কাশ্মিরী যুবক ও পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য একাই দায়ী , যিনি উপত্যকাকে সন্ত্রাস ও হিংসার দিকে ঠেলে দিয়েছেন ৷ তিনি কোনও কারণ না দেখিয়েই হুরিয়ত থেকে পদত্যাগ করলেন ৷ এতে কি তাঁর অতীতে পাপগুলি ধুয়ে যাবে ?’’ গিলানি প্রায় এক বছর চুপ করেই ছিলেন ৷ তার পরও রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার প্রেক্ষিতে তাঁর গুরুত্ব এর থেকেই প্রমাণিত হয় ৷ অনুচ্ছেদ ৩৭০ , যা পূর্ববর্তী রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল , তার অবলুপ্তির পর থেকে গিলানির হুরিয়ত বা তাঁর তরফেও কোনও বিবৃতি বা ছোট্ট বার্তাও পাওয়া যায়নি ৷ এমনকী , প্রতিবাদের কোনও তালিকাও দেওয়া হয়নি ৷ গিলানির অডিয়ো বার্তা মানুষের কাছে বাধাহীন ভাবেই পৌঁছে গিয়েছে ৷ যেখানে কাশ্মীর ও সীমান্তের ওপারে হুরিয়তের সদস্যদের মধ্যে টাকা ও ক্ষমতা নিয়ে অন্তদ্বন্দ্ব ও ঝগড়ার কথাই সেখানে বলা হয়েছে ৷ এই বার্তাটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় ৷ আর তা আঞ্চলিক ও জাতীয় সংবাদ সংস্থাগুলির শিরোনাম হয়ে যায় ৷
ওই চিঠি বলছে যে হুরিয়ত বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে সরে এল এবং তাদের যে আর কোনও গুরুত্ব রইল না , সেটাও বুঝিয়ে দিল ৷ তিনি সেই নেতা যিনি ২০০৮ সালের অমরনাথ জমি বিতর্কের সময় দাবি করেছিলেন যে তাঁর হাতেই সমস্ত লাগাম রয়েছে ৷ সেই সময় তিনি সম্পূর্ণ জনপ্রিয় ছিলেন ৷ এমনকী , তাঁর পদমার্যাদার সমান কাউকে জায়গা দিতেও তিনি অস্বীকার করেছিলেন ৷ ঘটনা হল , একই সময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তিনি তাঁর বড় ছেলে ড. নঈমকে নিজের উত্তরাধিকারী করার পাকাপাকি আইনত ব্যবস্থা করে ফেলেন ৷ এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিবিরে রীতিমতো গোলমাল বেঁধে যায় ৷ যার ফলে তিনি ওই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন ৷ তার পর থেকে তিনি যে জনপ্রিয়তা উপভোগ করেছেন, তাতে কাঁটা কম ছিল এবং ঝুঁকিও ততটা ছিল না ৷ ২০১৯ সালের ৫ অগস্টের সিদ্ধান্তের পর এখন সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীর সম্বন্ধে কী প্রতিক্রিয়া দেয় , সেটাই দেখার ৷ গিলানি সব সময় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ৷ আর তাঁর এই আপোসহীন অবস্থানের জন্য অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান সমালোচনার মুখে পড়েছে ৷ নয়ের দশকে এই গিলানিই আলতাফ আহমেদ ওরফে আজম ইনকিলাবিকে ডেকে নিয়েছিলেন , যখন তিনি অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণের দিকে গিয়েছিলেন ৷ ইনকিলাবির পাকিস্তানে বসে থাকা লোকদের নিয়েও সমস্যা ছিল ৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আত্মসাতের অভিযোগ নেই । ২০০৩ সালে গিলানি মূল হুরিয়ত থেকে সরে এসেছিলেন ৷ ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসে হুরিয়তের নেতারা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন ৷ পাশাপাশি আরও একটি হুরিয়ত তৈরি করেন এবং ‘শোধন প্রক্রিয়া’র ডাক দেন ৷ এটা খুবই উদ্বেগজনক যে চিঠিতে প্রকাশ্যে গিলানি আত্মসাতের অভিযোগ নিশ্চিত করলেন ৷ যখন NIA অর্থ তছরূপ নিয়ে বহু বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে ৷ আর এর মধ্যে তাঁর জামাইও রয়েছেন ৷
গিলানির পদত্যাগপত্র কার্যত পোকার বাক্স খুলে দিয়েছে ৷ শ্রীনগর থেকে মুজফ্ফরাবাদ পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্র নিয়ে নানা জল্পনা চলছে ৷ তার মধ্যে গিলানির নাতনি টুইট করেছেন , ‘‘কেউ নিজের আদর্শ , রাজনৈতিক অবস্থান, বিশ্বাস থেকে পদত্যাগ করতে পারেন না ৷’’ এই বার্তা সম্ভবত তাঁদের জন্য , যাঁরা গিলানিকে হুরিয়ত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছিলেন ৷ আর তাঁরা প্রায় সফল হয়েও গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তার আগেই গিলানি সম্মানজনক ভাবে ওই ফোরাম থেকে প্রস্থান করলেন ৷
প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিলাল ভাট