ইতিহাসে এমন নেতা খুব কম রয়েছেন যাঁরা জনগণের কাছে যে নীতি ও আদর্শের কথা প্রচার করতেন, তা ব্যক্তিগত জীবনযাপনেও অনুসরণ করতেন । গান্ধি তাঁদের মধ্যে অন্যতম । অনেকেই গান্ধিকে শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে চেনেন । তবে গান্ধি ছিলেন এক মহান সমাজসেবী ও সংস্কারক । নিজের জীবনকালে গান্ধি সবরমতী ছাড়াও তিনটি আশ্রম গড়েছিলেন ।
1925 সালের নভেম্বর । মহাত্মা গান্ধি সপ্তাহব্যাপী অনশনে বসেন । তাঁর আশ্রমের কয়েকজন যুবকের শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রতিবাদেই এই অনশনে বসেছিলেন তিনি । পরবর্তীতে গান্ধির প্রত্যয়ের সামনে হার মেনে নিজেদের ভুল স্বীকার করে এগিয়ে এসেছিলেন সেই যুবকরা । ন্যায়পরায়ণতার সেই উদাহরণ আজকের সমাজেও সমান প্রয়োজনীয় ।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে এসে গান্ধি লক্ষ্য করেছিলেন, কংগ্রেস ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে সমর্থ হলেও প্রকৃত গণসংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি । দেশের কৃষক ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের কাছে কংগ্রেসের নীতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না । তিনি বুঝেছিলেন দেশের কৃষক ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া ভারতে প্রকৃত গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয় । গান্ধিজির একটি মাত্র লক্ষ্য ছিল এই সত্যাগ্রহ নীতি প্রয়োগের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রকৃত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে পরিণত করা । এর কারণেই সবরমতী নদীর তীরে সত্যাগ্রহ আশ্রম প্রতিষ্ঠিত করে তিনি তাঁর অনুগামীদের সত্যাগ্রহের আদর্শ ও পদ্ধতি শিক্ষা দিতে উদ্যোগী হন ।
আশ্রমে গান্ধি কিন্তু পুরাণকালের ঋষি ছিলেন না । তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ঋষি । অহিংসা ও সত্যাগ্রহের মন্ত্র গান্ধি তাঁর এই আশ্রমেই দিতেন । তা তিনি তিনি প্রচার করতেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে । অনেকের প্রশ্ন, যদি ধরনা ও হরতালের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হত তা হলে গান্ধি আশ্রমে থাকতেন কেন ? গান্ধির আশ্রম ধর্ম ও জাতির নিরিখে বিভেদ ভুলে ভারতবাসী হিসাবে সবাইকে বাঁচতে শিখিয়েছিল । জাতি, ধর্ম, ভাষাভিত্তিক বিভাজন ঘটিয়ে ভারতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা । এই বিভেদ তৈরি করেই তাদের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার কৌশল গ্রহণ করেছিল তারা । তবে নিজের আশ্রমের মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রেম গড়ে তুলে সেই কৌশলকে ভাঙেন গান্ধি । গড়ে তোলেন নতুন ভারতের রূপরেখা ।