দিল্লি,7 নভেম্বর : ভারতের CRPF বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুলিশ বাহিনী । সন্দেহ নেই এই সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী দেশের গৌরব বাড়িয়েছে । আমি এই বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম ২০০৫ সালে । এই বাহিনীর যে বিষয়টি আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিল সেটা হল এর স্লোগান । বাহিনীর স্লোগান ছিল ‘CRPF সদা অজয়, ভারত মাতা কী জয়’। বাহিনীর সমস্ত সাইনবোর্ডে এই স্লোগান লেখা রয়েছে ৷
ভারতীয় সংবিধানের ৩৫১ নম্বর ধারায় হিন্দির প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । হিন্দি ভাষার উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে । শুধু হিন্দি নয়, ভারতের প্রায় সমস্ত ভাষার উৎপত্তি হয়েছে হিন্দি থেকে । ঠিক যেভাবে ল্যাটিন থেকে ইউরোপের অধিকাংশ ভাষার সৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু যদি সংস্কৃত সঠিকভাবে শেখানো না হয়, তবে সংবিধানের ৩৫১ নম্বর ধারার উদ্দেশ্য পূরণ কার্যত অসম্ভব । আমাদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে যে জ্ঞান চর্চা করেছে, সেই লব্ধ জ্ঞান তারা বৈদেশিক আক্রমণ, যুদ্ধ এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের মধ্যেও বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে গেছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য । কিন্তু পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয় কৃ্ষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত সেই জ্ঞান চর্চা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে । ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয় কৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত সেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা কার্যত বন্ধ হয়ে যায় । আর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে আমাদের সমাজে ।
আদিকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতার ভিত্তি ছিল জ্ঞানচর্চা । ঋকবেদ বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন পুঁথি । মহাভারত এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ কাব্য । সবমিলিয়ে ভারতীয় সভ্যতার আদি কাল থেকে পুঁথিতে যে জ্ঞানভাণ্ডার রয়েছে সেই তুলনা বিশ্বের আর কোথাও নেই । আর এই সমস্তই লেখা হয়েছে সংস্কৃতে । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল আমাদের দেশে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ, অর্থশাস্ত্র, পঞ্চতন্ত্র ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না । আমরা সেগুলিকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি । অন্য দেশে যদি এমনটা ঘটত তবে তা হত জাতীয় লজ্জা । কিন্তু বলতে খারাপ লাগছে যে আমাদের দেশে এটাকে একধরনের গর্বের সঙ্গেই দেখা হয় ।
১৯৩১ সালের ২০ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধি বলেছিলেন, "আমার ভাবমূর্তির তীব্র সমালোচনা হয়তো হবে, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আজ ভারত যতটা অশিক্ষিত, তা ৫০ বা ১০০ বছর আগেও ছিল না । ব্রিটিশরা এদেশে আসার পর তারা আমাদের সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থাকে নির্মূল করে দিয়েছে ।" গান্ধির এই কথার পর ধর্মপাল ভারতে ব্রিটিশ যুগের পূর্বে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন । তাঁর গবেষণাপত্রের নাম ‘বিউটিফুল ট্রি’ । ওনাম একটি জনপ্রিয় উৎসব । রাজা মহাবলী তাঁর প্রজাদের কল্যাণের জন্য প্রতিবছর তাঁদের দর্শন দিতেন । সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই উৎসবের আয়োজন । একইভাবে গান্ধির ১৫০ তম জন্মজয়ন্তীতে আমাদের উচিত এক নতুন ধরনের ওনাম উৎসব চালু করা । যার মাধ্যমে গান্ধি আমাদের দেশের সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যা বলে গেছেন এবং দিকনির্দেশ করেছেন, তাঁকে যেন আমরা স্মরণ করতে পারি ।