দিল্লি, 15 ডিসেম্বর : বছর সত্তরের গুরমীত । বয়সের ভার পড়েছে শরীরে । চাষ করেই দিন গুজরান হত । ঠিকঠাকই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি । কিন্তু এরই মধ্যে লকডাউন । তারপর বিতর্কিত কৃষি আইন । ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাবেন কি না, তা ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছিলেন না । তাই বাকিদের সঙ্গে এই ভেঙে যাওয়া শরীর নিয়েও সামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদে । ভেবেছিলেন কিছু একটা সমাধান হবে । সরকার হয়তো মুখ তুলে চাইবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার মুখ তুলে চাইল কি না, তা আর দেখে যেতে পারলেন না তিনি । আজ বিক্ষোভরত অবস্থায় সোনিপত-সিঙ্ঘু সীমান্তে মৃত্যু হয় তাঁর ।
প্রায় কুড়ি দিন হয়ে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে দিল্লির বাইরে । পঞ্জাব-সহ একাধিক রাজ্য থেকে কৃষকরা সামিল হয়েছেন বিক্ষোভে । তাঁদেরই মধ্যে একজন ছিলেন গুরমীত । প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : দিল্লি সীমান্ত থেকে কৃষকদের সরানোর আবেদন, বৃহস্পতিবার মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট
মৃত গুরমীত পঞ্জাবের মোহালির বাসিন্দা । আজ সিঙ্ঘু-সোনিপত সীমানায় উষা টাওয়ারসের সামনে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । গত কয়েকদিন ধরে সেখানেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন তিনি । খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থানে যায় । গুরমীতের দেহ উদ্ধার করে সোনিপতের একটি সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য ।
এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত চার জন কৃষক সোনিপত-সিঙ্ঘু সীমান্তে প্রাণ হারালেন । এদিকে পাঁচ দফা বৈঠকের পরও এই সমস্যার কোনও সমাধানসূত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ।
এদিকে একের পর এক কৃষকের আন্দোলনরত অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসছে । রাজধানীর বাইরে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত 20 জন কৃষকের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে । এর মধ্যে শুধুমাত্র সোনিপত-সিঙ্ঘু এলাকায় চারজন । এই অবস্থায় 20 ডিসেম্বর মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে কৃষক সংগঠনগুলি ।
আজ সিঙ্ঘু সীমান্তে কৃষক নেতা জগজিৎ ডালেওয়াল বলেন, "সরকার বলছে এই আইনগুলি বাতিল করবে না । আমরা বলছি আমরা আপনাদের বাতিল করিয়ে ছাড়ব । এখন এই লড়াই এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আমরা যাই হোক না কেন জয়ের জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ।" তিনি আরও বলেন, “আমরা আলোচনা থেকে পালাচ্ছি না, তবে সরকারকে আমাদের দাবির প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং বাস্তব প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে ।”