চেন্নাই , 18 অক্টোবর : উদযাপন নিঃশব্দে হলেও, ম্রিয়মান ছিল না । বেশি শোরগোল ছাড়াই শনিবার তাদের 49তম প্রতিষ্ঠাদিবস পালন করল শাসক দল AIDMK । আগামী বছরের শুরুতেই বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, সেই নিয়ে দলের মধ্যে সংঘাত গত সপ্তাহেই কাটিয়ে উঠেছে দ্রাবিড়বৃত্তের এই অন্যতম দল । মুখ্যমন্ত্রী এদাপ্পাদি কে পালানিস্বামী (EPS) এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ও পনিরসেলভমের (OPS)দ্বৈত প্রাধান্যে দল আগামী বছর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: হয় ক্ষমতায় থাকা, নয়তো রাজনৈতিক বৃত্তের এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হওয়া ।
EPS-কে বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দলের মধ্যে সঙ্কট কেটেছে ৷ আর একই সঙ্গে দলের উপর তাঁর দখলেরও ইঙ্গিত মিলেছে । এখন তাঁর সামনে কঠিন কাজ হল AIDMK দলকে নির্বাচনে পরিচালনা করা, যা একই সঙ্গে দল ও তাঁর নেতৃত্বের অ্যাসিড টেস্ট ।
2019-এর লোকসভা ভোটে দলের ভোট শতাংশের সর্বকালীন পতন হয়ে 18.48 শতাংশে দাঁড়িয়েছে । ভোট কমেছে 59 শতাংশ এবং BJP, PMK ও অন্যান্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে যে 21 টি আসনে তারা লড়েছিল, তার মধ্যে মাত্র একটি আসন জিততে পেরেছে । এই ছবি 2014-র বিপরীত, যখন জয়ললিতার নেতৃত্বে দল একা লড়েছিল । তখন দল 44 শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবং রাজ্যের 39 টি আসনের মধ্যে 38 টিতেই জিতেছিল । আবার 22টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে AIDMK মাত্র 9 টিতে জিততে পেরেছে । নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করে যেখানে প্রধান বিরোধী DMK এগিয়ে রয়েছে, সেখানে EPS-র সামনে কাজটা কঠিন ।
হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ড. আর থিরুনাভুক্কারাসু বলেন, “এটা AIDMK এবং EPS-এর নেতৃত্বের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ । যদিও তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন ৷ এবং নিজের শাসনকাল প্রায় শেষও করে ফেলেছেন ৷ তা সত্ত্বেও এটা মনে রাখতে হবে যে উলটোদিকে DMK -র মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে ।”
তবুও থিরুনাভুক্কারাসু স্পষ্ট করে দেন যে , আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে 2019 সালের লোকসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি হবে না । তাঁর ব্যাখ্যা, “তখন DMK একটা মোদি-বিরোধী হাওয়ায় ভর করে এগিয়েছিল এবং তার রাজনৈতিক ফায়দাও তুলেছিল । কিন্তু বিধানসভা ভোটে তার পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারে কারণ প্রেক্ষিতটা আলাদা । যদিও EPS নিজে ক্যারিশম্যাটিক জয়ললিতার সমকক্ষ নন, তবু AIDMK-ও তার হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছে ।”
যদিও আরেকটি ইশু দলের মধ্যে একটানা ঢেউ তুলছে ৷ আর তা হল সামনের বছরের গোড়ার দিকেই জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভি কে শশীকলার জেল থেকে মুক্তি । তিনি দলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে গিয়ে অস্থিরতা তৈরি করেন কি না , সেটাই দেখার । যদিও AIDMK এখনও বলছে যে তাঁর জায়গা হবে না , কিন্তু বিশ্লেষকরা তা মানছেন না ।
মাদ্রাজ় ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়ের সহকারী অধ্যাপক, ড. সি লক্ষ্মণন বলেন, “শশীকলাকে এত সহজে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না । শুধু মন্ত্রীরা নন, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর পদের জন্য ওনার কাছে ঋণী । যদিও তিনি ভোটে লড়তে পারবেন না , কিন্তু তার মুক্তি সম্ভবত দলে একটা ঝাঁকুনি বা পুনর্বিন্যাস ঘটাবে ।”
তবে ভবিষ্যতে যাই ঘটুক, দল আপাতত বর্তমানে মনোনিবেশ করেছে । প্রতিষ্ঠাদিবসের পাদপ্রদীপের আলো সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন EPS ও OPS । মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সালেমের কাছে তাঁদের পৈতৃক ভিটেতে আছেন, তিনি সিলুভালপালায়ামে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন । অন্যদিকে , OPS দলের সদর দপ্তরে দলীয় নেতা-কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ।
দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে OPS তাঁদের বলেছেন, দলের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে। টুইট ও বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আসুন 234 টি কেন্দ্রেই জিতে ইতিহাস তৈরি করি ।” অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী বক্তব্য সন্দেহ নেই, আর AIDMK পর পর দু’দফায় ক্ষমতায় রয়েছে এবং অ্যান্টি-ইনকামবেন্সির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের ।