হায়দরাবাদ, 17 জুন : উত্তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরারব দু'পক্ষের সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন 20 জন ভারতীয় জওয়ান । এই পরিস্থিতিতে ভারত-চিন সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে? এ বিষয়ে বিশদে জানতে প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার প্রবীর কুমার সান্যালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ETV ভারতের ডেপুটি এডিটর পার্থপ্রতিম ঘোষ রায় ।
সীমান্তে দু'পক্ষের সংঘর্ষে 20 জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন । তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক সেনা আধিকারিকও । এদিকে এক সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার রাতের সংঘর্ষে চিনেরও প্রায় 40-43 জন জওয়ান মৃত অথবা আহত। কিন্তু চিনের তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি । এপ্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার প্রবীর কুমার সান্যাল বলেন, "চিন কোনওদিনই সত্যি কথা বলে না । দেশের যত গণ্ডগোল আছে, তা ঢেকে রাখে । দেশের লোকেদেরও সত্যি কথা বলে না চিন । 1989 সালে টিয়ানানমেন স্কোয়ারের প্রতিবাদে কতজন মারা গেছে, তা আমরা কেউ এখনও জানি না । স্থানীয় তিব্বতী নেতাদের সঙ্গে কী হয়েছে, তা কেউই জানে না । সুতরাং, ওদের 40 জন মারা যাক, বা 50 জন মারা যাক, বা 60 জন, ওরা বলবে না ।"
কিন্তু কেন স্বীকার করতে চাইছে না চিন ?
চিনের তরফে হতাহতের খবর চেপে রাখার কারণ হিসেবে ব্রিগেডিয়ার বলছেন, "ভারতীয় সেনার কাছে চিনের সেনা মার খেয়েছে, এটা যদি চিনের সাধারণ মানুষ জানতে পারে, তাহলে শি চিনপিংয়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে । তাই ওরা এই খবরটি কোনওদিনই সামনে আনবে না ।"
গ্লোবাল টাইমস (পিপল্স ডেইলি-র ইংরেজি সংস্করণ )-এর সম্পাদকীয়তে বলা হচ্ছে, আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওরা চায় না এটা বৃদ্ধি পাক, সেই কারণে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি । এই প্রসঙ্গে প্রবীরবাবুর বক্তব্য, "চিনে সংবাদমাধ্যম পুরোপুরিভাবে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । সেক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনওভাবেই জানা সম্ভব নয়, যে কতজন মারা গেছে । সাধারণ মানুষ হয়ত জানে যে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে । প্রকৃত তথ্য কোনওভাবেই জানতে পারবে না । কমিউনিস্ট পার্টি যেটা ছাপতে বলবে, ওরা সেটাই ছাপবে । ডোকলামে যখন সমস্যা হয়েছিল, তখনও গ্লোবাল টাইমস প্রতিদিন ভারতের বিরুদ্ধে একটি করে হুমকিমূলক বার্তা দিত । কিন্তু ভারত তাতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি । "
1993 সালে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল । এরপর আরও পাঁচবার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । সর্বশেষ ছিল 2012 সালে বর্ডার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে । সেই চুক্তি অনুসারে, ভারতীয় সেনা বা চিন সেনা দ্বিপাক্ষিক কোনও বৈঠকেই ব্যক্তিগত অস্ত্র নিয়ে যেতে পারবে না । ভারত সেইমতোই চলছিল এতদিন । গতমাসে যখন দু'পক্ষের সেনা জওয়ানদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়, তখনও কোনও পক্ষের হাতেই অস্ত্র ছিল না । কিন্তু এবার যা হয়েছে, তা আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে । এমনই মনে করছেন ব্রিগেডিয়ার প্রবীর কুমার সান্যাল । তাঁর মতে, "এবার থেকে যখনই কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে তখনই ভারতীয় জওয়ানদেরও উচিত ব্যক্তিগত অস্ত্র নিয়ে যাওয়া ।"
কিন্তু এমন ঘটনা কেন ? শি চিনপিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা ? নাকি দ্বিতীয় দফায় যেভাবে কোরোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে চিনে, তা থেকে চিনাদের নজর ঘোরানোর চেষ্টা ?
ব্রিগেডিয়ার প্রবীর কুমার সান্যালের মতে, "কারণ একাধিক । চিন হয়ত ভেবেছে, ভারত এখন দুর্বল । হয়ত চিন ভাবছে ভারত এখন কোরোনায় জর্জরিত, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, পাশাপাশি প্রতিবেশী নেপাল ও পাকিস্তানের দিক থেকেও চাপ আসছে, এইসব ভেবেই হয়ত চিন ভাবছে এটা ভারতের উপর চাপ বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ । আর এই চিন্তা থেকেই সীমান্তে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা।" তবে অন্য একটি কারণ হল, চিনের উপরেও চাপ রয়েছে, আর সেই থেকেও সংঘর্ষ তৈরির চেষ্টা হতে পারে ।