ETV Bharat / bharat

নির্বাচনী বন্ড : ‘অসৎ’ উদ্দেশ্যে তৈরি একটি ‘সৎ’ প্রকল্প

নির্বাচনী বন্ড: রাজনৈতিক দলগুলিকে দেয় অর্থে স্বচ্ছতা আনার প্রকল্প, না বিরোধীদের চাঁদা না দেওয়ার অন্যতম হাতিয়ার?

electoral
electoral
author img

By

Published : Nov 29, 2019, 10:20 AM IST

দিল্লি , 29 নভেম্বর

বক্সের জন্য : নির্বাচনী বন্ড আসলে একটি অস্থায়ী শংসাপত্র । ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট কিছু শাখা থেকে কেনা যায় এই বন্ড । যে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি এই বন্ড কিনে চাঁদা হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারে । রাজনৈতিক দলগুলো সেই শংসাপত্র ভাঙিয়ে টাকা নিতে পারে । এ ক্ষেত্রে বন্ড ক্রেতার নাম বা পরিচয় গোপন থাকবে ।

সর্বশেষ লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে কোনও রাজনৈতিক দল যদি ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট পেয়ে থাকে, তা হলে তারা এই বন্ড নেওয়ার যোগ্য । ইশু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই বন্ড ভাঙিয়ে নেওয়া যাবে ।

নির্বাচনী বন্ড দাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় । এমনকি বন্ড কেনার অর্থের উৎসও এ ক্ষেত্রে জানাতে হয় না । একই ভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকেও বলতে হয় না এই টাকা তারা কার মধ্যমে পেল । শুধুমাত্র মোট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হয় ।

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দেয় অর্থের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই । এর মাধ্যমে বড় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলিকে যত খুশি টাকা দিতে পারে । এত দিন পর্যন্ত কোনও সংস্থা পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলিকে বার্ষিক লভ্যাংশের ৭.৫ শতাংশের বেশি টাকা চাঁদা হিসাবে দিতে পারত না । এর ফলে পিছনের দরজা দিয়ে এই সব দলগুলির কাছে অর্থ আসত ।

তথ্য-চিত্র:

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে সরকার নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করার পর ২৩ জানুয়ারি থেকে আয়কর দফতর রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদ অর্থে ২০০০ টাকার বেশ দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ জারি করে ।

২ জানুয়ারি ২০১৮-তে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর পরবর্তী দুই মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ডের মাধ্যমে মোট ২২১ কোটি টাকা পায় রাজনৈতিক দলগুলি । এর মধ্যে ২১০ কোটি টাকা পায় বিজেপি, ৫ কোটি টাকা পায় কংগ্রেস এবং বাকি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি মিলিত ভাবে পায় ৬ কোটি টাকা ।

মার্চ ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৩১৩টি বন্ড বিক্রি হয়েছে, যার মোট মূল্য ছয় হাজার ১২৮ কোটি টাকা । নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে এই পর্বে কোন রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি । তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের বিশ্বাস, এই অর্থের সিংহ ভাগ গিয়েছে BJP-র তহবিলে । এই পর্বেই সংগঠিত হয়েছে সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন ।

২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ভারতী এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন প্রুডেন্ট ইলেকটোরাল ট্রাস্ট BJP-কে ৬৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, কংগ্রেসকে ৩৯ কোটি টাকা দিয়েছে । তিন ও চার নম্বরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের দুই প্রাদেশিক দল YSR CP (২৬ কোটি) এবং TDP (২৫ কোটি) ।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে অর্থমন্ত্রক ও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভিন্ন মত:

২০১৭-’১৮-এর সাধারণ বাজেটে কেন্দ্র নির্বাচনী বন্ডের প্রস্তাব রাখার পর RBI-এর তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে একটি চিঠিতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন ।

প্রথমত, নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার তাগিদে একাধিক সংস্থা বেনামে অস্তিত্বহীন সংস্থার নাম করে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিয়ে এই ব্যবস্থার (অপ)প্রয়োগ করতে পারে । আইনের ফাঁক ব্যবহার করে এই ভাবে এই ধরনের সংস্থাগুলির আর্থিক তছরূপ করতে পারে ।

দ্বিতীয়ত, অস্থায়ী শংসাপত্রের চেয়ে অনেক ভাল ডিম্যাট ফর্মের মাধ্যমে নির্বাচনী বন্ডের লেনদেন । এর ফলে বন্ড কেনা ব্যক্তি বা সংস্থা একটি নির্দিষ্ট নম্বর পাবে, যেটি তারা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারবে । ডিম্যাটের মাধ্যমে লেনদেন হলে RBI-এর কাছে বন্ডের গ্রাহকের তথ্য থাকবে আর নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকবে মোট অর্থের হিসাব । নির্বাচনে দেয় অর্থে স্বচ্ছতা আনতে ডিম্যাটের থেকে ভাল কিছু হয় না ।

তৃতীয়ত, RBI অ্যাক্টের ৩১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শুধুমাত্র RBI পারে কোনও বন্ড ইশু করতে । সেই ধারার সংশোধন করে SBI-কেও বন্ড ইশু করার ক্ষমতা দেওয়া হলে তা RBI-এর ক্ষমতা খর্ব করার শামিল হবে ।

এই চিঠির উত্তরে অর্থমন্ত্রক তৎকালীন অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর জানায় যে, নির্বাচনী বন্ড ডিম্যাটের আকারে ইশু করা হলে যে বা যাঁরা অর্থ দিচ্ছেন, তাঁদের পরিচয় গোপন রাখার প্রাথমিক শর্তেরই মূল্য থাকে না । তাই এই বন্ড অস্থায়ী শংসাপত্র হিসাবেই ইশু করা হবে ।

এর উত্তরে ১১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে তৎকালীন RBI গভর্নর উর্জিত পটেল লেখেন, সরকার যদি অস্থায়ী শংসাপত্র হিসাবেই নির্বাচনী বন্ড ইশু করার বিষয়ে মনস্থির করে থাকে, তা হলে সেই বন্ড SBI-এর মাধ্যমে নয়, ইশু করা হোক RBI-এর মাধ্যমে ।

কিন্তু সরকার এই শর্ত খারিজ করে যুক্তি দেয়, RBI-এর শাখা না থাকায় বন্ড কেনার ইচ্ছুকদের সমস্যা হবে । এরপরেই RBI অ্যাক্টের ৩১ নম্বর ধারাকে সংশোধন করে সংসদে অর্থ বিল পাশ করায় সরকার । এই বিলের মাধ্যমে SBI-কে নির্বাচনী বন্ড ইস্যু করার পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় ।

SBI-কে এই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকার এতটাই আগ্রহী ছিল যে, এই বন্ড থেকে SBI-এর স্ট্যাম্প ডিউটি চাওয়ার দাবি মেনে নেয় এক কথায় । এর ফলে SBI-এর আয় বেড়ে যায় ।

এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বাচনী বন্ডের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কখনওই একমত ছিল না RBI৷

এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে অর্থমন্ত্রকের অতিসক্রিয়তার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে বাধ্য করে । ২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে নির্বাচনী বন্ডের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার সারা বছরে চারটি ১০ দিনের সময়ের উল্লেখ করে । জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরের এই চারটি মাসের ওই ১০টি নির্দিষ্ট দিনেই কেনা যাবে নির্বাচনী বন্ড ।

কিন্তু এর পরেও অর্থমন্ত্রক দু’বার বন্ড কেনার নিয়ম শিথিল করে । তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই দু’বারই ছিল বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে ।

কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের মে মাসে ১০ দিনের একটি অতিরিক্ত সময়ের জন্য ইশু করা হয় নির্বাচনী বন্ড । কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, বন্ডের এই টাকা দিয়েই ভোট পরবর্তী বিধায়ক কেনাবেচা হয়েছে ।

আর এক বার এই বন্ড ইশু করা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে, অর্থাৎ তেলঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি অভিযোগ করেন, “SBI-এর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । ফলে শাসক দল সবসয়েই জানতে পারছে, কে বা কোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিচ্ছে । এর ফলে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে টাকা দিতে ভয় পাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা । কালো টাকা সাদা করার এক অনন্য অস্ত্র এই ‌নির্বাচনী বন্ড ৷ ”

অভিযোগ উড়িয়ে BJP-র দাবি, “নাম-পরিচয় জানানো হবে না মানে এই নয় যে, কেউ ট্রাকভরতি টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে এসে বন্ড কিনে ফেলল । কে কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিল, তা যেন সবাই জানতে না পারে, এর উদ্দেশ্য শুধু এটাই সিদ্ধ করা ।”

BJP-র দাবি, এই বন্ড নাম-পরিচয় গোপন রাখে, আইন ভাঙার রক্ষাকবচ দেয় না । এই বন্ড কিনতে দাতাকে SBI-তে যেতে হবে । রাজনৈতিক দলকেও এই টাকা পেতে হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই তুলতে হবে ।

নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, “আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদে অর্থ দেওয়ার রীতি চালু ছিল । এখন নির্বাচনী বন্ড সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত । সব অ্যাকাউন্টকে KYC-এর নিয়ম মানতেই হয়, ফলে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে স্বচ্ছ । এই বন্ড না থাকলে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিলে জমা পড়ত । নির্বাচনী বন্ডের সব অসৎ ভারতীয় সৎ হয়ে যাবেন না ঠিকই, তবে এর ফলে অসৎ কাজ করাটা আরও কঠিন হবে ।”

এই প্রকল্পে RBI-কে সঙ্গে না রাখার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন পীযূষ । তাঁর দাবি, এই বিষয়টি নিয়ে RBI-এর সঙ্গে বহু বার কথা হয়েছে সরকারের । তাঁর দাবি, “২০১৭ সালে এই বিষয়ে অর্থ বিল আসার আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে RBI যথেষ্ট সময় পেয়েছে ।”

কিন্তু কেন বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নিয়ম ভেঙে বন্ড ইশু করা হল? এই বিষয়টি অবশ্য পীযূষ এবং BJP-র অন্য নেতারা এড়িয়ে গিয়েছেন ।

রাজীব রজন

দিল্লি , 29 নভেম্বর

বক্সের জন্য : নির্বাচনী বন্ড আসলে একটি অস্থায়ী শংসাপত্র । ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট কিছু শাখা থেকে কেনা যায় এই বন্ড । যে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি এই বন্ড কিনে চাঁদা হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারে । রাজনৈতিক দলগুলো সেই শংসাপত্র ভাঙিয়ে টাকা নিতে পারে । এ ক্ষেত্রে বন্ড ক্রেতার নাম বা পরিচয় গোপন থাকবে ।

সর্বশেষ লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে কোনও রাজনৈতিক দল যদি ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট পেয়ে থাকে, তা হলে তারা এই বন্ড নেওয়ার যোগ্য । ইশু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই বন্ড ভাঙিয়ে নেওয়া যাবে ।

নির্বাচনী বন্ড দাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় । এমনকি বন্ড কেনার অর্থের উৎসও এ ক্ষেত্রে জানাতে হয় না । একই ভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকেও বলতে হয় না এই টাকা তারা কার মধ্যমে পেল । শুধুমাত্র মোট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হয় ।

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দেয় অর্থের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই । এর মাধ্যমে বড় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলিকে যত খুশি টাকা দিতে পারে । এত দিন পর্যন্ত কোনও সংস্থা পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলিকে বার্ষিক লভ্যাংশের ৭.৫ শতাংশের বেশি টাকা চাঁদা হিসাবে দিতে পারত না । এর ফলে পিছনের দরজা দিয়ে এই সব দলগুলির কাছে অর্থ আসত ।

তথ্য-চিত্র:

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে সরকার নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করার পর ২৩ জানুয়ারি থেকে আয়কর দফতর রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদ অর্থে ২০০০ টাকার বেশ দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ জারি করে ।

২ জানুয়ারি ২০১৮-তে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর পরবর্তী দুই মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ডের মাধ্যমে মোট ২২১ কোটি টাকা পায় রাজনৈতিক দলগুলি । এর মধ্যে ২১০ কোটি টাকা পায় বিজেপি, ৫ কোটি টাকা পায় কংগ্রেস এবং বাকি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি মিলিত ভাবে পায় ৬ কোটি টাকা ।

মার্চ ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৩১৩টি বন্ড বিক্রি হয়েছে, যার মোট মূল্য ছয় হাজার ১২৮ কোটি টাকা । নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে এই পর্বে কোন রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি । তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের বিশ্বাস, এই অর্থের সিংহ ভাগ গিয়েছে BJP-র তহবিলে । এই পর্বেই সংগঠিত হয়েছে সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন ।

২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ভারতী এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন প্রুডেন্ট ইলেকটোরাল ট্রাস্ট BJP-কে ৬৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, কংগ্রেসকে ৩৯ কোটি টাকা দিয়েছে । তিন ও চার নম্বরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের দুই প্রাদেশিক দল YSR CP (২৬ কোটি) এবং TDP (২৫ কোটি) ।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে অর্থমন্ত্রক ও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভিন্ন মত:

২০১৭-’১৮-এর সাধারণ বাজেটে কেন্দ্র নির্বাচনী বন্ডের প্রস্তাব রাখার পর RBI-এর তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে একটি চিঠিতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন ।

প্রথমত, নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার তাগিদে একাধিক সংস্থা বেনামে অস্তিত্বহীন সংস্থার নাম করে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিয়ে এই ব্যবস্থার (অপ)প্রয়োগ করতে পারে । আইনের ফাঁক ব্যবহার করে এই ভাবে এই ধরনের সংস্থাগুলির আর্থিক তছরূপ করতে পারে ।

দ্বিতীয়ত, অস্থায়ী শংসাপত্রের চেয়ে অনেক ভাল ডিম্যাট ফর্মের মাধ্যমে নির্বাচনী বন্ডের লেনদেন । এর ফলে বন্ড কেনা ব্যক্তি বা সংস্থা একটি নির্দিষ্ট নম্বর পাবে, যেটি তারা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারবে । ডিম্যাটের মাধ্যমে লেনদেন হলে RBI-এর কাছে বন্ডের গ্রাহকের তথ্য থাকবে আর নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকবে মোট অর্থের হিসাব । নির্বাচনে দেয় অর্থে স্বচ্ছতা আনতে ডিম্যাটের থেকে ভাল কিছু হয় না ।

তৃতীয়ত, RBI অ্যাক্টের ৩১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শুধুমাত্র RBI পারে কোনও বন্ড ইশু করতে । সেই ধারার সংশোধন করে SBI-কেও বন্ড ইশু করার ক্ষমতা দেওয়া হলে তা RBI-এর ক্ষমতা খর্ব করার শামিল হবে ।

এই চিঠির উত্তরে অর্থমন্ত্রক তৎকালীন অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর জানায় যে, নির্বাচনী বন্ড ডিম্যাটের আকারে ইশু করা হলে যে বা যাঁরা অর্থ দিচ্ছেন, তাঁদের পরিচয় গোপন রাখার প্রাথমিক শর্তেরই মূল্য থাকে না । তাই এই বন্ড অস্থায়ী শংসাপত্র হিসাবেই ইশু করা হবে ।

এর উত্তরে ১১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে তৎকালীন RBI গভর্নর উর্জিত পটেল লেখেন, সরকার যদি অস্থায়ী শংসাপত্র হিসাবেই নির্বাচনী বন্ড ইশু করার বিষয়ে মনস্থির করে থাকে, তা হলে সেই বন্ড SBI-এর মাধ্যমে নয়, ইশু করা হোক RBI-এর মাধ্যমে ।

কিন্তু সরকার এই শর্ত খারিজ করে যুক্তি দেয়, RBI-এর শাখা না থাকায় বন্ড কেনার ইচ্ছুকদের সমস্যা হবে । এরপরেই RBI অ্যাক্টের ৩১ নম্বর ধারাকে সংশোধন করে সংসদে অর্থ বিল পাশ করায় সরকার । এই বিলের মাধ্যমে SBI-কে নির্বাচনী বন্ড ইস্যু করার পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় ।

SBI-কে এই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকার এতটাই আগ্রহী ছিল যে, এই বন্ড থেকে SBI-এর স্ট্যাম্প ডিউটি চাওয়ার দাবি মেনে নেয় এক কথায় । এর ফলে SBI-এর আয় বেড়ে যায় ।

এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বাচনী বন্ডের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কখনওই একমত ছিল না RBI৷

এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে অর্থমন্ত্রকের অতিসক্রিয়তার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে বাধ্য করে । ২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে নির্বাচনী বন্ডের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার সারা বছরে চারটি ১০ দিনের সময়ের উল্লেখ করে । জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরের এই চারটি মাসের ওই ১০টি নির্দিষ্ট দিনেই কেনা যাবে নির্বাচনী বন্ড ।

কিন্তু এর পরেও অর্থমন্ত্রক দু’বার বন্ড কেনার নিয়ম শিথিল করে । তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই দু’বারই ছিল বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে ।

কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের মে মাসে ১০ দিনের একটি অতিরিক্ত সময়ের জন্য ইশু করা হয় নির্বাচনী বন্ড । কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, বন্ডের এই টাকা দিয়েই ভোট পরবর্তী বিধায়ক কেনাবেচা হয়েছে ।

আর এক বার এই বন্ড ইশু করা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে, অর্থাৎ তেলঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি অভিযোগ করেন, “SBI-এর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । ফলে শাসক দল সবসয়েই জানতে পারছে, কে বা কোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিচ্ছে । এর ফলে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে টাকা দিতে ভয় পাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা । কালো টাকা সাদা করার এক অনন্য অস্ত্র এই ‌নির্বাচনী বন্ড ৷ ”

অভিযোগ উড়িয়ে BJP-র দাবি, “নাম-পরিচয় জানানো হবে না মানে এই নয় যে, কেউ ট্রাকভরতি টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে এসে বন্ড কিনে ফেলল । কে কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিল, তা যেন সবাই জানতে না পারে, এর উদ্দেশ্য শুধু এটাই সিদ্ধ করা ।”

BJP-র দাবি, এই বন্ড নাম-পরিচয় গোপন রাখে, আইন ভাঙার রক্ষাকবচ দেয় না । এই বন্ড কিনতে দাতাকে SBI-তে যেতে হবে । রাজনৈতিক দলকেও এই টাকা পেতে হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই তুলতে হবে ।

নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, “আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদে অর্থ দেওয়ার রীতি চালু ছিল । এখন নির্বাচনী বন্ড সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত । সব অ্যাকাউন্টকে KYC-এর নিয়ম মানতেই হয়, ফলে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে স্বচ্ছ । এই বন্ড না থাকলে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিলে জমা পড়ত । নির্বাচনী বন্ডের সব অসৎ ভারতীয় সৎ হয়ে যাবেন না ঠিকই, তবে এর ফলে অসৎ কাজ করাটা আরও কঠিন হবে ।”

এই প্রকল্পে RBI-কে সঙ্গে না রাখার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন পীযূষ । তাঁর দাবি, এই বিষয়টি নিয়ে RBI-এর সঙ্গে বহু বার কথা হয়েছে সরকারের । তাঁর দাবি, “২০১৭ সালে এই বিষয়ে অর্থ বিল আসার আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে RBI যথেষ্ট সময় পেয়েছে ।”

কিন্তু কেন বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নিয়ম ভেঙে বন্ড ইশু করা হল? এই বিষয়টি অবশ্য পীযূষ এবং BJP-র অন্য নেতারা এড়িয়ে গিয়েছেন ।

রাজীব রজন

Coimbatore (Tamil Nadu), Nov 29 (ANI): Almost 7,000 graduates including engineers applied for jobs in Tamil Nadu's Coimbatore. They applied for 549 grade-1 sanitary worker posts in Coimbatore City Municipal Corporation (CCMC). Applicants appeared for 3-day interview and verification of certificates. Those already working as contract sanitary workers for last 10 years have also applied for these permanent jobs.

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.