বিয়ার্ড । বলা ভালো লম্বা গোঁফ-দাড়ি । এটি আজকের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নয় । শুরুটা সেই উনিশ শতকের মাঝামাঝি । তবে গোঁফদাড়ি তখন শুধুমাত্র পৌরুষত্বের প্রতীক ছিল না, ছিল সুস্থ থাকার দাওয়াইও । তখন চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হলেই পুরুষদের গোঁফদাড়ি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হত ।
উনবিংশ শতকের মাঝের দশক "ভিক্টোরিয়ান যুগ"
1801-1900 সাল । সময়টা পাঁচ-ছয়ের দশক । তখন সমাজে পুরুষ মানেই কঠোর-কঠিন একটা মানুষ । রাগি, মেজাজি, দৃঢ় মনোভাবের কেউ একজন । পুরুষ মানে শিকারী, অভিযানপ্রিয়, দুঃসাহসিক কিংবা কোনও ডাকা-বুকো নেতা । কিন্তু, আগের শতক অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীর যে ফ্যাশনের ধারা চলে আসছিল তাতে পুরুষরা চরিত্রের দিক থেকে দৃঢ় বা সাহসী হলেও, চেহারা বা লুকে সেরকম ছিলেন না । কারণ বেশিরভাগেরই পরিষ্কার গাল, বলা ভালো ক্লিন সেভড থাকাই পছন্দ করতেন । 1840-50 পর্যন্তও একই রীতি ছিল । আচমকা চিকিৎসকরাই পরিবর্তন আনলেন । সুস্থ থাকার জন্য পুরুষদের তাঁরা গোঁফদাড়ি বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন । তারপর থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে বেশিরভাগই তাঁদের গোঁফদাড়ি বাড়াতে শুরু করেন । এই সময়টিকে অনেকে আবার ভিক্টোরিয়ান বিয়ার্ড মুভমেন্ট বলেও ডাকেন । ব্রিটিশ চিকিৎসা পদ্ধতির গবেষণার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ছিলেন আলুন উইদে । তাঁর প্রকাশিত কয়েকটি গবেষণা পত্রে এই বিষয়ে তখনকার নানা ঘটনা সহ বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন ।
কেন বাড়ানো হত গোঁফদাড়ি
তখনকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, ঘন দাড়ি বাতাস পরিশ্রুত করার কাজে ব্যবহৃত হয় । লম্বা ও ঘন দাড়ির জেরে বাতাসে মিশে থাকা নানা কণা, ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আটকে যায় । আর শরীরের মধ্যে পরিশুদ্ধ বায়ু প্রবেশ করতে পারে । অনেক চিকিৎসদের মতে, গলা ব্যথা কমাতে বা গলায় আচমকা আঘাত লাগা থেকে বাঁচায় গোঁফদাড়ি । তৎকালীন সময়ে যাঁরা প্রায়ই জনসভা করতেন, তাঁরা চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে গোঁফদাড়ি বাড়াতেন । তাঁদের যুক্তি ছিল, গলা ব্যথা কমাতে, গলাকে বিশ্রাম দিতে মূল দাওয়াই ছিল এই লম্বা-ঘন গোঁফদাড়ি । এছাড়াও নানা ধরনের যুক্তি ছিল । যেমন, গোঁফদাড়ি সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে বাঁচায় । কারণ চুল আলোকরশ্মি প্রতিফলনে সক্ষম । পরের দিকে অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে চুল না কি অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও আমাদের ত্বককে বাঁচায় । পাশাপাশি ঠান্ডা এলাকায় গরম রাখতেও সাহায্য করে গলা ও গালের উপর ঘন লম্বা দাড়ি । এই সবকিছুর পাশাপাশি তখন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল । যা আজও বর্তমান । তা হল গোঁফদাড়িতে পুরুষ আরও আকর্ষণীয় লাগেন ।
গোঁফ-দাড়ির যত্ন
গোঁফদাড়ি বাড়াতে ও তার যত্ন নিতে তখনকার দিনেও নানা নিয়ম মেনে চলা হত । যেমন সঠিক সময়ে খাওয়া । বিশেষ করে বায়োটিন, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া । সঠিক সময়ে ঘুমোনো । কারণ না ঘুমোলে, কাজের অত্যধিক চাপ থাকলে তা আবার চুলের বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে । এছাড়া গোঁফদাড়ি নিয়মিত কেটে সাইজ করা, তা পরিষ্কার করা ইত্যাদি । তখন অনেকে নিজের উদাহরণ ও অভিজ্ঞতা দিয়েও বাকিদের গোঁফদাড়ি বাড়ানোর পরামর্শও দিতেন । পরের দিকে আচরণমূলক ইকোলজির নানা গবেষণাতেও বলা হয়েছে, ক্লিন সেভ মুখের থেকে দাড়িগোঁফ রাখা ভালো ।
বিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় এসে এই বিষয়টি নিয়ে আর তেমনভাবে কেউ মাথা ঘামাননি । কালের নিয়মে একসময়ে যা অপরিহার্য ছিল, পরে তা গুরুত্ব হারায় । এখন অবশ্য প্রেসক্রিপশনের মধ্যে গোঁফদাড়ি রাখার পরামর্শ খুঁজে পাওয়া যায় না । কিন্তু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে আজও নজর কাড়ে বিয়ার্ড লুক ।