দিল্লি : কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন চেয়ে বিদ্রোহীদের চিঠি আসলে রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র । আর এমন ধরনের কাজের জন্য দল ভেঙে যেতে পারে । বর্ষীয়ান নেতা সঞ্জয় নিরূপম একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এই কথাই জানিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক অমিত অগ্নিহোত্রীকে । তার অংশ দেওয়া হল :
- প্রশ্ন – কংগ্রেস এখন নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে কেন ?
নেতৃত্ব নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে, তার কারণ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দলের তৎকালীন সভাপতি রাহুল গান্ধি পদত্যাগ করেছিলেন । রাহুলজি একটা অবস্থান নিয়ে নিয়েছিলেন । আর তা হল, তা আর নেতৃত্ব দিতে চান না এবং গান্ধি পরিবারের বাইরের কেউ দলকে নেতৃত্ব দিক । সেই ব্যক্তিকে খোঁজার কাজ চলছে । এই সময়ে সোনিয়া গান্ধিকে অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল । তারপর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে যে এর পর সভাপতি কে হবেন । আর সেই বিতর্ক এখনও চলছে ।
- প্রশ্ন – বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখেছেন । তাঁরা স্থায়ী সভাপতি ও দলের অন্দরে নির্বাচন চান । আপনি এই বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলছেন । কেন ?
এই বিষয়টি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই । সমস্ত কাজ সঠিক ভাবে চালানোর জন্য যে কোনও রাজনৈতিক দলেরই একজন স্থায়ী সভাপতির প্রয়োজন হয় । সেটা খুবই ভালো বিষয় । কিন্তু আমি এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে ওই চিঠি যা বর্ষীয়ান নেতারা পাঠিয়েছেন, তা কংগ্রেস ও গান্ধি পরিবারে অস্থিরতা তৈরি করার ষড়যন্ত্রের অংশ । দিল্লির বাসভবন বা দলের নেতাদের অফিসে বসে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের ছক আগেও কষা হয়েছে । বিদ্রোহের চিঠি ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ । দলের একজন কর্মী হিসেবে আমার মনে হয় যে এই ধরনের নির্বাচন এখনই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত নয় ।
- প্রশ্ন – কিন্তু কেন ?
কারণ, আমি মনে করি এই ধরনের নির্বাচন একাধিক গোষ্ঠী তৈরি করবে । ফলস্বরূপ দলীয় নেতাদের মধ্যে তিক্ততা বৃদ্ধি পাবে । আর তা ফলে বৃদ্ধি পাবে শত্রুতা । যা কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে । আমার ভয় হচ্ছে যে এই ধরনের একটি নির্বাচনের ফলে দলের মধ্যেই শক্তির খেলা শুরু হয়ে যাবে । আর তার ফলে নেতাদের দলীয় সংগঠনে কার কতটা প্রভাব, তা দেখানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে । এমন একটা সময়, যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করে দলকে শক্তিশালী করতে পারি । সেই সময় এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয় ।
- প্রশ্ন – কিন্তু দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের পরিবেশের কথা বলা কি খারাপ ?
- যে কোনও গণতান্ত্রিক সংগঠনে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হওয়া জরুরি । কিন্তু আমি সমালোচকদের প্রশ্ন করতে চাই যে আর কতগুলো রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতি অনুসরণ করে । যাঁরা প্রশ্ন তুলছে আমাদের বিরুদ্ধে, তাঁদের দলেই কোনও পদ্ধতি নেই । আমি এটাই জানতে চাই যে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির যাঁরা সদস্য, তাঁদের মধ্যে কতজন নির্বাচনে জিতেছেন । তাঁদের একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে । তার বদলে বিভিন্ন ইশু তুলে দলকে বিভক্ত করা ও দুর্বল করে দেওয়া উচিত নয় ।
- প্রশ্ন – সুতরাং, এখন যদি কংগ্রেসের সভাপতি পদের জন্য লড়াই হয়, তাহলে কী তা রাহুল গান্ধির বিপক্ষে যাবে ?
দেখুন, যদি এমন কোনও নির্বাচন সত্যিই হয় । তাহলে আমি আগে থেকেই তার ফলাফল আপনাকে বলে দিতে পারি । যদি রাহুলজি নির্বাচনে লড়াই করেন, তাহলে তিনিই জিতবেন । জাতীয় যুব কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার মতো দলের যুব সংগঠনগুলির একমাত্র পছন্দ রাহুলজি । আপনি যুব সংগঠনগুলির কাছে গিয়ে একটি ওপিনিয়ন পোল করতে পারেন । আপনি দলের মুখ্যমন্ত্রীদের এবং অন্য কর্মীদের কাছে গিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন, যে তাঁরা দলের সভাপতি হিসেবে কাকে দেখতে চান । কিন্তু একই সময়ে কেউ কেউ যদি এই নির্বাচন এখনই করার জন্য জোরাজুরি করেন, তাহলে আমার মনে হয় না যে এটা দলের জন্য সঠিক সময় হবে ।
- প্রশ্ন - কংগ্রেস এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রয়েছে ?
এক জন সর্বসময়ের নেতা, যিনি সব সময় দেশের সর্বত্র কর্মীদের উজ্জীবিত করবেন, গত আঠারো মাস ধরে এই বিষয়টি খামতি রয়েছে । কংগ্রেসে বহু একনিষ্ঠ কর্মী রয়েছেন । কিন্তু তাঁরা এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন । আমাদের তাঁদের উজ্জীবিত করতে হবে । কংগ্রেসের তুলনায় বর্তমান শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি এখন অনেক শক্তিশালী । আমাদের কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে । একবার যখন রাহুলজি স্থায়ী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, তখন তিনি দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেশের সর্বত্র ঘুরতে পারবেন ।
- প্রশ্ন - কত তাড়াতাড়ি এটা ঘটতে পারে ?
অগাস্টের 24 তারিখ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে যে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির একটি বৈঠক আয়োজন করা হবে । আমার দৃষ্টিকোণ থেকে 2021 সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসের মধ্যে নেতৃত্ব ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলিতে নির্বাচনের সমস্যা মিটে যাবে । আর রাহুল গান্ধি হবেন দলের নতুন সভাপতি ।