ETV Bharat / bharat

সংকটের সময় শ্রমের অধিকার নির্মূল অসাংবিধানিক

author img

By

Published : May 16, 2020, 10:43 AM IST

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতের মতো রাজ্য শ্রম আইন স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছে । এই ‘সংস্কার’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারখানা, সংস্থা ও ব্যবসায় বিভিন্ন নিয়মে ছাড় দিয়ে বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এই নিয়মের জেরেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি, ছাঁটাই, পেশাগত সুরক্ষা ও কাজ সংক্রান্ত নিরাপত্তা পেতেন ৷ কাজের সময় বৃদ্ধি করতে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও কিছু শ্রমবিধি স্থগিত করেছে ৷ অন্য রাজ্যগুলিও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে । এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন আইনজীবী এবং বেঙ্গালুরুর দ্য সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি রির্সাচের কনসালট্যান্ট ম্যাথু ইডিকুলা ৷

Dismantling Labour Rights
শ্রম অধিকার নির্মূল

COVID-19-এর জন্য ভারত যতই জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের গভীরে প্রবেশ করেছে, ততই রাজ্য সরকারগুলির তরফে নতুন পদেক্ষেপের মাধ্যমে শ্রমিকদের আইনি অধিকার হরণ করা হচ্ছে ৷

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতের মতো রাজ্য শ্রম আইন স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছে । এই ‘সংস্কার’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারখানা, সংস্থা ও ব্যবসায় বিভিন্ন নিয়মে ছাড় দিয়ে বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এই নিয়মের জেরেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি, ছাঁটাই, পেশাগত সুরক্ষা ও কাজ সংক্রান্ত নিরাপত্তা পেতেন ৷ কাজের সময় বৃদ্ধি করতে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও কিছু শ্রমবিধি স্থগিত করেছে ৷ অন্য রাজ্যগুলিও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে ।

শ্রম আইন সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে উত্তরপ্রদেশে ৷ যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) সরকার, যারা তিন বছর ধরে প্রশাসন চালাচ্ছে, তারা একটি অর্ডিন্যান্স পাশ করেছে ৷ এর নাম উত্তর প্রদেশ টেম্পোরারি এক্সম্পেশন ফ্রম সার্টেন লেবার ল’জ অর্ডিন্যান্স, ২০২০ ৷ সেখানে প্রায় সমস্ত শ্রম আইন বাতিল করা হয়েছে ৷ যে সমস্ত শ্রম আইনগুলি রেখে দেওয়া হয়েছে, তা হল- বিল্ডিং অ্যান্ড আদার্স কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কাস অ্যাক্ট, ১৯৯৬, দা ওয়ার্কমেন কম্পেনসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৩, বন্ডেড লেবার সিস্টেম (অ্যাবোলিশন) অ্যাক্ট ১৯৭৬ এবং ১৯৩৬ সালের পেমেন্ট ওয়েজেস অ্যাক্টের সেকশন ৫ ৷ যদিও মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউটস অ্যাক্ট, ১৯৪৭, ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট, ১৯৪৮-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রম আইন এবং আরও ৩০টি কাজের নিয়ম সংক্রান্ত আইন সংক্ষেপে স্থগিত করা হয়েছে ৷

উত্তর প্রদেশের এই ঘোষণার পর মধ্য প্রদেশ ও গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিও শ্রম আইনের মূল বিধানকে স্থগিত করে রেখেছে । এই পদক্ষেপ ব্যবসায় ইচ্ছামতো কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের সুযোগ এনে দিল এবং নতুন সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম না মানার ছাড় দেওয়া হল ৷ এছাড়া সংস্থাগুলিকে কাজের সময় বৃদ্ধি করার অনুমতিও দেওয়া হল ৷ অন্যদিকে রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলি প্রতিদিন কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বৃদ্ধি করে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত করার সুযোগ দিয়েছে ৷ তবে এক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে বেশি সময় কাজ করানোর জন্য কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ৷

শ্রম আইনকে আরও দুর্বল করে দেওয়া, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে তা সার্বিকভাবে স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জেরে শ্রমিক সংগঠন, সমাজ কর্মী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষুব্ধ ৷ দ্য সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (CITU) এটিকে ‘‘যাঁরা আসলে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করে, সেই শ্রমজীবী ​​মানুষের উপর দাসত্বের শর্ত আরোপের বর্বরোচিত সিদ্ধান্ত’’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন যে, ‘‘কোরোনা ভাইরাস সংকটের জেরে মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার, অসুরক্ষিত কর্মস্থল তৈরির অনুমতি দেওয়া, শ্রমিকদের শোষণ ও তাদের দাবিগুলিকে দমন করার অজুহাত হতে পারে না” । এমনকী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঙ্ঘ (RSS)-এর সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ ও BJP-ও এই সিদ্ধান্তগুলির সমালোচনা করেছে ।

এই রাজ্যগুলির শ্রম আইন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গুরুতর সাংবিধানিক ও আইনি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । সংবিধানের সপ্তম তফসিলের অধীনে কনকারেন্ট-III লিস্টের মধ্যে পড়ে শ্রম আইন ৷ তাই কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই শ্রম আইন তৈরি করতে পারে ৷ শ্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে বর্তমানে প্রায় ৪৪ টি কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্যগুলিতে ১০০ টিরও বেশি আইন রয়েছে । রাজ্যের আইনসভায় কেন্দ্রীয় শ্রম আইনের সংশোধনীও পাস করা যেতে পারে । তবে, ভারতীয় সংবিধানের ২৫৪(২) অনুচ্ছেদের অধীনে, কোনও রাজ্যের তরফে তৈরি করা আইন যদি কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি আইনের সঙ্গে এক না হয়, সেক্ষেত্রে ওই আইন পাসে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন ৷ ভারতীয় সংবিধানের ২১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্রীয় আইন স্থগিত করে দিয়েছে ৷ যা রাজ্যপালকে ওই অর্ডিন্যান্স প্রবর্তন করার একই রকম আইনি অনুমতি দেয় যখন রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন চলছে না ৷

যেহেতু শ্রম আইনের কিছু নিয়ম স্থগিত করার ফলে কেন্দ্রীয় আইনগুলির পরিচালনায় প্রভাব ফেলবে, তাই এর জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন । সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এখন মোদি সরকারের হাতে ৷ তাদেরই ঠিক করতে হবে যে এই ধরনের শ্রম আইন স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে অনুমতি দেওয়া হবে কি না ৷

যেহেতু এই অর্ডিন্যান্সগুলি ভারতের শ্রম আইনের শৃঙ্খলাকে একেবারে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন দেবে কি না, তা নিয়ে একটা সন্দেহ থেকে যাচ্ছে ৷ যেহেতু রাজ্য সরকারগুলি BJP দ্বারা পরিচালিত, তাই এখন কেন্দ্র UP ও MP সরকারের তরফে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আপত্তি প্রকাশ করে কি না তা দেখার অপেক্ষা ৷

এমনকী, রাষ্ট্রপতি যদি তাঁর সম্মতি দিয়েও দেন, তাহলেও এই অর্ডিন্যান্সকে বিচার বিভাগের সামনে আইনত চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে । সংবিধানে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে ৷ এই সার্বিক শ্রম আইন স্থগিত করার ঘটনা এই অধিকার লঙ্ঘনের সামিল ৷ ফলে এটাকে অসাংবিধানিক বলা যেতেই পারে ৷ ভারতীয় সংবিধানের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতিটি নাগরিককে ‘জোরপূর্বক শ্রমের’ মতো শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে ৷ ‘জোরপূর্বক শ্রম’ দাসত্ব করানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ৷ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছে । এশিয়ান গেমসে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের নিয়ে পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (১৯৮২) নামে একটি যুগান্তকারী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, ‘‘নূন্যতম মজুরির কমে যখন কোনও ব্যক্তি শ্রম প্রদান করেন, তখন ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ঘটনাকে ‘জোর করে শ্রম আদায়’-এর মধ্যেই ফেলা হবে ৷’’

সুতরাং, রাজ্যগুলির দ্বারা শ্রম আইন স্থগিত করে দেওয়া, বিশেষত মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮-কে স্থগিত করার ঘটনা সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে ৷ এই পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) ১৪৪ নম্বর কনভেনশনকেও লঙ্ঘন করেছে ৷ যাতে ভারতও স্বাক্ষরকারী হিসেবে ছিল । এমন একটা সময়, যখন কোরোনা ভাইরাসের জেরে লকডাউনের জন্য অর্থনৈতিক সংকট শ্রমিকদের চরম সমস্যার মধ্যে ফেলেছে, তখন এই ধরনের পদক্ষেপ আইনত অনুচিত তো বটেই, বরং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় ৷ আগুন সংক্রান্ত সুরক্ষা বিধি, শৌচাগারের ব্যবস্থা, সুরক্ষার সরঞ্জামের মতো স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত বিধি লঘু করে দেওয়ার ফলে এই জনস্বাস্থ্য সংকেটর মধ্যে শ্রমিকদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তোলা হল ৷ যদিও ভারতের শ্রম আইন সংক্রান্ত কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যার প্রভাব অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯০ শতাংশ শ্রমিকের উপর পড়ে ৷ এই সমস্যার মোকাবিলায় ‘সংস্কার’ করতে এই শ্রম আইন স্থগিত করা হয়নি ৷ বরং এই পদক্ষেপের জেরে সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদেরও আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য করবে ৷

COVID-19-এর জন্য ভারত যতই জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের গভীরে প্রবেশ করেছে, ততই রাজ্য সরকারগুলির তরফে নতুন পদেক্ষেপের মাধ্যমে শ্রমিকদের আইনি অধিকার হরণ করা হচ্ছে ৷

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতের মতো রাজ্য শ্রম আইন স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছে । এই ‘সংস্কার’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারখানা, সংস্থা ও ব্যবসায় বিভিন্ন নিয়মে ছাড় দিয়ে বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এই নিয়মের জেরেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি, ছাঁটাই, পেশাগত সুরক্ষা ও কাজ সংক্রান্ত নিরাপত্তা পেতেন ৷ কাজের সময় বৃদ্ধি করতে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও কিছু শ্রমবিধি স্থগিত করেছে ৷ অন্য রাজ্যগুলিও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে ।

শ্রম আইন সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে উত্তরপ্রদেশে ৷ যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) সরকার, যারা তিন বছর ধরে প্রশাসন চালাচ্ছে, তারা একটি অর্ডিন্যান্স পাশ করেছে ৷ এর নাম উত্তর প্রদেশ টেম্পোরারি এক্সম্পেশন ফ্রম সার্টেন লেবার ল’জ অর্ডিন্যান্স, ২০২০ ৷ সেখানে প্রায় সমস্ত শ্রম আইন বাতিল করা হয়েছে ৷ যে সমস্ত শ্রম আইনগুলি রেখে দেওয়া হয়েছে, তা হল- বিল্ডিং অ্যান্ড আদার্স কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কাস অ্যাক্ট, ১৯৯৬, দা ওয়ার্কমেন কম্পেনসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৩, বন্ডেড লেবার সিস্টেম (অ্যাবোলিশন) অ্যাক্ট ১৯৭৬ এবং ১৯৩৬ সালের পেমেন্ট ওয়েজেস অ্যাক্টের সেকশন ৫ ৷ যদিও মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউটস অ্যাক্ট, ১৯৪৭, ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট, ১৯৪৮-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রম আইন এবং আরও ৩০টি কাজের নিয়ম সংক্রান্ত আইন সংক্ষেপে স্থগিত করা হয়েছে ৷

উত্তর প্রদেশের এই ঘোষণার পর মধ্য প্রদেশ ও গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিও শ্রম আইনের মূল বিধানকে স্থগিত করে রেখেছে । এই পদক্ষেপ ব্যবসায় ইচ্ছামতো কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের সুযোগ এনে দিল এবং নতুন সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম না মানার ছাড় দেওয়া হল ৷ এছাড়া সংস্থাগুলিকে কাজের সময় বৃদ্ধি করার অনুমতিও দেওয়া হল ৷ অন্যদিকে রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলি প্রতিদিন কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বৃদ্ধি করে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত করার সুযোগ দিয়েছে ৷ তবে এক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে বেশি সময় কাজ করানোর জন্য কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ৷

শ্রম আইনকে আরও দুর্বল করে দেওয়া, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে তা সার্বিকভাবে স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জেরে শ্রমিক সংগঠন, সমাজ কর্মী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষুব্ধ ৷ দ্য সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (CITU) এটিকে ‘‘যাঁরা আসলে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করে, সেই শ্রমজীবী ​​মানুষের উপর দাসত্বের শর্ত আরোপের বর্বরোচিত সিদ্ধান্ত’’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন যে, ‘‘কোরোনা ভাইরাস সংকটের জেরে মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার, অসুরক্ষিত কর্মস্থল তৈরির অনুমতি দেওয়া, শ্রমিকদের শোষণ ও তাদের দাবিগুলিকে দমন করার অজুহাত হতে পারে না” । এমনকী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঙ্ঘ (RSS)-এর সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ ও BJP-ও এই সিদ্ধান্তগুলির সমালোচনা করেছে ।

এই রাজ্যগুলির শ্রম আইন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গুরুতর সাংবিধানিক ও আইনি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । সংবিধানের সপ্তম তফসিলের অধীনে কনকারেন্ট-III লিস্টের মধ্যে পড়ে শ্রম আইন ৷ তাই কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই শ্রম আইন তৈরি করতে পারে ৷ শ্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে বর্তমানে প্রায় ৪৪ টি কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্যগুলিতে ১০০ টিরও বেশি আইন রয়েছে । রাজ্যের আইনসভায় কেন্দ্রীয় শ্রম আইনের সংশোধনীও পাস করা যেতে পারে । তবে, ভারতীয় সংবিধানের ২৫৪(২) অনুচ্ছেদের অধীনে, কোনও রাজ্যের তরফে তৈরি করা আইন যদি কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি আইনের সঙ্গে এক না হয়, সেক্ষেত্রে ওই আইন পাসে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন ৷ ভারতীয় সংবিধানের ২১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্রীয় আইন স্থগিত করে দিয়েছে ৷ যা রাজ্যপালকে ওই অর্ডিন্যান্স প্রবর্তন করার একই রকম আইনি অনুমতি দেয় যখন রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন চলছে না ৷

যেহেতু শ্রম আইনের কিছু নিয়ম স্থগিত করার ফলে কেন্দ্রীয় আইনগুলির পরিচালনায় প্রভাব ফেলবে, তাই এর জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন । সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এখন মোদি সরকারের হাতে ৷ তাদেরই ঠিক করতে হবে যে এই ধরনের শ্রম আইন স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে অনুমতি দেওয়া হবে কি না ৷

যেহেতু এই অর্ডিন্যান্সগুলি ভারতের শ্রম আইনের শৃঙ্খলাকে একেবারে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন দেবে কি না, তা নিয়ে একটা সন্দেহ থেকে যাচ্ছে ৷ যেহেতু রাজ্য সরকারগুলি BJP দ্বারা পরিচালিত, তাই এখন কেন্দ্র UP ও MP সরকারের তরফে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আপত্তি প্রকাশ করে কি না তা দেখার অপেক্ষা ৷

এমনকী, রাষ্ট্রপতি যদি তাঁর সম্মতি দিয়েও দেন, তাহলেও এই অর্ডিন্যান্সকে বিচার বিভাগের সামনে আইনত চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে । সংবিধানে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে ৷ এই সার্বিক শ্রম আইন স্থগিত করার ঘটনা এই অধিকার লঙ্ঘনের সামিল ৷ ফলে এটাকে অসাংবিধানিক বলা যেতেই পারে ৷ ভারতীয় সংবিধানের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতিটি নাগরিককে ‘জোরপূর্বক শ্রমের’ মতো শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে ৷ ‘জোরপূর্বক শ্রম’ দাসত্ব করানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ৷ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছে । এশিয়ান গেমসে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের নিয়ে পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (১৯৮২) নামে একটি যুগান্তকারী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, ‘‘নূন্যতম মজুরির কমে যখন কোনও ব্যক্তি শ্রম প্রদান করেন, তখন ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ঘটনাকে ‘জোর করে শ্রম আদায়’-এর মধ্যেই ফেলা হবে ৷’’

সুতরাং, রাজ্যগুলির দ্বারা শ্রম আইন স্থগিত করে দেওয়া, বিশেষত মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮-কে স্থগিত করার ঘটনা সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে ৷ এই পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) ১৪৪ নম্বর কনভেনশনকেও লঙ্ঘন করেছে ৷ যাতে ভারতও স্বাক্ষরকারী হিসেবে ছিল । এমন একটা সময়, যখন কোরোনা ভাইরাসের জেরে লকডাউনের জন্য অর্থনৈতিক সংকট শ্রমিকদের চরম সমস্যার মধ্যে ফেলেছে, তখন এই ধরনের পদক্ষেপ আইনত অনুচিত তো বটেই, বরং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় ৷ আগুন সংক্রান্ত সুরক্ষা বিধি, শৌচাগারের ব্যবস্থা, সুরক্ষার সরঞ্জামের মতো স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত বিধি লঘু করে দেওয়ার ফলে এই জনস্বাস্থ্য সংকেটর মধ্যে শ্রমিকদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তোলা হল ৷ যদিও ভারতের শ্রম আইন সংক্রান্ত কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যার প্রভাব অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯০ শতাংশ শ্রমিকের উপর পড়ে ৷ এই সমস্যার মোকাবিলায় ‘সংস্কার’ করতে এই শ্রম আইন স্থগিত করা হয়নি ৷ বরং এই পদক্ষেপের জেরে সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদেরও আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য করবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.