প্রশ্ন : বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করেছে । এই প্রস্তাবগুলি কি আইনিভাবে বৈধ?
কপিল সিবল : বিষয়টা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ৷ এবং আদালতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে । যদি আদালত এই আইনকে মান্যতা দেয়, তখন এইসব প্রস্তাবের প্রয়োগের বিষয়গুলি উঠবে । এই প্রস্তাবগুলো বলছে যে ভারত সরকার আবার ভাবুক এবং CAA প্রত্যাহার করুক । এই প্রস্তাবগুলো পরিপূর্ণভাবে বৈধ । যদিও অন্যান্য ফয়সালার মতো এক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতে হবে ।
প্রশ্ন : নাগরিকত্ব আইনের ইশু কি দেশের অর্থনৈতিক ধস থেকে কংগ্রেসের নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে?
কপিল সিবল : না, আমার মনে হয় না যে CAA-বিরোধী প্রতিবাদ দেশের বেহাল অর্থনীতি থেকে নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে । এটা মানুষের সামনে একটা কঠিন সমস্যা । মানুষের রাস্তায় নামার অন্যতম কারণ হল, তাঁদের অনেকের কাছেই কোনও জীবিকা নেই ৷ অনেকে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত । আর সবার উপরে যেটা, যে NPR চালু হলে কী হবে । গণনাকারীরা প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে সেই অতিরিক্ত প্রশ্নগুলো করতে শুরু করবে যা আমরা অতীতে 2010 সালের NPR-এ রাখিনি । মানুষ চিন্তিত এই ভেবে যে নাগিরকত্ব নিয়ে তাঁদের ভাগ্য নির্ভর করছে সেই লোকগুলোর উপর, যারা তাঁদের বাড়িতে আসবে এবং যাঁদের অধিকার থাকবে তাঁদের নামের পাশে 'ডি' লিখে দেওয়ার ৷ যার অর্থ, তাঁরা সন্দেহজনক নাগরিকের তালিকায় পড়ে গেলেন । সাধারণভাবে NPR-এ গত ছ'মাসে আপনার ঠিকানা চাওয়া হয় । কিন্তু এখন অতিরিক্ত প্রশ্ন যোগ করার পরিণাম কী হবে, সেই ভেবে মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন । আপনি দেখেছেন, ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতে কীভাবে একগুচ্ছ সমস্যা তৈরি হয়েছে । অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে নাম না ওঠা 19 লাখ মানুষের মধ্যে ১২ লাখই হিন্দু । কেন্দ্রীয় সরকার ভেবেছিল, শুধুমাত্র মুসলিমরাই এই তালিকায় পড়বেন ।
প্রশ্ন : সরকার দাবি করছে, নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদে শুধু সংখ্যালঘুরাই সামিল । কী বলবেন?
কপিল সিবল : অসমে যেভাবে 12 লাখ হিন্দুও এতে জড়িয়ে পড়লেন, তাতে এটা শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের বিষয় কীভাবে হল? অসমে 1600 কোটি টাকা আর দেশজুড়ে করা হলে 30 হাজার কোটি টাকা খরচ করে যদি এই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়, হয়ত লাখ লাখ এমন মানুষ যাঁরা সংখ্যালঘু নন, যাঁরা হয়ত কংগ্রেসকে ভোট দেন-তাঁদের নামের পাশেও 'ডি' বসিয়ে দেওয়া হতে পারে । এটা একটা অত্যন্ত বিভেদমূলক কৌশল হয়ে দাঁড়াতে পারে ।
প্রশ্ন : যে সিনিয়র নেতারা দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার আগে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন, এবং এখনও স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আপনি কঠিন মন্তব্য করেছেন । আপনার প্রতিক্রিয়া?
কপিল সিবল : এই হিংসা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে করা হয়েছে । দুর্ভাগ্যজনক যে দিল্লি পুলিশ বহু ক্ষেত্রে মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে ৷ আর বহু ক্ষেত্রে পুলিশই হিংসায় সামনের সারিতে ছিল । আমি এমন ছবিও দেখেছি, যেখানে পুলিশ মাটিতে পড়ে থাকা আহতদের জনগণমন গাইতে বাধ্য করছে আর লোকেদের মারছে । হিংসায় মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি । আমার মনে হয় যে এটা অত্যন্ত গুরুতর বিষয় যে BJP নেতারা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । প্রশাসন যখন কিছু করবে না, তখন আদালতেরই উচিত সজাগ হয়ে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া । কোরোনা ভাইরাসের মতো এটা একটা সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাস ৷ যাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট না করা গেলে ক্রমশ আরও ছড়িয়ে পড়বে । আমি খুবই আনন্দিত যে চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে যাওয়া বিষয়কে শুক্রবারই তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি । আদালত যেভাবে চাইবে, সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে । এই অপরাধ ভারতীয় দণ্ডবিধির 153-এ ধারায় পড়ে, যেখানে বলা হচ্ছে, বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা যেই দিক না কেন, তা শাস্তির যোগ্য। পুলিশ একটা FRI-ও করল না কেন? মজার ব্যাপার হল, প্রধানমন্ত্রী 69 ঘণ্টা পর ঘুম থেকে উঠেছেন ৷ এবং তারপর শান্তির জন্য আবেদন করছেন ।
প্রশ্ন : এই গোটা পর্বে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ভূমিকাকে কীভাবে দেখেন?
কপিল সিবল : আম আদমি পার্টির একধরনের আচরণ আমি টানা লক্ষ্য করে চলেছি । যখন JNU-তে হামলা হল, তখন তারা কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ করেনি । যখন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসার ঘটনা হল, তারা দূরত্ব বজায় রাখল । তারা যেধরনের ইশু নিয়ে BJP-র মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না । যখন দিল্লি-হিংসা হল, তখন তারা কিছুই করল না । আর যখন প্রতিবাদকারীদের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন, তাঁদের জল কামানের মুখে পড়তে হল । তাদের আচরণে একটা পৈশাচিক রাজনৈতিক মানসিকতা দেখা যাচ্ছে ।