দিল্লি, 7 নভেম্বর : শ্বাস নিতে ভারতের রাজধানী নিঃসন্দেহে লড়াই করছে । এটা প্রতি বছরের একটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে । এই বছর বায়ুদূষণের ঘটনা অনেক বেশি মারাত্মক । বর্ষার সময়, অর্থাৎ অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বরে বায়ুর পরিস্থিতি এই শহরে সব থেকে ভালো থাকে । দীপাবলির বাজির ধোঁয়ায় গোটা উত্তর ভারতের আকাশ ভরে যায়। প্রতিবেশি রাজ্যের আগুনে পুড়ে যায় দিল্লি । কেজরিওয়াল সরকার সাধারণ স্বাস্থ্যের কারণে জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেছে । পাঁচ তারিখ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জোড়-বিজোড় নীতি চালু করা হয়েছিল । যদিও কয়েকজন মন্ত্রীর দাবি, বৃষ্টির স্বল্পতা, চাষের জমিতে থাকা ফসলের গোড়া পোড়ানো এর জন্য দায়ী । কারণ যাই হোক, শহরের বায়ু সূচক কিন্তু মারাত্মক কথা বলেছে । AQI যদি 400-500 মধ্যে থাকে, তাহলে বলতে হবে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ । বাস্তবটা হল, দিল্লিতে এই মান 500 ছাড়িয়ে গেছে । এর ফলে উড়ান পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল । গুরগাঁও, নয়ডা, ফরিদাবাদ এবং গাজিয়াবাদের মানুষজনকে মাক্স ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে । তেলঙ্গনা, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং ওড়িশাও এইরকম বায়ুদূষণের জ্বালায় জ্বলছে ।
উত্তর ভারতের কৃষকরা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে গম ব্যবহার করেন এবং চাষের জমিতে থাকা ফসলের গোড়া পোড়ান । ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল (NGT) চাষের জমিতে থাকা ফসলের গোড়া পোড়ানো চার বছর আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । পঞ্জাব এবং হরিয়ানা সরকার NGT-এর এই নির্দেশ মানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । কেন্দ্রীয় সরকার এটা কার্যকর করতে 1100 কোটি টাকা ঘোষণা করেছে, যদিও পরিস্থিতির সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি । এক টন ফসল পোড়ানো হলে 60 কোজি কার্বন মনোক্সাই, 1400 কেজি গ্রিন হাউস গ্যাস, 3 কোজি সালফার ডাই অক্সাইড বাতাসে মেশে । হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশ প্রতি বছর পাঁচ কোটি টন ফসল পোড়ায় । এতে টক্সিন গ্যাস নিঃসরণের ফলে উপকৃত ব্যাকটেরিয়া মারা যায় । জমির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং দিল্লি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করতে বলেছে । বিশেষজ্ঞরা এর বিকল্প হিসেবে জোয়ার চাষের পরামর্শ দিয়েছেন ।
বায়ুদূষণ শুধুমাত্র দিল্লি বা কিছু নির্দিষ্ট শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই । ভারতীয় শহরগুলোর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ এই সময়কালের মধ্যে দূষণের গর্ভে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে । বায়ু সূচকের নিরিখে ভারতের স্থান খুবই নিচের দিকে । প্রতি বছর বায়ু দূষণের কারণে 8 জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে । বায়ু দূষণের জন্য চিনে মৃত্যুর হার নিম্নমুখী, যারা শিল্প থেকে দূষণ ছড়ানো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করছে । যেখানে ভারতে বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যু 23 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । AIIMS ইতিমধ্যেই সতর্ক করে জানিয়েছে, বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুস এবং হৃদপিন্ড মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এক গবেষণামূলক পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে, বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ু সাত বছর করে কমে যাচ্ছে । অপেক্ষাকৃত ছোট শহর কুরনুল এবং ওয়াঙ্গলেও বায়ু দূষণের মাত্রা বেশ বেশি । প্রায় 66 কোটি ভারতবাসীর জীবনে বায়ু দূষণ মারাত্মক প্রভাব ফেলছে । অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং বার্বাডোজের মতো দেশগুলি সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন করতে সক্ষম । ভারতের উচিত এ বিষয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত আইনকে সঠিক ভাবে রূপায়ণ করা । একমাত্র সরকার এবং জনসাধারণ মিলিত ভাবে পরিবেশ সচেতনতামূলক কাজ করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ।