সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা করতে বিচার বিভাগ সক্রিয়, তাদের প্রদত্ত নির্দেশাবলীতেই বিষয়টি স্পষ্ট । কিন্তু এই উদ্যোগ একমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে । 2018 সালের মার্চে এই জাতীয় ফৌজদারি মামলার ঘটনা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য 12 টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করা হয়েছিল । কিন্তু, আইনি জটিলতায় বিষয়টি থমকে গেছে । আইনি জটিলতা দূর করতে সচেষ্ট সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের একটি রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে তাঁদের । শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, শক্তিশালী রাজনৈতিক লবি এই জাতীয় মামলাকে প্রভাবিত করছে । হাজারের বেশি এই জাতীয় মামলা বিচারাধীন থাকায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, প্রয়োজনে দৈনিক শুনানি করতে হবে, এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রায় দিতে হবে । অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম তাদের প্রকাশিত নথিতে দেখিয়েছে, 2014 সাল পর্যন্ত 1581 জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা মুলতুবি রয়েছে । বর্তমানে এই সংখ্যাটা 4442 । এর মধ্যে 2556 জন বিধায়ক এবং সাংসদ ।
1997 সালের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতভাবে এক নিঃশব্দ প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছিল । তা হল, নির্বাচনের ময়দানে অপরাধীদের না নামানোর সিদ্ধান্ত । এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়টি । যেহেতু অনেক রাজনৈতিক নেতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, সে জন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলির সংস্কারের কথাও বলা হয় । আদালত এ-বিষয়ে ছ'টি নির্দেশিকা জারি করে এবং রাজনৈতিক দলগুলির কাছে প্রশ্ন রাখে, কেন ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীনদের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, সে বিষয়ে ।
শীর্ষ আদালত আগেই মন্তব্য করেছিল, কীভাবে একজন অভিযুক্ত প্রার্থী আর পাঁচজন প্রার্থীর থেকে নিজের জয়ের সম্ভাবনাকে দ্বিগুণ করে ফেলেন । এই মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতির দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ছবিটাই তুলে ধরে । অভিযুক্ত প্রার্থীদের টিকিট না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি এই সংকট অবশ্যই এড়াতে পারে । কিন্তু সমস্যা হল, অপরাধীরা চাইলে তাঁদের নিজ দলের উপরই প্রভাব বিস্তার করতে পারেন । অ্যামেরিকা বা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের অতীত বিশেষভাবে বিবেচিত হয় । নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হাটোয়ামা পদত্যাগ করেন, যার মধ্যে রয়েছে অ্যামেরিকা বিমান ঘাঁটি স্থানান্তরের বিষয়টিও । তবে ভারতে লালুপ্রসাদ যাদবের মতো ব্যক্তিরা, যাঁরা দুর্নীতির অভিযোগে জেল খাটছেন, তাঁরা জেল থেকে রাজনৈতিক জোট তৈরি করতে পারেন । রাজনৈতিক দুর্নীতি সব অপরাধের জননী । একমাত্র জনসচেতনতাই হতে পারে রাজনীতি থেকে দুর্নীতি এবং অপরাধ দূর করার একমাত্র প্রতিষেধক ।