হায়দরাবাদ, 4 সেপ্টেম্বর : আর কিছুদিন বাদেই পরিবারে আসবে নতুন অতিথি । তাকে নিয়েই হাজারো পরিকল্পনা । কখনও ছোট্ট জামা বানানো । তো কখনও সে বড় হয়ে কী হবে সেই চিন্তা । কোরোনা পরিস্থিতিতে সন্তান জন্ম নেবে । সেই নিয়ে একটু চিন্তায় ছিল তেলাঙ্গানার রেড্ডি পরিবার । তবে, কোরোনাকে কার্যত ছাপিয়ে গেছিল তাদের আনন্দ । তবে, প্রসবের কয়েকদিন আগে তাতে ভাটা পড়ে । গায়ে জ্বর, সর্দিতে ভুগতে শুরু করে যুবতি । যদিও সোয়াবের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । সন্তানের জন্মও দেন তিনি ভালোভাবে । কিন্তু সন্তানের সুখ আর ভোগ করতে পারলেন না । হঠাৎই এরাজ্যেরই এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনি । বুঝতেই পারলেন মা হওয়ার আনন্দ । সঙ্গে সঙ্গে উস্কে দিয়ে গেলেন চিকিৎসা পরিকাঠামো ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অমানবিকতার অভিযোগের বিষয়টি ।
কোরোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর বাড়িতেই ছিলেন যুবতি । ডেলিভারির সময় হলে ভরতি হতে যান মহাবাবুনগরের এক হাসপাতালে । সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় । ভরতি করা হয় হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে । 2 লাখ টাকা আগাম জমা করে যুবতিকে ভরতি নিতে রাজি হয় হায়দরাবাদের ওই হাসপাতাল । সেখানে পরের দিন এক সুস্থ সন্তানের জন্মও দেন তিনি । কিন্তু সর্দি থাকায় চিকিৎসকরা তাঁর রক্ত পরীক্ষা করান । কোরোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে ।
তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু না জানিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি তাঁকে ICU-তে ভরতি করে দেয় । ব্যাস সেই শেষ দেখা । একে কোরোনা রোগী, তারপর ICU । পরিবারের সঙ্গে কার্যত দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ । রোজই ICU-র দরজার সামনে শুধু ঘোরাফেরা । রেড্ডি পরিবারের অভিযোগ, প্রতিদিনই রোগীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে অনুমতি চেয়েছে তারা । কিন্তু রোজই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে । এদিকে বেড়েছে বিল । প্রায় 23 লাখ টাকা নিয়েছে ওই হাসপাতাল । কিন্তু, জানায়নি যুবতির শারীরিক পরিস্থিতি ।
হাসপাতালে আছে, নিশ্চয়ই সেরে উঠছে এমনই ভেবেছিল যুবতির পরিবার । মায়ের সংস্পর্শে ছেলেকে দিয়ে শান্তি পাবেন, ভেবেছিলেন তাঁর স্বামীও । কিন্তু কোথায় কী । বুধবার, প্রায় এক মাসের মাথায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর কাছে জোর করেন । PPE পরে যান ভিতরে । এক ঝলকে স্ত্রীকে দেখে চিনতে পারেননি তিনি । এই অবস্থা ? বলতে বলতে দেখেন স্ত্রী তাঁকে চিনতেই পারছেন না । তাহলে? এতদিন কি চিকিৎসা হয়নি ? আমার স্ত্রীর এমন অবস্থা হল কেমন করে । কী হবে । কেন এমন হল । এসব প্রশ্ন ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফেরেন তিন । রাত পেরোতেই ফোন আসে, ওপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আপনার স্ত্রী আর নেই ।
যে যুবতির শারীরিক পরিস্থিতি কেমন তা একদিন আগে পর্যন্ত হাসপাতাল তাঁদের জানায়নি সে মারা গেল? তাহলে কী চিকিৎসার খামতি ছিল ? 23 লাখ টাকা কোথায় গেল ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা হলে, তারা এবিষয়ে কিছুই জানাতে চায়নি ।
রেড্ডি পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামান্য কোরোনা চিকিৎসা করতে 23 লাখ টাকা আদায় করেছে । বদলে মেরে দিয়েছে তাদের মেয়েকে । তারা এও জানিয়েছে, এবিষয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে হায়দরাবাদের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চার লাখ টাকায় বিষয়টি রফা করে নিতে বলে ।