ETV Bharat / bharat

আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্য়ৎ

লকডাউনের ফলে অর্থনীতির যে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে চলেছে, তার কিছুটা আঁচ আমরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছি । এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন দিন আনা দিন খাওয়া শ্রেণির মানুষ । তবে এর প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হবে । বহু মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে যথেষ্টই ।

coronavirus in india
coronavirus in india
author img

By

Published : Mar 26, 2020, 12:26 PM IST

যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা । বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ যেভাবে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে চলছে তা এর থেকে ভাল ভাবে বোঝানো সম্ভব নয় । আপাত ভাবে অদৃশ্য এই ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভারত আজ পর্যন্ত যত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি । শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে কত জনের প্রাণ যাবে, সেই সংখ্যাটা এখন যথার্থ বলা মুশকিল ৷ এই ভাইরাসের প্রকোপ আমাদের জীবনযাপন এবং ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে ।

এর আগে, যুদ্ধে যেতেন উর্দিধারী সেনার দল । দেশের মানুষ মোটামুটি ভাবে সুরক্ষিত থাকত । কিন্তু পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে । এখন দেশের প্রতিটা মানুষই একজন সৈনিক । নাগরিক থেকে নাগরিক-যোদ্ধা হয়ে ওঠার এই পথটা মোটেই সহজ নয় । সেনাদের জীবন থেকে এক্ষেত্রে আমরা হয়ত কিছু শিক্ষাও নিতে পারি ।

পদাতিক বাহিনী যখন শত্রুদের ডেরা আক্রমণ করে, তখন তার 15 কিলোমিটার দূর থেকে গোলন্দাজ বাহিনী ওই এলাকায় ভয়ঙ্কর গোলাবর্ষণ করে শত্রুদের হতচকিত করে দেয় । মাইনপাতা এলাকার মধ্যে দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা একটা পথ তৈরি করে যাতে মৃত্যুর সংখ্যা যতটা সম্ভব কমানো যায় । সব সময় খেয়াল রাখা হয় যেন সেনাকর্মীদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে খাবার এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণে কোনও সমস্যা না হয় । বাহিনীর প্রত্যেকে যদি নিজেদের কাজ সঠিক ভাবে না করে, তা হলে যুদ্ধে হার নিশ্চিত ।

আমরা আজ এমন এক পরিবেশে বসবাস করছি, যেখানে কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই । নেই কোন ধনী-নির্ধন বিভেদ । আমাদের চিকিৎসক, নার্স, পুলিশকর্মী এবং আপৎকালীন বিভগের কর্মীরা যখন কেরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন আমাদের প্রত্যেকের উচিত তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করা । তাঁদের কাজ যতটা সম্ভব হালকা করা ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল 20 জানুয়ারি । চার সপ্তাহ পরে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল 30-এ । 31তম আক্রান্ত, যিনি ইতিমধ্যেই কুখ্যাত, তিনি পরীক্ষা করাতে চাননি তো বটেই, সামাজিক সব অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলেন । ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর শিনচেওনজি চার্চ ক্লাস্টার, যেখানে তিনি গিয়েছিলেন, শুধুমাত্র সেখানেই গোটা দক্ষিণ কোরিয়ার 60 শতাংশ আক্রান্তের উৎসস্থল । অর্থাৎ, এর থেকেই স্পষ্ট যে, আমাদের মধ্যে যে কেউ যদি ভুল করে, তা হলে এই যুদ্ধে আমাদের হার অবধারিত ।

আদেশের প্রতি সুস্পষ্ট আনুগত্যই সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও আসাধারণ করে তোলে । স্যামুয়েল হান্টিংটনের মতে, সেনাবাহিনীর আত্মা হল আনুগত্য । আনুগত্য না থাকলে যুদ্ধে জেতা তো অনেক পরের বিষয়, লড়াই করাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে । কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমাদের সবাইকে লক্ষ্যে অটল থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে । এই যুদ্ধের জন্য নেওয়া যে কোনও পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু এর উত্তর কখনই হুমকি পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয় ।

এই পরিস্থিতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল, তা বলবে ভবিষ্যৎ । কিন্তু এই মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করা একেবারেই উচিত নয় । প্রশাসনের উপর আস্থা রেখে একসঙ্গে আমাদের এই শত্রুকে পরাজিত করতে হবে ।

আমরা যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটা কথা প্রায়ই বলি । আর তা হল, শত্রুর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাত না হলে কোনও পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হতে পারবে না । যখন বুলেট চলতে শুরু করে, তখন পরিবেশ দ্রুত বদলাতে শুরু করে । একজন সৈনিককে সেই অনুযায়ী নিজেকে পালটে ফেলতে হয় । এবং তা করতে হয় অত্যন্ত দ্রুত । যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনা তার পরিকল্পনায় কিছু রদবদল আনলেও বাহিনীর মূল লক্ষ্য একই থাকে ।

কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমাদের, অর্থাৎ দেশের সাধারণ নাগরিকদের হয়তো অদ্ভুত ও অনভিপ্রেত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে । এই সব পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে আমাদের হয়তো সাময়িক কিছু পরিকল্পনায় পরিবর্তন করতে হতে পারে । কিন্তু অভিষ্ট লক্ষ্য, অর্থাৎ কোরোনা ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো সেটা থেকে কোনও ভাবেই যেন আমরা চ্যুত না হই । আমাদের সমস্ত কাজ যেন এই লক্ষ্যের দিকেই ধাবিত হয় ।

সব শেষে একটা কথা বলতেই হবে । সেনাবাহিনী লড়াই করার সময় জানে যে, দেশের সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁদের দিকে । সেনা ও রাষ্ট্রের মধ্যে এই মর্মে থাকে এক অলিখিত চুক্তি । যুদ্ধের সময় প্রত্যেক সেনা যেমন তৈরি থাকে ব্যক্তিগত স্বার্থত্যাগের জন্য, রাষ্ট্রও তেমনই তাঁর সুরক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে । তার পরিবারের নিরন্তর খেয়াল রাখে ।

কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আমাদের সবার কাছ থেকেই আত্মত্যাগ চাইবে । পরিবর্তে সরকারকে সাধারণ মানুষের বোঝা কমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতেই হবে । খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও অন্যন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ, অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং জরুরি পরিষেবাগুলি চালু রাখতে সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেই হবে ।

লকডাউনের ফলে অর্থনীতির যে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে চলেছে, তার কিছুটা আঁচ আমরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছি । এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন দিন আনা দিন খাওয়া শ্রেণির মানুষ । তবে এর প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হবে । বহু মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে যথেষ্টই । আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার মনে করছে, এর ফলে ফের বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা দেখা দেবে এবং তা 2008 সালের ভয়ঙ্কর মন্দার থেকে কোনও অংশে কম হবে না । গরিব ও বয়স্কদের জন্য তো বটেই, ব্যবসায়িক বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য সরকারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করতেই হবে ।

একটা দেশের অসাধারণ যুদ্ধাস্ত্র থাকতে পারে । কিন্তু সে দেশের পক্ষেও যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, যত ক্ষণ না তার সেনারা আত্ম বলিদানের জন্য তৈরি থাকে । আর আজ আরও কঠিন সময়ের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি । শুধুমাত্র আমাদের জীবন নয়, আমাদের বেঁচে থাকার উপায়গুলিও বিপন্ন । আমি একথা এক বারও বলছি না যে, দেশের নাগরিকদের আত্ম বলিদানের জন্য তৈরি থাকতে হবে । কিন্তু আত্মত্যাগ অবশ্যই করতে হবে । না হলে এই কঠিন যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয় । মহাত্মা গান্ধির কথায় তাই বলতে হয়, “আমরা কী করব, তার উপরেই নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যৎ ।”

যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা । বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ যেভাবে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে চলছে তা এর থেকে ভাল ভাবে বোঝানো সম্ভব নয় । আপাত ভাবে অদৃশ্য এই ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভারত আজ পর্যন্ত যত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি । শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে কত জনের প্রাণ যাবে, সেই সংখ্যাটা এখন যথার্থ বলা মুশকিল ৷ এই ভাইরাসের প্রকোপ আমাদের জীবনযাপন এবং ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে ।

এর আগে, যুদ্ধে যেতেন উর্দিধারী সেনার দল । দেশের মানুষ মোটামুটি ভাবে সুরক্ষিত থাকত । কিন্তু পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে । এখন দেশের প্রতিটা মানুষই একজন সৈনিক । নাগরিক থেকে নাগরিক-যোদ্ধা হয়ে ওঠার এই পথটা মোটেই সহজ নয় । সেনাদের জীবন থেকে এক্ষেত্রে আমরা হয়ত কিছু শিক্ষাও নিতে পারি ।

পদাতিক বাহিনী যখন শত্রুদের ডেরা আক্রমণ করে, তখন তার 15 কিলোমিটার দূর থেকে গোলন্দাজ বাহিনী ওই এলাকায় ভয়ঙ্কর গোলাবর্ষণ করে শত্রুদের হতচকিত করে দেয় । মাইনপাতা এলাকার মধ্যে দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা একটা পথ তৈরি করে যাতে মৃত্যুর সংখ্যা যতটা সম্ভব কমানো যায় । সব সময় খেয়াল রাখা হয় যেন সেনাকর্মীদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে খাবার এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণে কোনও সমস্যা না হয় । বাহিনীর প্রত্যেকে যদি নিজেদের কাজ সঠিক ভাবে না করে, তা হলে যুদ্ধে হার নিশ্চিত ।

আমরা আজ এমন এক পরিবেশে বসবাস করছি, যেখানে কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই । নেই কোন ধনী-নির্ধন বিভেদ । আমাদের চিকিৎসক, নার্স, পুলিশকর্মী এবং আপৎকালীন বিভগের কর্মীরা যখন কেরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন আমাদের প্রত্যেকের উচিত তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করা । তাঁদের কাজ যতটা সম্ভব হালকা করা ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল 20 জানুয়ারি । চার সপ্তাহ পরে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল 30-এ । 31তম আক্রান্ত, যিনি ইতিমধ্যেই কুখ্যাত, তিনি পরীক্ষা করাতে চাননি তো বটেই, সামাজিক সব অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলেন । ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর শিনচেওনজি চার্চ ক্লাস্টার, যেখানে তিনি গিয়েছিলেন, শুধুমাত্র সেখানেই গোটা দক্ষিণ কোরিয়ার 60 শতাংশ আক্রান্তের উৎসস্থল । অর্থাৎ, এর থেকেই স্পষ্ট যে, আমাদের মধ্যে যে কেউ যদি ভুল করে, তা হলে এই যুদ্ধে আমাদের হার অবধারিত ।

আদেশের প্রতি সুস্পষ্ট আনুগত্যই সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও আসাধারণ করে তোলে । স্যামুয়েল হান্টিংটনের মতে, সেনাবাহিনীর আত্মা হল আনুগত্য । আনুগত্য না থাকলে যুদ্ধে জেতা তো অনেক পরের বিষয়, লড়াই করাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে । কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমাদের সবাইকে লক্ষ্যে অটল থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে । এই যুদ্ধের জন্য নেওয়া যে কোনও পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু এর উত্তর কখনই হুমকি পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয় ।

এই পরিস্থিতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল, তা বলবে ভবিষ্যৎ । কিন্তু এই মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করা একেবারেই উচিত নয় । প্রশাসনের উপর আস্থা রেখে একসঙ্গে আমাদের এই শত্রুকে পরাজিত করতে হবে ।

আমরা যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটা কথা প্রায়ই বলি । আর তা হল, শত্রুর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাত না হলে কোনও পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হতে পারবে না । যখন বুলেট চলতে শুরু করে, তখন পরিবেশ দ্রুত বদলাতে শুরু করে । একজন সৈনিককে সেই অনুযায়ী নিজেকে পালটে ফেলতে হয় । এবং তা করতে হয় অত্যন্ত দ্রুত । যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনা তার পরিকল্পনায় কিছু রদবদল আনলেও বাহিনীর মূল লক্ষ্য একই থাকে ।

কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমাদের, অর্থাৎ দেশের সাধারণ নাগরিকদের হয়তো অদ্ভুত ও অনভিপ্রেত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে । এই সব পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে আমাদের হয়তো সাময়িক কিছু পরিকল্পনায় পরিবর্তন করতে হতে পারে । কিন্তু অভিষ্ট লক্ষ্য, অর্থাৎ কোরোনা ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো সেটা থেকে কোনও ভাবেই যেন আমরা চ্যুত না হই । আমাদের সমস্ত কাজ যেন এই লক্ষ্যের দিকেই ধাবিত হয় ।

সব শেষে একটা কথা বলতেই হবে । সেনাবাহিনী লড়াই করার সময় জানে যে, দেশের সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁদের দিকে । সেনা ও রাষ্ট্রের মধ্যে এই মর্মে থাকে এক অলিখিত চুক্তি । যুদ্ধের সময় প্রত্যেক সেনা যেমন তৈরি থাকে ব্যক্তিগত স্বার্থত্যাগের জন্য, রাষ্ট্রও তেমনই তাঁর সুরক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে । তার পরিবারের নিরন্তর খেয়াল রাখে ।

কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আমাদের সবার কাছ থেকেই আত্মত্যাগ চাইবে । পরিবর্তে সরকারকে সাধারণ মানুষের বোঝা কমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতেই হবে । খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও অন্যন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ, অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং জরুরি পরিষেবাগুলি চালু রাখতে সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেই হবে ।

লকডাউনের ফলে অর্থনীতির যে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে চলেছে, তার কিছুটা আঁচ আমরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছি । এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন দিন আনা দিন খাওয়া শ্রেণির মানুষ । তবে এর প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হবে । বহু মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে যথেষ্টই । আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার মনে করছে, এর ফলে ফের বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা দেখা দেবে এবং তা 2008 সালের ভয়ঙ্কর মন্দার থেকে কোনও অংশে কম হবে না । গরিব ও বয়স্কদের জন্য তো বটেই, ব্যবসায়িক বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য সরকারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করতেই হবে ।

একটা দেশের অসাধারণ যুদ্ধাস্ত্র থাকতে পারে । কিন্তু সে দেশের পক্ষেও যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, যত ক্ষণ না তার সেনারা আত্ম বলিদানের জন্য তৈরি থাকে । আর আজ আরও কঠিন সময়ের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি । শুধুমাত্র আমাদের জীবন নয়, আমাদের বেঁচে থাকার উপায়গুলিও বিপন্ন । আমি একথা এক বারও বলছি না যে, দেশের নাগরিকদের আত্ম বলিদানের জন্য তৈরি থাকতে হবে । কিন্তু আত্মত্যাগ অবশ্যই করতে হবে । না হলে এই কঠিন যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয় । মহাত্মা গান্ধির কথায় তাই বলতে হয়, “আমরা কী করব, তার উপরেই নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যৎ ।”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.