দিল্লি, 25 জুন : COVID-19 ও লকডাউনের প্রভাব পড়েছে দেশের 247 মিলিয়ন পড়ুয়ার উপর । এমনটাই দেখা গেল UNICEF-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। বিশেষত যারা প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার পড়ুয়া তাদের উপর প্রভাব বেশি । পাশাপাশি অঙ্গনওয়াড়ি ও কিন্ডারগার্টেনের 28 মিলিয়ন শিশুর শিক্ষা COVID-19 ও লকডাউনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে ।
UNICEF-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার কমপক্ষে 600 মিলিয়ন শিশু COVID-19 দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে । রাষ্ট্রসংঘের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতে 6 মিলিয়নের বেশি ছেলে ও মেয়ে স্কুলছুট রয়েছে । তার উপর COVID-19 এর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা মিলিয়ে 247 মিলিয়ন শিশুর স্কুলশিক্ষা বন্ধ রয়েছে । যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন e প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে । দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম, স্বয়ংপ্রভা টিভি চ্যানেল, e-পাঠশালা এবং ন্যাশনাল রেসপিরেটরি অফ ওপেন এডুকেশন রিসোর্সের মাধ্যমে ওয়েব পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, টিভি চ্যানেল ও রেডিও দ্বারা পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে । COVID-19 এবং লকডাউনের কারণে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত নতুন শিক্ষাবর্ষ তৈরি করেছে । বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে বাড়িতে বসে যাতে পড়ুয়ারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
UNICEF-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে মাত্র 24 শতাংশ ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে । ফলে, পড়ুয়াদের অধিকাংশ ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । পাশাপাশি শিশুদের উপর হিংসার ঘটনা বেড়েছে । নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের চাইল্ড লাইন পরিষেবায় এই ধরনের অভিযোগ লকডাউনে বেড়েছে । 20 মার্চ থেকে 10 এপ্রিল, মাত্র 21 দিনে 4,60,000 ফোন চাইল্ড লাইনের কাছে গেছে । বছরের অন্যান্য সময় যে অভিযোগ আসে, তার থেকে 50 শতাংশ বেশি অভিযোগ লকডাউনের সময় এসেছে । রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরমধ্যে 10,000টি ক্ষেত্রে চাইল্ড লাইনের সদস্যদের ঘটনাস্থানে পৌঁছে শিশুদের উদ্ধার করতে হয়েছে । এর মধ্যে শিশুদের উপর শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমের মতো ঘটনা রয়েছে ।
UNICEF-এ ভারতের প্রতিনিধি ইয়াসমিন আলি হক বলেন, “COVID-19 দেশের শিশুদের করুণ পরিস্থিতি প্রকাশ্যে এনেছে । কোরোনা ভাইরাস প্রত্যক্ষভাবে যা প্রভাব ফেলেছে । তার থেকে অনেক বেশি পরোক্ষ প্রভাব শিশুদের উপর পড়েছে । লাখ লাখ শিশু তাদের শিক্ষা ও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত । বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প দ্বারা এইসব শিশু ও তাদের পরিবারকে সাহায্যের প্রয়োজন । সরকারের তরফে এই শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।”
COVID-19 যদি প্রাথমিকভাবে শিশুশিক্ষার উপর প্রভাব ফেলে থাকে । তাহলে দ্বিতীয় ভাগে পর্যাপ্ত খাবারের উপর প্রভাব ফেলেছে । প্যানডেমিকের কারণে শিশুদের কাছে সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার পৌঁঁছায়নি । রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে পাঁচ বছরের নিচে 20 মিলিয়ন শিশুর উপর খাদ্যাভাবের প্রভাব পড়েছে । 40 মিলিয়নের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে । পাশাপাশি দেশের 15 থেকে 49 বছর বয়সি অর্ধেক মহিলা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন । ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ জার্নালে জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের তরফে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয় । ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় এবং শিশুদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার না পৌঁছানোয় প্রায় তিন লাখ শিশুর আগামী ছয় মাসে মৃত্যু হবে ।