দিল্লি, 6 ফেব্রুয়ারি : আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য বেশ কয়েকটি স্তর রয়েছে ৷ ভুল খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শরীরের উপর অত্যাধিক ধকলের ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায় ৷ তাই বাইরের পরিবেশের কোনও অজানা বা নতুন প্যাথোজেন (রোগ বহন করতে পারে এমন ) সহজেই আমাদের সমস্যায় ফেলতে পারে ৷ ঠিক যেমনটা হয়েছে কোরোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ৷
বিশ্বজুড়ে প্রায় 14 হাজারেরও বেশি মানুষ কোরোনায় সংক্রমিত বলে জানা গেছে ৷ এদেশের কেরালাতে ইতিমধ্যে তিনজন কোরোনায় আক্রান্ত ৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে চিনে না যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে ৷ সেই বার্তায় বলা হয়েছে, 15 জানুয়ারি বা তারপর চিনে সফরকারীদের মধ্যে কোরোনার সংক্রমণ থাকার সম্ভাবনা প্রবল ৷
কী এই কোরোনা ভাইরাস ?
আমাদের শ্বাসযন্ত্রে হাজার রকমের ভাইরাস বাসা বানাতে পারে ৷ যার থেকে হতে পারে ইনফ্লুয়েন্জ়া, সর্দি-কাশির মতো রোগগুলি ৷ কোরোনা ভাইরাস হল নতুন এক ধরনের ভাইরাস যা কয়েক দশক আগে পশুদের শরীর থেকে মানুষের শরীরে আসে ৷ কোরোনা ভাইরাস চার ধরনের হয় ৷ যার মধ্যে তিন ধরনের কোরোনা মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে ৷
কোরোনার সংক্রমণ
সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম চিনে প্রথম দেখা যায় 2002-03 সালে ৷ এর প্রায় এক দশক পেরিয়ে প্রথম দেখা যায় মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম ৷ এই দু'টিরই কারণ ছিল কোরোনা ভাইরাস ৷ এই দুইয়ের কারণে প্রাণ যায় বহু মানুষের ৷ এবারের নতুন এই কোরোনা ভাইরাসটি ছড়ায় চিনের ইউহানের মাংসের বাজার থেকে ৷
কোরোনার উপসর্গ কী কী ?
- জ্বর
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট
- ঠান্ডার অনুভুতি
- বুকে ব্যথা
- গা-হাত-পা ব্যথা
- গলা ব্যথা
- অসুস্থতা বোধ করা
- মাথা ব্যথা
- ডায়েরিয়া
- বমি ও বমি-বমি ভাব
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া
- নিউমোনিয়া
কোরোনা থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন ?
- সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করুন ৷
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ৷
- মাংস খাওয়ার আগে সেটিকে ভালোভাবে রান্না করুন ৷
- ফল ও শাক-সবজি ভালোভাবে ধুয়ে তারপর খান ৷
- অন্যদের বেশি কাছাকাছি ঘেঁষবেন না ৷
- করমর্দন থেকে বিরত থাকুন ৷
- N-95 মাস্ক ব্যবহার করুন ৷ এটি আপনার নাক দিয়ে ভাইরাসের প্রবেশ আটকাবে ৷
- ভালো রোদ চশমা ব্যবহার করুন ৷ চোখ দিয়েও আপনার শরীরে ঢুকতে পারে এই ভাইরাস ৷
- দরজার হাতল, কোনও বোতাম বা সুইচ ও অন্য যে সব জিনিস বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসে, সেগুলিকে অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করুন ৷
- বেশি করে জল খান ৷
কাদের শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি?
- ডায়াবেটিসের রোগি ও যাদের ফুসফুস বা হার্টের গুরুতর কোনও রোগ রয়েছে
- বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের
- যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে ও যারা ইমিউন-সাপ্রেসিভ কোনও ওষুধ খান
- যারা ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন
কী বলছে আয়ুর্বেদ?
আয়ুর্বেদ ভারতের প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি ৷ আয়ুর্বেদ এমন বেশ কিছু শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের সমাধান দিয়েছে যাদের উপসর্গ কোরোনার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় ৷ রোগ নতুন হলেও আয়ুর্বেদ সবসময় সেই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বাড়ানোর চেষ্টা করে ৷
কোরোনা ভাইরাস আটকানোর পথ বাতলাচ্ছে আয়ুর্বেদ ৷ তবে আয়ুর্বেদিক কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে উপরের আলোচনা করা দিকগুলি কিন্তু অবশ্যই মেনে চলতে হবে ৷
- শাদঙ্গ পানীয়ম : রোজ সকালে প্রাতঃরাশের আগে একবার করে 15 এম এল খান (10-15 দিন)৷
- অগস্ত হরিতকি : খাওয়ার আগে দিনে দু'বার 5 গ্রাম করে খান (10-15 দিন) ৷
- হরিদ্রা খণ্ড : রোজ খাওয়ার আগে বা পরে দিনে দু'বার 5 গ্রাম করে খান (10-15 দিন) ৷
- 25 গ্রাম ত্রিকাতু চূর্ণ, 5গ্রাম গাদুচি সত্ত্ব ও 25 গ্রাম যষ্ঠিমধু চূর্ণ একসঙ্গে মিশিয়ে 2-3 গ্রাম করে গরম জল বা মধুতে মিশিয়ে খান (10-15 দিন) ৷
(প্রতিবেদনটি চিকিৎসক পি ভি রঙ্গনাইয়াকুলুর মতামত অনুসারে লেখা ৷ তিনি তিরুপতির এস ভি আয়ুর্বেদ কলেজের মেডিকেল ফিজ়িয়োলজির প্রাক্তন HOD ৷)