সন্তানকে বড় করা কঠিন কাজ, আর এইক্ষেত্রে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার থাকে । সবথেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত জীবনদায়ী সিদ্ধান্ত হল, আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তার আম্বিলিকাল কর্ডের রক্ত সংরক্ষণ করে রাখা । গর্ভে থাকাকালীন শিশুর সঙ্গে মায়ের সংযোগ রক্ষা করে আম্বিলিকাল কর্ড । যদি আপনার সন্তানের ভবিষ্যতে ব্লাড ক্যান্সার, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়ার মতো জিনগত রক্তরোগ দেখা দেয়, তাহলে এই সংরক্ষিত কর্ড ব্লাডের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।
কর্ড ব্লাডের প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
প্রতি বছর জুলাই মাসকে রক্ত সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়, আর আজ আমরা কর্ড ব্লাডের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরব । স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রেণুকা গুপ্তা বলেন, “জন্মের পর, বাচ্চার আম্বিলিকাল কর্ডে বিশেষ কোশ থাকে, যাদের স্টেম সেল বলা হয় । পরবর্তী কালে এই কোশগুলো রক্ত কোশে পরিণত হতে পারে । শরীরে সংক্রমণের মোকাবিলা করা ছাড়াও, এটা সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে ব্লাড ক্লটের ক্ষেত্রে সাহায্য করে ।”
কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ নিয়ে মানুষ খুব বেশি সচেতন নন । ডক্টর রেণুকা বলেন, “আমাদের দেশে খুব কম উদাহরণই আছে, যেখানে সংরক্ষণ করে রাখা কর্ড ব্লাডকে রক্তের সমস্যা বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে । এর পিছনে দুটো কারণ থাকতে পারে । হয় এই ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, অথবা সংরক্ষিত অবস্থা থেকে স্টেম সেল বার করে আনা এবং তাদের চিকিৎসার কাজে লাগানোর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সময় ।”
তিনি আরও জানান যে, আম্বিলিকাল কর্ড নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে । যদিও বর্তমানে মাত্র কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রেই এটা উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে । চিকিৎসক ও গবেষকরা দাবি করছেন, যে দীর্ঘ গবেষণা এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, আম্বিলিকাল কর্ডের রক্তকোষ বহু গুরুতর রোডের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে । এইসব রোগের মধ্যে রয়েছে রক্তের বিভিন্ন সমস্যা, সেরিব্রাল পলসি, টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস, হাইড্রোসেফালাস, মাল্টিপল-স্কেলেরোসিসের মতো রোগ ।
কর্ড ব্লাড কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
ড. রেণুকা ব্যাখা করেন যে, শিশুর জন্মের পর যখন আম্বিলিকাল কর্ড ছিন্ন করা হয়, তখন চিকিৎসক জরায়ুর সঙ্গে যুক্ত অংশের আম্বিলিকাল শিরা থেকে রক্ত বার করে আনেন । একটি বিশেষ ব্যাগে এই রক্ত সংগ্রহ করা হয় । এই দ্রুত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬০-১৫০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে, সিল করে 48 ঘণ্টার মধ্যে ব্লাড ব্যাঙ্কের ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখানে তা প্রসেস করে দীর্ঘসময়ের জন্য রেফ্রিজারেটেড করে রাখা হয় । সাধারণভাবে এটা ২১ বছরের জন্য সংরক্ষিত থাকে, কিন্তু কেউ চাইলে সেই সময়সীমা বাড়াতেও পারেন ।
বিশ্বজুড়ে কয়েক ধরণের ক্যান্সার এবং জিনগত সমস্যা সহ, জীবন সংশয় ঘটানো বহু রোগের চিকিৎসায় কর্ড ব্লাড স্টেম সেল ব্যবহার করা হচ্ছে । সুতরাং বাবা-মাকে এই ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে । প্রসবের আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে, সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের স্বার্থে কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ করা উচিত ।