ETV Bharat / bharat

370 ধারা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে হত্যা করা হয়েছিল শ্যামাপ্রসাদকে ? - শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

370 ধারা বিরোধী আন্দোলনে 1953 সালের 11 মে জম্মু ও কাশ্মীরে যান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি । অনুমতি না নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ঢোকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । 23 জুন শ্রীনগর পুলিশের হেপাজতে তাঁর মৃত্যু হয় । BJP-র অভিযোগ, 370 ধারা বিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে সেদিন হত্যা করা হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে ।

shymaprasad Mukherjee
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
author img

By

Published : Aug 4, 2020, 6:44 PM IST

Updated : Aug 4, 2020, 6:56 PM IST

কলকাতা, 4 অগাস্ট : ''বাবা সাহেব আম্বেদকর, সর্দার পটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অটলজি-র মতো কোটি কোটি দেশভক্তের স্বপ্নপূরণ হল ।'' জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহারের পর বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । রাম মাধব, সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষস্থানীয় BJP নেতারাও দিনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে । তখন যেন আরও একবার শোনা গিয়েছিল, ''এক দেশ মে দো বিধান নেহি চলেঙ্গে'' এই স্লোগান । যার প্রবক্তা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি । 370 ধারা প্রত্যাহারের জন্য যারা আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৷

370 ধারা বিরোধী আন্দোলনে 1953 সালের 11 মে জম্মু ও কাশ্মীরে যান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি । অনুমতি না নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ঢোকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । 23 জুন শ্রীনগর পুলিশের হেপাজতে তাঁর মৃত্যু হয় । BJP-র অভিযোগ, 370 ধারা বিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে সেদিন হত্যা করা হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে ।

এই 370 ধারার বিরোধিতা নিয়ে কী ভূমিকা ছিল শ্যামাপ্রসাদের? স্বাধীন ভারতের সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছিল 370 ধারা ৷ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন ৷ তখন কি এই ধারার বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ? এমন একাধিক প্রশ্ন রয়েছে ৷

যেমন ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গণপরিষদে 370 ধারার অস্থায়ী রূপকে সমর্থন করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ বিরোধিতা করেননি ৷ পরে বলরাজ মাধকের কথা মতো কাশ্মীর ইশুতে আন্দোলন শুরু করেন ৷ কাশ্মীরে যান ও সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যান ৷ ফলে 370 ধারা বিরোধী আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় ৷ নেহরু ও শেখ আবদুল্লার মধ্যে যে দিল্লি চুক্তি হয়েছিল তাকে শ্যামাপ্রসাদ সমর্থন করেছিলেন ৷ কিন্তু, জনসংঘের জম্মু ও কাশ্মীর ইউনিট এর বিরোধিতা করেছিল ৷ শেখ আবদুল্লার সঙ্গে নেহরুর চুক্তি হয়েছিল, লাদাখকে আলাদা ইউনিট হিসেবে স্বশাসন দেওয়া হবে ৷ যাকে সমর্থন করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ তবে শ্যামাপ্রসাদের মূল কাজ ছিল বাংলার উদ্বাস্তদের নিয়ে ৷ তাঁর মৃত্যুর পর এই সমস্যাটা থেকে যায় ৷ জনসংঘ আর এই ইশু নিয়ে এগোতে পারেনি ৷

370 ধারা আন্দোলনে কী ভূমিকা ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ?

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যদিও একমত নন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ৷ তাঁর মতে, 370 ধারা নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৷ তাঁর কথায়, ''শেখ আবদুল্লার আবদারে এই ধারা সংবিধানে রাখা হয়েছিল ৷ সেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা ছিল, এই ধারা অস্থায়ী ৷ কিন্তু, পরে এই ধারা প্রত্যাহার নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেননি ৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন ৷ তিনি সেই সময় বলেছিলেন, এই ধারার কোনও মানে নেই ৷ কাশ্মীরের জনগণ ভারতের নাগরিক না অন্য কোনও দেশের নাগরিক তা এই ধারা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে না ৷ সেই সময় কাশ্মীরে 15 অগাস্ট আর 26 জানুয়ারি ছাড়া অন্য কোনওদিন দেশের পতাকা উঠত না ৷ কাশ্মীরের পতাকা তোলা হত ৷ এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ নেহরুকে তিনি বাক্যবাণে পর্যদস্তু করেছিলেন ৷ তাতে যদিও লাভ তেমন হয়নি ৷ কারণ, সেই সময় লোকসভায় কংগ্রেসের আসন এত বেশি ছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব ছিল না ৷ তবে লড়াই চালিয়ে যান শ্যামাপ্রসাদ ৷ এই আন্দোলনের জন্য তাঁকে প্রাণও দিতে হয় ৷ নরেন্দ্র মোদির সরকার এই ধারা প্রত্যাহার করে গতবছর ৷ সার্থক হয় শ্যামাপ্রসাদের আত্মাহুতি ৷"

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারী তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, 370 ধারা নিয়ে নেহরুর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় শ্যামাপ্রসাদ স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন । এই ধারা দেশের মধ্যে আর একটা দেশ তৈরির চেষ্টা করেছিল ৷ পদত্যাগের পর তিনি জনসংঘ গঠন করেছিলেন । এই ধারার অবলুপ্তির জন্য সেদিন সংগ্রাম করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । তাঁর কথায়, "জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর অন্তরীণ হয়ে মৃত্যু হয় ৷ সেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আমাদের এখনও সন্দেহ রয়েছে । সংবিধান থেকে 370 ধারা অপসারিত হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়েছি । আমার খুল্লতাতর স্বপ্ন স্বার্থক হল ৷ এক দেশ, এক নিশান, এক শাসন বলবৎ করার জন্য যে সংগ্রাম তিনি করেছিলেন, তা সফলতা পেল ৷''

দেশের স্বাধীনতায় তাঁর ভূমিকা কী ?

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 370 ধারা বিলোপের ব্যাপারে শ্যামাপ্রসাদের বড় ভূমিকা ছিল ৷ এক দেশ, এক আইনের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন ৷ তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়েছিলেন ৷ শেখ আবদুল্লার সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ৷ তারপর তাঁর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছিল ৷ কিন্তু, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা ছিল না ৷ যখন দেশের নেতারা ইংরেজ সরকারের হাতে বন্দী হয়ে কারাবাস করছিলেন, তখন শ্যামাপ্রসাদ ফজ়লুল হকের সাথে হাত মিলিয়ে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা তৈরি করেন ৷ তবে পশ্চিমবঙ্গের ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা ছিল ৷ সেই সময় তিনি হিন্দু মহাসভার সদস্য ছিলেন ৷ হিন্দু মহাসভার তরফে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিয়ে আলাদা বাংলার দাবি করেছিলেন ৷

ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড: অনির্বাণ গাঙ্গুলির মতে, স্বাধীন ভারতে শ্যামাপ্রসাদ প্রথম 370 ধারা বিরোধী আওয়াজ তুলেছিলেন ৷ তিনি বুঝেছিলেন, এই ধারা দেশের অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক ৷ এক দেশ, এক নিশান, এক শাসন বজায় রাখতে হলে এই ধারার অবলুপ্তির প্রয়োজন ৷ দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন শ্যামাপ্রসাদ সেদিনই বুঝেছিলেন, এই ধারা প্রত্যাহার না করলে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়বে ৷ সেদিন শ্যামাপ্রসাদ এই আন্দোলন শুরু না করলে হয়ত আজ এই ধারার অবলুপ্তি হত না ৷ যার কুফল ভোগ করতে হত গোটা দেশকে ৷

অনির্বাণ গাঙ্গুলির কথায়, ''কাশ্মীর থেকে ভারতকে যাতে কেউ আলাদা করতে না পারে সেজন্য সেদিন শ্যামাপ্রসাদ সংগ্রাম করেছিলেন ৷ তিনি দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হয়েও গিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ লড়াই শুরু করেছিলেন 370 ধারা বিলোপের দাবিতে ৷ জম্মু ও কাশ্মীর দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিল ৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে সুযোগ -সুবিধে থেকে বঞ্চিতও হচ্ছিল ৷ এই বৈষম্য মেনে নিতে পারেননি তিনি ৷ এই ধারা বজায় থাকলে, তা যে দেশের পক্ষে ক্ষতিকর তা ভাবিয়েছিল তাঁকে ৷ এই ধারা প্রত্যাহারের জন্য তাঁকে নিজের জীবনও দিতে হয় ৷ (1953 সালের 23 জুন জম্মু-কাশ্মীরের কারাগারে বন্দীদশায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় ৷ তাঁর মৃত্যু আজও রহস্যে মোড়ে ৷ তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অনেক সময় অভিযোগ সামনে এসেছে ৷ শেখ আবদুল্লার চাপে সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরে পারমিট প্রথা চালু হয়েছিল ৷ অর্থাৎ কাশ্মীরে ঢুকতে গেলে ভারতীয় নাগরিককেও পারমিট নিতে হবে ৷ 370 ধারা সংযোজনের সূত্রে জম্মু-কাশ্মীর এই সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে ৷ যার বিরোধী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ 370 ধারার বিরোধিতার সঙ্গে তিনি ঠিক করেন, বিনা পারমিটেই একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কাশ্মীরে পা রাখবেন৷ সেই উদ্দেশ্যে 10 মে দিল্লি থেকে ট্রেনে তিনি পাঠানকোটের দিকে রওনা দেন ৷ জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশ করতেই শেখ আবদুল্লার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৷ 23 জুন রহস্যজনকভাবে তিনি মারা যান ৷) ভারতের একতা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তাঁর এই আন্দোলন অনস্বীকার্য৷''

কী ছিল এই 370 ধারায় ?

এই ধারায় বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরকে । এখানকার নাগরিকদের ছিল দ্বৈত নাগরিকত্ব, ছিল আলাদা পতাকাও । এছাড়াও 360 ধারা, 356 ধারা কার্যকর করা যেত না । বিধানসভার মেয়াদ ছিল 6 বছরের । তথ্যের অধিকার আইন ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ ছিল না । 2019-র 5 অগাস্ট নরেন্দ্র মোদি পরিচালিত সরকার 69 বছর ধরে চলে আসা এই ধারা প্রত্যাহার করে । ক্ষমতায় আসার আগে ইস্তাহারে যে সব বড় সিদ্ধান্ত রূপায়নের বিষয়ে BJP প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই 370 ধারা প্রত্যাহার ।

কলকাতা, 4 অগাস্ট : ''বাবা সাহেব আম্বেদকর, সর্দার পটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অটলজি-র মতো কোটি কোটি দেশভক্তের স্বপ্নপূরণ হল ।'' জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহারের পর বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । রাম মাধব, সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষস্থানীয় BJP নেতারাও দিনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে । তখন যেন আরও একবার শোনা গিয়েছিল, ''এক দেশ মে দো বিধান নেহি চলেঙ্গে'' এই স্লোগান । যার প্রবক্তা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি । 370 ধারা প্রত্যাহারের জন্য যারা আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৷

370 ধারা বিরোধী আন্দোলনে 1953 সালের 11 মে জম্মু ও কাশ্মীরে যান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি । অনুমতি না নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ঢোকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । 23 জুন শ্রীনগর পুলিশের হেপাজতে তাঁর মৃত্যু হয় । BJP-র অভিযোগ, 370 ধারা বিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে সেদিন হত্যা করা হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে ।

এই 370 ধারার বিরোধিতা নিয়ে কী ভূমিকা ছিল শ্যামাপ্রসাদের? স্বাধীন ভারতের সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছিল 370 ধারা ৷ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন ৷ তখন কি এই ধারার বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ? এমন একাধিক প্রশ্ন রয়েছে ৷

যেমন ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গণপরিষদে 370 ধারার অস্থায়ী রূপকে সমর্থন করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ বিরোধিতা করেননি ৷ পরে বলরাজ মাধকের কথা মতো কাশ্মীর ইশুতে আন্দোলন শুরু করেন ৷ কাশ্মীরে যান ও সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যান ৷ ফলে 370 ধারা বিরোধী আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় ৷ নেহরু ও শেখ আবদুল্লার মধ্যে যে দিল্লি চুক্তি হয়েছিল তাকে শ্যামাপ্রসাদ সমর্থন করেছিলেন ৷ কিন্তু, জনসংঘের জম্মু ও কাশ্মীর ইউনিট এর বিরোধিতা করেছিল ৷ শেখ আবদুল্লার সঙ্গে নেহরুর চুক্তি হয়েছিল, লাদাখকে আলাদা ইউনিট হিসেবে স্বশাসন দেওয়া হবে ৷ যাকে সমর্থন করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ তবে শ্যামাপ্রসাদের মূল কাজ ছিল বাংলার উদ্বাস্তদের নিয়ে ৷ তাঁর মৃত্যুর পর এই সমস্যাটা থেকে যায় ৷ জনসংঘ আর এই ইশু নিয়ে এগোতে পারেনি ৷

370 ধারা আন্দোলনে কী ভূমিকা ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ?

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যদিও একমত নন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ৷ তাঁর মতে, 370 ধারা নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৷ তাঁর কথায়, ''শেখ আবদুল্লার আবদারে এই ধারা সংবিধানে রাখা হয়েছিল ৷ সেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা ছিল, এই ধারা অস্থায়ী ৷ কিন্তু, পরে এই ধারা প্রত্যাহার নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেননি ৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন ৷ তিনি সেই সময় বলেছিলেন, এই ধারার কোনও মানে নেই ৷ কাশ্মীরের জনগণ ভারতের নাগরিক না অন্য কোনও দেশের নাগরিক তা এই ধারা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে না ৷ সেই সময় কাশ্মীরে 15 অগাস্ট আর 26 জানুয়ারি ছাড়া অন্য কোনওদিন দেশের পতাকা উঠত না ৷ কাশ্মীরের পতাকা তোলা হত ৷ এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ নেহরুকে তিনি বাক্যবাণে পর্যদস্তু করেছিলেন ৷ তাতে যদিও লাভ তেমন হয়নি ৷ কারণ, সেই সময় লোকসভায় কংগ্রেসের আসন এত বেশি ছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব ছিল না ৷ তবে লড়াই চালিয়ে যান শ্যামাপ্রসাদ ৷ এই আন্দোলনের জন্য তাঁকে প্রাণও দিতে হয় ৷ নরেন্দ্র মোদির সরকার এই ধারা প্রত্যাহার করে গতবছর ৷ সার্থক হয় শ্যামাপ্রসাদের আত্মাহুতি ৷"

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারী তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, 370 ধারা নিয়ে নেহরুর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় শ্যামাপ্রসাদ স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন । এই ধারা দেশের মধ্যে আর একটা দেশ তৈরির চেষ্টা করেছিল ৷ পদত্যাগের পর তিনি জনসংঘ গঠন করেছিলেন । এই ধারার অবলুপ্তির জন্য সেদিন সংগ্রাম করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । তাঁর কথায়, "জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর অন্তরীণ হয়ে মৃত্যু হয় ৷ সেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আমাদের এখনও সন্দেহ রয়েছে । সংবিধান থেকে 370 ধারা অপসারিত হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়েছি । আমার খুল্লতাতর স্বপ্ন স্বার্থক হল ৷ এক দেশ, এক নিশান, এক শাসন বলবৎ করার জন্য যে সংগ্রাম তিনি করেছিলেন, তা সফলতা পেল ৷''

দেশের স্বাধীনতায় তাঁর ভূমিকা কী ?

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 370 ধারা বিলোপের ব্যাপারে শ্যামাপ্রসাদের বড় ভূমিকা ছিল ৷ এক দেশ, এক আইনের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন ৷ তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়েছিলেন ৷ শেখ আবদুল্লার সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ৷ তারপর তাঁর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছিল ৷ কিন্তু, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা ছিল না ৷ যখন দেশের নেতারা ইংরেজ সরকারের হাতে বন্দী হয়ে কারাবাস করছিলেন, তখন শ্যামাপ্রসাদ ফজ়লুল হকের সাথে হাত মিলিয়ে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা তৈরি করেন ৷ তবে পশ্চিমবঙ্গের ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা ছিল ৷ সেই সময় তিনি হিন্দু মহাসভার সদস্য ছিলেন ৷ হিন্দু মহাসভার তরফে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিয়ে আলাদা বাংলার দাবি করেছিলেন ৷

ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড: অনির্বাণ গাঙ্গুলির মতে, স্বাধীন ভারতে শ্যামাপ্রসাদ প্রথম 370 ধারা বিরোধী আওয়াজ তুলেছিলেন ৷ তিনি বুঝেছিলেন, এই ধারা দেশের অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক ৷ এক দেশ, এক নিশান, এক শাসন বজায় রাখতে হলে এই ধারার অবলুপ্তির প্রয়োজন ৷ দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন শ্যামাপ্রসাদ সেদিনই বুঝেছিলেন, এই ধারা প্রত্যাহার না করলে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়বে ৷ সেদিন শ্যামাপ্রসাদ এই আন্দোলন শুরু না করলে হয়ত আজ এই ধারার অবলুপ্তি হত না ৷ যার কুফল ভোগ করতে হত গোটা দেশকে ৷

অনির্বাণ গাঙ্গুলির কথায়, ''কাশ্মীর থেকে ভারতকে যাতে কেউ আলাদা করতে না পারে সেজন্য সেদিন শ্যামাপ্রসাদ সংগ্রাম করেছিলেন ৷ তিনি দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হয়েও গিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ লড়াই শুরু করেছিলেন 370 ধারা বিলোপের দাবিতে ৷ জম্মু ও কাশ্মীর দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিল ৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে সুযোগ -সুবিধে থেকে বঞ্চিতও হচ্ছিল ৷ এই বৈষম্য মেনে নিতে পারেননি তিনি ৷ এই ধারা বজায় থাকলে, তা যে দেশের পক্ষে ক্ষতিকর তা ভাবিয়েছিল তাঁকে ৷ এই ধারা প্রত্যাহারের জন্য তাঁকে নিজের জীবনও দিতে হয় ৷ (1953 সালের 23 জুন জম্মু-কাশ্মীরের কারাগারে বন্দীদশায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় ৷ তাঁর মৃত্যু আজও রহস্যে মোড়ে ৷ তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অনেক সময় অভিযোগ সামনে এসেছে ৷ শেখ আবদুল্লার চাপে সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরে পারমিট প্রথা চালু হয়েছিল ৷ অর্থাৎ কাশ্মীরে ঢুকতে গেলে ভারতীয় নাগরিককেও পারমিট নিতে হবে ৷ 370 ধারা সংযোজনের সূত্রে জম্মু-কাশ্মীর এই সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে ৷ যার বিরোধী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ 370 ধারার বিরোধিতার সঙ্গে তিনি ঠিক করেন, বিনা পারমিটেই একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কাশ্মীরে পা রাখবেন৷ সেই উদ্দেশ্যে 10 মে দিল্লি থেকে ট্রেনে তিনি পাঠানকোটের দিকে রওনা দেন ৷ জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশ করতেই শেখ আবদুল্লার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৷ 23 জুন রহস্যজনকভাবে তিনি মারা যান ৷) ভারতের একতা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তাঁর এই আন্দোলন অনস্বীকার্য৷''

কী ছিল এই 370 ধারায় ?

এই ধারায় বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরকে । এখানকার নাগরিকদের ছিল দ্বৈত নাগরিকত্ব, ছিল আলাদা পতাকাও । এছাড়াও 360 ধারা, 356 ধারা কার্যকর করা যেত না । বিধানসভার মেয়াদ ছিল 6 বছরের । তথ্যের অধিকার আইন ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ ছিল না । 2019-র 5 অগাস্ট নরেন্দ্র মোদি পরিচালিত সরকার 69 বছর ধরে চলে আসা এই ধারা প্রত্যাহার করে । ক্ষমতায় আসার আগে ইস্তাহারে যে সব বড় সিদ্ধান্ত রূপায়নের বিষয়ে BJP প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই 370 ধারা প্রত্যাহার ।

Last Updated : Aug 4, 2020, 6:56 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.