ETV Bharat / bharat

নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা : সামনে এখনও দীর্ঘ পথ - মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা

সংবিধান প্রণেতারা নারীদের শাসন-ক্ষমতা ও রাজনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার বিষয়টিতে এবং শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন । কিন্তু প্রশ্ন হল –আমরা কি সংবিধান প্রণেতাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে আদৌ বাস্তবায়িত করতে পেরেছি বা পারছি ?

Constitutional right of Women and children
প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Jan 30, 2020, 10:06 PM IST

নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় সংবিধানে থাকা সুযোগ সুবিধাগুলোকে কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি, তা নিয়ে সাধারণতন্ত্রের 70 বছর পূর্তিতে বিশেষ পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে । ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার যে পরিচ্ছেদ রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, "আইনের চোখে সবাই সমান এবং প্রত্যেকের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে । এক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, লিঙ্গ ও জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য বা বিভেদ করা যাবে না ।" যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সংবিধান প্রণেতারা নারীদের শাসন-ক্ষমতা ও রাজনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার বিষয়টিতে এবং শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন । কিন্তু প্রশ্ন হল –আমরা কি সংবিধান প্রণেতাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে আদৌ বাস্তবায়িত করতে পেরেছি বা পারছি ?

ভারতবর্ষ সাধারণতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পর প্রথমদিকে নারীদের সমান অধিকারসহ অন্যান্য অধিকার প্রদানের বিষয়টি খুব সহজে শুরু করা যায়নি । তবে বলতে গেলে, গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের মাঝামাঝিতে "হিন্দু কোড" সমাজে নারীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটা জানালা খুলে দিয়েছিল । এ ক্ষেত্রে গোটা প্রক্রিয়াটি ধীরলয়ে হলেও তা গতিশীল ছিল । 1961 সালে মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ও পণপ্রথা বিরোধী আইন কার্যকরী হয় । কিন্তু শুধু আইন করে সমাজকে পালটানো যায় না । উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪B ধারার কথা । ধারায় বলা হয়েছে, পণপ্রথার জেরে মৃত্যু এক জঘন্য অপরাধ । কিন্তু এই আইন কি আদতে সমাজে পণপ্রথার কারণে মৃত্যুর ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে ? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বিউরোর (NCRB)-র তথ্য বলছে, আমাদের দেশে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় পণপ্রথার জেরে গড়ে একজন নারীর মৃত্যু হচ্ছে । একইভাবে এই প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক যে, মহিলাদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা ও কাজের জায়গায় তাদের যৌন হেনস্থা বন্ধে আনা সাম্প্রতিক আইন কি আদৌ কার্যকরী হয়েছে ? যদিও এই আইনগুলির প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল এবং সেগুলো বাস্তবায়িত হতে দীর্ঘসময় লেগেছে । কিন্তু সুখবর এটাই যে, শেষ পর্যন্ত আইনগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং নারীদের স্বাধিকার রক্ষায় সংবিধানের আদর্শকে কার্যকর করতে বিশেষ সাহায্য করেছে ।

ডিরেক্টিভ প্রিন্সিপালস অফ স্টেট পলিসি (DPSP) অনুসারে সমস্ত নারী ও পুরুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং সমকাজে সমবেতন পায়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের । পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীদের (তপশিলি জাতি ও উপজাতিসহ ) আসন সংরক্ষণের বিষয়টিও রয়েছে সংবিধানে । কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই (ক্ষমতার শীর্ষে যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরও অনেকে) মনে করেন যে, অন্দরমহলই হল মহিলাদের প্রকৃত জায়গা । এটাও আমরা জানি যে, অনেক সংরক্ষিত আসনেই মহিলা প্রার্থীরা কার্যত পুরুষ প্রার্থীদের প্রক্সি হিসেবে ভোটে দাঁড়ান । তাই শুধু আইন করাটাই যথেষ্ট নয় – সংবিধান প্রণেতারা মহিলাদের ক্ষমতায়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করতে হলে সমাজের মানসিকতার আমূল পরিবর্তন দরকার ।

মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা ( Universal Declaration of Human Rights)-র 25 নম্বর ধারায় শিশুদের বিকাশের জন্য বিশেষ যত্ন ও পোষণের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ রয়েছে । এই ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে, 14 বছরের কম কোনও শিশুকে কারখানা, খনি বা অন্য কোনও ক্ষতিকর পরিবেশে কাজ করানো যাবে না । DPSP বলছে, রাজ্য প্রশাসনের দেখা উচিত শিশুরা যেন শোষিত না হয় । তারা যেন স্বাধীন ও সম্মানজনক পরিবেশে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পায় । শৈশব ও তারুণ্যকে যেন শোষণ, মানসিক ও পার্থিব বঞ্চনা থেকে রক্ষা করা হয় । সংবিধানের এই আদর্শগুলো উচ্চমানের, কিন্তু আমরা কি শিশুদের অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট কাজ করেছি ?

শিশুরা নিজেদের অধিকার ও দাবির কথা জানাতে পারে না । তাদের অধিকার রক্ষার জন্য, বিশেষ করে কন্যাসন্তানদের জন্য জাতীয় নীতি গঠিত হয়েছে । শিশুদের সঠিক তত্ত্বাবধান ও অধিকার রক্ষার জন্য জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট পাশ হয়েছে । পাশাপাশি 14 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইনও পাশ হয়েছে । কিন্তু আইন পাশ হলেও বাস্তবচিত্রটি অত্যন্ত করুণ । কৈলাস সত্যার্থীর উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আজও যথেষ্ট সংখ্যায় শিশুশ্রমিক রয়েছে ।

গত কয়েক মাসে বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্য শ’খানেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যা এক মর্মান্তিক ঘটনা । অন্যদিকে, জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড বিউরোর (NCRB)- পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে 250টি শিশু নিখোঁজ হয় । একটি হোমে 30টির বেশি বালিকার উপর যৌন নির্যাতন চালানোর জন্য সম্প্রতি কয়েকজনের বিচারে সাজা হয়েছে । এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সংবিধানে অধিকার ও সুরক্ষার যে কথা বলা হয়েছে, তা আজও আমরা শিশুদের দিতে পারিনি । NCRB –র রিপোর্ট আরও জানিয়েছে যে, একদিকে শিশুদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা কমলেও অন্যদিকে শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা অপরাধের সংখ্যা 2016 থেকে 2018 সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে । শিক্ষার অধিকার আইন প্রায় 9 বছর আগে কার্যকর হয়েছে । এই আইন পাশ হওয়ায় তার কিছুটা সুফলও মিলেছে, কিন্তু প্রশ্ন হল সেই সুফল কতটা ? পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে অনেক শিশুই আজও উন্নত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ।

অতএব, প্রগতিশীল ও সচেতন সমাজ হিসেবে আমাদের যে অনিবার্য প্রশ্নটির উত্তর দিতে হবে, তা হল : আমরা কি সাফল্য পেয়েছি ? কেন এই ব্যর্থতা, আর এর সমাধানই বা কী ? তবে প্রথমে যেটা স্বীকার করার, তা হল সময়ের পরিবর্তন ঘটছে । নারীসমাজ অনেক আগেই এটা বুঝেছিল যে, সমাজে তাদের সমান অধিকার প্রাপ্য । এখন তারা সেই অধিকার বুঝে নিতে সরব হয়েছে । সাম্য ও সম্মানের প্রেক্ষিতে এই দাবি আদায়ে নারীসমাজকে সাহায্য করছে সংবিধান । এটা ঘটনা যে, নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না । তাদের অধিকার আদায়ের দাবিকে কেউ দমাতে পারবে না - এমনকী দেশের নেতারাও না । শিশুরা আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় 37 শতাংশ এবং তারাই জাতির ভবিষ্যৎ । কিন্তু গত 70 বছর ধরে তাদের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে বা খুবই কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । তাদের অধিকার রক্ষার বিষয়টিতে তাই এখন গুরুত্ব দেওয়ার সময় হয়েছে । নারী ও শিশুদের উন্নতির জন্য যে বিভিন্ন আইন ও কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু রয়েছে, সেগুলি ঠিক মতো কার্যকর করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সামাজিক সমীক্ষা চালানো প্রয়োজন । পরিস্থিতির অবশ্যই নিরপেক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন যাতে হোমে বালিকাদের যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনার প্রকৃত করুণ ছবিটা জানা সম্ভব হয় ।

সাধারণতন্ত্রের 70 বছরে তাহলে আমাদের সামনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তাটা ঠিক কী ? প্রকৃত উত্তরটি হল সুসংহত উন্নতি যাতে সম্মতি দিয়েছে ভারত-সহ বিশ্বের 193টি দেশ । সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে । একমাত্র তবেই আমাদের প্রকৃত উন্নতি হবে । তবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে আমাদের আরও অনেক যোজন পথ যে হাঁটতে হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ।

বিচারপতি মদন বি লোকুর (অবসরপ্রাপ্ত)

নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় সংবিধানে থাকা সুযোগ সুবিধাগুলোকে কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি, তা নিয়ে সাধারণতন্ত্রের 70 বছর পূর্তিতে বিশেষ পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে । ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার যে পরিচ্ছেদ রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, "আইনের চোখে সবাই সমান এবং প্রত্যেকের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে । এক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, লিঙ্গ ও জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য বা বিভেদ করা যাবে না ।" যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সংবিধান প্রণেতারা নারীদের শাসন-ক্ষমতা ও রাজনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার বিষয়টিতে এবং শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন । কিন্তু প্রশ্ন হল –আমরা কি সংবিধান প্রণেতাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে আদৌ বাস্তবায়িত করতে পেরেছি বা পারছি ?

ভারতবর্ষ সাধারণতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পর প্রথমদিকে নারীদের সমান অধিকারসহ অন্যান্য অধিকার প্রদানের বিষয়টি খুব সহজে শুরু করা যায়নি । তবে বলতে গেলে, গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের মাঝামাঝিতে "হিন্দু কোড" সমাজে নারীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটা জানালা খুলে দিয়েছিল । এ ক্ষেত্রে গোটা প্রক্রিয়াটি ধীরলয়ে হলেও তা গতিশীল ছিল । 1961 সালে মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ও পণপ্রথা বিরোধী আইন কার্যকরী হয় । কিন্তু শুধু আইন করে সমাজকে পালটানো যায় না । উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪B ধারার কথা । ধারায় বলা হয়েছে, পণপ্রথার জেরে মৃত্যু এক জঘন্য অপরাধ । কিন্তু এই আইন কি আদতে সমাজে পণপ্রথার কারণে মৃত্যুর ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে ? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বিউরোর (NCRB)-র তথ্য বলছে, আমাদের দেশে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় পণপ্রথার জেরে গড়ে একজন নারীর মৃত্যু হচ্ছে । একইভাবে এই প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক যে, মহিলাদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা ও কাজের জায়গায় তাদের যৌন হেনস্থা বন্ধে আনা সাম্প্রতিক আইন কি আদৌ কার্যকরী হয়েছে ? যদিও এই আইনগুলির প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল এবং সেগুলো বাস্তবায়িত হতে দীর্ঘসময় লেগেছে । কিন্তু সুখবর এটাই যে, শেষ পর্যন্ত আইনগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং নারীদের স্বাধিকার রক্ষায় সংবিধানের আদর্শকে কার্যকর করতে বিশেষ সাহায্য করেছে ।

ডিরেক্টিভ প্রিন্সিপালস অফ স্টেট পলিসি (DPSP) অনুসারে সমস্ত নারী ও পুরুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং সমকাজে সমবেতন পায়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের । পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীদের (তপশিলি জাতি ও উপজাতিসহ ) আসন সংরক্ষণের বিষয়টিও রয়েছে সংবিধানে । কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই (ক্ষমতার শীর্ষে যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরও অনেকে) মনে করেন যে, অন্দরমহলই হল মহিলাদের প্রকৃত জায়গা । এটাও আমরা জানি যে, অনেক সংরক্ষিত আসনেই মহিলা প্রার্থীরা কার্যত পুরুষ প্রার্থীদের প্রক্সি হিসেবে ভোটে দাঁড়ান । তাই শুধু আইন করাটাই যথেষ্ট নয় – সংবিধান প্রণেতারা মহিলাদের ক্ষমতায়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করতে হলে সমাজের মানসিকতার আমূল পরিবর্তন দরকার ।

মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা ( Universal Declaration of Human Rights)-র 25 নম্বর ধারায় শিশুদের বিকাশের জন্য বিশেষ যত্ন ও পোষণের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ রয়েছে । এই ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে, 14 বছরের কম কোনও শিশুকে কারখানা, খনি বা অন্য কোনও ক্ষতিকর পরিবেশে কাজ করানো যাবে না । DPSP বলছে, রাজ্য প্রশাসনের দেখা উচিত শিশুরা যেন শোষিত না হয় । তারা যেন স্বাধীন ও সম্মানজনক পরিবেশে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পায় । শৈশব ও তারুণ্যকে যেন শোষণ, মানসিক ও পার্থিব বঞ্চনা থেকে রক্ষা করা হয় । সংবিধানের এই আদর্শগুলো উচ্চমানের, কিন্তু আমরা কি শিশুদের অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট কাজ করেছি ?

শিশুরা নিজেদের অধিকার ও দাবির কথা জানাতে পারে না । তাদের অধিকার রক্ষার জন্য, বিশেষ করে কন্যাসন্তানদের জন্য জাতীয় নীতি গঠিত হয়েছে । শিশুদের সঠিক তত্ত্বাবধান ও অধিকার রক্ষার জন্য জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট পাশ হয়েছে । পাশাপাশি 14 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইনও পাশ হয়েছে । কিন্তু আইন পাশ হলেও বাস্তবচিত্রটি অত্যন্ত করুণ । কৈলাস সত্যার্থীর উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আজও যথেষ্ট সংখ্যায় শিশুশ্রমিক রয়েছে ।

গত কয়েক মাসে বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্য শ’খানেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যা এক মর্মান্তিক ঘটনা । অন্যদিকে, জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড বিউরোর (NCRB)- পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে 250টি শিশু নিখোঁজ হয় । একটি হোমে 30টির বেশি বালিকার উপর যৌন নির্যাতন চালানোর জন্য সম্প্রতি কয়েকজনের বিচারে সাজা হয়েছে । এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সংবিধানে অধিকার ও সুরক্ষার যে কথা বলা হয়েছে, তা আজও আমরা শিশুদের দিতে পারিনি । NCRB –র রিপোর্ট আরও জানিয়েছে যে, একদিকে শিশুদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা কমলেও অন্যদিকে শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা অপরাধের সংখ্যা 2016 থেকে 2018 সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে । শিক্ষার অধিকার আইন প্রায় 9 বছর আগে কার্যকর হয়েছে । এই আইন পাশ হওয়ায় তার কিছুটা সুফলও মিলেছে, কিন্তু প্রশ্ন হল সেই সুফল কতটা ? পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে অনেক শিশুই আজও উন্নত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ।

অতএব, প্রগতিশীল ও সচেতন সমাজ হিসেবে আমাদের যে অনিবার্য প্রশ্নটির উত্তর দিতে হবে, তা হল : আমরা কি সাফল্য পেয়েছি ? কেন এই ব্যর্থতা, আর এর সমাধানই বা কী ? তবে প্রথমে যেটা স্বীকার করার, তা হল সময়ের পরিবর্তন ঘটছে । নারীসমাজ অনেক আগেই এটা বুঝেছিল যে, সমাজে তাদের সমান অধিকার প্রাপ্য । এখন তারা সেই অধিকার বুঝে নিতে সরব হয়েছে । সাম্য ও সম্মানের প্রেক্ষিতে এই দাবি আদায়ে নারীসমাজকে সাহায্য করছে সংবিধান । এটা ঘটনা যে, নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না । তাদের অধিকার আদায়ের দাবিকে কেউ দমাতে পারবে না - এমনকী দেশের নেতারাও না । শিশুরা আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় 37 শতাংশ এবং তারাই জাতির ভবিষ্যৎ । কিন্তু গত 70 বছর ধরে তাদের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে বা খুবই কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । তাদের অধিকার রক্ষার বিষয়টিতে তাই এখন গুরুত্ব দেওয়ার সময় হয়েছে । নারী ও শিশুদের উন্নতির জন্য যে বিভিন্ন আইন ও কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু রয়েছে, সেগুলি ঠিক মতো কার্যকর করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সামাজিক সমীক্ষা চালানো প্রয়োজন । পরিস্থিতির অবশ্যই নিরপেক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন যাতে হোমে বালিকাদের যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনার প্রকৃত করুণ ছবিটা জানা সম্ভব হয় ।

সাধারণতন্ত্রের 70 বছরে তাহলে আমাদের সামনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তাটা ঠিক কী ? প্রকৃত উত্তরটি হল সুসংহত উন্নতি যাতে সম্মতি দিয়েছে ভারত-সহ বিশ্বের 193টি দেশ । সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে । একমাত্র তবেই আমাদের প্রকৃত উন্নতি হবে । তবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে আমাদের আরও অনেক যোজন পথ যে হাঁটতে হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ।

বিচারপতি মদন বি লোকুর (অবসরপ্রাপ্ত)

New Delhi, Jan 30 (ANI): Prime Minister Narendra Modi paid tribute to Mahatma Gandhi at Gandhi Smriti on Jan 30. Vice President Venkaiah Naidu also paid tribute to Bapu. Jan 30 is observed as Martyrs' Day as 'Father of Nation' was assassinated by Nathuram Godse on this day. Mahatma Gandhi spent his last days at Gandhi Smriti also known as Birla House.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.