দিল্লি , 26 অগাস্ট : কংগ্রেসই একমাত্র BJP-র শক্তিশালী জাতীয় বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বিরোধী দল নিষ্ক্রিয় এবং তাদের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাবের পাশাপাশি ভবিষ্যতের নতুন দিশাও নেই । সাংবাদিক অমিত অগ্নিহোত্রীকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একথা বলেন দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া প্রাক্তন মুখপাত্র সঞ্জয় ঝা । সারাংশ:
- আপনার কী মনে হয়, কংগ্রেস এমন দুরবস্থায় কেন?
একটা কারণ হল, আমাদের কোনও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নেতা নেই, যিনি 2024 সালে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেবেন । দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে, যা AICC-র মূল কাঠামোকে দুর্বল করেছে । মানুষ জানেন না যে সঠিক দায়িত্বে থাকা সঠিক ব্যক্তিটি কে । দলের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের শূন্যতা, এমনকী আদর্শগত ধন্দ রয়েছে । এই বিষয়গুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । আমাদের প্রয়োজন রাজ্যস্তরের আরও নেতাকে উৎসাহিত করা এবং দলে গতিশীল অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আনা ।
- এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে?
তিরটা সবসময়ই ওপর দিকে যায় । তাই কংগ্রেস সভাপতি ও কংগ্রেস কার্যকরী কমিটিকেই সম্মিলিতভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে হবে যে কেন তাঁরা দলটাকে বয়ে যেতে দিচ্ছেন । এতে BJP-র কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে ।
- গতকাল ওয়ার্কিং কমিটি নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসেছিল, কিন্তু স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেই তা শেষ হল ?
যদি দল 23 জন সিনিয়র নেতার তোলা ইস্যুগুলোকে অগ্রাহ্য করে, তবে নিজেরই দুর্ভোগ ডেকে আনবে । এগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা সুপারিশ এবং এর মধ্যে গভীর রাজনৈতিক বোধ আছে । দলের সবথেকে সিনিয়র নেতা এবং তরুণ নেতাদের দিক থেকে এই সুপারিশগুলো আসায় দলের প্রতি একটা স্পষ্ট বার্তা রয়েছে, যে আমাদের নিজেদের পুনরাবিষ্কার করতে হবে । যদি কংগ্রেস দল নিজেকে না বদলায়, তাহলে আমরা আমাদের নিজেদের মৃত্যুসংবাদ লিখছি।
- কংগ্রেসের মধ্যে কি আরও বিক্ষুব্ধ আছেন?
আমি তাঁদের বিক্ষুব্ধ বলি না । আমি তাঁদের দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বর বলি । এই মানুষগুলো আদর্শগতভাবে কংগ্রেসের প্রতি দায়বদ্ধ এবং দলের জোরালো সমর্থক । তাঁরা বিশ্বাস করেন যে একমাত্র কংগ্রেসই BJP-র মোকাবিলা করতে পারে । দলের তিনশোরও বেশি এমন নেতা আছেন, যাঁরা এই চিঠির দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেন ।
- প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য কংগ্রেসের কী করা উচিত?
শুরুতেই অবিলম্বে এমন একজন সভাপতি নিযুক্ত করা উচিত যিনি সক্রিয় এবং যাঁকে মাটিতে দেখা যায় । এমন একজন যিনি কর্মীদের একসঙ্গে জুড়তে পারবেন এবং ভোটারদের অনুপ্রাণিত করতে পারবেন । যাঁর ক্ষমতা আছে দলের শীর্ষ নেতাদের আবেগ উস্কে দিয়ে BJP-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানোর । বর্তমানে আমাদের কর্মীরা প্রেরণার অভাব এবং উদ্যমহীনতায় ভুগছেন । আমাদের এমন একজন নেতা দরকার যিনি কংগ্রেসকে একটা দিশা দিতে পারেন, এবং দল যাতে সেই লক্ষ্যে পৌঁছয় তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন । অনেকেই আছেন যাঁরা মিডিয়ার সঙ্গে, শিল্পমহলের সঙ্গে, বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে, মধ্যবিত্তদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় প্রস্তুত, যাঁদের আমরা অতীতে অবহেলা করেছি ।
- গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে রাহুল গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ফিরতে পারেন । তিনি কি এই শর্তগুলো পূরণ করেন?
মিস্টার গান্ধি জনসমক্ষে বলেছেন যে তিনি কংগ্রেস সভাপতি হতে চান না । প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরাও রাহুলের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে বলেছেন যে গান্ধি পরিবারের নন, এমন কারুরই সভাপতি হওয়া উচিত । সোনিয়া গান্ধি শুধুই অন্তর্বর্তী সভানেত্রী । সুতরাং গান্ধি পরিবারের দিক থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় তাঁরা আগ্রহী নন । ওয়ার্কিং কমিটিকে অবিলম্বে দলীয় সংবিধান অনুযায়ী স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন সভাপতি নিয়োগ করতে বলা হয়েছে ৷
- আপনি কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কিছু ন্যায্য কথা তুলেছেন কিন্তু তার জন্য আপনাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে । এখনও কি কোনও আশা আছে?
আমি এখনও আশাবাদী । এই দলের একটা অসাধারণ ইতিহাস রয়েছে । প্রতিভা রয়েছে, পন্থা রয়েছে, এবং আদর্শ রয়েছে । দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছি এবং আমাদের পারফরম্যান্স ভোটারদের অনুপ্রাণিত করতে পারেনি । এই জন্যই মানুষ কংগ্রেসের ওপর আস্থা হারিয়েছে । অগ্রাধিকার থাকতে হবে নিচুতলার প্রতি এবং দলে কোনও হাইকমান্ড সংস্কৃতি থাকা উচিত নয় । BJP একটা আলাদা আদর্শ এবং আলাদা ধরণের শাসনপ্রণালীর প্রতিনিধিত্ব করে । BJP-কে পরাজিত করতে সক্ষম একমাত্র শক্তিশালী জাতীয় দল হল কংগ্রেস । তাই কংগ্রেসকে BJP-র বিকল্প একটা বয়ান নির্মাণ করতে হবে । আর তারপর মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে যাতে তাঁরা আমাদের ক্ষমতায় ফিরে দেশকে শাসন করার সুযোগ দেন ।
- গান্ধি নন এমন কেউ কি কংগ্রেসকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন?
আমার কাছে কোনও ফারাক নেই । প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব শক্তি, স্টাইল এবং কৌশল আছে । কংগ্রেসের যেটা প্রয়োজন, সেটা হল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শক্তিশালী রোডম্যাপ । যদি আপনি কাউকে সুযোগই না দেন, তাহলে কী করে জানবেন যে তাঁরা ভাল কি না ৷