হায়দরাবাদ, 18 জুলাই : আতঙ্ক হয়, যখন ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের মাংসের লোভে শকুনরা তাদের কুৎসিত ডানা ঝাপটায়। কোভিড-19-র বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় চড়া মুনাফার জন্য মানব-শকুনদের লালসা সত্যিই ঘৃণ্য এবং হতবাক করে দেওয়ার মতো । যেখানে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা 8.80 লাখ, আমেরিকা ও ব্রাজ়িলের পরে তৃতীয় স্থানে, সেখানে 23 হাজার মানুষের মৃত্যু খুবই হৃদয়বিদারক । যদিও এই ভীতিপ্রদ রোগের ভ্যাকসিন খুঁজে পেতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা চলছে, আমরা সঠিকভাবে জানি না কখন তা পাওয়া যাবে। এই সময়ে রেমডিসিভির, লোপিনাভির এবং রিটোনাভিরের মতো ওষুধ, টোসালিজুমাব ইঞ্জেকশন, যা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, তা আসলের থেকে পাঁচ থেকে 10 গুণ বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে । একই ছবি কর্পোরেট হাসপাতালগুলোর ওষুধের দোকানেও । অত্যধিক দাম নেওয়াটা দেশজুড়ে হোলসেলারদের একটা অনৈতিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । ICMR-র অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ওষুধগুলো পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য সরাসরি হাসপাতালগুলোকে দেওয়া উচিত । কিন্তু, এমনও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে, মানবিকতার স্বার্থে এই ওষুধগুলো বিক্রিও করা যেতে পারে। বিপুল পরিমাণে অভিযোগ আসতে থাকায় ডিরেক্টর অ্যান্ড কম্পট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, এবং এধরণের ওষুধ যাতে কালোবাজারে না যায়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে আমাদের আরও সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন ।
রোগীর ক্ষতি না করে যে ওষুধই কোরোনা রুখতে উপকার দিক না কেন, তা সহজলভ্য করে তুলতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গিলিয়াডের সঙ্গে ট্রাম্প সরকার এমন চুক্তি করেছে, যাতে তারা তাদের তৈরি রেমডিসিভিরের পুরোটাই তিন মাসের জন্য শুধু আমেরিকাকেই দেবে। গিলিয়াডের সম্মতিতে, সিপলা, হেটেরো, মাইলনকেও আলাদা আলাদা নামে রেমডিসিভির তৈরির অনুমতি দিয়েছে সরকরা। কিন্তু তাদের দাম আক্রান্তদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে । মহারাষ্ট্র সরকার রোগীর আত্মীয়দের নির্দেশ দিয়েছে, যে রোগীদের রেমডিসিভির, টোসিলিজুমাব দরকার, তাঁরা যেন তাঁদের আধার কার্ড, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং কোরোনা পজ়িটিভ হওয়ার রিপোর্ট জমা দেন । হরিয়ানা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে যেন ওষুধের জোগান কমে না যায় । বহু খবরে দেখা যাচ্ছে, যে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বিক্রিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধীরা । যখন ভাইরাস সংকট শুরু হল, তখনও কালোবাজার মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিক্রিতে তার ঘৃণ্য দাঁত বসিয়েছিল।
এছাড়াও অক্সিজেন সিলিন্ডার, গুরুতর শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য যা প্রয়োজনীয়, তার বিক্রির ক্ষেত্রেও কয়েকটা গ্যাং গজিয়ে উঠেছে, যারা চড়া দামে সিলিন্ডার বিক্রি করছে । সঠিক জীবিকার অভাবে, যে মানুষগুলো জীবনধারণের চেষ্টা করছেন, তাঁরা দেখছেন যে ফল, সব্জি এবং মুদিখানার সামগ্রীর দাম বেড়ে গিয়েছে, পুষ্টিকর খাবার তো ছেড়েই দিন! যাতে ভবিষ্যতে সংকট এড়ানো যায়, সেই জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর উচিত মূল্য নিয়্ন্ত্রণ করতে পদক্ষেপ নেওয়া এবং মজুতদারদের শাস্তি দেওয়া ।