ETV Bharat / bharat

বিষাক্ত প্রভাবের জন্য 27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা

author img

By

Published : Jun 4, 2020, 3:28 PM IST

মানুষ এবং প্রাণীর শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলার জন্য 27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ নতুন ধরনের মলিকিউল এবং জৈব কীটনাশক এখন সারা বিশ্বে পাওয়া যায়, যা অনায়াসে সুরক্ষিতভাবে এগুলির জায়গা নিতে পারে ৷

27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা
27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা

মানুষ এবং প্রাণীর শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলার জন্য 27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ এই নিয়ে 14 মে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক ৷ আপত্তি ও পরামর্শ জানানোর জন্য সরকারি তরফে 45 দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে ৷ 27টি রাসায়নিকের মধ্যে থিরাম, ক্যাপটান, ডেল্টামিথ্রিন ও কার্বেন্ডিজ়ম, মাথাথিয়ন ও ক্লোরপাইরিফস ইত্যাদি রয়েছে ৷ অন্য একটি রাসায়নিক, যার নাম DDVP বা ডিচলরভস 31 ডিসেম্বর থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৷

এই কীটনাশকগুলি বেশি মাত্রায় বিষাক্ত হওয়ায় সরকার পরিবেশগত কারণে সুরক্ষিত ভারত গড়তে এমন পদক্ষেপ করল ৷ নতুন ধরনের মলিকিউল এবং জৈব কীটনাশক এখন সারা বিশ্বে পাওয়া যায়, যা অনায়াসে সুরক্ষিতভাবে এগুলির জায়গা নিতে পারে ৷ সরকার কৃষকদের চাহিদা এবং ভারতীয় অর্থনীতির কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ মৌমাছি রক্ষাকারী, জৈব কৃষক, মশলা শিল্পের মতো অনেক শিল্প সরকারের এই নির্দেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ৷

যদিও আমাদের এই বিষয়টিকে বীজ শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিচার করে দেখা উচিত ৷ ফসলের উপর কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া কীটনাশকগুলিকে বীজকে ভালো রাখা, মাটিজনিত রোগ সারানো ও কীটের নাশক হিসেবেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় ৷ বীজের চিকিৎসায় যে কীটনাশকগুলি বেশি ব্যবহার করা হয়, তা হল- থিরাম, ক্যাপটান, ডেল্টামিথ্রিন ও কার্বেন্ডিজম ৷ নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া তালিকায় এই কীটনাশকগুলির নামও আছে ৷

ভুট্টা, বাজরা, শিংগম, সূর্যমুখী, সরিষা এবং শাকসবজির চিকিৎসার মাধ্যমে মাটি থেকে উৎপন্ন পোকার বিরুদ্ধে ডেল্টামিথ্রিন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ৷ এটা বেশ লাভজনক এবং কয়েক দশক ধরে এর ব্যবহার হয়ে আসছে ৷ এর সঙ্গে কার্বেন্ডিজ়মও ব্যবহার হচ্ছে ৷ এটাও বেশ লাভজনক এবং জনপ্রিয় ছত্রাকনাশক ৷

এবার যদি থিরাম নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বীজ বা মাটিতে পাওয়া যায় এমন রোগ ও জীবাণু মারতে বাজারে উপলব্ধ সবচেয়ে কার্যকরী, যা দিয়ে বীজের চিকিৎসা করা হয় বা ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করানো হয় ৷ বীজ উৎপাদকরা যখন হাইব্রিড বা ট্রান্সজেনিক ফসলের তুলনায় ধান, ডালের মতো খোলা, পরাগজনিত বীজ নিয়ে কাজ করেন, তখন এই কীটনাশক অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়ে ৷ এই ধরনের ফসলে বেশি খরচের কীটনাশক ব্যবহার করা যায় না ৷ কারণ, এর থেকে লাভের পরিমাণ বেশ কম ৷ ধান ও গমের মতো ফসলের ক্ষেত্রে থিরাম ও কার্বেন্ডিজ়ম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হতে পারে ৷ কারণ, জায়গার হিসেবে এর বীজের প্রয়োজনীয়তা অনেক (20 কেজি থেকে 40 কেজি) এবং কেজি প্রতি বীজের দাম 30 টাকার নিচে হয় ৷ এক্ষেত্রে এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া মানে অনেক বীজ সংস্থা ও কৃষকদের সাহায্য করবে ৷ কারণ, নতুন প্রস্তাবিত রাসায়নিকের তুলনায় এগুলির দাম অনেকটাই কম ৷

নিষেধাজ্ঞা জারির এই খসড়াকে কার্যকর করার আগে বীজ চিকিৎসার জন্য সরকার সম্ভবত বিকল্প রাসায়নিক বা কীটনাশকের নাম ঘোষণা করবে ৷ এছাড়া পুরোনো কীটনাশকগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে প্রস্তাবিত রাসায়নিক বা মলিকিউলগুলিকে নিয়মমাফিক পরখ করেও দেখে নিতে হবে ৷

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বীজের চিকিৎসার জন্য এই নতুন মলিকিউল বা রাসায়নিকগুলি কি সাশ্রয়কারী হবে ? এগুলির দাম যদি বেশি হয়, তাহলে প্রাথমিকভাবে এর প্রভাব বীজের দামের উপর পড়বে এবং পরে এর জন্যই কৃষকদের কাছে বীজের দাম বেশি হবে ৷ যদি আগে উল্লেখিত বীজের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রাসায়নিকের তুলনায় সাশ্রয়কারী এবং পছন্দসই বিকল্প না পাওয়া যায়, তাহলে তার ফল কৃষকদের ভুগতে হবে ৷ বীজ ও মাটিজনিত রোগের জন্য তাঁদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ৷ যার ফলে সার্বিক উৎপাদন এবং কৃষকদের লাভের উপর প্রভাব পড়বে ৷ প্রভাব পড়বে বীজ শিল্প এবং কৃষিজ অর্থনীতির উপরও ৷

3-4 বছরের একটি সময়সীমার মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে ৷ এর ফলে এই রাসায়নিক যাঁরা মজুত করে রেখেছেন এবং যে বীজে এই রাসায়নিক ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি শেষ করা যাবে ৷ ওই বীজের বৈধতা যতদিন আছে, ততদিন পর্যন্ত এগুলি বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া উচিত ৷

বীজ শিল্প এবং কৃষকদের কার্যকর সমাধান দেওয়ার জন্য রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি ভারত সরকার বায়োলজিকাল এবং ন্যানো-প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে ৷ জৈব নিয়ন্ত্রক এজেন্ট এবং ন্যানো-প্রযুক্তি আনতে ICAR এবং IARI-এর মতো সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে R&D তৈরি করা যেতে পারে ৷ কারণ, প্রকৃতির মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই অনেক বেশি কার্যকরী ৷ কয়েক মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আছে, যারা প্রাকৃতিক উপায়ে কীট ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে ৷ এর সঙ্গে অতিরিক্ত লাভ হল পরিবেশেরও কোনও ক্ষতি হবে না ৷

এটা সরকারি ব্যবস্থায় তৈরি হলে এর কোনও সত্ত্ব থাকবে না এবং কম খরচে কৃষি ও সহযোগী ক্ষেত্রগুলিতে পাওয়া যাবে ৷ সব শেষে লাভ হবে ভারতীয় কৃষক ও পরিবেশের ৷

লেখক- ইন্দ্রশেখর সিং

(ডিরেক্টর- পলিসি অ্যান্ড আউটরিচ, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া)

মানুষ এবং প্রাণীর শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলার জন্য 27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ এই নিয়ে 14 মে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক ৷ আপত্তি ও পরামর্শ জানানোর জন্য সরকারি তরফে 45 দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে ৷ 27টি রাসায়নিকের মধ্যে থিরাম, ক্যাপটান, ডেল্টামিথ্রিন ও কার্বেন্ডিজ়ম, মাথাথিয়ন ও ক্লোরপাইরিফস ইত্যাদি রয়েছে ৷ অন্য একটি রাসায়নিক, যার নাম DDVP বা ডিচলরভস 31 ডিসেম্বর থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৷

এই কীটনাশকগুলি বেশি মাত্রায় বিষাক্ত হওয়ায় সরকার পরিবেশগত কারণে সুরক্ষিত ভারত গড়তে এমন পদক্ষেপ করল ৷ নতুন ধরনের মলিকিউল এবং জৈব কীটনাশক এখন সারা বিশ্বে পাওয়া যায়, যা অনায়াসে সুরক্ষিতভাবে এগুলির জায়গা নিতে পারে ৷ সরকার কৃষকদের চাহিদা এবং ভারতীয় অর্থনীতির কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ মৌমাছি রক্ষাকারী, জৈব কৃষক, মশলা শিল্পের মতো অনেক শিল্প সরকারের এই নির্দেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ৷

যদিও আমাদের এই বিষয়টিকে বীজ শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিচার করে দেখা উচিত ৷ ফসলের উপর কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া কীটনাশকগুলিকে বীজকে ভালো রাখা, মাটিজনিত রোগ সারানো ও কীটের নাশক হিসেবেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় ৷ বীজের চিকিৎসায় যে কীটনাশকগুলি বেশি ব্যবহার করা হয়, তা হল- থিরাম, ক্যাপটান, ডেল্টামিথ্রিন ও কার্বেন্ডিজম ৷ নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া তালিকায় এই কীটনাশকগুলির নামও আছে ৷

ভুট্টা, বাজরা, শিংগম, সূর্যমুখী, সরিষা এবং শাকসবজির চিকিৎসার মাধ্যমে মাটি থেকে উৎপন্ন পোকার বিরুদ্ধে ডেল্টামিথ্রিন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ৷ এটা বেশ লাভজনক এবং কয়েক দশক ধরে এর ব্যবহার হয়ে আসছে ৷ এর সঙ্গে কার্বেন্ডিজ়মও ব্যবহার হচ্ছে ৷ এটাও বেশ লাভজনক এবং জনপ্রিয় ছত্রাকনাশক ৷

এবার যদি থিরাম নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বীজ বা মাটিতে পাওয়া যায় এমন রোগ ও জীবাণু মারতে বাজারে উপলব্ধ সবচেয়ে কার্যকরী, যা দিয়ে বীজের চিকিৎসা করা হয় বা ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করানো হয় ৷ বীজ উৎপাদকরা যখন হাইব্রিড বা ট্রান্সজেনিক ফসলের তুলনায় ধান, ডালের মতো খোলা, পরাগজনিত বীজ নিয়ে কাজ করেন, তখন এই কীটনাশক অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়ে ৷ এই ধরনের ফসলে বেশি খরচের কীটনাশক ব্যবহার করা যায় না ৷ কারণ, এর থেকে লাভের পরিমাণ বেশ কম ৷ ধান ও গমের মতো ফসলের ক্ষেত্রে থিরাম ও কার্বেন্ডিজ়ম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হতে পারে ৷ কারণ, জায়গার হিসেবে এর বীজের প্রয়োজনীয়তা অনেক (20 কেজি থেকে 40 কেজি) এবং কেজি প্রতি বীজের দাম 30 টাকার নিচে হয় ৷ এক্ষেত্রে এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া মানে অনেক বীজ সংস্থা ও কৃষকদের সাহায্য করবে ৷ কারণ, নতুন প্রস্তাবিত রাসায়নিকের তুলনায় এগুলির দাম অনেকটাই কম ৷

নিষেধাজ্ঞা জারির এই খসড়াকে কার্যকর করার আগে বীজ চিকিৎসার জন্য সরকার সম্ভবত বিকল্প রাসায়নিক বা কীটনাশকের নাম ঘোষণা করবে ৷ এছাড়া পুরোনো কীটনাশকগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে প্রস্তাবিত রাসায়নিক বা মলিকিউলগুলিকে নিয়মমাফিক পরখ করেও দেখে নিতে হবে ৷

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বীজের চিকিৎসার জন্য এই নতুন মলিকিউল বা রাসায়নিকগুলি কি সাশ্রয়কারী হবে ? এগুলির দাম যদি বেশি হয়, তাহলে প্রাথমিকভাবে এর প্রভাব বীজের দামের উপর পড়বে এবং পরে এর জন্যই কৃষকদের কাছে বীজের দাম বেশি হবে ৷ যদি আগে উল্লেখিত বীজের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রাসায়নিকের তুলনায় সাশ্রয়কারী এবং পছন্দসই বিকল্প না পাওয়া যায়, তাহলে তার ফল কৃষকদের ভুগতে হবে ৷ বীজ ও মাটিজনিত রোগের জন্য তাঁদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ৷ যার ফলে সার্বিক উৎপাদন এবং কৃষকদের লাভের উপর প্রভাব পড়বে ৷ প্রভাব পড়বে বীজ শিল্প এবং কৃষিজ অর্থনীতির উপরও ৷

3-4 বছরের একটি সময়সীমার মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে ৷ এর ফলে এই রাসায়নিক যাঁরা মজুত করে রেখেছেন এবং যে বীজে এই রাসায়নিক ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি শেষ করা যাবে ৷ ওই বীজের বৈধতা যতদিন আছে, ততদিন পর্যন্ত এগুলি বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া উচিত ৷

বীজ শিল্প এবং কৃষকদের কার্যকর সমাধান দেওয়ার জন্য রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি ভারত সরকার বায়োলজিকাল এবং ন্যানো-প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে ৷ জৈব নিয়ন্ত্রক এজেন্ট এবং ন্যানো-প্রযুক্তি আনতে ICAR এবং IARI-এর মতো সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে R&D তৈরি করা যেতে পারে ৷ কারণ, প্রকৃতির মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই অনেক বেশি কার্যকরী ৷ কয়েক মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আছে, যারা প্রাকৃতিক উপায়ে কীট ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে ৷ এর সঙ্গে অতিরিক্ত লাভ হল পরিবেশেরও কোনও ক্ষতি হবে না ৷

এটা সরকারি ব্যবস্থায় তৈরি হলে এর কোনও সত্ত্ব থাকবে না এবং কম খরচে কৃষি ও সহযোগী ক্ষেত্রগুলিতে পাওয়া যাবে ৷ সব শেষে লাভ হবে ভারতীয় কৃষক ও পরিবেশের ৷

লেখক- ইন্দ্রশেখর সিং

(ডিরেক্টর- পলিসি অ্যান্ড আউটরিচ, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.