দিল্লি, 24 অগাস্ট : দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই দিয়েছিলেন তিনি ৷ তাঁর ওষুধেই বেসরকারি লগ্নির পথ প্রশস্ত হয়েছিল দেশে ৷ অরুণ জেটলির সেই পদক্ষেপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা কম হয়নি ৷ প্রয়াত হলেন ভারতের সংসদীয় রাজনীতির অতি বর্ণময় সেই চরিত্র, অরুণ জেটলি ৷ আইনের ছাত্র থেকে মোদি মন্ত্রিসভায় 'সেকেন্ড ইন ম্যান' হয়ে ওঠা অরুণ জেটলি বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ৷
অসুস্থতার জন্য বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে নিজেকে সরিয়েও নিয়েছিলেন ৷ তীব্র মধুমেহ রোগ আক্রান্ত জেটলির একাধিক শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছিল ৷ গত বছরই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ৷ সঙ্গে ছিল কর্কট রোগও ৷ সবে মিলে ক্রমেই জটিল হচ্ছিল পরিস্থিতি ৷ বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও ভরতিও হন ৷ অবশেষে 66 বছরে থমকে গেল এই বর্ণময় চরিত্রটি ৷
প্রথম জীবন :
1952 সালের 28 ডিসেম্বর দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন অরুণ জেটলি ৷ বাবা মহারাজ কিষেণ সিং ছিলেন আইনজীবী ৷ তবে, ছেলের স্বপ্ন ছিল চাটার্ড অ্যাকাউনটেন্ট হওয়া ৷ 1973 সালে দিল্লির শ্রীরাম কলেজ থেকে কমার্সে স্নাতক হন ৷ কলেজ জীবন থেকেই সুবক্তা হিসেবে পরিচিতি গড়ে ওঠে জেটলির ৷ 1977 সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশ করেন ৷
রাজনীতিতে পদার্পণ :
কলেজ জীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি জেটলির ৷ 1974 সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল কংগ্রেসের ৷ তাদের সরিয়ে ABVP প্রার্থী হিসেবে লড়েন জেটলি ৷ 1975 সালের 26 জুন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয় ৷ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন জেটলি ৷ সেদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷ তিহার জেলে 19 মাস বন্দী ছিলেন ৷
1976 সালে লোকতান্ত্রিক যুব মোর্চার জাতীয় আহ্বায়ক হন জেটলি ৷ জনতা দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেন তিনি ৷ 1980 সালে তৈরি হয় BJP ৷ তখন থেকেই BJP-র সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ওঠেন ৷ এর সঙ্গেই চলতে থাকে জেটলির পেশাদারি জীবন ৷ 1991 সালে জেটলি BJP-র ন্যাশনাল এক্সজ়িকিউটিভ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন ৷ 1999 সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় দলের মুখপাত্র হিসেবের দায়িত্ব সামলান ৷ সে বছরই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ৷ 2002 সালে গুজরাত থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ সেই বছরই অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় আইন, বিচার বিভাগ ও কম্পানি অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী হন ৷ এর সঙ্গে 2001 সালে যুক্ত হয় জাহাজ মন্ত্রকের দায়িত্ব ৷ ইতিমধ্যে 2004 সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় BJP ৷ তবে, জাতীয় রাজনীতিতে জেটলির প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়তে থাকে ৷ দলের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি ৷ 2006 সালে পুনরায় রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন ৷ তিন বছর পর সংসদের উচ্চকক্ষে তিনি BJP-র দলনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ৷ দলের এক ব্যক্তি, এক নীতি অনুযায়ী BJP-র সাধারণ সম্পাদক থেকে ইস্তফা দেন জেটলি ৷ সে বছরই আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেন তিনি ৷ 2012 সাল গুজরাত থেকে ফের রাজ্যসভার সাংসদ হন ৷
নরেন্দ্র মোদি ক্যাবিনেটে ঠাঁই :
2014 সালে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ালেও হেরে যান জেটলি ৷ তা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রকের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ৷ প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বন্ধনীতে ছিলেন জেটলি ৷ বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে প্রতিরক্ষা ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলান ৷ সামলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব ৷ রাজ্যসভায় দলনেতা হন ৷ পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন ৷ মোদি জমানায় তাঁর সবথেকে বড় কৃতিত্ব দেশে এক কর ব্যবস্থা তথা GST চালু করা ৷ কিন্তু, সফল রাজনৈতিক জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অসুস্থতা ৷ 2018 সালে কিডনি প্রতিস্থাপন হয় ৷ এরপর ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ চিকিৎসার জন্য অ্যামেরিকায় থাকায় 2019 সালে মোদি সরকারের শেষ বাজেট (অন্তবর্তীকালীন বাজেট বা ভোট অন অ্যাকাউন্ট) পেশ করতে পারেননি ৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি চান জেটলি ৷ দ্বিতীয় মোদি সরকারের জমানায় নিজে থেকেই সরে দাঁড়ান ৷ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ থেকে তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত সাংসদ ৷
রাজনীতির বাইরে অন্য জগৎ :
1990 সালে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনেরাল (ASG) নিযুক্ত হন ৷ বফর্স মামলায় ASG ছিলেন জেটলিই ৷ 1998 সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন ৷ সেখানে অর্থ পাচার ও মাদক সংক্রান্ত আইনের ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় ৷ 1999 সালে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন ৷ 10 বছর পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) সহ-সভাপতি হন ৷