ETV Bharat / bharat

কৃষির পরবর্তী ধাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা - কৃষির পরবর্তী ধাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা সম্ভব । কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে সব ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন, তা হল শস্য নির্বাচন, শস্য রক্ষণাবেক্ষণ এবং শস্য সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী করা ।

Artificial Intelligence
প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Jan 23, 2020, 3:47 AM IST

Updated : Jan 23, 2020, 6:53 AM IST

মানবজাতির প্রাচীনতম পেশা কৃষি, সুশৃঙ্খলভাবে এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সময়ের কষাঘাত সহ্য করে আসছে । বহু চ্যালেঞ্জ সামলে নিজেকে অনেকটা বদলে কৃষি আজ তার প্রাচীনতম সংস্করণের আরও পরিশ্রুত ও বিস্তৃত রূপ । আবহাওয়ার পরিবর্তন থেকে গুণমান ও পরিমাণের জন্য উত্তরোত্তর মানুষের চাহিদা বেড়ে চলা, সব কিছু সামলে বলিষ্ঠ ও অবিচলিতভাবে এগিয়ে চলেছে কৃষি । তাকে সাহায্য করেছে অসাধারণ ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি । উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটা সময় পর্যন্ত ভারতকে প্রতিদিনের খাবার অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হত । আর এখন দেশের খাদ্য সুরক্ষায় বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত । এরজন্য দায়ি সবুজ বিপ্লব এবং উন্নত প্রযুক্তি । এর ফলে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ 50 মিলিয়ন টন থেকে এক ধাক্কায় বেড়ে হয় 300 মিলিয়ন টন । এই সময় থেকেই উন্নত শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে, শস্য কাটার ক্ষেত্রে বা শষ্যের যত্নের ক্ষেত্রে ভারতে কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায় প্রযুক্তি । তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে কৃষির ধারণায় বহু পরিবর্তন এসেছে । ফলে কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্তি একটুও আশ্চর্যজনক বিষয় নয় ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির অনেকটা উন্নত ও নিখুঁত সংস্করণ । এটা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অনেকটা যান্ত্রিক করে ফেলে মানুষের কাজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় । আর এইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৃষির ক্ষেত্রে প্রচণ্ড প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে । কৃষির ক্ষেত্রে বহু বার দেখা গিয়েছে, মানুষের সিদ্ধান্তের ফলে বড় কোনও ভুল হয়েছে । এ ক্ষেত্রে সেই সমস্যার সুযোগ প্রায় নেই । গ্রাহকের খাদ্য সুরক্ষা এবং কৃষকের আয় নিশ্চিত করতে কৃষিতে এই ধরনের ভুল হওয়া কাম্য নয় । কৃষির ক্ষেত্রে পূর্ণ মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে শুরু করেছে বিশ্বের বহু দেশ । একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার 2025 সালের মধ্যে 1550 অ্যামেরিকান ডলারে পৌঁছে যাবে ।

কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা সম্ভব । কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে সব ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন, তা হল শস্য নির্বাচন, শস্য রক্ষণাবেক্ষণ এবং শস্য সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী করা । ভারতে কৃষির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে আবহাওয়া । বর্ষাকালীন চাষ দেশের মোট কৃষি GDP-র 60 শতাংশ । এই কারণে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার সঙ্গে লড়াই করতে একটা বিকল্প পরিকল্পনার সবসময়ই প্রয়োজন । অতিরিক্ত ভিজে মাটি বা অতিরিক্ত শুকনো আবহাওয়ায় একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে চিরাচরিত চাষ সবসময় ভাল ফল দেয় না । আর এখানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেশ কিছু ফ্যাক্টর, যেমন পরিবর্তিত আবহাওয়া, স্থানীয় এলাকার প্রয়োজন, বাজারের চাহিদা প্রভৃতি মাথায় রেখে বিকল্প শস্য চাষের সুপারিশ করে । ইন্টারন্যাশনাল ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে মাইক্রোসফট 'ভূচেতনা' নামে একটি যৌথ প্রকল্প শুরু করেছে । এর মাধ্যমে আধা-শুষ্ক গ্রীষ্মমণ্ডল (ICRISAT)-এ খারিফ শস্য চাষের মরশুমে একটি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয় ।

আরও এক কদম এগিয়ে, শস্যের সম্পূর্ণ দেখভাল ও মাটি পর্যবেক্ষণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক আকর্ষণীয় দিক । শস্যের স্বাস্থ্য আরও ভালো করে বোঝার জন্য কৃষকের কাছে শস্যের ছবি নিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে । এর ফলে শস্যের বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য বিপদের ঝুঁকি সম্বন্ধে আরও সতর্ক থাকতে পারছেন কৃষকরা । খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে এবং শস্যের বিভিন্ন অবস্থার ছবি তুলে শস্যের রোগ এবং পোকার আক্রমণে আক্রান্ত শস্যকে সহজেই চিহ্নিত করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে । বিভিন্ন দিক বিচার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এটাও বলতে পারে, কী ভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় বা রোগ ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো যায় । পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষা না করেও মাটির গুণাগুণ বোঝা সম্ভব হচ্ছে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ও শস্যের বিস্তৃত ছবির মাধ্যমে । স্থানীয়ভাবে তোলা ছবির সঙ্গে উপগ্রহ চিত্র এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে কৃষকদের সাহায্য করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।

2018 সালের কৃষিজপণ্য রফতানি পলিসি এক্ষেত্রে সরকারের বিশাল এক পদক্ষেপ । এর মাধ্যমে সরকার দেশের কৃষকদের পণ্য বিক্রির জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা যেন খুলে দিয়েছে । তবে এর ফলে উৎপন্ন শস্যের গুণমানের বিষয়টিও সামনে এসেছে । এই ব্যাপারেও সাহায্য করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । এর মাধ্যমে উৎপন্ন শস্যের একটি আন্তর্জাতিক মান নির্ণয় করা সম্ভব । এই মানের উপর ভিত্তি করে দেশের সীমানার বাইরেও পণ্য রফতানি করা সম্ভব । খাদ্যের গুণ বিচারের এই যান্ত্রিক প্রক্রিয়া খুবই নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য । রং, আকার ও আয়তনের উপর নির্ভর করে ফল, সব্জি, শস্য, তুলো প্রভৃতির গ্রেডিং ব্যবস্থা সর্বজনগ্রাহ্যও বটে । কেবলমাত্র কৃষকের মোবাইল ফোনে তোলা ছবির মাধ্যমে ফসলের মান বলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি এবং তা করতে পারে মানুষের কোনও রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই ।

ভবিষ্যদ্বাণী ও সেই অনুযায়ী ফসলের পর্যালোচনা করা কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরও একটা বিশেষ দিক । মাইক্রোসফটের সঙ্গে কর্ণাটক সরকার একটি MOU স্বাক্ষর করেছে । এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র চাষিদের ফসলের দাম সংক্রান্ত আগাম ইঙ্গিত দেওয়া সম্ভব হবে । কর্ণাটক এগ্রিকালচারাল প্রাইস কমিশন (KAPC)-এর সাহায্যে চাষের এলাকা, উৎপাদনের সময়, চাষের সময়, আবহাওয়া এবং অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে একটি বিশেষ ডিজিটাল প্রযুক্তি তৈরি করেছে মাইক্রোসফট, যার মাধ্যমে ফসলের দামের পূর্বাভাস করা সম্ভব হবে । এ ছাড়া মাইক্রোসফট ইউনাইটেড ফসফরাস (UPL)-এর সঙ্গেও গাঁটছড়া বেঁধেছে । UPL দেশের বৃহত্তম কৃষি-রাসায়নিক প্রস্তুতকারক সংস্থা । এর মাধ্যমে ফসলে পোকার আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দিতে একটি পেস্ট রিস্ক প্রেডিকশন অ্যাপ তৈরির চেষ্টা চলছে । এক্ষেত্রেও অন্যতম হাতিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।

2018 সালের জুন মাসে প্রকাশিত ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামক একটি পেপারে নীতি আয়োগ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত হারে বেড়ে চলা অর্থনীতি ও বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন মেনে নিয়েছে । বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মানচিত্রে ভারতকে উপরের দিকে রাখতে পাঁচটি ক্ষেত্রের উল্লেখ করেছে নীতি আয়োগ । এর মধ্যে অন্যতম কৃষি ।

ভারতে কৃষি মূলত চিরাচরিত জ্ঞান, চাষের প্রচলিত পদ্ধতি, বিভিন্ন পলিসি এবং কিছুটা অনিশ্চিয়তার মিলিত ফসল । এর সঙ্গে যোগ হয় আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, রাজনীতি, বিভিন্ন বহুপাক্ষিক সম্পর্ক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি বহু সমস্যার মোকাবিলা করে কৃষককে ভুল সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করে । বহু ক্ষেত্রে তাকে সম্ভাব্য লোকসানের হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে এই প্রযুক্তি । প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হলেও এই প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে ।

ডক্টর এম জে খান (ইন্ডিয়ান চেম্বার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারের চেয়ারম্যান)

মানবজাতির প্রাচীনতম পেশা কৃষি, সুশৃঙ্খলভাবে এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সময়ের কষাঘাত সহ্য করে আসছে । বহু চ্যালেঞ্জ সামলে নিজেকে অনেকটা বদলে কৃষি আজ তার প্রাচীনতম সংস্করণের আরও পরিশ্রুত ও বিস্তৃত রূপ । আবহাওয়ার পরিবর্তন থেকে গুণমান ও পরিমাণের জন্য উত্তরোত্তর মানুষের চাহিদা বেড়ে চলা, সব কিছু সামলে বলিষ্ঠ ও অবিচলিতভাবে এগিয়ে চলেছে কৃষি । তাকে সাহায্য করেছে অসাধারণ ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি । উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটা সময় পর্যন্ত ভারতকে প্রতিদিনের খাবার অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হত । আর এখন দেশের খাদ্য সুরক্ষায় বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত । এরজন্য দায়ি সবুজ বিপ্লব এবং উন্নত প্রযুক্তি । এর ফলে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ 50 মিলিয়ন টন থেকে এক ধাক্কায় বেড়ে হয় 300 মিলিয়ন টন । এই সময় থেকেই উন্নত শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে, শস্য কাটার ক্ষেত্রে বা শষ্যের যত্নের ক্ষেত্রে ভারতে কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায় প্রযুক্তি । তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে কৃষির ধারণায় বহু পরিবর্তন এসেছে । ফলে কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্তি একটুও আশ্চর্যজনক বিষয় নয় ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির অনেকটা উন্নত ও নিখুঁত সংস্করণ । এটা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অনেকটা যান্ত্রিক করে ফেলে মানুষের কাজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় । আর এইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৃষির ক্ষেত্রে প্রচণ্ড প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে । কৃষির ক্ষেত্রে বহু বার দেখা গিয়েছে, মানুষের সিদ্ধান্তের ফলে বড় কোনও ভুল হয়েছে । এ ক্ষেত্রে সেই সমস্যার সুযোগ প্রায় নেই । গ্রাহকের খাদ্য সুরক্ষা এবং কৃষকের আয় নিশ্চিত করতে কৃষিতে এই ধরনের ভুল হওয়া কাম্য নয় । কৃষির ক্ষেত্রে পূর্ণ মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে শুরু করেছে বিশ্বের বহু দেশ । একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার 2025 সালের মধ্যে 1550 অ্যামেরিকান ডলারে পৌঁছে যাবে ।

কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা সম্ভব । কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে সব ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন, তা হল শস্য নির্বাচন, শস্য রক্ষণাবেক্ষণ এবং শস্য সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী করা । ভারতে কৃষির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে আবহাওয়া । বর্ষাকালীন চাষ দেশের মোট কৃষি GDP-র 60 শতাংশ । এই কারণে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার সঙ্গে লড়াই করতে একটা বিকল্প পরিকল্পনার সবসময়ই প্রয়োজন । অতিরিক্ত ভিজে মাটি বা অতিরিক্ত শুকনো আবহাওয়ায় একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে চিরাচরিত চাষ সবসময় ভাল ফল দেয় না । আর এখানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেশ কিছু ফ্যাক্টর, যেমন পরিবর্তিত আবহাওয়া, স্থানীয় এলাকার প্রয়োজন, বাজারের চাহিদা প্রভৃতি মাথায় রেখে বিকল্প শস্য চাষের সুপারিশ করে । ইন্টারন্যাশনাল ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে মাইক্রোসফট 'ভূচেতনা' নামে একটি যৌথ প্রকল্প শুরু করেছে । এর মাধ্যমে আধা-শুষ্ক গ্রীষ্মমণ্ডল (ICRISAT)-এ খারিফ শস্য চাষের মরশুমে একটি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয় ।

আরও এক কদম এগিয়ে, শস্যের সম্পূর্ণ দেখভাল ও মাটি পর্যবেক্ষণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক আকর্ষণীয় দিক । শস্যের স্বাস্থ্য আরও ভালো করে বোঝার জন্য কৃষকের কাছে শস্যের ছবি নিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে । এর ফলে শস্যের বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য বিপদের ঝুঁকি সম্বন্ধে আরও সতর্ক থাকতে পারছেন কৃষকরা । খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে এবং শস্যের বিভিন্ন অবস্থার ছবি তুলে শস্যের রোগ এবং পোকার আক্রমণে আক্রান্ত শস্যকে সহজেই চিহ্নিত করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে । বিভিন্ন দিক বিচার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এটাও বলতে পারে, কী ভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় বা রোগ ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো যায় । পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষা না করেও মাটির গুণাগুণ বোঝা সম্ভব হচ্ছে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ও শস্যের বিস্তৃত ছবির মাধ্যমে । স্থানীয়ভাবে তোলা ছবির সঙ্গে উপগ্রহ চিত্র এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে কৃষকদের সাহায্য করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।

2018 সালের কৃষিজপণ্য রফতানি পলিসি এক্ষেত্রে সরকারের বিশাল এক পদক্ষেপ । এর মাধ্যমে সরকার দেশের কৃষকদের পণ্য বিক্রির জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা যেন খুলে দিয়েছে । তবে এর ফলে উৎপন্ন শস্যের গুণমানের বিষয়টিও সামনে এসেছে । এই ব্যাপারেও সাহায্য করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । এর মাধ্যমে উৎপন্ন শস্যের একটি আন্তর্জাতিক মান নির্ণয় করা সম্ভব । এই মানের উপর ভিত্তি করে দেশের সীমানার বাইরেও পণ্য রফতানি করা সম্ভব । খাদ্যের গুণ বিচারের এই যান্ত্রিক প্রক্রিয়া খুবই নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য । রং, আকার ও আয়তনের উপর নির্ভর করে ফল, সব্জি, শস্য, তুলো প্রভৃতির গ্রেডিং ব্যবস্থা সর্বজনগ্রাহ্যও বটে । কেবলমাত্র কৃষকের মোবাইল ফোনে তোলা ছবির মাধ্যমে ফসলের মান বলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি এবং তা করতে পারে মানুষের কোনও রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই ।

ভবিষ্যদ্বাণী ও সেই অনুযায়ী ফসলের পর্যালোচনা করা কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরও একটা বিশেষ দিক । মাইক্রোসফটের সঙ্গে কর্ণাটক সরকার একটি MOU স্বাক্ষর করেছে । এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র চাষিদের ফসলের দাম সংক্রান্ত আগাম ইঙ্গিত দেওয়া সম্ভব হবে । কর্ণাটক এগ্রিকালচারাল প্রাইস কমিশন (KAPC)-এর সাহায্যে চাষের এলাকা, উৎপাদনের সময়, চাষের সময়, আবহাওয়া এবং অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে একটি বিশেষ ডিজিটাল প্রযুক্তি তৈরি করেছে মাইক্রোসফট, যার মাধ্যমে ফসলের দামের পূর্বাভাস করা সম্ভব হবে । এ ছাড়া মাইক্রোসফট ইউনাইটেড ফসফরাস (UPL)-এর সঙ্গেও গাঁটছড়া বেঁধেছে । UPL দেশের বৃহত্তম কৃষি-রাসায়নিক প্রস্তুতকারক সংস্থা । এর মাধ্যমে ফসলে পোকার আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দিতে একটি পেস্ট রিস্ক প্রেডিকশন অ্যাপ তৈরির চেষ্টা চলছে । এক্ষেত্রেও অন্যতম হাতিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।

2018 সালের জুন মাসে প্রকাশিত ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামক একটি পেপারে নীতি আয়োগ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত হারে বেড়ে চলা অর্থনীতি ও বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন মেনে নিয়েছে । বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মানচিত্রে ভারতকে উপরের দিকে রাখতে পাঁচটি ক্ষেত্রের উল্লেখ করেছে নীতি আয়োগ । এর মধ্যে অন্যতম কৃষি ।

ভারতে কৃষি মূলত চিরাচরিত জ্ঞান, চাষের প্রচলিত পদ্ধতি, বিভিন্ন পলিসি এবং কিছুটা অনিশ্চিয়তার মিলিত ফসল । এর সঙ্গে যোগ হয় আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, রাজনীতি, বিভিন্ন বহুপাক্ষিক সম্পর্ক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি বহু সমস্যার মোকাবিলা করে কৃষককে ভুল সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করে । বহু ক্ষেত্রে তাকে সম্ভাব্য লোকসানের হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে এই প্রযুক্তি । প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হলেও এই প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে ।

ডক্টর এম জে খান (ইন্ডিয়ান চেম্বার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারের চেয়ারম্যান)

Srinagar (JandK), Jan 22 (ANI): Union Law and Justice Minister Ravi Shankar Prasad on January 22 reached Jammu and Kashmir's Srinagar to review the development work in the region. During his visit, the Law and Justice Minister inaugurated many facilities including a woman post office. It is the first post office of its kind in all the Union Territories of the country. On January 23, RS Prasad will visit Baramulla and Sopore to review the development work there.

Last Updated : Jan 23, 2020, 6:53 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.