দিল্লি, 27 ফেব্রুয়ারি : যখন বাড়িতে আগুন লাগে, সেই সময় চার তলায় ছিলেন 85 বছরের আকবরি । একদল লোক তাঁদের গামরি এক্সটেনশনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় । পুড়ে যেতে থাকে বাড়ির নিচের তলার দোকান । আগুন উঠতে থাকে উপরের দিকে । কিন্তু, পালাতে পারেননি ওই বৃদ্ধা । শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায় । শেষ পর্যন্ত বাড়ির মধ্যেই দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর । ছেলে সইদ সলমনি রাস্তাতেই শুনেছিলেন একদল লোক তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে । খবর পেয়েই ছুটে আসছিলেন বাড়ির দিকে । কিন্তু, এসে দেখেন সব শেষ ৷ বাড়ি পুড়েছে ৷ মারা গেছে তাঁর বৃদ্ধা মা'ও ৷ মায়ের এই পরিণতি নিয়ে সলমনি বলেন, "আমার বৃদ্ধা মা পালাতে পারেনি ।"
রবিবার থেকে সলমনিদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংঘর্ষ বাঁধে । হিংসার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গামরি এক্সটেনশনেও । মঙ্গলবার সকালে সলমনির সন্তানরা জানায় তাদের খিদে পেয়েছে । বাড়িতে দুধ নেই । সকাল 11টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুধ কিনতে যান সলমনি । বাড়ি ফেরছিলেন সলমনি ৷ সেই সময় ফোন পান ৷ বাড়ি থেকেই এসেছিল ফোন ৷ ফোনে তাঁকে জানানো হয়, 150-200 লোক তাঁদের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে । দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছে । দুষ্কৃতীরা হিন্দু না মুসলিম তা তারা জানে না ৷ তারা দরজা ভেতর বন্ধ করে রেখেছে ।
সলমনি বলেন, "আমার মা চারতলায় ছিলেন । আমার চার সন্তান নিচে ছিল । ওরা দেখে একদল মানুষ আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরামর্শ করছে । আমার চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে ।"
সলমনি বলেন, যখন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন সেই সময় তাঁকে বাড়ি থেকে ফোন করা হয় ৷ বলা হয়, "পাপা তাড়াতাড়ি এস, আমাদের বাঁচাও ।" সলমনি বলেন, আমার সন্তানরা বেঁচে যায় । বাঁচেনি আমার বৃদ্ধা মা । তাঁর হাত আগুনে পুড়ে যায় । শেষপর্যন্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা যায় । পালাতে পারেনি । আমি বাড়ির ভিতর ঢুকতে চাইছিলাম । আমার মা'কে বাঁচাতে চাইছিলাম । কিন্তু ওরা বলে আমি ভিতরে ঢুকতে চাইলে আমায় মেরে ফেলবে । আমি তাও চেষ্টা করেছিলাম ।
ওই একদল লোক প্রথমে সলমনিদের বাড়ির নিচের তলায় পোশাকের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয় । এরপর বাড়ির ভিতর ঢোকে । একতলা, দু'তলা, তিনতলা এবং চারতলাতেও আগুন লাগিয়ে দেয় । আকবরি চারতলায় ছিলেন । পালাতে পারেননি । প্রায় দশ ঘণ্টা তাঁর দেহ সেখানে আটকে থাকে । রাত সাড়ে দমকল এসে আগুন নিভিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ।
সলমনি বলেন, "আমি জানি আমার মা সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছিল ৷ কিন্তু, কেউ এগিয়ে আসেনি । দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছে মা । এখানে হিন্দু-মুসলিমের বিভেদ নয় । আমি প্রচুর হিন্দু কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি । সবসময় শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । মা'কে হারিয়েছি । বাড়িও গিয়েছে । দোকানগুলিও পুড়ে গেছে । "
হিংসাত্মক মন্তব্যের জন্য এখনই FIR নয়, হাইকোর্টে দিল্লি পুলিশ