হায়দরাবাদ, 19 মে : ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে আমফান । ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে । সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় তৎপর NDRF কর্মীরা । চলছে মাইকিং । ব্যবস্থা করা হয়েছে একাধিক ত্রাণ শিবিরের। কোরোনা পরিস্থিতিতেও এই আমফান নামটি এখন চিন্তার বিষয় । কিন্তু এই নাম এল কোথা থেকে? কীভাবে এই নাম ঠিক করা হয়েছিল ? জানতে হলে ফিরতে হবে দু'দশক আগে ।
নামকরণের ইতিহাস
2000 সাল । ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিকাল অর্গানাইজেশন (WMO) এবং এসক্যাপ (United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific বা ESCAP)-এর অধীনস্থ আটটি দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে এই অঞ্চলের সাইক্লোনগুলির একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামকরণ করা হবে । আটটি সদস্য দেশ ঘূর্ণিঝড়ের নাম পাঠায় । পরে তা চূড়ান্ত করে এই WMO/ESCAP-র একটি প্যানেল । 2004 সালেই আটটি দেশের 64 টি নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়। আর সেই তালিকার শেষ নাম ছিল থাইল্যান্ডের দেওয়া আমফান । আমফানের সঙ্গেই প্রথম দফার তালিকার সমস্ত নাম শেষ হচ্ছে । উল্লেখ্য, 2018 সালে WMO/ESCAP-র মধ্যে আরও পাঁচটি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয় । এই দেশগুলি হল ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ইয়েমেন। গতমাসেই 13টি দেশ 13টি করে নাম দিয়ে 169টি নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এবার কোনও ঘূর্ণিঝড় হলে, এই নতুন তালিকা থেকেই নামকরণ করা হবে । এর আগে নানা দেশ নানা নাম দিয়েছে । বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে হেলেন । নানুক নামটি মায়ানমারের দেওয়া । হুদহুদ ওমানের । পাকিস্তান দিয়েছে নিলোফার । মালদিভ দিয়েছে মেকুনু । আমাদের দেশও কিছু নাম দিয়েছিল যেমন, অগ্নি, আকাশ, বিজলি বায়ু এবং বেগ। যদিও প্রথমের দিকে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে নামকরণ করা হত । বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে মহিলাদের নামে ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ শুরু হয় । 2000 সালে এসে এখন দেশগুলি এই নামের তালিকা ঠিক করে ।
নামকরণের গুরুত্ব :
- কোনও নম্বর ব্যবহার বা প্রযুক্তিগত নাম রাখার বদলে সাইক্লোনের একটি নির্দিষ্ট নাম রাখলে, জনসাধারণ সহজে তা মনে রাখতে পারে ।
- এছাড়া এই নামকরণ বিজ্ঞানী, সংবাদমাধ্য়ম, বিপর্যয় মোকাবিলা দল সহ অন্যদেরও সাহায্য করে ।
- নির্দিষ্ট নাম থাকলে তা ব্যবহার করে সাইক্লোনের বর্তমান অবস্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণ, দ্রুত সতর্কীকরণের কাজ অনেকটা সহজ হয় ।
- একই অঞ্চলে যদি একাধিক ঘূর্ণিঝড় হয়, সেক্ষেত্রে নাম বিভ্রান্তি এড়াতে সাহায্য করবে ।
নামকরণের প্রক্রিয়া :
এই নামকরণ করতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় । সেগুলি হল,
- যে নামগুলি প্রস্তাব করা হবে ,তার বর্ণসীমা আট । আটটি বর্ণের বেশি হবে না নাম ।
- নাম হবে সংক্ষিপ্ত ও সহজ । যা সহজে উচ্চারণ করা যাবে । পাশাপাশি সকল সদস্য দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে ।
- এই নাম কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, ধর্মীয় ভাবনা, সংস্কৃতি, অথবা লিঙ্গ থেকে নিরপেক্ষ হবে ।
- এমনভাবে নাম নির্বাচন করতে হবে যাতে, পৃথিবীর কোনও জনগোষ্ঠীর ভাবনায় আঘাত না করে ।
- এই নামকরণের মাধ্য়মে প্রকৃতির কোনও রুক্ষতা বা নির্মমতা প্রকাশ পেলে চলবে না ।
- যে নাম প্রস্তাব করা হবে, তার সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা এবং ভয়েস ওভার দিতে হবে ।
- এই নামকরণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্যানেল । কোনও নাম নিয়ম মেনে না দিলে, তা বাতিল করতেও পারে প্য়ানেল ।
- ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কোনও ঘূর্ণিঝড়ের নামের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।