ETV Bharat / bharat

মানব সমাজের ভবিষ্যতের একটি প্রতিশ্রুতি সবুজায়ন - Afforestation

একাধিক রাজ্যে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে । যদিও দেশের মোট জমির 33 শতাংশ এলাকাকে বনাঞ্চল করার লক্ষ্য কয়েক দশক ধরে লক্ষ্যের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে । এখনও পর্যন্ত সে লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি । মোট বনাঞ্চলের সংখ্যা গোনা, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানোর মতো নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বর্তমান বনাঞ্চলের বিস্তৃতির পরিমাণ দেখে ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Jan 19, 2020, 3:34 AM IST

  • সবুজায়নের প্রক্রিয়া

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর সম্প্রতি ন্যাশনাল ফরেস্ট সার্ভে (2017-19)-এর সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন । এই রিপোর্টের ফলে সামনে এসেছে বন সংরক্ষণ ও তার প্রসার সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ । 2015 সালে হওয়া প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, 2030 সালের মধ্যে ভারত 250 থেকে 300 মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ নিঃসরণের সম পরিমাণ বনাঞ্চল সম্প্রসারণ বা সবুজায়নের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ । কিন্তু, সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ দুই বছরে ভারতে বনাঞ্চল বেড়েছে মাত্র 0.56 শতাংশ । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জাভরেকর অবশ্য বলছেন, এই উন্নতি থেকেই প্রমাণিত যে, ভারত প্যারিস চুক্তিতে দেওয়া কথা রাখতে সক্ষম হবে । অন্যদিকে, এই রিপোর্টই দেখাচ্ছে কীভাবে একাধিক রাজ্যে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে । যদিও দেশের মোট জমির 33 শতাংশ এলাকাকে বনাঞ্চল করার লক্ষ্য কয়েক দশক ধরে লক্ষ্যের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে । এখনও পর্যন্ত সে লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি । বন সংরক্ষণ ও চাষের জন্য জাতীয় স্তরের বিস্তৃত বনজ নকশার কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে তো চলছেই । মোট বনাঞ্চলের সংখ্যা গোনা, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানোর মতো নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বর্তমান বনাঞ্চলের বিস্তৃতির পরিমাণ দেখে ।

  • হতাশাজনক লক্ষ্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া

আমাদের পরিচ্ছন্ন বাতাস, জল ও খাদ্য দেওয়া ছাড়াও ভৌমজলের সুরক্ষা, কার্বন নিঃসরণে রাশ টানা এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বনাঞ্চলের । শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাখ লাখ মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করে জঙ্গল । 1952 সালে গৃহীত প্রথম জাতীয় বনাঞ্চল পলিসি অনুযায়ী, দেশের জমি অঞ্চলের অন্তত 33 শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল হতেই হবে । তবে, 67 বছর পরেও এই লক্ষ্য এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে । প্রতি দুই বছরে দা ন্যাশনাল ফরেস্ট সার্ভে ইনস্টিটিউট (FSI) উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে দেশের বনাঞ্চলের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে । FSI-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ সাত লাখ 12 হাজার 249 বর্গ কিলোমিটার (অর্থাৎ 21.67 শতাংশ) । 2017 সালে এই পরিমাণ ছিল 21.54 শতাংশ । অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি হয়েছে খুবই কম । 2011 সালে দেশের ছয় লাখ 92 হাজার 27 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বনাঞ্চল ছিল । শেষ এক দশকে বনাঞ্চলের পরিমাণ বেড়েছে 20 হাজার 222 বর্গ কিলোমিটার । অর্থাৎ তিন শতাংশের সামান্য বেশি । রিপোর্ট দেখে একে দুর্দান্ত উন্নতি বলে মনে হলেও কী ধরনের বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ঘটেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গিয়েছে । মোটামুটি ভাবে দেশের জমি এলাকার তিন লাখ আট হাজার 472 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ঘন জঙ্গল রয়েছে । কফি, বাঁশ বা চা-এর মতো বাণিজ্যিক বনাঞ্চল রয়েছে তিন লাখ চার হাজার 499 বর্গ কিলোমিটার এলাকায়, যা প্রায় 9.26 শতাংশ । গত দশকে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক বনাঞ্চলের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় 5.7 শতাংশ । উলটো দিকে, মধ্য ঘনত্বের বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে প্রায় 3.8 শতাংশ । এই ধরনের বনাঞ্চলের পরিমাণ 2011 সালে ছিল তিন লাখ 20 হাজার 736 বর্গ কিলোমিটার । সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের বনাঞ্চলের বর্তমাণ পরিমাণ তিন লাখ আট হাজার 472 বর্গ কিলোমিটার । যদি এক হেক্টর জমির 70 শতাংশ এলাকা গাছ ও সবুজ দিয়ে ঢাকা থাকে, তখন তাকে গভীর বনাঞ্চলের শ্রেণিতে ফেলা হয় । কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এদের গুরত্ব অপরিসীম । ভারতে এই ধরনের বনাঞ্চলের ব্যাপ্তি 99 হাজার 278 বর্গ কিলোমিটার, যা প্রায় 3 শতাংশ মাত্র । রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের বনাঞ্চলের বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র 1.14 শতাংশ । 2015-17 সালে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্নাটকে এই ধরনর বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ঘটেছে 14 শতাংশ, যা প্রায় এক হাজার 25 বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি । এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশে 990 বর্গ কিলোমিটার, কেরালায় 823 বর্গ কিলোমিটার, জম্মু-কাশ্মীরে 371 বর্গ কিলোমিটার এবং হিমাচল প্রদেশে 344 বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলের বৃদ্ধি হয়েছে । দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধির তালিকার প্রথম পাঁচে আছে এই রাজ্যগুলি । দেশে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ও হ্রাস মাপার পদ্ধতি নিয়েও ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে । বনাঞ্চলের মালিকানা, গাছের প্রজাতি এবং বনাঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণকে সবুজ ও ঘনত্ব মাপার সময় হিসাবে রাখা হয় না । বনাঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে বহু সন্দেহ দেখা দিয়েছে । হেক্টর প্রতি 10 শতাংশের কম এলাকা এবং উঁচু গাছের ছাউনিকে অনেক ক্ষেত্রে বনাঞ্চল হিসাবে দেখানো হয়েছে । বাণিজ্যিক শষ্য ও গাছপালা, যেমন- কফি, ইউক্যালিপটাস, নারকেল, আম প্রভৃতির একটা স্বাভাবিক সবুজ থাকে । সেই কথা মাথায় রেখে সবুজের হিসাব করার সময় উপগ্রহ চিত্র নিয়ে প্রবল সন্দেহ দেখা দিয়েছে বহুবার ।

  • 'CAMPA' তহবিলের প্রত্যাশা

1980 সালের বনাঞ্চল সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সবুজ ধ্বংস এবং ফাঁকা অঞ্চলে বনাঞ্চল বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশজুড়ে একটি বিশেষ প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে । এর জন্য লাখ লাখ একর ফাঁকা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে । বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, 1980 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত, দেশের 22 লাখ 23 হাজার একর জমির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে অ-বনাঞ্চল প্রজেক্টের জন্য । এই পরিমাণ দেশের মোট বনাঞ্চলের প্রায় 1.2 শতাংশের কাছাকাছি । বনাঞ্চলের আইন অনুযায়ী, এই পরিমাণ জমির বিকল্প বনাঞ্চল তৈরি হওয়া উচিত ছিল । বিকল্প অরণ্য গড়ে তুলতে ফরেস্ট সার্ভে ইনস্টিটিউট (FSI) কোনও উদ্যোগ নিয়েছিল কি না সেটা স্পষ্ট নয় । বিকল্প অরণ্য গড়ে তুলতে এবং এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে 2009 সালে গঠিত হয় ন্যাশনাল কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি (জাতীয় CAMPA) । যদিও এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ শুধুমাত্র বনাঞ্চল সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়নি । বহু বছরের শম্বুক গতির পর CAG-এর মধ্যস্থতায় CAMPA আইনি স্বীকৃতি পায় এবং 2016 সালে রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত আইন পাশ হয় । গত বছর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র ও রাজ্যকে CAMPA তহবিলে 54 হাজার কোটি টাকা জমা করতে বলে । এরপর, গত বছর অগাস্ট মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর 27টি রাজ্যের জন্য 47 হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পাশ করেন । এর ভালো ফল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে । সবুজায়ন এবং বনাঞ্চল বিস্তারের জন্য দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য এগিয়ে এসেছে । এর মধ্যে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাও । তেলঙ্গানায় 'হরিতা-হারাম' নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রজাতির 23 কোটি গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । প্রতি দু’জন গ্রামবাসীর জন্য গড়ে অন্তত একটি নার্সারি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে বসানো হবে বড় গাছ, যেগুলি ছায়া দেয়, ফল-ফুল গাছ, এবং ঔষধি গাছ ।

অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার হাতে নিয়েছে 'বনম-মনম' প্রকল্প । এর মাধ্যমে বীজ তৈরি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । 2029 সালের মধ্যে রাজ্যের জমি এলাকার অন্তত 50 শতাংশ বনাঞ্চলে পরিণত করার কঠিন লক্ষ্য নিয়েছে সরকার । গত কয়েক বছর ধরে বন দপ্তরের একাধিক পদ ফাঁকা রয়েছে । ক্রমাগত হয়ে চলা দাবানলের জন্য পলিমাটির উপাদানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে । জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে । এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য জঙ্গলের মধ্যে পরিখা খোঁড়ার প্রয়োজন । জঙ্গলের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ এবং গাছের ক্ষয় রোধ করা অতিরিক্ত প্রয়োজন । বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণ করার উপর স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের বিশেষ নম্বরের ব্যবস্থা করতে হবে । গাছ বসানোর পর তার জিয়ো ট্যাগিং ও সংরক্ষণে জোর দিতে হবে । বনাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য জমির মলিকদের বিশেষ আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে ।

  • দাবানলের কঠিন অবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা

বেশ কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ঘটে চলা ভয়ঙ্কর ও বেলাগাম দাবানল ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । সবুজের আচ্ছাদন বাড়িয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে যে তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তার ভয়ঙ্করতম উদাহরণ এই দাবানল । এটি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জীবনের ক্ষতি করছে তা-ই নয়, এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণও । শেষ এক দশকে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস । সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে বেড়েছে দুর্ভিক্ষের পরিমাণ । গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এই ধ্বংসলীলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যাঙারুদের দেশ । সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের । ঘণ্টায় 80 কিলোমিটার গতিবেগের গরম হাওয়া মেলবোর্ন, সিডনির মতো অন্য শহরগুলিরও ক্ষতি করছে । মনে করা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় এক কোটি একর বনাঞ্চল পুড়ে গিয়েছে । মৃত্যু হয়েছে অন্তত 24জন সাধারণ মানুষের । নিউ সাউথ ওয়েলসে 1300টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নৌবাহিনীর বিমানের সঙ্গে এক নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন তিন হাজার সেনা । পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই দাবানলে মৃত্যু হয়েছে 4800 কোটিরও বেশি পশুপাখির । সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদদের আশঙ্কা, কোয়ালাদের প্রায় 30 শতাংশের জীবন বিপন্ন । এদের পান্ডার মতো দেখতে এবং এরা খুবই আস্তে চলাফেরা করে । এই শ্লথ গতির ফলেই জঙ্গলের দ্রুতগতির আগুন থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি । ক্যাঙারু, ওয়ালবি, ওমব্যাট এবং একাধিক পাখিও এই দাবানলে ফলে বিপন্ন । যে সব প্রাণীরা আহত হলেও প্রাণে বেঁচেছে, তারাও হয়ত খাবারের অভাবে মারা যাবে । জঙ্গলের কাছাকাছি বাড়িগুলিতে ঢুকে পড়ছে একাধিক বিপন্ন প্রাণী । আমরা সকলেই জানি, পরিবেশের ভয়ঙ্কর ও অপূরণীয় ক্ষতি হলে তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে । এই রকম মারাত্মক পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব দেশেরই উচিত প্রকৃতিকে রক্ষা করা । না হলে প্রকৃতি নিজেই তার গুরুত্ব আরও কঠিনভাবে আমাদের বুঝিয়ে দেবে ।

  • সবুজায়নের প্রক্রিয়া

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর সম্প্রতি ন্যাশনাল ফরেস্ট সার্ভে (2017-19)-এর সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন । এই রিপোর্টের ফলে সামনে এসেছে বন সংরক্ষণ ও তার প্রসার সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ । 2015 সালে হওয়া প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, 2030 সালের মধ্যে ভারত 250 থেকে 300 মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ নিঃসরণের সম পরিমাণ বনাঞ্চল সম্প্রসারণ বা সবুজায়নের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ । কিন্তু, সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ দুই বছরে ভারতে বনাঞ্চল বেড়েছে মাত্র 0.56 শতাংশ । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জাভরেকর অবশ্য বলছেন, এই উন্নতি থেকেই প্রমাণিত যে, ভারত প্যারিস চুক্তিতে দেওয়া কথা রাখতে সক্ষম হবে । অন্যদিকে, এই রিপোর্টই দেখাচ্ছে কীভাবে একাধিক রাজ্যে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে । যদিও দেশের মোট জমির 33 শতাংশ এলাকাকে বনাঞ্চল করার লক্ষ্য কয়েক দশক ধরে লক্ষ্যের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে । এখনও পর্যন্ত সে লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি । বন সংরক্ষণ ও চাষের জন্য জাতীয় স্তরের বিস্তৃত বনজ নকশার কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে তো চলছেই । মোট বনাঞ্চলের সংখ্যা গোনা, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানোর মতো নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বর্তমান বনাঞ্চলের বিস্তৃতির পরিমাণ দেখে ।

  • হতাশাজনক লক্ষ্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া

আমাদের পরিচ্ছন্ন বাতাস, জল ও খাদ্য দেওয়া ছাড়াও ভৌমজলের সুরক্ষা, কার্বন নিঃসরণে রাশ টানা এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বনাঞ্চলের । শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাখ লাখ মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করে জঙ্গল । 1952 সালে গৃহীত প্রথম জাতীয় বনাঞ্চল পলিসি অনুযায়ী, দেশের জমি অঞ্চলের অন্তত 33 শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল হতেই হবে । তবে, 67 বছর পরেও এই লক্ষ্য এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে । প্রতি দুই বছরে দা ন্যাশনাল ফরেস্ট সার্ভে ইনস্টিটিউট (FSI) উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে দেশের বনাঞ্চলের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে । FSI-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ সাত লাখ 12 হাজার 249 বর্গ কিলোমিটার (অর্থাৎ 21.67 শতাংশ) । 2017 সালে এই পরিমাণ ছিল 21.54 শতাংশ । অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি হয়েছে খুবই কম । 2011 সালে দেশের ছয় লাখ 92 হাজার 27 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বনাঞ্চল ছিল । শেষ এক দশকে বনাঞ্চলের পরিমাণ বেড়েছে 20 হাজার 222 বর্গ কিলোমিটার । অর্থাৎ তিন শতাংশের সামান্য বেশি । রিপোর্ট দেখে একে দুর্দান্ত উন্নতি বলে মনে হলেও কী ধরনের বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ঘটেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গিয়েছে । মোটামুটি ভাবে দেশের জমি এলাকার তিন লাখ আট হাজার 472 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ঘন জঙ্গল রয়েছে । কফি, বাঁশ বা চা-এর মতো বাণিজ্যিক বনাঞ্চল রয়েছে তিন লাখ চার হাজার 499 বর্গ কিলোমিটার এলাকায়, যা প্রায় 9.26 শতাংশ । গত দশকে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক বনাঞ্চলের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় 5.7 শতাংশ । উলটো দিকে, মধ্য ঘনত্বের বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে প্রায় 3.8 শতাংশ । এই ধরনের বনাঞ্চলের পরিমাণ 2011 সালে ছিল তিন লাখ 20 হাজার 736 বর্গ কিলোমিটার । সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের বনাঞ্চলের বর্তমাণ পরিমাণ তিন লাখ আট হাজার 472 বর্গ কিলোমিটার । যদি এক হেক্টর জমির 70 শতাংশ এলাকা গাছ ও সবুজ দিয়ে ঢাকা থাকে, তখন তাকে গভীর বনাঞ্চলের শ্রেণিতে ফেলা হয় । কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এদের গুরত্ব অপরিসীম । ভারতে এই ধরনের বনাঞ্চলের ব্যাপ্তি 99 হাজার 278 বর্গ কিলোমিটার, যা প্রায় 3 শতাংশ মাত্র । রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের বনাঞ্চলের বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র 1.14 শতাংশ । 2015-17 সালে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্নাটকে এই ধরনর বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ঘটেছে 14 শতাংশ, যা প্রায় এক হাজার 25 বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি । এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশে 990 বর্গ কিলোমিটার, কেরালায় 823 বর্গ কিলোমিটার, জম্মু-কাশ্মীরে 371 বর্গ কিলোমিটার এবং হিমাচল প্রদেশে 344 বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলের বৃদ্ধি হয়েছে । দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধির তালিকার প্রথম পাঁচে আছে এই রাজ্যগুলি । দেশে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি ও হ্রাস মাপার পদ্ধতি নিয়েও ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে । বনাঞ্চলের মালিকানা, গাছের প্রজাতি এবং বনাঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণকে সবুজ ও ঘনত্ব মাপার সময় হিসাবে রাখা হয় না । বনাঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে বহু সন্দেহ দেখা দিয়েছে । হেক্টর প্রতি 10 শতাংশের কম এলাকা এবং উঁচু গাছের ছাউনিকে অনেক ক্ষেত্রে বনাঞ্চল হিসাবে দেখানো হয়েছে । বাণিজ্যিক শষ্য ও গাছপালা, যেমন- কফি, ইউক্যালিপটাস, নারকেল, আম প্রভৃতির একটা স্বাভাবিক সবুজ থাকে । সেই কথা মাথায় রেখে সবুজের হিসাব করার সময় উপগ্রহ চিত্র নিয়ে প্রবল সন্দেহ দেখা দিয়েছে বহুবার ।

  • 'CAMPA' তহবিলের প্রত্যাশা

1980 সালের বনাঞ্চল সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সবুজ ধ্বংস এবং ফাঁকা অঞ্চলে বনাঞ্চল বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশজুড়ে একটি বিশেষ প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে । এর জন্য লাখ লাখ একর ফাঁকা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে । বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, 1980 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত, দেশের 22 লাখ 23 হাজার একর জমির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে অ-বনাঞ্চল প্রজেক্টের জন্য । এই পরিমাণ দেশের মোট বনাঞ্চলের প্রায় 1.2 শতাংশের কাছাকাছি । বনাঞ্চলের আইন অনুযায়ী, এই পরিমাণ জমির বিকল্প বনাঞ্চল তৈরি হওয়া উচিত ছিল । বিকল্প অরণ্য গড়ে তুলতে ফরেস্ট সার্ভে ইনস্টিটিউট (FSI) কোনও উদ্যোগ নিয়েছিল কি না সেটা স্পষ্ট নয় । বিকল্প অরণ্য গড়ে তুলতে এবং এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে 2009 সালে গঠিত হয় ন্যাশনাল কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি (জাতীয় CAMPA) । যদিও এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ শুধুমাত্র বনাঞ্চল সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়নি । বহু বছরের শম্বুক গতির পর CAG-এর মধ্যস্থতায় CAMPA আইনি স্বীকৃতি পায় এবং 2016 সালে রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত আইন পাশ হয় । গত বছর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র ও রাজ্যকে CAMPA তহবিলে 54 হাজার কোটি টাকা জমা করতে বলে । এরপর, গত বছর অগাস্ট মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর 27টি রাজ্যের জন্য 47 হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পাশ করেন । এর ভালো ফল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে । সবুজায়ন এবং বনাঞ্চল বিস্তারের জন্য দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য এগিয়ে এসেছে । এর মধ্যে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাও । তেলঙ্গানায় 'হরিতা-হারাম' নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রজাতির 23 কোটি গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । প্রতি দু’জন গ্রামবাসীর জন্য গড়ে অন্তত একটি নার্সারি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । এই প্রকল্পের মাধ্যমে বসানো হবে বড় গাছ, যেগুলি ছায়া দেয়, ফল-ফুল গাছ, এবং ঔষধি গাছ ।

অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার হাতে নিয়েছে 'বনম-মনম' প্রকল্প । এর মাধ্যমে বীজ তৈরি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । 2029 সালের মধ্যে রাজ্যের জমি এলাকার অন্তত 50 শতাংশ বনাঞ্চলে পরিণত করার কঠিন লক্ষ্য নিয়েছে সরকার । গত কয়েক বছর ধরে বন দপ্তরের একাধিক পদ ফাঁকা রয়েছে । ক্রমাগত হয়ে চলা দাবানলের জন্য পলিমাটির উপাদানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে । জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে । এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য জঙ্গলের মধ্যে পরিখা খোঁড়ার প্রয়োজন । জঙ্গলের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ এবং গাছের ক্ষয় রোধ করা অতিরিক্ত প্রয়োজন । বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণ করার উপর স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের বিশেষ নম্বরের ব্যবস্থা করতে হবে । গাছ বসানোর পর তার জিয়ো ট্যাগিং ও সংরক্ষণে জোর দিতে হবে । বনাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য জমির মলিকদের বিশেষ আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে ।

  • দাবানলের কঠিন অবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা

বেশ কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ঘটে চলা ভয়ঙ্কর ও বেলাগাম দাবানল ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । সবুজের আচ্ছাদন বাড়িয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে যে তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তার ভয়ঙ্করতম উদাহরণ এই দাবানল । এটি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জীবনের ক্ষতি করছে তা-ই নয়, এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণও । শেষ এক দশকে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস । সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে বেড়েছে দুর্ভিক্ষের পরিমাণ । গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এই ধ্বংসলীলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যাঙারুদের দেশ । সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের । ঘণ্টায় 80 কিলোমিটার গতিবেগের গরম হাওয়া মেলবোর্ন, সিডনির মতো অন্য শহরগুলিরও ক্ষতি করছে । মনে করা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় এক কোটি একর বনাঞ্চল পুড়ে গিয়েছে । মৃত্যু হয়েছে অন্তত 24জন সাধারণ মানুষের । নিউ সাউথ ওয়েলসে 1300টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নৌবাহিনীর বিমানের সঙ্গে এক নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন তিন হাজার সেনা । পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই দাবানলে মৃত্যু হয়েছে 4800 কোটিরও বেশি পশুপাখির । সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদদের আশঙ্কা, কোয়ালাদের প্রায় 30 শতাংশের জীবন বিপন্ন । এদের পান্ডার মতো দেখতে এবং এরা খুবই আস্তে চলাফেরা করে । এই শ্লথ গতির ফলেই জঙ্গলের দ্রুতগতির আগুন থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি । ক্যাঙারু, ওয়ালবি, ওমব্যাট এবং একাধিক পাখিও এই দাবানলে ফলে বিপন্ন । যে সব প্রাণীরা আহত হলেও প্রাণে বেঁচেছে, তারাও হয়ত খাবারের অভাবে মারা যাবে । জঙ্গলের কাছাকাছি বাড়িগুলিতে ঢুকে পড়ছে একাধিক বিপন্ন প্রাণী । আমরা সকলেই জানি, পরিবেশের ভয়ঙ্কর ও অপূরণীয় ক্ষতি হলে তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে । এই রকম মারাত্মক পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব দেশেরই উচিত প্রকৃতিকে রক্ষা করা । না হলে প্রকৃতি নিজেই তার গুরুত্ব আরও কঠিনভাবে আমাদের বুঝিয়ে দেবে ।

New Delhi, Jan 19 (ANI): Bored of traditionally shaped chocolates? A 3D printer is capable of printing chocolate in your favourite shape. Built by Evan Weinstein and aptly named 'Cocoa Press', the 3D printer allows chocolatiers to experiment with the shapes and sizes without limiting themselves to casts, Mashable reports. One can print custom chocolate on-demand which is intricate in textures for a 'mouthfeel'. The shapes can vary from traditional cubes to a life-sized dog or even an octopus!

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.